লাদাখ – একটি স্বপ্ন সত্যি হবার গল্প

প্রতিবছর এর ন্যায় মার্চ এপ্রিল এলেই আমার মাথায় শুধু ঘুরতে থাকে জুনের সামার ভ্যাকেশনে কোথায় যাব। গত বছর গিয়েছি বেনারস, আগ্রা, মথুরা বৃন্দাবন। কিন্তু এত গরম ছিল যে আমার মেয়েটার ট্রিপের লাস্ট মূহুর্তে জ্বর চলে আসে। তাই এবার আর গরমের জায়গা তে যাওয়াই যাবেনা। হঠাৎ মাথায় এলো শিমলা মানালি গেলে কেমন হয়। যেই কথা সেই কাজ। গুগল সার্চ, ট্রিপ অ্যাডভাইজার এ সব তথ্য ঘাঁটতে লাগলাম। প্ল্যান শুরু করে দিলাম। সহযাত্রী হিসেবে ছিল পূর্ণার বাবার দুই কলিগ ও তাদের ফ্যামিলি। অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্সির সাথেও যোগাযোগ করা হল।কিন্তু কিছু বিশেষ কারণে সহযাত্রীদের কেউই আর যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল। আমরা ঠিক করলাম তাহলে একাই যাই। আবার নতুন করে প্ল্যান শুরু করলাম। আমার মেয়ে সবসময় বলত স্নো ফল দেখবে। জুন মাসে শিমলা মানালি তে স্নো ফল হবে না তবে রোথাং পাস এ জমাট বাধা বরফ দেখাতে পারব। যে কোন জায়গায় ঘুরতে যাবার আগে আমি youtube এও জায়গা গুলি দেখে নিই। এবারও দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়ল লাদাখের ভিডিও তে। দেখলাম জুনেও স্নো ফল হয়। কিন্তু সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এত উচুতে, ৬৫% অক্সিজেন লেভেল সেখানে মেয়ে কে নিয়ে কি যেতে পারব? এরই মধ্যে ফেসবুকে Traveller Group এর সমুজ্জ্বল দার সাথে পরিচয় হল। উনি আমাকে জানালেন উনি যে কোন ধরনের টুর এ্যারেঞ্জ করে দিতে পারবেন। আমিও তখন বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে কখনো মানালি, কখনো গোয়া, কেরালা, লাদাখ মানে মাথায় যখন যা আসতো তাই উনাকে প্রশ্ন করতাম। উনি কখনো বিরক্ত না হয়ে ডিটেলস আমাকে বুঝাতেন। আস্তে আস্তে আমার মন যেতে থাকে শুধু উঁচু উঁচু পাহাড়, মাউন্টেইন পাস, বরফাচ্ছন্ন পাহাড়ের দিকে। কিন্তু ভয়ে ডিসিশন নিতে পারি না। পূর্ণার বাবা বুঝল যে আমি লাদাখেই যেতে চাই।ও আমাকে সাহস দিল কিচ্ছু হবে না আমাদের। তবে এবার সে একা যাবে না। ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যাবে। কারণ গত বছর হোটেল রেস্টুরেন্ট গাড়ি খুঁজতে খুঁজতে সময় নষ্ট হয়েছে,পরিশ্রম হয়েছে। আমি সমুজ্জ্বল দার সাথেই কথা বললাম। আবার ভয় পাচ্ছিলাম উনি সঠিক লোক কিনা। কারণ আমি তো উনাকে চিনি না। তাই দিল্লি তে আরো দুটা এজেন্সির সাথে কথা বললাম। ওরা তো প্রতিদিন আমাকে ফোন করতে লাগল। কেন জানি আর ওদের ভাল লাগল না। সমুজ্জ্বল দার সাথেই এবার ফাইনালি লাদাখের ব্যাপারে কথা বলি। প্রথমে ভাবলাম কাশ্মীর ট্রিপ করে শ্রী নগর থেকে বাই রোডে Leh সিটি যাব। কিন্তু লেহ থেকে বাই এয়ারে যে কলকাতা আসব সেটার ভাড়া অনেক অনেক বেশি। জুন মাস লাদাখে পিক সিজন,প্রতি বছর জুনে ৪/৫ মাসের জন্য রোড খুলে দেয়া হয়। বাকি সময় টা বরফে ঢাকা থাকে। ফ্লাইট এর টাইমিং, কস্ট সব কিছু বিবেচনায় এনে ঠিক হল কলকাতা থেকে লেহ যাব ফ্লাইটে। ফ্লাইট কস্ট ছিল ১২৫০০ রুপি। লাদাখ ঘোরার পর বাই রোডে শ্রী নগর যাব। কাশ্মীর ট্যুর শেষে শ্রীনগর থেকে ফ্লাইটে আসব কলকাতা। এই ফ্লাইট ৫৩০০টাকা। সমু দা জানালেন আমাদের সাথে কলকাতার একটা ফ্যামিলি এবং উনি নিজেও যাবেন। আমাদের ও শুনে ভাল লাগল। Make my trip অ্যাপস অনুযায়ী উনিই টিকেট বুক করলেন কোন এক্সট্রা ফি ছাড়া। আর আমাদের ও শুরু হয়ে গেল প্যাকিং।

