♡ সৌন্দর্য মণ্ডিত মায়াবী মরিশাস ♡

সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমার কল্পনায় তুলিতে আঁকা মায়াবী কিন্তু সৌন্দর্য মন্ডিত ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র – মরিশাস (Mauritius), যার আকর্ষণ থেকে আমি কখনই মুক্ত হতে পারিনি। সেই মায়াবী টানে এবার সত্যি সত্যিই ভেসে গেলাম এক লহমায়তেই। তাই আর পেছন ফিরে না ভেবে (কারণ এক বছরও হয়নি বালি দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে এলাম) সময় ও আর্থিক দিকের কথা বেমালুম চেপে গিয়ে তার মায়াবী ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলাম না।

যাই হোক যথা সময়েই আমাদের যাত্রা শুরু হলো, সেই স্মরণীয় স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ কিনা ১৫ই আগষ্ট। রাতের ফ্লাইটে কলকাতা থেকে দিল্লি, তার পর দিন ভোরের Air Mauritius এর ফ্লাইটে আমাদের মরিশাস যাত্রা শুরু হলো। যাত্রা পথে আবহাওয়া ভাল না থাকার জন্যে বেশি ভাগ সময়ই সিট বেল্ট বেঁধে রাখতে হলো। এরকম অভিজ্ঞতা আমাদের বালি বা ব্যাংকক যাওয়া বা আসার পথে আগেও হয়েছে ঠিকই কিন্তু এবার একটু বেশিই পেলাম। যাই হোক, যার শেষ ভালো তার সব ভালো, এটা অনুভব করতে শুরু করলাম যখন আমরা মরিশাসের এক মাত্র (Sir Seewoosagur Ramgoolam Airport) এর কাছে চলে এলাম। আকাশ থেকেই আমার কল্পনার জগতের সঙ্গে মিল খুঁজেতে শুরু করলাম। সত্যি সত্যিই মেঘের আনাগোনা ও লুকোচুরির মধ্যেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটতে শুরু হলো। এক কথায় অবলিলাক্রমেই।

তাই লোভ সামাল না দিতে পেরে যাত্রা পথের শেষ সেই অতি মায়াবী ও সৌন্দর্য মন্ডিত মরিশাসের প্রেমে ভেসে যাওয়ার সুন্দর মুহুর্ত গুলো কে হাত ছাড়া না করে বেমালুম ভিডিও বন্দির সুযোগেকে কাজে লাগিয়ে দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম। যার কথা না বললেই অন্যায় হবে তা হলো ভূবানমহিনী ও অপার সৌন্দর্যের ডালি উজাড় করে অকৃপণ ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে দেশটিকে পরিবেষ্টিত করে রাখা অগুনতি বীচ। তার পরেও আছে এক অবিস্মরণীয় আগ্নেয়গিরির কথা। অনেক অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া আগ্নেয়গিরির থেকে নির্গত লাভা ঐ স্থানের এক বিপুল পরিমাণ পরিবর্তন ঘটিয়েছে যার প্রমাণ এখনও বিদ্যামান। সেই লাভা প্রভাহিত হয়ে বিভিন্ন রংয়ের মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। যা এক কথায় খুবই আকর্ষণীয় করে তুলতেছে মরিশাসকে। শুধু তাই না সেই আগ্নেয়উৎপাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে এক সুবিশাল গোলাকৃতি খাদ। তার গভীরতাও কোন অংশে কম নয়।

এবার আসি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাজধানী Port Louis এর কথায়। যেহেতু দেশটি দ্বীপ রাষ্ট্র তাই এর Port এর মাহাত্ম্য থাকবেই। Capital City Port Louis তেই হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট। এটাও অবাক হয়ে দেখার মত বটে। তাই বলি আয়তনে এত ছোট্ট একটি দেশ যার লম্বায় ৬৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৪৫ কিলোমিটার মাত্র সেই টুকু যায়গার মধ্যে কি নেই? তাই তো পৃথিবীর সমস্ত ভ্রমণ প্রেমিক মানুষের কাছে স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পেরেছে এই সুন্দরী কিন্তু মায়াবীও বটে এবং অপার সৌন্দর্যের ডালি উজাড় করে দেওয়া মরিশাস।

