নিঝুম দ্বীপের নির্জনতায় একদিন

নিঝুম দ্বীপ (Nijhum Dwip) আসলেই নিঝুম। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করে দিবে এ দ্বীপ। হাতিয়া থেকে যাওয়ার রাস্তাটা যদিও কিছুটা ক্লান্তি কর তবুও সকল ক্লান্তি হার মেনে যায় এ দ্বীপে পৌছানোর পরে। গত ২০ ই নভেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ৫ টা ৩০ এর দিকে সদরঘাট থেকে ফারহান ৪ এ উঠে পড়লাম হাতিয়া যাওয়ায় উদ্দেশ্যে। গন্তব্য নিঝুম দ্বীপ। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে সকাল সাড়ে সাতটায় আমরা হাতিয়া পৌঁছালাম। সকালের নাস্তা সেরে দুপুর ১২ টার মধ্যেই আমরা নিঝুম দ্বীপ চলে আসলাম। আমি যেভাবে গিয়েছিলাম তার বিস্তারিত নিচে দিয়ে দিলাম:

বিকেল ৪:৩০ এর মধ্যে আমরা সদরঘাট চলে যাই। ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায় ফারহান ৩ আথবা ৪ ও তাসরিফ ১ অথবা ২। সদরঘাট থেকে ঠিক সন্ধা ৫:৩০ ছেড়ে যায় ফারহান ও ৬ টায় ছেড়ে যায় তাসরিফ। সিঙ্গেল কেবিন ৯০০ ডাবল কেবিন ১৮০০ আর ডেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া। ফারহান লঞ্চের বুকিং নাম্বার হলো ০১৭৮৫৬৩০৩৬৫ , ০১৭৮৫৬৩০৩৭০, ০১৭৮৫৬৩০৩৬৬ ও তাসরিফ লঞ্চের বুকিং নাম্বার হলো ০১৭৩০৪৭৬৮২২, ০১৭৬৮৯৬২১০৮, ০১৭৩০৪৭৬৮২৪।

পরেরদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আপনাকে হাতিয়ার তমরুদ্দিন ঘাটে নামিয়ে দিবে। ওখানে নাস্তা সেরে আপনি মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাবেন মুক্তারিয়া ঘাটে। তমরুদ্দিন ঘাঁটেই আপনি মোটরসাইকেল পাবেন, অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন জনপ্রতি ২০০ টাকা নিবে, ওরা ভাড়া বেশি চায়। মুক্তারিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে অথবা নৌকায় নিঝুমদ্বীপ। স্পিডবোটে ভাড়া জনপ্রতি ৬০৳, সময় লাগবে ৫ মিনিট আর নৌকায় ভাড়া ২০৳ , সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ঘাটে নেমে আপনাকে যেতে হবে নামার বাজার, মোটর সাইকেলে ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৫০৳ টাকা করে। তবে ওরা কিন্তু আপনাকে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে, আপনি তা না করে নামার বাজার নেমে আপনার পছন্দমত হোটেলে উঠবেন।

আমি উঠেছিলাম নামার বাজার শাহিন হোটেলে, রুম মোটামুটি ভালো এক রুম ভাড়া পড়বে ১০০০৳ হাজার টাকা। চারজন থাকতে পারবেন। নামার বাজার ভাই ভাই হোটেলের পাশেই একটি খাবার হোটেল রয়েছে, ওখানে খাবারের মান ভালো এবং দাম মোটামুটি সস্তা। ওই হোটেলে আপনি অবশ্যই কাকড়া খেতে পারেন। ওরা কাকড়ার একটি অসাধারণ রান্না করে থাকে। অবশ্যই বেশি বেশি করে মহিষের খাঁটি দুধের দই খাবেন। ওখানে তাজা মাছ পাওয়া যায় অর্ডার দিলে ওরা রান্না করে রাখবে।

নিঝুম দ্বীপ এর আশেপাশে বেশ কিছু বন ও চর রয়েছে, যেখানে গেলে আপনি হরিণ দেখতে পাবেন। তবে হরিণ দেখতে আপনাকে খুব কষ্ট করতে হবে। হয় খুব ভোরে বের হয়ে যেতে হবে না হয় সন্ধ্যার আগে আগে বের হয়ে যেতে হবে। ওখানকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গাইড হিসেবে কাজ করবে। আপনি যদি ওদেরকে ২০ থেকে ৩০ টাকা বা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দিয়ে দেন তাহলে ওর আপনাকে হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসবে। তবে ওখানকার ঘন জঙ্গলে কোন ভয় নেই, আমি ভোর ৫ টায় জঙ্গলের ভিতরে একজন ছোট গাইড কে নিয়ে হরিণ দেখার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিলাম অবশেষে ২ ঘন্টা হাঁটার পর হরিণের দেখা পাই। নিঝুম দ্বীপের দমার চরে অনেক পাখির দেখা পাবেন। নিঝুম দ্বীপের বিচে আপনি অনেক লাল কাকড়া দেখতে পাবেন।

বিঃদ্রঃ দয়া করে কেউ বন্যপ্রাণীদের ভয় দেখাবেন না এবং দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হয় এ ধরনের কোনো কাজ করবেন না।
Leave a Comment
Share