১২ জুন,২০১৭

রাত ৮টা ৪৫ এ কলকাতা থেকে দিল্লির ফ্লাইট। আমরা সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গেলাম নেতাজি সুভাস চন্দ্র বোস এয়ারপোর্টে। টিকেট টা এমন ভাবে করেছিলাম যাতে রাত ১১টার দিকে দিল্লি পৌছাই। বাকি রাত টা দিল্লি এয়ারপোর্টেই কাটিয়ে দেয়া যায়। কারণ সকাল ৮ টা ২৫ এ আবার লেহর ফ্লাইট। লেহর যত ফ্লাইট আছে সব সকালে।আসলে বিশাল পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ল্যান্ড করাতে হয় বলেই এ ব্যবস্থা। আর হিমালয়ের আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল। আমার পছন্দের জেট এয়ারে উঠলাম রাত সাড়ে ৮ টার দিকে। ফ্লাইটেই ডিনার সেরে নিলাম। রাত সাড়ে এগারো টার দিকে দিল্লি এয়ারপোর্ট ল্যান্ড করলাম। আস্তে ধীরে পছন্দমত জায়গা নিয়ে বসলাম, ফ্রেশ হলাম।দিল্লি এয়ারপোর্ট সারা রাতই প্রচণ্ড ব্যস্ত। আমাদের পাশে এক বয়স্ক পাঞ্জাবি দম্পতি বসে ছিলেন। আমরা লাদাখ যাচ্ছি শুনে ভদ্রলোক বললেন উনি রিটায়ার্ড আর্মি,লাদাখে ছিলেন বেশ কিছুদিন। উনার সময় নাকি লাদাখে যুদ্ধ হত। এভাবে কথা বলতে বলতে, মানুষ দেখতে দেখতেই রাত পার হয়ে গেল। দিল্লি এয়ারপোর্টে সময় খুব দ্রুত চলে যায়। সকাল সাড়ে ৬টায় বোর্ডিং সেরে ফেললাম।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এয়ারপোর্টে,কলকাতা

