তিনাপ বৃত্তান্ত, সম্পূর্ণ খরচ সহ এবং রিভিউ সহ

সময়টা ২০১৬ এর বর্ষাকাল ছিল। ইচ্ছা ছিল নাফাকুম যাওয়ার। কিন্তু তিনাপ সাইতার এর ছবি দেখে মাথায় ভুত চেপে বসল। সেমিস্টারের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম তিনাপ দেখতে যাব। তিনাপ যাওয়ার জন্যে ২ টা ট্রেইল আছে। একটা হল রোয়াংছড়ি হয়ে আরেকটা হল রুমা হয়ে। প্রথমটা ছিল একটু কঠিন আর এডভেঞ্চার এর পথ। আর ২য় টা তুলোনামুলক সহজ ও বেশির ভাগ গাড়ি পথ। পাহাড়ে যাব কিন্তু ট্রেক আর এডভেঞ্চার থাকবে না তা কি হয়? তাই আমরা ১ম ট্রেইলটা সিলেক্ট করে ট্যুর প্লান করি। সব সিদ্ধান্ত নেয়ার কয়েকদিন পর আমরা ৬ জন (আমি, নিয়াম, রিজভি, সাগড়, আনোয়ার আর রাহাত) নিজেদেরকে কমলাপুর এর ইউনিক কাউন্টারে আবিষ্কার করি ব্যাকপ্যাক সহ। প্রয়োজনীয় সব কিছুই নিয়ে নিয়েছিলাম ব্যাগ এ। তাতে সবার ব্যাগ এ মোটামুটি ফুল ছিল। অতঃপর রাত ১১ টার দিকে আমাদের গাড়ি ছাড়ে। সারা রাত নির্ঘুম থেকে মজা মাস্তি করে আমরা ভোর ৭ টায় বান্দরবন পৌছাই। বান্দরবন ঢোকার সময় বৃষ্টি হতে দেখে আমাদের মন আনন্দে নেচে ওঠে তিনাপ এর ম্যাক্সিমাম রুপ দেখতে পাব দেখে।

দিন ১ (রোয়াংছড়ি – কেপ্লাং পাড়া – পাইক্ষ্যং পাড়া – রনিন পাড়া)

