মাত্র ৫০০ টাকায় ঘুরে দেখুন কুমিল্লা এর আদি-অন্ত

১ দিনে ঢাকার আশেপাশে যাদের ঘোরার ইচ্ছে পোস্টটি মূলত তাদের জন্য। সকাল ৬.৩০ বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা পরোটার দোকানে বিল আসলো ২৫ টাকা। এর পর সোজা সুজি সায়দাবাদ বাসস্টান্ডে। ধানমণ্ডি থেকে ভাড়া নিল ১৫ টাকা। ডানে বায়ে কোথাও না তাকিয়ে Trisha Poribohon এর দিকে দিলাম ছুট। অনেক বলে কয়ে পার পারসন ভাড়া ঠিক হলো ১৪০ করে। এর পর বাসে একটা শান্তির ঘুম। ঘুমটা জরুরি কারন এর পরেই অপেক্ষা করছে আডভ্যঞ্চার। সকাল ৮.০০ টার মধ্যে বাসে উঠতে পারলে আপনি কুমিল্লা পৌঁছে যাবেন ১০.৩০ এর মধ্যে। আপনাকে ঠিক নামতে হবে ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোডে।

শালবন বিহার, কুমিল্লা

এবার হাতের বাম দিকে ১২ মিনিট হাটলেই চোখে পরবে Maynamati War Cemetery, এখানে শায়িত রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিহতদের কবর। অসাধারন সুব্দর জায়গা। মনটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এটি খোলা থাকে সকাল ৭.০০ – দুপুর ১১.৪৫ আবার দুপুর ২.০০ টা – বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। এখানে ছেলে মেয়ে একা ঘুরা ফিরা করা নিষেধ 🙂 ১ ঘণ্টা কাটিয়ে ১২ টার দিকে রওনা দিবেন রানী ময়না মতির প্রাসাদের দিকে। ভাড়া ১০ টাকা। এটিও অনেক সুন্দর জায়গা।

রানী ময়না মতির প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আবার ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোডে। ভাড়া ১৫ টাকা অটো।ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোডে কিছু খেয়ে নিবেন। চেষ্টা করবেন হালকা কিছু বাট অনেক এনার্জি আছে 🙂 আমাদের খাবারের বিল আসছিল ৫০ টাকা করে।

কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে লেগুনাতে করে যাবেন কোট বাড়ি বিশ্ব রোডে। ভাড়া নিবে ১৫ টাকা। এখানে সি এন জি পাওয়া যায়। সেখান থেকে কোট বাড়ি বাজার। ভাড়া ১০ টাকা।

বাজারে কাছেই ময়নামতি সেনা নিবাস। অনুমুতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। সেনা নিবাস দেখা শেষ হলে চলে যাবেন ” বার্ড ” দেখতে।

বার্ড কোন পাখির নাম নয়। বার্ড বা Bangladesh Academy for Rural Development এটা সাজনো গোছানো সুন্দর একটা অফিস যেটি বিশাল এলাকা জুরে অবস্থিত। বার্ড এ প্রবেশ করতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। এখন কিভাবে নিবেন এই অনুমুতি। নিজের চেহারা বাচ্চা বাচ্চা ভাব করে গেট ম্যানকে বলুন আপনি ঢাকা বা অনেক দূর থেকে এসেছেন। আপনি ভিতরটা ঘুরে দেখতে চান। দুরত্তের কথা শুনেই আমাদের অনুমতি দিয়েছিল।

বার্ড এর ভিতরে ঢুকেই হাতের ডান দিকের রাস্তাটা অনুসরণ করুন। ১৫ মিনিট হাটলেই নীলাচল পাহাড় পেয়ে যাবেন। এখানেই দীপু নাম্বার টু মুভির বিশাল পানির পাম্পটা আছে। এখানে কিছুক্ষণ থেকে বেরিয়ে পরুন।

কোট বাড়ি বাজার থেকে শালবন বিহার। সি এন জি ভাড়া ১০ টাকা। একদিকে শালবন বিহার আর অপর দিকে বৌদ্ধ মন্দির। সময় নিয়ে ২ টা স্থাপনা ঘুরে দেখন। শালবন বিহার সন্ধ্যা ৫ টায় বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রবেশ ফি ২০ টাকা।

এত কিছু দেখে যখন আপনি ক্লান্ত তখন শালবন বিহার থেকে বের হয়ে একটু হাটলেই শালবন পাবেন। বেশি ভিতরে যাবার দরকার নেই। ১৫ সময় নিয়ে ঘুরে দেখুন।