১৩ জুন, ২০১৭

প্লেন থেকে তোলা

সকাল ৮টা ২৫ এ জেট এয়ারেই আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত লাদাখের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আজ পৌঁছাব সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০০ ফুট উঁচু তে লেহ সিটি। ফ্লাইটেই আমরা ব্রেকফাস্ট করে অ্যাক্লিমেটাইজেশন (শরীর এর সাথে মানিয়ে নেয়া) এর জন্য ডায়ামক্স ট্যাবলেট ২৫০ মিগ্রা খেয়ে নিলাম। পূর্ণাকে অর্ধেক ভেংগে দিলাম। দিল্লি এয়ারপোর্ট থেকেই এই ঔষধ কিনে নিয়েছিলাম। অদ্ভুত এক দৃশ্য বাইরে। চারপাশে উঁচু পর্বতের চূড়া, আর চূড়ার উপর স্নো।যেন সাদা মুকুট পরে আছে। দেখতে দেখতে ১০ টার মধ্যেই চলে এলাম লেহ।ল্যান্ডিং টা অসাধারণ। হঠাৎ করে বেঁকে গিয়ে, ঘুরে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে রানওয়ে টাচ করল। যখন প্লেন থেকে নামছি মনে হচ্ছিল এয়ার কন্ডিশনড কোন জায়গায় নামলাম। এত ঠান্ডা। আর লেহ এয়ারপোর্ট টা একদম ছোট্ট। চারদিকে আর্মি, পুলিশ। তাই এয়ারপোর্ট এর ছবি তুলতে পারলাম না। নিজেদের ছবি অবশ্য তুলতে দিয়েছে। বোর্ডিং সেরে বাইরে এলাম। গেটে আমার নাম এর প্ল্যাকার্ড নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। বুঝলাম হোটেলের লোক। গাড়িতে বসে ফিল করার চেষ্টা করলাম অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত কারণে আমাদের শরীর খারাপ লাগছে কিনা। দেখলাম না, জাস্ট টায়ার্ডনেস টা আছে। ২০ মিনিটের মধ্যে হোটেল রেইনবো তে পৌঁছালাম। হোটেল মালিক একজন বয়স্ক মহিলা ও তাঁর ছেলে।আন্টি আমাদের কাশ্মীরি ক্বাওয়া চা দিয়ে ওয়েলকাম করলেন। চা টা ভাল। সমুজ্জ্বল দা ও আমাদের বাকি সহযাত্রী রা আগের দিন এসেছে। ওরা দিল্লি -মানালি দিয়ে বাই রোডে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে আমরা ঘুম দিলাম। যদিও লাদাখে ট্যুরিস্টদের দিনের বেলা ঘুমানো উচিত না। দুপুর দুটায় ঘুম থেকে উঠে ভাত, মুরগি, ডাল দিয়ে ভাত খেলাম। এই হোটেলের রান্না ভাল। আর সব কিছু আন্টির তদারকি তে হয়। কারো কিছু লাগবে কিনা, কেউ অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তারের কাছে পাঠানো সব উনি একাই সামলান। আবার উনার সবজি বাগান আছে। সেখানেও উনি কাজ করেন। আমরা শুধু ভাবতাম উনি রাতে ঘুমান কখন।রোজার মাস বলে উনি রোজাও ছিলেন। লাদাখে কিন্তু সূর্য ডোবে রাত ৮ টায়। দিন টা হোটেলেই কাটিয়ে দিলাম। কারণ প্রথম দিন ফুল রেস্ট।আমরা অন্য ফ্যামিলির সাথে পরিচিত হলাম। রাতে সবাই মিলে হোটেল মালিক আন্টির ডাইনিং রুমে খেতে বসলাম। খুব সুন্দর করে ঘর টা সাজান। খাওয়া,গল্প শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। টেম্পারেচার জিরো। এত্ত ঠান্ডা। মোজা পরে, মাথা ঢেকে মোটা মোটা দুটা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম।এখানে ডাক্তার এর নির্দেশ হিটার ব্যবহার না করার। কারণ পরদিন আমাদের আরো উচুতে আরো ঠান্ডায় থাকতে হবে। তাই এখন থেকেই শরীর কে মানিয়ে নিতে হবে।