নেমেই আমরা ফেরার টিকেট করে ফেললাম। শহড়ে ২০-৩০ মিনিট হাটাহাটি করে আমরা বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্যা অটোতে উঠলাম। ১০ মিনিটেই পৌছে গেলাম। বাসস্ট্যান্ড থেকে রোয়াংছড়ি যাওয়ার প্রথম বাস ৮ টার দিকে ছাড়ে। বাসের টিকেট করে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। একদম পাক্কা ৮ টার দিকে বাস ছাড়লো এবং আকাবাকা পাহড়ী পথ ধরে ১ ঘন্টা পর ৯ টায় আমারা রোয়াংছড়ি নামলাম। এবং এখানে নেমেই আমাদের প্রথম বাধার কবলে পরলাম। আমারা আগে থেকে গাইড ঠিক করে রাখি নাই। সো নেমেই একটা হোটেলের লোকের সাথে কথা বললাম গাইড এর জন্যে। সে ৩০ মিনিট পর একটা ২৩-২৪ বছরের ছেলে নিয়ে আসল যে আমাদের তিনাপ ঘুরাই নিয়ে আসতে পাড়বে। বাট তার গাইড কার্ড নাই। তো তাকে নিয়ে থানায় গেলাম এন্ট্রি করতে। থানার ওসি আসলো ১০:৩০ এ। ওসির নাম আরিফ।ঢাকার লোক। এসে বলল এর সাথে সে আমাদের ছাড়তে পারবে না। কার্ডধাড়ী গাইড লাগবে। ২ জন গেল NID ফটোকপি ও গাইড খুজতে। ওসি লোকটা খুব ভালো ছিল। উনি আমাদের একটা গাইড এর নাম্বার দিল। লোকটার নাম ছিল রয়েল। রয়েলদার বাড়ি রনিন পাড়া। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি রোয়াংছড়ি তে ছিলেন না। তবে উনি আমাদের আশ্বাস দিলেন যে আমাদের জন্যে একজন গাইড পাঠাচ্ছে। তখন ১১:৩০ বাজে। রনিন পাড়া তে সন্ধার মধ্যে পৌছাইতে হলে ১১ টার মধ্যে রওনা দেয়া উচিত। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু গাইড আসার নাম নাই। শেষ পর্যন্ত ১:৩০ এর দিকে গাইড আসল। গাইড পালশদা (Palash Tongchongya)। এসেই তিনি অভিজ্ঞের মত কাগজপাতির ঝামেলা শেষ করলেন। দেন আমরা থানা থেকে পারমিশন নিয়ে খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা করে রওনা দিতে দিতে ৩ টা বাজল। পিয়াজ, আলু, মসলা সহ সব কিছু সবার ব্যাগ এ ভাগ করে দেয়া হল। যাত্রার শুরুতে পথেই আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে হয়। ৩ টার দিকে রনিন পাড়ার ট্যুরিস্ট গ্রুপ দেখে আর্মিদের চোখ কপালে। উনারা বলল আমাদের তারা বাধা দিবে না যাইতে তবে এখন আমাদের না যাওয়া ই উচিৎ। আমাদের নাকি যাইতে যাইতে রাত ১২ টা বাজবে এবং জান বের হয়ে যাবে এই চড়াই উৎরাই পার হতে। উনারা আর্মি হয়েও নাকি এতদূর রাতে যাওয়ার সাহস করে না। একজন তো ডিরেক্ট বলেই দিল কিছু দূর গিয়েই আমাদের স্বাধ মিটে যাবে এবং আমরা ফিরে আসব। ক্যাম্প থেকে আমাদের গ্রুপ ফটো নিল। ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আমরা সিধান্ত নিলাম যাবই। কোন ভাবেই ফিরে যাব না। পলাশদা ও আমাদের সহস দিল।

শুরু হল যাত্রা!!

ট্রেক এর শুরুতেই আমাদের কে সর্বচ্চ বাধা দিতে শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। সবাই ভিজে একাকার। এই বৃষ্টিতে ঝিরিপথে বান নামে। পলাশদা দ্বিধায় পরলেন। কিন্তু ঝিরি পথ দিয়ে না গেলে ১ ঘন্টার মত বেশি লাগবে আরো। অত:পর রিস্ক নিয়েই আমরা ঝিরিতে নামনলাম। ৪০ মিনিটের মত ঝিরিতে হেটে পাহাড় উঠতে শুরু করলাম। ততক্ষনে বৃষ্টি নাই। পাহাড়ের উপর দিয়ে একপশে জুম ক্ষেত রেখে হাটতে লাগলাম। ভেজা শরীরে এত কষ্টেও প্রকৃতিকে স্বর্গ মনে হতে লাগল। ৫:৩০ এ আমরা কেপলাং পাড়ায় পৌছে গেলাম। ওখানে চা আর ১ টাকার পাহাড়ি কলা খেয়ে রওনা দিলাম, উদ্দেশ্য রাত নামার আগেই পাইক্ষ্যং পাড়ায় পৌছানো। আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। বুঝলাম এ বৃষ্টি আর থামবে না। ৬:৩০ এর দিকে আমরা পাইক্ষ্যং পাড়ায় আসলাম তখন পুরা অন্ধকার।

আবার আমাদের চা খেতে খেতে আলোচনায় বসতে হল। সেটা হল আমরা এখানেই থাকব না রনিন পাড়ার দিকে যাব? কারন আমরা ট্যুর প্লানে রাতে ট্রেক করার কোন প্রিপারেশন নেই নাই। তবে রোয়াংছড়ি থেকে ২ টা টর্চ কিনেছিলাম। সিদ্ধান্ত হল আমরা যাব। সবাই মোবাইল এর ফ্ল্যাশ অন করে পলিথিন এ ভরে নিলাম। একজন টর্চ নিয়ে সামনে আর একজন সবার পিছনে। রিজভি রাতে চোখে ভাল দেখে না তার উপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ওর চশমা ঘোলা করে দিচ্ছে। আবার সাগড়ের হাটুর সমস্যাটাও বাড়তেছে। বাট মনের জোড় কম না ওদের। ওদেরকে মাঝখানে দিয়ে এক লাইন ধরে আমরা রাতের অন্ধকারে গুরি গুরি বৃষ্টিরর মধ্যে শুরু করলাম উপরের দিকে উঠা। তখন ৭:১০ বাজে।