এত কিছু দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে পড়বে পুরাতন অতীতের জেলার বুকে। এবার সোজা চলে যাবেন ধর্ম সাগর পারে। রাস্তা টা একটু জটিল। আমি আগে কখনো কুমিল্লা যাই নি তাই এমন হয়েছে। প্রথমে সি এন জি নিয়ে চলে যাবেন টমছম ব্রিজে। ভাড়া ১৫ টাকা। রাম মালার সামন থেকে অটো রিজাভ নিয়ে চলে যাবেন বাদুর তলা। আমরা তিনজন ছিলাম। ভাড়া পার পারসন ১২ টাকা করে পরছে।

ধর্ম সাগর যাবার পথে দেখতে থাকুন রাতের কুমিল্লা শহর। লাল নীল আলোয় সজ্জিত ধর্ম সাগর পাড়ে কিছুক্ষন বসে থাকার পর আপনার মনে হবে মাতৃ ভাণ্ডারের রস মালাইয়ের কথা।

রস মালাইয়ে যত গুলো না রস মুঞ্জুরি আছে তার থেকে বেশি মাতৃ ভাণ্ডার আছে কুমিল্লায়। আসল মাতৃ ভাণ্ডারে যেতে হবে মনোহরপুরের শ্রী শ্রী রাজ রাজ্যেশ্বরী কালী মন্দিরের সামনে। এখানেই আসল মাতৃ ভাণ্ডার। ভীড় দেখলেই বুজবেন। ভাড়া ১০ টাকা অটো।  ১৫ থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া নিবে।

রস মালাই খাওয়া শেষ হলে কান্দি পাড় এ চলে আসুন। হেটেই আসা যায়। এখানে পাবেন আঠারো সালের একটি ভবন। যেটি এখন পূবালী ব্যাংক এর অফিস হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে।

আপনার একদিনে কুমিল্লায় সব কিছু দেখা শেষ। এবার কান্দি পাড় থেকে চলে আসুন ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোডে। ভাড়া ২৫ টাকা।

এখন কিছু তেলেস মতি দেখাতে হবে। শেখ শাদী সাহেবের কথা মাথায় রাখুন। ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোডে এসে নিজেকে পরিপাটি করে ফেলুন। এবার ঢাকা গামী হানিফ বা শ্যামলী বা ভালো মানের বাসের জন্য অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষন নাচা নাচি করলেই পেয়ে যাবেন। ভাড়া নিবে ১০০ টাকা।

সায়দাবাদে নেমে নিজের বাড়ির পথে হাটুন। আমার ধানমন্ডি আসতে লেগেছে ২৫ টাকা।

মোট দেখার জায়গা ১১ টি ( Maynamati War Cemetery, রানী ময়না মতির প্রাসাদ , ময়নামতি সেনা নিবাস , বার্ড , নীলাচল পাহাড় , শালবন , বৌদ্ধ মন্দির , শালবন বিহার , ধর্ম সাগর , পুরাতন পূবালী ব্যাংক ভবন, মাতৃ ভাণ্ডার )

মোট খরচ = ৪৯৭ টাকা (পার পারসন)

মেয়েরাও ইচ্ছে করলে গ্রুপে একদিনে কুমিল্লা ট্যুর দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ফেরার জন্য কান্দির পাড় থেকে শাসন গাছা বাস স্টান আসতে হবে। ভাড়া ১৫ টাকা। এখানে সব ঢাকা গামী গাড়ী পাবেন। ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নিবে। আমাদের আডভ্যঞ্চার আর বাজেট কমানোর প্লান ছিল তাই ক্যান্টনমেন্ট বিশ্ব রোড হয়ে ঢাকা আসছি। এক্ষেত্রে আপনাদের খরচ পরবে ৫০ টাকা বেশী।

আমরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করছি। তাই হাতে সময় কম ছিল। রুপবান মুড়া এবং ইটাখোলা মুড়া, রুপসাগর পার্ক এই তিনটা জায়গা মিস গেছে। যারা পার্সোনাল কার কিংবা সময় নিয়ে ঘুরবেন তারা এই তিনটে জায়গাও যেতে পারেন।

সঠিক প্লান আর ইচ্ছে শক্তি থাকলে ভ্রমণের খরছ অনেক কমে যায়। ভ্রমণের সময় GPS ব্যাবহার করুন। সেটি না থাকেলে মোবাইলের Google MAP এর সাহায্য নিন। রিকশাওলাকে কাছে ভাড়া জানতে চাইবেন না। আশে পাশের ভদ্র গোছের বয়স্ক দোকানদার বা পুলিশ সাথে কথা বলুন। এরা আপনাকে কখনোই ভুল ঠিকানা দেবে না। আর কথা শেষে তাদের ছোট একটা ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না 🙂 ভ্রমণের সময় দামী খাবারের হোটেল পরিহার করুন। আমার মতে রাস্তার পাশের সস্তার পরিস্কার পরিচ্ছন হোটেল গুলোতেই যে কোন এলাকার আঞ্চলিক খাবারের সাধ পাওয়া যায় 🙂

Leave a Comment
Share