১৪ জুন, ২০১৭

সকাল সাড়ে ৭টা। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। নিচে কেউ কেউ ব্রেকফাস্টে বসে গিয়েছে। আমাদের ব্রেকফাস্ট এর মেনু আগের দিন রাতেই অর্ডার করা হয়েছে। রুমেই দিয়ে যাবে পুরি সবজি। আমরা আজ যাব নুব্রা ভ্যালি, স্যান্ড ডিউনস। একে cold Desert বলা হয়। তবে যেতে হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮৩৮০ ফিট উঁচুতে খারদুংলা পাস কে অতিক্রম করে। ওখানে পুরো বরফ।তাই ব্রেকফাস্ট সেরে সব ধরণের গরম পোশাক পরে রেডি হয়ে গেলাম। ব্যাগের সাইড পকেটে রাখলাম কর্পূর, নেবুলাইজার।আরেকটা আলাদা ব্যাগে রাখলাম প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ওয়াটার, অক্সিজেন ক্যান। সকাল ১০ টায় রওনা হলাম। আমার জীবনে প্রথম পাহাড়ী রাস্তায় জার্নি। এ তো আর যেমন তেমন পাহাড় নয়। শুধু ওপরেই উঠছি। সামনে রাস্তা চোখে পড়ছে না। অথচ আমাদের ড্রাইভার দরজে ভাইয়া ঠিকই রাস্তা বের করে চলে যাচ্ছে।লাদাখে আমার শুধু একটা কথা মনে হয়েছে যে ঈশ্বর নিজের হাতে স্তরে স্তরে নিজের হাতে পাহাড় গুলোকে সাজিয়েছেন। একদম ছবির মতন। পাহারগুলোর রঙ ও একটা থেকে আরেকটা অন্যরকম। নিচে রয়েছে খাদ। আমাদের গাড়ি টা এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে কি অবলীলায় চলে যাচ্ছে। দু ঘন্টা পর খারদুংলার কাছাকাছি চলে আসলাম। নিচের রাস্তাগুলোকে সাপের মত দেখাচ্ছে আর গাড়ি গুলোকে মনে হচ্ছে খেলনা গাড়ি। খারদুংলার কাছাকাছি যেতেই শুরু হয়ে গেল আমাদের পরম আকাঙ্খার স্নোফল। লাদাখি ভাষায় স্নো ফল কে “খা” বলে। আমরা সবাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে স্নো ফলে মজা করতে লাগলাম। অন্যান্য গাড়ি গুলোও থেমে আছে। জানতে পারলাম সামনে রোড বন্ধ, বরফ সরানোর কাজ চলছে। আমরা তো স্নোফলে ফটোসেশন করতে লাগলাম। কিন্তু স্নোফল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আশপাশ এর পাহাড় সাদা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রোড পরিষ্কারের কাজ যারা করছে তারা যতই বরফ সরাচ্ছে ততই নতুন বরফে রাস্তা ঢেকে যাচ্ছে। আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ আর নুব্রা ভ্যালি যাওয়া যাবে না। ঠিক করলাম নিচে নেমে যাই লেহ সিটিতে। নিচে নামাটা আরেক কষ্ট কারণ রাস্তা এখন স্লিপারি।দুপুরে লেহ সিটিতে পৌছে সরাসরি রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে গেলাম। সমুদা বললেন আজকের দিন টা হোটেলে নষ্ট করার কোন মানে নেই। এর চেয়ে আমরা এখন প্যাংগং লেক চলে যাই যেখানে থ্রি ইডিয়টস এর শুটিং হয়েছিল। বিকাল চারটায় জার্নি টু প্যাংগং শুরু করলাম। পৌছাতে রাত হয়ে যাবে। যেতে যেতে সন্ধ্যা ছয়টায় গেলাম Chang La pass.ওয়ার্ল্ডের সেকেন্ড হাইয়েস্ট মটোরেবল রোড। চারদিকে বরফ। আমরা গাড়ি থেকে নেমে চা খেলাম। আমাদের ড্রাইভার দরজে ভাই গাড়ির টায়ার সারালো। কনকনে ঠান্ডায় চলতে চলতে রাত সাড়ে দশটায় পৌছে গেলাম প্যাংগং লেক।প্যাংগং লেক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০০ ফিট উঁচুতে। স্বাভাবিক কারণেই একটু অস্বস্তি লাগছিল আমার। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এত্ত ঠান্ডা লাগছিল দৌড়ে হোটেল রুমে ঢুকে গেলাম। এখানে শুধু তাঁবু ও হোম স্টে পাওয়া যায়। হোম স্টে হচ্ছে ছোট কটেজ টাইপ। আমরা ছিলাম Himalayan Wooden Cottage এ। একদম প্যাংগং লেক এর ধারে। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে ভাত ডিমের তরকারি, ডাল দিয়ে খেয়ে নিলাম। আমাদের রুমে তিনজনের জন্য তিনটা হট ওয়াটার ব্যাগ ছিল। ঘুমানোর সময় এগুলো কম্বলের নিচে সাথে নিয়ে ঘুমালে ঠান্ডা টা কম লাগে। তিনটা মোটা কম্বল একসাথে গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি।

নুব্রা যাবার পথে, ১৪ জুন

১৫ জুন, ১৭

প্যাংগং লেক

সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজার বাইরে এসে দেখতে পাই সকাল বেলার প্যানগং লেক এর শান্ত স্নিগ্ধ রূপ। সকালে ব্রেকফাস্ট ছিল বুফে সিস্টেম এ। ব্রেকফাস্ট শেষে একেবারে রেডী হয়ে চলে গেলাম প্যাংগং লেকে। এই লেকেই শুটিং হয়েছিল থ্রি ইডিয়ট,যাব তাক হ্যায় জান, দিল সে মুভির বেশ কিছু অংশ।তবে সেদিন ছিল একদম মেঘলা আবহাওয়া। আর কি যে ঠাণ্ডা বলে বোঝাতে পারব না। লেকের পানি কাচের মত স্বচ্ছ। পানিতে হাত দিয়ে মনে হল ফ্রিজের পানি।লেক দেখে আনন্দে আমরা মেয়েরা লাফিয়ে লাফিয়ে ফটোসেশন করলাম। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম লেকের ধারে। ফেরার পথে আমি এত টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলাম যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি ঠিক করলাম আশেপাশে কোন মেডিক্যাল সেন্টার বা হস্পিটাল থেকে একটু শরীর চেক আপ করে নিই। কারণ সামনে আরো পথ বাকি। ডাক্তার আমার অক্সিজেন চেক করে বলল আমার অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে আধ ঘন্টা অক্সিজেন নিতে বললেন। আর পূর্ণা,ওর বাবা ঠিক আছে। পাশে একটা রুমে নিয়ে আমাকে অক্সিজেন দেয়া হল। আমার মনে হচ্ছিল ৩০ মিনিট এখানে না থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেলেই ভাল হয়। কারণ সময় চলে যাচ্ছে। নুব্রা ভ্যালি আজ পৌছাতেই হবে। ২৫ মিনিট অক্সিজেন নেয়ার পর নার্স আমার অক্সিজেন লেভেল টেস্ট করে ছেড়ে দিল। আবার শুরু হল যাত্রা। বাইরে বেশ বৃষ্টি। এর মধ্যে ই চললাম আমরা। দুপুরে একটা জায়গায় গাড়ি রেখে একটা টং দোকানে গরম গরম ম্যাগি নুডুলস খেয়ে নিলাম। এবার আরেক বিপত্তি। একটা পাহাড়ি রাস্তায় পাহাড়ের উপর থেকে পাথর পরছে মানে ভূমি ধ্বস। লাদাখের পাহাড় তো পাথুরে পাহাড়। দুটো গাড়ির কাচ দেখলাম ভাঙা।আর রাস্তা টাও খারাপ হয়ে গেছে।এগুলো হয়েছে শুধুমাত্র ওই বৃষ্টির কারণে। আমাদের ড্রাইভার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেই পরিস্থিতি অতিক্রম করে গেল। আমরা ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। বিকেলে পৌছে গেলাম নুব্রা ভ্যালি। এটা কোল্ড ডেজার্ট। সরাসরি চলে গেলাম স্যান্ড ডিউনস এ। ক্যামেল রাইড করব আমরা। এখানে উটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের দুটো কুঁজ । আধঘণ্টা ক্যামেল রাইড শেষে চলে গেলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল ড্রাগন এ। বাকি সময় টা ওখানেই কেটে গেল।