উঠতেসি তো উঠতেসি। পা লেগে যায় তাও শেষ হয় না। পলাশদাকে জিজ্ঞেস করি “দাদা আর কতক্ষন উঠতে হবে?” দাদা রিপ্লে দেয় “এইত আর একটু দাদা”। কিন্তু এই আর একটু আর শেষ হয় না। থেমে থেমে চলতে চলতে ৯:৪৫ এর দিকে আমরা চুড়ার দিকে পৌছাই যেখানে একটা বসার জন্যে ঘর আছে। এখন শুধু নামতে হবে। বিশ্রাম নিয়ে মোটামুটি খাড়া পাহাড় নামতে শুরু করলাম আস্তে আস্তে। বৃষ্টিতে হালকা পিচ্ছিল। লাইট দিয়ে দিয়ে সবাই মিলে একসাথে নামতে লাগলাম। নামার পর আবার হাটা। পাহাড়ে হাটতে হাটতে পা একসময় অটো হয়ে যায়। ইচ্ছা করলেও ক্যান জানি থামানো যায় না। হঠাৎ আনোয়ার জোক বলে দাড়াই গেল। সব জাগায় লাইট দিয়ে চেক করে সবাই ২-১ টা করে জোক ফেললাম গা থেকে। সাবধানে দেখে দেখে হঠতে হাঠতে আমরা ৯:৪৫ এর দিকে রনিন পাড়া আর্মি ক্যাম্পে চেক ইন করি। ক্যাম্প থেকে পাড়া ১ কিমি। অনেক বড় পাড়া রনিন পাড়া। পাড়াতে রয়েলদার বাড়িতে আমাদের থাকার ব্যাবস্থা করা ছিল। ১০:১৫ তে পৌছানোর পর সবার গা হাত পা ব্যাথা ছিল। আমরা হাউজে উঠানো ঝিরির ঠান্ডা পানিতে গোছল করে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম। পরেই ঘুম। কারন পরদিন যে এক বিশাল জার্নি পড়ে আছে আমাদের সামনে -_-

দিন ২ (রনিন পাড়া – দেবাছড়া পাড়া – পাইন্দু খাল – তিনাপ সাইতার )

৭ টায় উঠে আমরা মোটামুটি ফ্রেশ হয়ে জুমের চালের খিচুরি, ডিম ভাজা ও পাহাড়ি শসা দিয়ে খেয়ে নিলাম। তারপর ড্রেস পরে ওডমস লাগিয়ে ট্রেক এর জন্যে রেডি হয়ে নিলাম। সবার শরীর ব্যাথা ছিল কিন্তু ব্যাগ নিতে হবে না দেখে বেশ শান্তি লাগতেছিল। ৪+৪ টোটাল ৮ ঘন্টার ট্রেক আজ। একটা কথা বলে রাখি রনিন পাড়ার নিয়ম অনুযায়ী পাড়ার কোন গাইডকে সাথে নিতে হয়। আমাদের ব্যাক গাইড হিসাবে রয়েলদা গেলেন আমাদের সাথে। নিচে নেমে আমাদের লাঠিগুলা নিয়ে পাড়ার দোকানে চা খেলাম সবাই। চা খেয়ে ৮:১০ এর দিকে আমরা রওনা দিলাম। কিছুক্ষন হাটতেই সব ব্যাথা উড়ে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষন উপরের দিকে উঠে একটা পাহারের সাইড দিয়ে নামতে লাগলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক চলার পর দেবাছড়া পাড়ার দেখা মিলল। এখানে কোন দোকান নাই তাই আমরা পানি খেয়ে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষন বসলাম। গত দিনের মত বৃষ্টি নাই দেখে আজ বেশ পানি খেতে হচ্ছিল। গতদিন আনা কিছু নুডলস আর কেক রয়েলদার ব্যাগ এ নিয়ে আসছিলাম, রয়েলদা সেগুলা দেবাছড়া পাড়ায় রেখে গেলেন ফেরার সময় খাব বলে।

