সোনাইছড়ি ট্রেইল এ একদিন

অনেক দিন ধরে গলার কাটা মত আটকে ছিল সোনাইছড়ি ট্রেইল। বর্ষা কালে যাওয়া খুব কঠিন তাই এই শুকনা মৌসুমেই গেলাম। ৮ মার্চ ২০১৮ তে ৯ জন বন্ধু বান্ধব মিলে রওনা দিলাম ফেনীর উদ্দেশ্যে। সকাল ৬ টায় আমাদের মহিপাল,ফেনী নামলাম। সেখানে সকালের নাস্তা খেয়ে ট্রাকিং এর জন্য কিছু শুকনা খাবার নিয়ে হাদি ফকির হাট যাবার বাস এ উঠে পরলাম ৭:৩০ টায়। আনুমানিক ৯ টায় আমরা হাদি ফকির হাট পৌছালাম সেখানে আমাদের গাইড নিজাম ভাই এর সাথে দেখা হল। আমি সব সময় নিজাম ভাই এর সাথেই ট্যুর দেই। বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম পাহারের গোড়ায়। এখন থেকে আমাদের ট্রাকিং শুরু।

ট্রেকিং শুরু হতে না হতেই টাশকি খেয়ে গেলাম। কি বড় বড় পাথররে ভাই। এই বড় বড় পাথরের পিছনেই ঘাপ্টি মেরে আসে বাদুইজ্যাখুম। আর বাদ্দুইজ্যাখুম এর ভিতরে ঘাপ্টি মেরে থাকে প্রচুর বাদুর। বাদ্দুইজ্যাখুম যেতে সময় লাগল ২০ মিনিট। বাদ্দুইজ্যাখুম এর চরম দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে কিছু ছবি তুলে ডানের খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠা শুরু করলাম। গিয়ে পৌছালাম বাদ্দুইজ্যাখুম এর উপরি অংশে দুই পাশের খাড়া খাড়া পাহারের দেয়াল গুলো স্থান টা কে আরো আকর্ষণী করে তুলছে। বেশীরভাগ মানুষ এই পর্যন্ত ঘুরে চলে যায়।

কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পুরো সোনাইছড়ি ট্রেইল (Sonaichhari Trail) শেষ করে ফটিকছড়ি দিয়ে বের হব। তাই আমরা আরো একটা পাহার ডিঙ্গি য়ে নেমে পড়লাম সোনাইছড়ি ট্রেইল এর অন্য অংশে। এই ঝিরিপথে ঝর্না কম কিন্তু প্রচুর ক্যাসকেড আছে। আসলে এই ঝিরিপথটা ই অপূর্ব। বর্ষা কালে এখানে এখানে আসলে ঘোর বিপদে পড়বেন। ঝিরির কোথাও সূর্যের আলো ঠিক মত আসে না ( আপনারা ছবি দেখলেই বুজতে পারবেন)। জায়গাটা বেশ শীতল ছিল। কিছু কিছু ক্যাসকেড দেখতে ত পুরাই ন্যাচারাল সুইমিংপুল এর মত। ঝকঝকা ঠান্ডা পানি দেখেই মনে হবে ঝাপ দিয়ে দেই। তেমনি একটা ক্যাসকেড এ নেমে পরলাম। ভাইরে রে ভাই কি ঠান্ডা পানি। যেন হাত পা সব বরফ হয়ে গেলো। আর নিমিষেই সব ক্লান্তি নাই হয়ে গেলো।

পুরো রুপকথার রোমাঞ্চকর ঝার্না গুলোর মত ঝিরিপথটা। ঝিরিপথ টা গিয়ে উঠে ফটিকছড়ি খালে। খাল টা দেখে মনে হল যে একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি অফার পেলাম। খালের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবেনা। সোনাইছড়ি ঝিরিপথের সাথে সমানে সমান। খাল ধরে হাটতে হাটতে পৌছেগেলাম ত্রিপুরাপাড়া তে। এই ট্রাইল আমাকে প্রতি পদে পদে অবাক করেতেছে। ত্রিপুরা পারা যেন এই ট্রেইল এর উপসংহার টা খুব ভালো ভাবেই লেখে দিল। এখন ফিরতি পালা। এই পর্বটা আমার কোন সময়ই পছন্দের না। কিন্তু কিছু করার নাই নিড়ে ফিরতে হবেই ব্যস্ততাকে ফাকি দিয়ে কিছু সময়টা অস্থির কাটল। ত্রিপুরা পাড়া থেকে সিএনজি নিয়ে পৌছালাম কাজির হাটে। সেখান থেকে অন্য সিএনজি তে করে গেলাম বিবির হাট। বিবির হাটে সৌদিয়া আর শ্যামলী কাউন্টার আসে। আমরা সৌদিয়া করে ঢাকা বেক করলাম এবং সাথে নিয়ে আসলাম কিছু দারুন প্রতিচ্ছবি।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা – ফেনী – হাদি ফকির হাট – সোনাইছড়ি।

বি:দ্র: ট্রেইলটা এখন অনেক সুন্দর। পাহাড়কে নিজের মত সুন্দর থাকতে দিন। যেখানে সেখানে ময়লা ( লজেন্স, চিপ্স এর প্যাকেট) ফেলে আপনার মূর্খতা পরিচয় দিবেন না।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ chittagongsonaichhariTrail