ক্যামেল রাইড শেষে, নুব্রা ভ্যালি

১৬ জুন, ১৭

ডিস্কিট মনেস্ট্রী

সকালে উঠে বাইরে গিয়ে দেখি রোদ টা বেশ মিষ্টি। হোটেলের সামনে লন টাও সুন্দর।ব্রেকফাস্ট শেষ করে সবাই লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আজ ১৮৩৮০ ফিট উঁচুতে খারদুংলার ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট মোটরেবল রোড দিয়ে ফিরে যাব লেহ সিটি। যাবার পথে অনিন্দ্য সুন্দর ডিস্কিট মনেস্ট্রী, মৈত্রেয়া বুদ্ধ মূর্তি দেখে যাব। দুপুর একটার দিকে খারদুংলার কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। কিন্তু আবার সব টুরিস্ট গাড়িকে রাস্তায় আটকে দেয়া হল আর্মি কনভয় কে ফ্রি রোডে যেতে দেয়ার জন্য। প্রায় দুঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আবার চলতে শুরু করল আমাদের গাড়ি। এবার যতই ওপরে উঠছি মাথার পেছন দিকে একটা চাপ লাগছিল। মাথা ব্যথা করছিল। আর চারপাশে এত চোখ ঝলসানো সাদা, যে সানগ্লাস পরে তাকাতে হচ্ছিল। এমনি তেও লাদাখে দিনের বেলা সানগ্লাস পরেই থাকতে হয়। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে চলার পর পৌঁছালাম ওয়ার্ল্ডের হাইয়েস্ট মটোরেবল রোডে। সেখানে নেমে সবাই ছবি তুলতে লাগলাম।পুরো জায়গাটা জুড়ে বরফের চওড়া স্তর।পাশে একটি শিব মন্দির ও আছে। মন্দির টি আর্মি দ্বারা পরিচালিত। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল। এই জায়গায় বেশিক্ষণ থাকার নিয়ম নেই, যে কোন মূহুর্তে শরীর খারাপ করতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি আবার গাড়িতে এসে বসলাম। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় লেহ তে এসে পৌঁছলাম। মল চত্ত্বরে একটা রেস্টুরেন্ট এ সবাই খেয়ে নিলাম। এরপর রেইনবো হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সেই রাতে আমাদের জন্য বনফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