আবার রওনা দিলাম। প্রথমে অনেকখানি নিচে নেমে সোজা ঝিরিতে নামলাম। ঝিরি দিয়ে হাটতে থাকলাম। কখনো কখনো ঝিরিতে বুক সমান পানি পার হলাম। কিছুক্ষন পর পর ক্যাসক্যাড এর দেখা মিলে। একটায় থেমে আমরা গোসল করলাম। ঝিরি শেষে ছোট ছোট টিলায় উঠলাম। ৩-৪ টা ছোট টিলা পার হয়ে আবার নামা শুরু করলাম। উপর থেকে পাইন্দু খাল দেখা যাচ্ছিল ও গর্জন শোনা যাচ্ছিল। বিশাল এক খাড়া পাহাড় শুরু করলাম। রোদে মাটির ভেঙ্গে ঝুরি ঝুরি হয়ে ছিল। কোথাও কোথাও বসে বসে নামতে হচ্ছিল। নামার সময় একটা জিনিসই বার মনে আসতেছিল যে ফেরার সময় এইটা আমাদের উঠতে হবে। অবশেষে পাইন্দু খালে নেমে ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে খাল ধরে চলতে লাগলাম। খালের কিছু যায়গা বেশ গভীর। আমরা পার দিয়ে চলতে লাগলাম। এক জায়গায় ডুব দিতে দিয়ে আমার পকেট থেকে ভ্যাস্লিনের কৌটা পানির স্রোতে দৌড় মারল। বার বার মানা করা সত্ত্বেও রয়েলদা সেটা উদ্ধার করে আনল। ৪০-৪৫ মিনিট খাল ধরে হাটার পর প্রায় ১১:৪৫ এর দিকে আমরা জলপ্রপাতের গর্জন শুনতে পেলাম। এবং একটা বাক পেরোতেই আমরা তাকে দেখতে পেলাম।