আমাদের মরিশাস বিমানবন্ধরে নামার পরে “On Arrival Visa” পেতে কোন রকমই অসুবিধে হলো না। এটা ভারতীয়দের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা। সত্যি সত্যিই ওঁনারা আমাদের স্বাগত জানালেন খুব সুন্দর ভাবেই। মাঝে মাঝে একটু হিন্দি কথাও বলতে চাইছিলেন। তার একটা বিশেষ কারণও ছিল দুদিন পরে যে “বিশ্ব হিন্দি ভাষা সম্মেলন” এই মরিশাসেই হচ্ছে। তাই আমাদের বিশেষ ভাবে বরণ করা হলো। ভালই লাগছিল এ মুহুর্তে ভারতীয় হিসেবে।

এবার আমাদের জন্যে আগে থেকে বিকুং করা গাড়ি অপেক্ষা করছিল। তাঁরাও আমাদের স্বাগতম জানাবার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন সুন্দর ভাবেই। কিছু USD Exchange করে এবং লোকাল একটা সীম নিয়ে (এটা আমারা সব সময়ই করে থাকি বিদেশে বেড়ানোর সময়) বেড়িয়ে পড়লাম বিমানবন্ধর থেকে আমাদের বুকিং করা রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।

বেড়িয়েই চমক আকাশে দিকে তাকিয়ে। মরিশাসের প্রেমে আমি সেই কবে থেকে পেরেছিলাম জানি না, তবে কথা দিচ্ছি এখানে এলে মরিশাসকে ভালবাসার আগে তার আকাশে মেঘের ভেলার আনাগোনা দেখে তার প্রেমে না পরে উপায় নেই। এই ছোট্ট একটা দ্বীপ রাষ্ট্রের মধ্যে এত রকমারি সুন্দর সুন্দর আকৃতির পাহাড় যা এক কথায় খুবই আকর্ষণীয় করে তুলতে দ্বীপ নগরীকে। যা না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব ও বটে। এই সব চমকের মধ্যে আরও একটি বড় চমক মরিশাসের জাতীয় পতাকার সঙ্গে আমাদের জাতীয় পতাকার সমান তালে ও সমহীমায় সহাবস্থান। যা কিনা যে কোন ভারতীয় কে গর্বিত না করে পারে না। এর কারণ আমি আগেই বলেছি ঐ “বিশ্ব হিন্দি ভাষা সম্মেলন”।

এই ভাবেই এগিয়ে চলেছে আমাদের গাড়ি ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আমাদের রিসোর্টের দিকে যার অবস্থান মরিশাসের ঠিক উত্তর – পশ্চিম প্রান্তে। আর আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে দক্ষিণ – পূর্ব প্রান্ত থেকে (কোনা কুনি Opposite Side বলা যেতে পারে)। এতে যে সুবিধে ভোগ করলাম তা হলো বাব বার দ্বীপ রাষ্ট্রের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বেড়ালাম অবলীলাক্রমে। যা আমাদের কাছে একটা বাড়তি মাত্রা যোগ করল ওখানে থাকার ক’দিন।

গতকাল রাত থেকে একের পর এক পট পরিবর্তনেকে আপন মনে সঙ্গী করে চলেছি আনন্দের সঙ্গেই। তাই তো দু দুটো Flight এর এতোটা জার্নি, তার সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্ধরে গভীর রাতের কিছুটা সময় কাটানো, সব মিলিয়ে একটা ক্লান্তির ছাপ মনে ও শরীরে উপর প্রভাব বিস্তার করার কথা। এই সময় মনে হওয়াই স্বাভাবিক গাড়ির সিটে শরীর এলিয়ে চোখ বুজে একটু বিশ্রাম নেওয়ার কিন্তু সে সব কই ?