১৭ জুন, ১৭

আজ লেহ সিটিতে লোকাল সাইট সিয়িং করব। প্রথমে গেলাম রাঞ্চোস স্কুল। স্কুল টির আসল নাম Druke White Lotus School. পরিবেশ বান্ধব স্কুল হিসেবে এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। স্কুলের প্রথমেই রাঞ্চোস ক্যাফে। এখানেই কিন্তু থ্রি ইডিয়ট মুভির চতুর রামালিংগমের মূত্র-বিসর্জনের স্থানও রয়েছে। এরপর শান্তি স্তুপা দর্শন। ১৯৮৫ সালে নির্মিত বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রদর্শনের অপূর্ব নিদর্শন এটি। শে প্যালেসের পাশে গিয়ে চলল টুকটাক কেনাকাটা ও ফুচকা খাওয়া। সবশেষে লেহ রাজার প্যালেস লেহ প্যালেস দর্শন। নয় তলা বিল্ডিং সমান। দুপুরে চলে গেলাম আমাদের হোটেলে। সবকিছু গুছিয়ে রেখেছিলাম আগেই। আজ বিকেলেই রওনা দিব কার্গিল এর উদ্দেশ্যে। শ্রীনগর থেকে এক্স ক্যাপ্টেন হামিদ জী আমাদের জন্য এসে বসে আছেন। কারণ উনার সাথেই শুরু হবে আমাদের কাশ্মীর ভ্রমণ। বিকেল চারটায় আমরা সবাই বেরিয়ে পড়লাম । কার্গিল যাবার পথে দেখে নিলাম ম্যাগনেটিক হিল। অদ্ভুত এক পাহাড়। যে পাহাড়ে রয়েছে চৌম্বক ক্ষেত্র। পাহাড়ের কাছে আসলেই গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ গাড়ি তখন চুম্বকের আকর্ষণে নিজেই চলতে থাকে। ইঞ্জিন বন্ধ না করলে অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। আমরা ও ইঞ্জিন বন্ধ করে এই চৌম্বকীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম। পথে আলুবোখারা কিনলাম। লেহ টু শ্রীনগর হাইওয়েও দেখার মত। উঁচু উঁচু পাহাড়ের গা ঘেষে চলেছি। সন্ধ্যেবেলা অবশ্য ভয় লাগছিল। লাদাখ এর ব্যাপারটা হচ্ছে এমনি তে ৮০% রাস্তাই ভাল। শুধু বৃষ্টি, স্নোফল হলে পিচ্ছিল হয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে কার্গিলের কাছাকাছি এক টা জায়গায় রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে নিলাম। বাইরে ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপাকাঁপি অবস্থা। রাত ১১ টায় পৌঁছে গেলাম Hotel Caravan Sarai. কার্গিল শহরটাও খুব সুন্দর। ফ্রেশ হয়ে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

শান্তি স্তুপা, লেহ

১৮ জুন, ১৭

সকালে উঠে বারান্দা দিয়ে কার্গিল শহর টাকে দেখলাম। আমার বেশ ভাল লাগল। ব্রেকফাস্ট সেরে প্রস্তুতি নিলাম শ্রী নগর যাবার জন্য। সকাল ১০ টায় রওনা হলাম। যাবার সময় পথে কার্গিল War Memorial দেখে নিলাম। দুপুরে আরেক অভিজ্ঞতা হল। হঠাৎ দেখি পাহাড়ি রাস্তার একাংশ একদম সরু হয়ে গেছে। একটা একটা করে গাড়ি যাচ্ছে এবং খুবই ধীর গতিতে। এটা হচ্ছে Zozilla Pass. ভয় পেয়েছি বেশ। বেলা তিনটায় সোনমারগ পৌঁছে লাঞ্চ করলাম। লাঞ্চ করে ঘোড়া ঠিক করলাম। ঘোড়ায় করে যাব থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার দেখতে। যেতে আসতে প্রায় দেড় দু ঘন্টা লাগে। ঘোড়া নিতে না চাইলে হেঁটে যেতে হয়। পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে হয়। আমার মেয়েও একা বসেছিল ঘোড়ায়। আমাদের সাথে অবশ্য তিন চার জন লোক ছিল। যারা ঘোড়া গুলিকে পরিচালনা করছিল। পুরো লাদাখে আমার সবচেয়ে বেশি ভয় লেগেছে ঘোড়ায়। পাহাড়ে উঠছে, নামছে। যদিও কোন খাদ নেই। আমার ঘোড়ার সাথে যে লোকটি ছিলেন উনি আমাকে বলছিলেন নিচে না তাকাতে উপরে গ্লেসিয়ার দেখতে। ঘোড়া কিন্তু ভালই চলেছে। এদিকে আমার মেয়ে কিছু না বুঝেই উপভোগ করেছে। সবকিছু ভালই চলছিল। শুধু সমু দার ঘোড়াটা আমাদের ঘোড়াগুলো কে ডিস্টার্ব করছিল। থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার ঘুরে এসে চা খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। এখন রাস্তা সমতল। বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যা সাত টায় নিগিন লেকে আমাদের জন্য নির্ধারিত New Buckingham Palace house boat এ প্রবেশ করলাম। আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের মিশেলে এ হাউজবোট। সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ও রয়েছে। হাউজবোটের তত্ত্বাবধায়ক খালিদ ছেলেটা বেশ স্মার্ট,ভদ্র, চটপটে। ডিনারে খেলাম ভাত, চিকেন।

