গোয়া বিচ
গোয়া পৌঁছনোটা খুব একটা সুখকর হলো না। এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে দাঁড়িয়েই আছে প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেলো। বিমান সেবিকার থেকে জানতে পারলাম সব এয়ারব্রিজ ব্যস্ত। তাই ডিবোর্ডিং এ দেরি হচ্ছে। যাক সব দুঃখেরই শেষ আছে, তাই আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমি এয়ারপোর্টের বাইরে। প্রিপেইড কাউন্টারে নগদ ৬০০ টাকা জমা দিয়ে চেপে বসলাম উত্তর গোয়ার উদ্দেশ্যে। Estrala Do Mar বলে একটা হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। এটা কালাঙ্গুটে আর বাগা বিচের মাঝামাঝি একটা রিসোর্ট। সুনাম শুনেছিলাম, গিয়ে দেখবো সেটা কতটা সত্যি।
আমি যাকে বলে Solo Traveler – এখানে আসা স্কুবা ডাইভিং (Scuba Diving) আর টোটো করে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। গোয়ার (Goa) তো সুনাম পার্টি করার জায়গা হিসাবে, কিন্তু অধিকাংশ শহরের মতো এই শহরেরও অন্য আর একটা মুখ আছে। ঘুরে না বেড়ালে, স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা না বললে, সেটা জানা যায় না। রাস্তা বেশ ভালো, দু দিকের পর্তুগিজ আদলের বাড়ি, চার্চ দেখতে মন্দ লাগে না। ৪০ কিমি রাস্তা, ১ ঘন্টা লাগলো। গাড়িতে বসে বসে প্ল্যান করছিলাম দিনটা কি ভাবে কাটাবো? তাই সময়টাও কি ভাবে কেটে গেছে বুঝতে পারিনি।
হোটেল আশাহত করেনি। চেক ইন কাউন্টারের অভর্থনাটাও বেশ ভালো লাগলো। ছোট ছোট ঝিনুকের তৈরী হারটা বাড়িতে যত্ন করে রাখা আছে। রুমটা একদম সুইমিং পুলের ধারে। ঠিক করে নিলাম মাঝরাতে এই পুলেই সময় কাটাবো। বেশ খিদে পেয়েছিলো তাই আর দেরি না করে সোজা চলে গেলাম রেস্টুরেন্টে। গোয়ানিস ফিশ কারি আর ভাত। দিব্বি খেতে, দাম বেশ নাগাল এর মধ্যেই।
যেমন শুনেছিলাম, ঠিক তাই। একদম সমুদ্রের ধারেই এই রিসোর্ট। যেতে পারলে মনো হতো না। কিনতু নাহ বড্ডো ক্লান্ত। স্কুবা ডাইভিং এর ট্রেনিং এ যেতে হবে ৩.৩০ তে নাগাদ। হাতে মাত্র ঘন্টাখানেক। একটু বিশ্রাম না হলে চলছে না। তাই সমুদ্রের উল্টো দিকে আমার রুমে পা বাড়ালাম। এই রিসোর্টের ট্যারিফ কিনতু ওপর নিচ করে। তাই আগে থেকে বুক করে যাওয়া তাই ভালো। Goibibo থেকে আমি বেশ কম রেট পেয়েছিলাম।
৮টা – রুমের লাগোয়া বিচ স্যাকে বসে আছি। স্কুবা ট্রেনিং হয়ে গেছে। কাল সকাল ৮টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। ফুরফুরে হাওয়া। কিছু কম বয়েসী বিদেশী ছেলে মেয়েরা নাচানাচি করছে। পরপর স্যাকগুলোতে আলো জলছে। একদম টিভিতে দেখা অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। হাতে অনেক সময়। হাটতে শুরু করলাম ধার বরাবর। ঠান্ডা বালি, খালি পায়ে হাটতে মন্দ লাগে না। তবে সন্ধে বেলায় খালি পায়ে না চলাই ভালো।
পিটারের ওয়াটার বাইক আছে গোটা চারেক, কালাঙ্গুট বিচে ভাড়া খাটায়। বাড়ি এই বিচ থেকে প্রায় ১৫ কিমি. বিকেল পর্যন্ত ওয়াটার স্পোর্টস তারপর লোকাল স্যাকে টুকটাক উপার্জন। যা বুঝলাম মৌসুমে প্রায় ৫০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে প্রতিদিন। মার্চের পর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লোকের আনাগোনা কম। বর্ষাকালে সমুদ্রের সরকারি বিধিনিষেধ ও আছে। তাই ওই টাইম এ পন্ডিচেরীতে যায়, কাজ করতে। কথা বলতে বলতে দেখো রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে। একটা দিন কেটে গেলো। আর ৩ দিন আছে মাত্র!
