নেত্রকোনা

একদিনের ট্যুরে বিরিশিরি, নেত্রকোনা

হুমায়ুন আহমেদের কল্যানে তার ভক্তদের কাছে নেত্রকোনা, সুসং দূর্গাপুর, সোমেশ্বরী নদী অতিপরিচিত। কল্পনায় কিংবা বিভিন্ন পোষ্ট দেখে সোমশ্বরী নদী বা বিরিশিরি সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু বাস্তবে এটা কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। মেঘালয় রাজ্যের গাড়ো পাহাড় বেষ্টিত সোমেশ্বরী নদী আপনাকে মোহিত করবেই। যারা জাফলং গিয়েছেন অনেকটা তার সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন যদিও এখানে পাথর নাই। জিরো পয়েন্ট থেকে মেঘালয়ের নীল পাহাড় বেষ্টিত সোমেশ্বরীর সৌন্দর্যে ডুবে যাবেন আর ভাববেন এতো চমৎকার জায়গা অথচ এর কোন প্রচার নাই!

কি কি দেখলাম

আমি আমার স্ত্রী আর বাচ্চাসহ একদিনের ট্যুরে গিযেছিলাম। আমরা চীনামাটির পাহাড়, সবুজ ও নীল পানির দুটি লেক, বিজিবি বাজার, হাজং মাতা রাশি মনি স্মৃতিসৌধ, কমলা বাগান, সৌমশ্বরী নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেছি। আরো কিছু স্পট ছিল, কিন্তু সময়ের স্বল্পতায় যেতে পারিনি সেইসব জায়গায়।

প্রথমে গেলাম চীনামাটির পাহাড় ও সবুজ পানির লেক দেখতে। চীনা মাটির পাহাড় ও সবুজ পানির লেক দুটি অদ্ভূত সুন্দর। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হবেন আর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে চার্জড হবেন। একজন গাইড (ছোট বাচ্চা) নিলে ভাল। সে স্বল্প পরিশ্রমে সাইট ভিজিট করাবে। অন্যথায় পাহাড়ী রাস্তায় এলোমেলো হেটে এনার্জি লস করবেন।

চীনামাটির পাহাড়

এরপর চলে গেলাম বিডিআর ক্যাম্পে। সেখানে অপেক্ষমান সৌন্দর্যের দুয়ার। চমৎকার নদীর ঘাট (বিজিবির তৈরি, তাদের গোসল করার জন্য), ঘাটে রয়েছে বড় ইঞ্জিন চালিত বোট ও ছোট ডিংগি নৌকা। আমরা নিলাম ডিংগি নৌকা কারন ইঞ্জিনের শব্দ ভালো লাগে না। মাঝি নিয়ে যাবে জিরো পয়েন্টের কাছে। সামনেই মেঘালয় বেষ্টিত নীল পাহাড়, দুই পাশে চমৎকার জঙ্গল, উপজাতিদের বসতি। অনেকটা কাপ্তাই লেকের মত তবে নদীর প্রশস্থতা অনেক বেশি। আর মেঘালয়ের পাহাড়ের সৌন্দর্য অপরুপ। দুঃখজনক হলো, এই সৌন্দর্য ক্যামেরায় ধারন সম্ভব নয়। জিরো পয়েন্ট ভূলেও অতিক্রম করা যাবে না কারন সাথেই বিএসএফ ক্যাম্প।

হাজং মাতা রাশি মনি স্মৃতিসৌধ

নৌভ্রমণ শেষ করে গেলাম কমলা বাগান। অনেক আগে কমলা বাগান ছিলো, বর্তমানে কোন কমলা গাছ নেই, আছে পাম গাছ। পাহাড়টা মধ্যম উচ্চতার তবে ভালো লেগেছে। যদিও নামকরনটা বিভ্রান্তিকর। আরো কিছু স্পট ছিলো কিন্তু সময়াভাবে দেখা হলো না।