Zojji La pass, it was scary

১৯জুন, ১৭

আমাদের রুমের সাথেই ছিল ব্যালকনি। ব্যালকনি থেকে ডাল লেকের শান্ত রূপ, শিকারা দেখতে পাওয়া যায়। ডাইনিং রুমে বসে ব্রেকফাস্ট এ খেলাম পুরি, সবজি, চা। দশ টায় বেরিয়ে পরলাম। হযরত বাল মসজিদ, নিশাত বাগ, পরী মহল ঘুরে কাশ্মীর এর অরিজিনাল স্যাফ্রন, বাদাম, আখ্রোট, খাঁটি মধু কিনলাম। দুপুরে বিরিয়ানি কিনে নিলাম। হামিদ জীর পরামর্শে শিকারায় বসে খেলাম। শ্রীনগরের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ডাল লেকে শিকারা রাইড মানে নৌকা ভ্রমণ। হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছিল। ডাল লেকে পানির ওপর ভাসমান সব্জি বাগান দেখলাম। টমেটো, লাউ,পেঁপে,মরিচ বিভিন্ন রকম সবজি পানিতে ভেসে আছে। নৌকার মাঝি বলল এখানে প্রতি ঘরে নৌকা আছে। একটা বাচ্চা ৮ বছর হলেই নৌকা চালানো শিখে যায়। লেকের ওপর বোটমার্কেট দেখলাম। বোটেই কাশ্মীরি জিনিসের সুন্দর সুন্দর দোকান। সন্ধ্যায় হাউজবোটে ফিরে এলাম। রাতে ডিনারে ছিল বিরিয়ানি, চিকেন, রায়তা। খালিদ ছেলেটা খুব সুন্দর করে খাবারের আয়োজন করে। আমাদের হাউজবোটের খাবার ছাড়া কাশ্মিরে আর কোথাও আমি খেয়ে শান্তি পাই নি।

ডাল লেক, ব্যালকনি ভিউ

২০ জুন, ১৭

আগের রাতে হামিদজী বলে দিয়েছিলেন সকাল ৭ টায় পেহেলগাম এর উদ্দেশ্যে বের হবার জন্য। উনি গাড়িতেই ব্রেকফাস্ট দিয়ে দেবেন। সকাল সাড়ে সাতটায় ছোট একটা ব্যাগে কিছু কাপড় নিয়ে আমরা বের হলাম। যাবার পথে গাড়ি থামিয়ে আমরা ব্রেকফাস্ট করলাম স্যান্ডুইচ,সুজির উপমা, কাশ্মীরি ক্কাওয়া চা দিয়ে। সকাল সাড়ে দশ টায় পেহেল্গাম হোটেল Pine Tree তে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে সাইটসিয়িং এ বের হলাম। পেহেল্গাম এর আবহাওয়া খুব ঠান্ডা আর মেঘলা ছিল। আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি সুন্দর দুটি জায়গা। এগুলো শুটিং স্পট। এরপর গেলাম চন্দন ওয়ারি।এখানে বরফের সিঁড়ি, বরফ গলে কিভাবে জলরাশি পড়ছে দেখলাম। এখান থেকে অমরনাথ তীর্থস্থানে যাত্রা শুরু হয়। এরমাঝেই বৃষ্টি বাগড়াও দিয়েছে। দুপুরে একটা রেস্টুরেন্ট এ বিরিয়ানি খেয়ে নিলাম। তারপর হোটেলেই ফিরে এলাম। কাদার মধ্যে আর ঘুরতে ইচ্ছে হয় নি। রাতে ডিনারে ছিল রুটি, চিকেন,ডাল।