স্কুবা করে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধে হয়ে গেলো। এবার একটু গোয়ার রাত্রিজীবন চাক্ষুস করা যাক। এখানে সব থেকে সুবিধে হলো যানবাহনের। একটা বাইক বা স্কুটি ভরে নিয়ে নাও, আর সারাদিন টোটো করে ঘুরতে থাকো। ৩০০ টাকা নিলো একটা স্কুটির জন্যে। সঙ্গে ২টো হেলমেট।.গন্তব্য টিটোস ক্লাব।
বাগা বিচ (Baga Beach) এর টিটোস ক্লাব বেশ বিখ্যাত জায়গা। পৌঁছতে ২০ মিনিটের মতো লাগলো। বেশ জমজমাট জায়গা..!!! ক্লাবের সামনে ভিড় ছাড়াও যেটা চোখে পড়লো, সেটা হলো fish spa. পরপর দোকানে অকোরিয়াম নিয়ে বসে আছে। ভেতরে কিলবিল করছে অসংখ্য ছোট ছোট মাছ। ৮০০ টাকা দাও, পা ডুবিয়ে থাকো। মাছ এসে পায়ের মরা কোষগুলো খেয়ে চলে যাবে। দরদাম করে ৫০০ টাকা এ নামলো। বসে পড়লাম, মাছকে মরা কোষ খাওয়াতে। দিব্বি একটা অভিজ্ঞতা!
টিটোস (Club Titos – The Original- Where Else!) এ মেয়েদের ঢুকতে কোনো টাকা লাগেনা। কপোত কপোতী ঢুকলে ৮০০ টাকা। আর আমি একা ঢুকলে ২০০০ টাকা! দিল্লির ‘হজ খাসের’ অভিজ্ঞতা কাজে লাগলো। ২-৩ বার প্রত্তাখ্যাত হবার পর এক বিদেশিনী রাজি হলেন, তার সঙ্গে ঢুকতে দিতে। ১২০০ টাকা বেঁচে গেলো। পরে জেনেছিলাম, নাম মাগডালেনা। বাড়ি পোল্যান্ডে, বন্ধুদের সঙ্গে গোয়া ঘুরতে এসেছে। রাত ২টোয় যখন বেরোলাম, গোয়া খালি। টিটোস ক্লাব ছাড়া, কাফে মাম্বোসও (Cafe Mambos) যেতে পারেন। পার্টি করার আদর্শ জায়গা।
বিচের ধারে অনেক দোকান। শপিংয়ের নেশা আমারও কিছু কম নেই। গোয়ার রং বেরঙ এর জামা যেটা কলকাতায় পরলে হয়তো কুকুর তাড়া করবে, কিনে পরে ফেললাম। জামার সঙ্গে মানানসই একটা রোদচশমায় নাকের ওপর বসলো। তৃতীয় দিনের শুরুটা এই ভাবেই হলো। গোয়ার বিশেষত্ব হলো এখানে ঘোরার জায়গার শেষ নেই। সমুদ্র দেখতে চাইলে অসংখ্য সমুদ্র সৈকত। খেতে চাইলে হরেক রকম খাবার। আবার শুধু ঘুরতে চাইলে প্রচুর ফাঁকা জায়গা। একটু এনার্জি থাকলে টিলায় উঠে সমুদ্রও দেখতে পারেন। গুগল ম্যাপটা অবশ্যই রাখবেন। ভুল রাস্তায় যাচ্ছেন মনে হলে স্থানীয় দোকানে জিজ্ঞাসা করে নেবেন। তাহলে আর রাস্তা ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে না।
যারা বিশেষ করে মেয়েরা একটু অন্য রকম শপিং করতে চান, আরাম্বল বিচে (Arambol Beach) যেতে পারেন। হতাশ হবেন না। আর Beach Party করতে গেলে – আনজুনা বিচ (Anjuna Beach)। গুগল ম্যাপ সঙ্গে থাকলে ঘুরতে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়, আমারও হয়নি। পথে কিছু ভালো চার্চও চোখে পড়লো।
বার্ডেজে Chapora ফোর্ট আছে। অবশ্যই যাবেন, সমুদ্রকে অত ভালো করে দেখার জায়গা খুব বেশি পাওয়া যায় না!!
Leave a Comment