সে আসলেই বিশাল!!! পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর ভেঙ্গে পরে ভয়ংকর সুন্দর করে তুলেছে। পাথরগুলো বেশ পিচ্ছিল। আমরা সোজা প্রপাতের নিচে চলে গেলাম। ভিজলাম ইচ্ছা মত। কখন যে ১ টা বেজে গেল টের ই পাই নি। টনক নড়ল বৃষ্টি ফোটা গায়ে পড়লে। রওনা দিলাম আমরা ফেরার জন্যে। ক্ষুধাটা টের পেলাম তখন বেশ ভালোমত। খাবার গুলা দেবাছড়া পাড়াতে রেখে আসার জন্যে আফসোস হতে লাগল। আমরা যখন খালের শেষ মাথায় তখন মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হল। খাড়া পাহাড় যখন উঠা শুরু করলাম ঝুরি ঝুরি মাটি গুলা তখন পিচ্ছিল কাদায় পরিণত হয়েছে। খুব আস্তে আস্তে উঠতে লাগলাম। প্রচুর হাপাচ্ছিলাম। আর শক্তি শেষ হয়ে আসতেছিল। পাহাড়ের চুড়ায় উঠে নিয়াম একটা বড়সর আছাড় খেলে সুয়ে থাকল কিছুক্ষন। সবাই রেস্ট করলাম। টিলা গুলা পার হয়ে ঝিরিতে নামার সময় আরেকটা বিপদ টের পেলাম। জোক। বৃষ্টি জোকদের জাগিয়ে দিয়েছে। সবাইকেই কম বেশি ধরল। ছোট ছোট জোক না। বড় টাইগার জোক। আতংকিত হয়ে গেলাম তখন যখন আমি আমার থাইতে ২ টা বড় বর জোক আবিষ্কার করলাম। রাহাত এসে ওগুলা টেনে ফেলল(টাইগার জোকগুলাকে টেনে না ফেলে লবন দেয়া ভালো। টেনে ফেললে ৫-৬ মাস ক্ষতস্থান এ চুলকানী থাকে)। আমি কিছুক্ষন বসে থাকলাম। শক্তি পাচ্ছিলাম না। নিয়াম ক্ষুধায় কাচা কলা পেয়ে খেয়ে ফেলল। ঝিরি পার হয়ে খাড়া পাহাড়ে উঠে আমরা যখন দেবাছড়া পাড়ায় আসলাম তোখন ৩:৩০ বাজে। পাহাড়ি এক দিদি নুডলস রান্না করে সবাইকে দিল। আমরা নুডলস আর কেক খেলাম। এমন সুস্বাদু খাবার যেন আমি আমার জীবনে খাই নি!! খেয়ে দেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আমরা আবার রওনা দিলাম। রনিন পাড়ায় পৌঁছাইলাম ৫ টার দিকে। এসে গোছল করে খেয়ে নিলাম। রয়েলদার বউ এবং মেয়ে আমাদের সার্ভ করল। সবাই খুব আন্তরিক ছিল। খেয়ে দোকানে গিয়ে চা খেয়ে আসলাম। সারাদিন ক্লান্তি আর পরিশ্রম ভ্যনিস হয়ে গেল। রুম এ এসে ৩ জন পলাশদার সাথে কার্ড খেলতে বসল। বাকিরা যার যার মত মোবাইল গুতাতে লাগল। টেলিটক এর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় এখানে অনেক ট্রাই করলে।

দিন ৩ (ফেরার পালা)

তেমন তাড়া ছিল না। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। দেন রয়েলদার সাথে হিসাব নিকাশ মিটিয়ে আমরা ১০ টার দিকে রওনা দিলাম। প্রচন্ড রোদ পড়ল ফেরার দিন। আমরা রনিন পাড়া আর্মি ক্যাম্পে চেক আউট করলাম। আসার দিন রাত ছিল বলে দেখতে পাই নি। আর্মি ক্যাম্পটা বেশ সুন্দর। ফেরার ট্রেইলটা বেশ সুন্দর ছিল কিন্তু প্রচন্ড রোদে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল বৃষ্টিই ভালো ছিল। আমরা বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে এগোলাম। ৪ টার দিকে আমরা রোয়াংছড়ি এসে পৌছালাম। রোয়াংছড়ি থেকে বান্দরবনের লাস্ট বাস ৫ টায়। টিকেট করে আমরা থানায় গেলাম। বাসের ড্রাইভারকে বললাম আমাদের থানা থেকে তুলে নিতে। ৬ টায় বান্দরবন পৌছে গেলাম। আমাদের গাড়ি ছিল ১০ টায়। ফেরার সময় সবাই বেশ ক্লান্ত ছিল। বাসে সবাই ঘুমাইতে ঘুমাইতেই এই ট্যুর এর সমাপ্তি টানলাম।

পলাশদার সম্পর্কে গ্রুপে অনেকে খারাপ রিভিও দিয়েছিল। কিন্তু আমরা খারাপ কিছু পাই নি। বেশ ভালো ব্যবহার করেছে আমাদের সাথে। তবে গাইড খরচটা আশার থেকে বেশি ছিল। কিন্তু ওভারল ভালো।

খরচ (Expense)

ঢাকা-বান্দরবন – ৬২০~
বান্দরবন- রোয়াংছড়ি -৮০~
গাইড-৩০০০~
ব্যাক গাইড -১০০০~
রনিনপাড়াতে খাওয়া (নিজেরা কিছু কিনে নিয়ে গেলে ওইটার দাম খাওয়ার বিল থেকে মাইনাস করে দিবে)
ডিম দিয়ে -১০০~
মুরগি-১২০~
দেশি মুরগি-১৮০~
খাসি -২০০~(পাওয়া গেলে)
থাকা -১৫০~ প্রতি রাত প্রতি জন
আমাদের ৬ জনের গ্রুপে জন প্রতি ৩৩০০ টাকার মত খরচ হয়েছিল।