এ দেশের প্রধান Income Tourism 🏝 থেকে। এর পরেই এদের আয়ের আর একটা উৎষ হচ্ছে Sugar Cane Industry, তার প্রমাণ স্বরূপ যাত্রা পথে দেখতে পেলাম প্রচুর পরিমাণে আঁখের ক্ষেত মাঝে মধ্যেই ছড়িয়ে আছে। এখানে সবাই দেশের নিয়ম কানুন খুব সুষ্ঠু ভাবে মেনে চলেন। তাই রাস্তা ঘাটে পুলিশের কোন সন্ধান মেলাই ভার। এদেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় কোন ভেদাভেদ নেই। তাই হিন্দু – মুসলিম – শিখ – বোদ্ধ – খ্রিস্টান – বা অন্য অন্যান্য জাতির সহ অবস্থান যা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যে খুব জরুরী।

ড্রাইভারের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমাদের রিসোর্টটি খুব মনোরম পরিবেশের মধ্যেই অবস্থিত। কাছেই একটি বিখ্যাত Beach যার পোশাকি নাম হচ্ছে 🏖 TROU AUX BICHES 🏝 এই কথা বলতে বলতেই আমাদের গাড়ি ঐ সৌন্দর্য মন্ডিত পরিবেশে মধ্যেই চলে এলো। এই দেখুন সেই Beach যার কথা আমি বলছিলাম। চোখ তো ছানা বড়া। ভাবতে শুরু করেছি এখনই একবার গাড়ি থেকে নেমে পরব কিনা? ঠিক এরকমই এক মুহুর্তে আমাদের সারথি গাড়ি থামিয়ে জানিয়ে দিলেন এখানে এখানকার মত যাত্রা শেষ আপনাদের রিসোর্ট এসে গেছে 🤔 সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আমকে কেউ ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে একটা সুন্দর ও খুব মিষ্টি স্বপ্নের বিঘ্ন ঘটাল 😣 কিন্তু কই এ তো আর এক স্বপ্নপুরীর প্রবেশ দ্বার যা কিনা আমাদের জন্যে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়🏠 😊 🏘। ঘোর কাটিয়ে এখানের কিছু আনুষ্ঠানিক নিয়ম কানুন খুব সুন্দর ভাবেই পালনের মাধ্যমে আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানান হলো, যাও আবার কিনা একটি লোভনীয় Swiming pool এর পাশে বসিয়ে। তাই চমকে পর চমকে চলতেই থাকলো। আমাদের রুমগুলোর অবস্থানও বড়ই আকর্ষণীয় সুদৃশ্য আরও একটা Swimming pool এর পাশে।

এই মুহুর্তে ওখানে একটু একটু শীতের আমেজ যা আমাদের মন -প্রাণকে আর সতেজ করে তুলেছে। কোথায় আমাদের এত জার্ণির ক্লান্তি? 🤔 মন চাইছিল pool এ নেমে পরি। কিন্তু নিজেদের সংযত ও নিবারণ করলাম আমরা সবাই যাতে এখানে কদিন সুস্থ ভাবেই কাটাতে পারি এই কথা ভেবেই। Swimming Pool তো আর চলে যাচ্ছে না আমাদের সঙ্গেই তো এ কদিন থাকছে। এখানে বলার প্রয়োজন ওখানে সেই মুহুর্তে বিকেল সাড়ে চারটা। যা কিনা আমাদের দেশের থেকে ঠিক এক ঘন্টা তিরিশ মিনিট পিছিয়ে। ঐ মুহুর্তে এতটুকুও বিশ্রাম নেওয়া কথা না ভেবে যতটা পারলাম মনের আনন্দে ভিডিও ও ছবি তুলে গেলাম।

খোলামেলা পরিবেশে আলাদা আলাদা ব্লকে রুমের ব্যবস্থা। যা প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়া জন্যে আদর্শ। আর আলাদা আলাদা করে কত যে সুইমিং পুল বলতে গেলে মনে হবে প্রায় সব রুম গুলোর সঙ্গে পুল এর সংযোগ যা একটা বাড়তি মাত্র যোগ করেছ। সেই সঙ্গে প্রচুর সুন্দর সুন্দর না না রকম গাছের সমারোহ। তাই দেখতাম অনেকেই এই মনোরম পরিবেশের মধ্যেই সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন সঙ্গে Swimming করার সুবিধে তো আছেই।