বেতাব ভ্যালি, পেহেলগাম

২১ জুন, ১৭

সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। তারওপর আমাদের গাড়ি ট্রাবল দিচ্ছে। কিন্তু এখানে আর থাকব ও না। তাই নাশতা করে, গাড়ি ঠিক করে বের হতে দুপুর বারোটা বেজে গেল। পথেই এক রেস্টুরেন্ট এ খেয়ে নিলাম। সন্ধ্যা ছয় টার মধ্যে শ্রী নগর হাউজবোটে ঢুকলাম। আমাদের একটা অভিযোগ ছিল যে আমরা কিছুই শপিং করতে পারি নি। তাই হামিদ জী বললেন উনি উনার হাউজবোটে ব্যবস্থা করে দিবেন। রাত ৮ টায় নৌকা করে আয়াজ নামে একটা লোক অনেক কাশ্মীরি জুয়েলারি নিয়ে এল। যার যার পছন্দ মত কিনে নিলাম। এই লোকের কাছেই শুনলাম তার কাশ্মীরি শাল,ড্রেস এর ফ্যাক্টরি আছে। আমরা বললে সে পরদিন সকালে এনে দিবে। যদিও পরদিন গুল্মার্গ যাবার কথা ছিল। গুল্মার্গ এ ১৪০০০ ফিট উপর কেবল কার দিয়ে বরফ দেখে আসা যায়। এর দুটো ফেজ। জুন মাসে ফেজ ওয়ানে বরফ পাওয়া যায় না। আমরা ঠিক করলাম যেহেতু আমরা লাদাখে প্রচুর পরিমাণে স্নো ফল, বরফ দেখেছি তাই গুল্মার্গ গিয়ে আর বরফ দেখব না। আর ফোনে খোঁজ নিয়ে জানলাম ফেজ টু তে খারাপ ওয়েদারের জন্য যেতে দিচ্ছে না। তাই শপিং করব আর শ্রী নগর ঘুরব। আয়াজ কে জানিয়ে দিলাম সকালে যেন ড্রেস, শাল নিয়ে আসে। রাতে আমাদের ডিনারে ছিল চিকেন বিরিয়ানি।

২২ জুন,১৭

আজ আমাদের ভ্রমণের শেষ দিন। সাত সকালে আয়াজ তার নৌকায় তিনটা বড় বড় লাগেজ নিয়ে আমাদের হাউজবোটে এসে হাজির। লাগেজে কাপড়ের স্তুপ। আমাদের চোখ ছানাবড়া। কাশ্মীরি ড্রেস মেটেরিয়ালস, শাল, পশমিনা। আমাদের তো সবই পছন্দ হচ্ছিল। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে কেনা হল বেশ কিছু পোশাক। এরপর ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরলাম। প্রথমেই গেলাম হরি পর্বত ফোর্ট। ১৫০ টি সিঁড়ি ভেঙে এই ফোর্টে উঠতে হয়। পুরো এলাকা আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উপরে জগদম্বা মন্দির ও রয়েছে। নিচে নামার পর আমাদের ক্ষিধে পেয়ে যাচ্ছিল তাই বিরিয়ানির জন্য প্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্ট মুঘল দরবার এ গিয়ে বিরিয়ানি খেলাম। এরপর গেলাম শংকরাচার্য মন্দির। এ শিব মন্দির টিতেও প্রায় ১০০ সিঁড়ি ভেংগে যেতে হয়। মন্দিরের ছাদ থেকে পুরো শ্রীনগর শহর দেখা যায়। সবশেষে শ্রীনগরের সবচেয়ে সুন্দর বাগান শালিমার বাগ গেলাম। এখানে কাশ্মীরী ড্রেস ভাড়া পাওয়া যায়। শেষদিন সবাই এ ড্রেস পরে খুব মজার মজার ফটোসেশন করলাম। সন্ধ্যায় ফিরে এলাম হাউজবোটে। ডিনারে রান্না করেছিল কাশ্মীরি পোলাও, চিকেন, মাটন, রায়তা। খাওয়ার পর আমাদের গল্পগুজব চলল অনেক রাত পর্যন্ত।

শালিমার বাগ, শ্রীনগর

২৩ জুন, ১৭

সবার কলকাতা ফেরার পালা। হামিদজী আগেই বলে দিয়েছিলেন ফ্লাইট সকাল ১১ টায় হলেও ৮ টার মধ্যে বেরিয়ে পরতে হবে। কারণ শ্রীনগরে এয়ারপোর্ট যাবার ১ কিলোমিটার আগেই গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে স্ক্যান করাতে হয়। অনেক ভিড় হয়।ব্রেকফাস্ট আমাদের সাথেই প্যাক করে দিলেন। লাগেজ স্ক্যান হয়ে গেলে লাগেজ গাড়িতে তুলে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। হামিদ জী কে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
আমাদের সাথে যারা ছিল ওদের সাথে আমাদের বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার মেয়ের Lip Balm এর বানান ও উচ্চারণ নিয়ে যে কনফিউশন এটা নিয়েই কত হাসি ঠাট্টা হয়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছিল অনু এবং আন্টির মজার মজার কথা। চিনি না জানি না এমন মানুষ কেও এখন আমাদের কাছে আপন করে দিয়েছে এই লাদাখ এবং কাশ্মীর ট্যুর। এত রিল্যাক্স,এত আনন্দের একটা ট্যুর হবে আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। গাড়িতে লাউড স্পিকারে গান চালিয়ে শত শত মাইল রাস্তা অতিক্রম করেছি। আমার মেয়েটা যে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল, আনন্দে ছিল এর চেয়ে বেশি পাওয়া আর কিছু হতেই পারেনা।

Happy Face of the tour 🙂
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Kashmirladakhlehstorytravel