যা যা লাগবে (আমরা যা যা নিয়েছিলাম আর কি)

  • ট্রেক স্যন্ডেল
  • আইডি কার্ড
  • পলিথিন (ছোট কয়েকটা আর ব্যাগ রাখার জন্যে বড় একটা)
  • টিশার্ট -৩ টা
  • হাফ প্যান্ট / ৩ কোয়াটার / ট্রাউজার –২ টা
  • গামছা এবং লুঙি (আর কোন কাপর না নিলেই চলবে। নো জিন্স। নো শার্ট। নো আন্ডারওয়ার)
  • পানির বোতল। ১.৫ লিটার।
  • লাইট, চাকু,ক্যাপ, পাওয়ার ব্যাংক
  • ভ্যাসলিন, তেল, ওডমোস, গুল, লবন
  • ঔষধ (প্যারাছিটামোল, সেলাইন, ম্যালেরিয়ার জন্যে ডক্সিক্যাপ, গজ, স্যাভলোন, ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ)

পরামর্শ

  • বান্দরবন থেকে রোয়াংছড়ি যাবার ফার্স্ট গাড়ি ৮ টায় ছাড়ে।।। ফার্স্ট টিপেই যাওয়া ভাল 🙂
  • পানির সমস্যা পাহাড়ে থাকবেই। অনেক কষ্টে এরা পানি জমায়। এই কষ্ট আর শ্রমের মূল্য টাকা দিয়ে নিরূপণ করা সম্ভব না। আমাদের থাকার জন্য ওরা কাঁথা, জায়গা ছেড়ে দেয় নিজেরা কষ্ট করে। দয়া করে ওদের সাথে দামাদামি করবেন না। আপনি কয়েকশো টাকা বেশি দিলে সেই টাকায় ওরা দালানকোঠা বানাবে না।
  • পাহাড়ে পানির কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট যারা এইগুলো অভিযোগ করবেন, তারা এইসকল জায়গা থেকে ৩৯৭ কিলোমিটার দূরে থাকুন। পাহাড় কষ্টের জায়গা।
  • পাইনক্ষ্যং পাড়া, রনিপাড়া, দেবাছড়া পাড়ায় মোটামুটি টিনের ঘেরাও দেয়া আর সিমেন্টের প্যান বসানো টয়লেটের ব্যাবস্থা আছে, অন্তত শূকর আপনার বিষ্ঠা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে না।
  • অনুমতি ছাড়া পাহাড়িদের ছবি তুলবেন না, আগে অনুমতি নিয়ে নিন।
  • অবশ্যই অবশ্যই ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেতে হবে। অনেকেই ত্যাড়াব্যাড়া করে ওষুধ খান না। নিয়ম নিয়মই, পাহাড়ের নিয়ম আপনাকে মানতেই হবে। ম্যালেরিয়া প্রবণ জায়গা থেকে ঘুরে আসার এক বছর পরেও ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। কাজেই সাবধান।

ডক্সিক্যাপ (ডক্সিসাইক্লিন ১০০ মি.গ্রা) প্রতিদিন একটি করে, প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া ভাল। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে রওনা হবার আগের দিন থেকে শুরু করে ফিরে আসার চার সপ্তাহ পর (২৮ দিন) পর্যন্ত প্রতিদিন একটা করে খেতে হবে। একদিনও মিস দেওয়া যাবে না। সুতরাং আপনি যদি সেখানে ৫ দিন থাকেন সেক্ষেত্রে যাওয়ার আগে ২ দিন + থাকবেন ৫ দিন + ফিরে আসার পর ২৮ দিন টোটাল ৩৫ টা ট্যাবলেট ৩৫ দিন খেতে হবে, একদিনও মিস দেওয়া যাবে না।

Leave a Comment
Share