২য় দিন

Coloured Eraths

আজ আমাদের গন্তব্য মরিশাসের বিখ্যাত Coloured Eraths যা কিনা অনেক অনেক বছর আগে এক সুবিশাল আগ্নেয়গিরি থেকে যে গলিত লাভা বেড়িয়ে ছিল তা থেকেই উৎপত্তি। যা কিনা এত গুলো বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও কি বিচিত্র বাহারি রং ও রূপ নিয়ে অবস্থান করছে তা এক কথায় অতুলনীয়। যা দেখার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণ পিপাসু লোকজন ছুটে আসেন এই মরিশাসে। এখানে এরা Seven Coloured Earths ও বলে থাকে। সত্যি সত্যিই এই বিশেষ জায়গাটি ওরা সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে যে ভাবে সংরক্ষণ করে চলেছে যা আমাদের কাছে শিক্ষণীয়ও বটে। Southern Mauritius এর ঐ বাহারি রংয়ের বিশেষ মাটির কিছু ভিডিও ও ছবি তুলে দিলাম তার কিছুটা আন্দাজ পাওয়ার নিমিত্তে মাত্র।

৩য় দিন

আজ আমাদের গন্তব্য হচ্ছে মরিশাসের এক বিখ্যাত প্রাইভেট বিচে। এর একটা গালভরা নামও আছে ILE AUX CERFS এটা মরিশাসের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত । আমাদের রিসোর্তের অবস্থান হচ্ছে মোটামুটি উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে। তাই যাত্রা পথেও দ্বীপরাষ্ট্রটিকে দেখার সুযোগ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ঘাট বেস পরিকল্পনা মাফিক হলেও চারিদিকে সবুজের সমারোহ চোখে পরার মত। তাতে কিন্তু পরিকল্পনার ছাপ না থাকলেও তা কিন্তু ঐ সুন্দর পরিবেশের সঙ্গে সুন্দর মানানসই লাগছে। এতে মনটা আর ভাল লাগার কারণ ঐ কৃত্রিমতা বর্জ্যিত সৌন্দর্য মণ্ডিত প্রকৃতির পরিমণ্ডল। দেখতে দেখতে আমাদের গাড়ি মরিশসের পূর্ব প্রান্তে চলে এলে। এখানে আমাদের সঙ্গে সমান তালে এক দিকে সঙ্গত করে চলেছে মাইলের পর মাইল নয়নাভিরাম নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আকর্ষণীয় মরিশাসের সেই বিখ্যাত বিচ সমূহ। এখানে যে জিনিসটি চোখে পরার ও বিশেষ ভাবে বলার – তা হলো বেশ কয়েক কিলোমিটার ধরে বীচের সঙ্গে সুন্দর করে সাজানো গোছানো ও নানা রকম বিশাল বিশাল গাছের সমারোহ গড়ে উঠা :”Senior Citizens Park” যা এক কথায় ঐ মুহুর্তে আমার মনকে কেড়ে নিচ্ছিল বীচের সঙ্গে নানা গাছের নিচের সুশীতল ছায়ায় চাদরে ঢাকা পরিবেশ।

এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা মনে এলো – এদেশের সরকার Sr. Citizen দের জন্যে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধে দিয়ে থাকেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে পেনশন সংক্রান্ত একটা সুবিধা। ভাবছেন তো এ আবার নতুন কি? একটু নতুন আছে অন্তত আমাদের দেশের তুলনায়। তা হলো আপনি কোন দিন চাকরি না করলেও ষাট বছর পরে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই পেনশন পাবেন, এমন কি স্বামী ও স্ত্রী আলাদা আলাদা ভাবেই। তার সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্তও সুযোগ সুবিধে তো আছেই।

এবার ফিরে আসছি আমাদের পুরো দিনের Private Beach Island Tour এর কথায়। যাওয়া পথে আমাদের গাইড বেশ কিছু তথ্য দিলেন, এর মধ্যে যেটা না বললেই নয় তা হলো – ঐ সী বিচের জিনিস পত্রের দাম, যা কি না সাধারণ মানুষের কাছে একটা বিশাল চাপের ব্যপার। তাই কিছু খাবার দাবার কিনে নিতে হলো একটা মল থেকে, সেটাও কম চাপের মনে হলো না। আমাদের ছয় জনের জন্যে সামান্য কিছু খাবার আর এক বোতল করে জল ও কোল্ড ড্রিঙ্কস নিলাম, যার দাম পরল ভারতীয় টাকার হিসেবে Rs. 1400.00 !!!