কিভাবে যাবেন

আমরা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল যাই এনা বাসে। সেখানে একরাত ছিলাম। পরের দিন সকালে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা রিজার্ভ করলাম সারাদিনের জন্য (ত্রিশাল to দুর্গাপুর (up down), ভাড়া ২৫০০ টাকা)। জার্নিটা ছিল অসাধারন। যারা বিভিন্ন পোষ্টে বিরিশিরির বর্ননা পড়েছেন তাদের ৯৯%-ই বলেছে রাস্তার বেহাল দশার কথা। সুখের বিষয় এই যে, এখন রাস্তা অত্যন্ত ভালো। গাজীপুর চৌরাস্তা হওয়ার পর ময়মনসিংহ হয়ে বিরিশিরি (প্রায় ১৬০ কিমি) পর্যন্ত চমৎকার রাস্তা। দুইপাশে বিস্তৃত সবুজ দেখতে দেখতে কখন যে চলে যাবেন টেরই পাবেন না। পাহাড়ী রাস্তার সাথে তুলনা না করে, শেষ কবে এমন সমতলের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন এই প্রশ্ন মনে জাগ্রত হতেই পারে। যারা নিজেরা ড্রাইভ করেন, শুধু এই রাস্তাটাই ভ্রমণ করতে পারেন।

সোমেশ্বরী নদী

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন, ব্যাক্তিগত গাড়িতে করে চলে যাবেন দূর্গাপুর। সোমেশ্বরী নদী পার হবেন খেয়া ঘাট থেকে। ওপার থেকে অটো, ব্যাটারী চালিত রিক্সা বা বাইক সবগুলো স্পট ঘুরানোর জন্য ভাড়া করে আরাম করে সৌন্দর্য উপভোগ করবেন (সময় লাগবে আনুমানিক ৩ ঘন্টা)। পথে বিভিন্ন ছোট ছোট হোটেল রয়েছে। যেহেতু পর্যটক কম তাই হোটেল গুলো উন্নত মানের না। তবে আমরা যে হোটেলে খেলাম তাদের রান্না বেশ ভালো ছিল।

কেমন খরচ

  • ঢাকা টু ময়মনসিংহ (বাস / ট্রেন): ১৫০- ২৫০
  • ময়মনসিংহ টু র্দূগাপুর (বাস / ট্রেন / সিএনজি): ১০০-৩০০
  • ঢাকা টু র্দূগাপুর (বাস / ট্রেন ): ৩০০-৫০০
  • খেয়া পাড়াপাড় : ০৫
  • রির্জাভ অটো রিক্সা (০৩ সিট): ৩০০-৫০০ সবগুলো স্পট
  • রির্জাভ অটো (০৭ সিট): ৬০০-১০০০ সবগুলো স্পট
  • নৌকা: ৫০ টাকা (১টি স্পট), ১০০ টাকা (২টি স্পট) (জনপ্রতি)
  • দুপুরের খাবার: ১০০-২০০ টাকা।

সতর্কতা

লেক বা নদীতে নামবেন না। অতীতে অনেক দূর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। ময়মনসিংহ-বিরিশিরি রোডে গাড়ি তুলনামূলক কম চললেও প্রচুর ট্রাক চলে তাই সাবধানে গাড়ি চালাবেন। কপাল খারাপ হলে ট্রাকের কারনে অনেক সময় জ্যামের খপ্পরেও পরতে পারেন। খেয়া পাড়াপাড়ের সময় অনেক যাত্রী, মটর সাইকেল নৌকায় উঠাবে। ভয়ের কিছু নাই, এটাই ঐ স্থানের সিস্টেম। এলাকাবাসীদের ও আদিবাসীদের সম্মান করবেন। যেখানে সেখানে পলিথিন, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট ফেলবেন না। আপনার সতর্কতা রক্ষা করবে প্রকৃতির সৌন্দর্য।

পরিশেষে একদিনের ট্যুর প্লান যারা করছেন তারা অবশ্যই যাবেন। যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো লাগবে। হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ daytourdaytripnetrokona