যাই হোক আমাদের একটা বিচে নামিয়ে জানান হলো এখান থেকে Speed Boat করে নিয়ে যাওয়া হবে সেই আকাঙ্খিত বিচে। যাওয়ার পথে যদি কেউ কোন Water Activities করতে চান তবে করতে পারেন। তার জন্যে যে রেট বলা হলো তা অবাক করার মতো। কারন ঐসব Water Activities আমাদের আগেই করা ছিল লাক্ষাদ্বীপ / থাইল্যান্ড / বালি দ্বীপ ভ্রমণের সময়। তাই আমারা বা অনেকেই ঠিক করলাম বেশ কিছু দূরে ( Speed Boat এ যেতে আধ ঘণ্টা ) খুব সুন্দর Water Falls দেখতে যাবো। যার জন্যে আমাদের ছয় জনের দিতে হলো 6 × Rs.1,800.00 = Rs.10,800.00. এখানে এত হিসেব নিকেশ করার একটা মাত্রই কারণ হচ্ছে মরিশাসে জিনিস পত্রের দাম সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার জন্যেই।

যাই হোক আমাদের Speed Boat Journey শুরু হতেই মাথা থেকে সব হিসেব নিকেশ এক মুহুর্তেই হারিয়ে গিয়ে সে এক অন্য জগতে প্রবেশ ঘটল। কোন দিক দেখব বা কোন প্রান্তের ভিডিও তুলব তা তো ভেবেই পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ওদিক টা বোধহয় মিস হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে যাত্রা পথে যে ভাবে Speed Boat লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে তাতে মনে হচ্ছে এই বুঝি বোট উল্টে গেল। যদিও এ ভাবে Speed Boat এ চড়ার অভিজ্ঞতা আগেও ছিল। যাক আমাদের গন্তব্য সেই বিখ্যাত Water Falls এ, যা কিনা আমাদের যাত্রা শুরুর আগেই এক ঝলক দেখেছি এদের অফিসে বসে। কিন্তু তার থেকেও এখানে যাওয়া পথের চারিদিকে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর আকৃতির পাহাড় সঙ্গে সমানেই সংগত করে চলেছে অকল্পনীয় নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ বাহারি রং বেরংয়ে মনোমুগ্ধকর আকাশ। এখানে আরও একটা লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো সেই আকাশের নানা মেঘের ফাঁক থেকে বেড়িয়ে আসা সূর্য রশ্মির প্রতিফলনের সাথে সাথে নীল সমুদ্রের জলরাশিতেও নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ রংয়ের সমারোহ হয়েই চলেছে সমান তালে। এ দৃশ্য আমি বালি দ্বীপ ভ্রমণের সময়ও বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছি।

এই সব পরিবর্তীত মনকাড়া পরিবেশের মধ্যেই চলে এলাম সেই আকর্ষণীয় Water Falls এর সামনে যা খুব দূর থেকে একটু একটু করে চোখের সামনে ধরা দিচ্ছিল। এ ভাবেই আস্তে আস্তে আমাদেরও সুযোগ হলো তাকে কাছ থেকে অবলোকন করার। ঐ সামান্য সময়ের মধ্যেই তিনি তার তেজের ছটায় বুঝিয়ে দিলেন বেশি কাছে এসো না। একটু দূরত্ব রেখেই তার গরিমা উপভোগ করলাম। তার প্রয়োজনীয়তাও ছিল অবশ্য।

এবার আমাদের বোটের মুখ ঘুরিয়ে যাত্রা শুরু হলো সেই আকর্ষণীয় ও অবশ্যই মায়াবী প্রাইভেট বিচের দিকে। এই বীচটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটা মরিশাসের মূল ভূখণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। তাই মনে হয় নিজ গরিমায় ইনি গর্বিত। তাই নিজেকে একটু আভিজাত্যের মোড়কে অবগুণ্ঠিতা করে রাখার প্রচেষ্টা, তা এর প্রতিটি মুহুর্তেই নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার অফুরন্ত আয়োজন চোখে পরার মত। চলবে…

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ mauritiusseven colored earth