গোঁয়াতে স্কুবা ডাইভিং

‘ভাই, তু ভুল যা কে তুঝে সুইমিং আতা হে, সির্ফ ডুব যা’ মার্কোর কথাটা ফেলতে পারিনি। মুখে অক্সিজেন মাস্ক, পিঠে সিলিন্ডার, কোমরে ওয়েট, পায়ে ফিন লাগিয়ে ডুব দিয়েই দিলাম আর একটা জগৎ দেখবো বলে।

আমার একটা ‘টু ডু’ তালিকা আছে। প্রথম ৫ এর মধ্যে স্কুবা ডাইভিংটা ছিল। গোয়াতে আসাও সেই কারণেই। ওই পার্টি ফার্টির নেশা আমার খুব একটা নেই। অল্পেতেই বোর হয়ে যাই। আগে থেকে ‘গোয়া একোটিক্স’ এ অনিন্দদার সঙ্গে কথা বলাই ছিল। একটা বাইক নিয়ে চলে গেলাম ট্রেনিং নিতে।

প্রথম দিন সুইমিং পুলে ট্রেনিং এবং পরের দিন প্রায় ২৫ কি মি দূরে ‘সুজি’স রেক’ এ আসল অভিজ্ঞতা। প্রায় ঘন্টাখানেক লাগে নৌকা করে যেতে। প্রথম প্রথম রোমাঞ্চ লাগলেও একটু পর একঘেয়ে হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর। তাই হেডফোন নিয়ে যাবেন যাতে গান শুনতে পারেন।

আমি তো বীরপুরুষ টাইপের হাবভাব, তার ওপর একাই গেছি। বোধহয় সেই জন্যেই আমাকে বলা হলো প্রথম ডাইভ দেবার জন্যে। জলে ঝাঁপ তো মারলাম, ডুবতে আর পারিনা। ইচ্ছে করে ডোবাতে বেশ মুশকিলের ব্যাপার। মার্কোর কথাটা, ওই তারপর ই!!

কয়েক মুহূর্ত লাগলো, জলের নিচের দৃশ্যগুলো ঠাহর করতে। একটা দড়ি ধরে আস্তে আস্তে গভীরে যাচ্ছি। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, ওই বোধহয় মাস্কটা খুলে গেলো। চটকা ভাঙলো যখন এক ঝাঁক মাছ চোখের সামনে দিয়ে চলে গেলো। ততক্ষনে কিছুটা স্টেডি হয়ে গেছি। বিস্ময়ের ঘর কাটতে না কাটতেই দেখি একটা ভাঙা জাহাজে পৌঁছে গেছি। এটাই বোধহয় সুজির ভগ্নাবশেষ! আসে পাশে মাছের ঝাঁক, হাতের কাছে ডুবে যাওয়া জাহাজ, বেশ রূপকথার পরিবেশ। ইশ, যদি কটা পুরো স্বর্ণমুদ্রাও পেয়ে যেতাম, তাহলে ষোলোকলা পূর্ণ হতো 🙂

আস্তে আস্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মার্কোর আদেশ বেশি পা চালিয়ে জল ঘোলা করা চলবে না। নিজেকে বেশ প্রফেশনাল ডাইভার মনে হচ্ছে। আত্মবিশ্বাস চরমে, মনে হচ্ছে হাতে একটা ক্যামেরা থাকলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকেও টেক্কা দিয়ে দেব…!!!

হটাৎ মার্কোর ইশারা, সাবধান…!!! আঙ্গুলটা অনুসরণ করে দেখি, একটা বেশ বড় মাছ, হা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝলাম, ঘাঁটাতে চায়না। আস্তে আস্তে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো। পরে মার্কো বলেছিলো, ওটা ওদের জগৎ, আমরা অতিথি মাত্র। এই সত্যটা মেনে চলাটা খুব দরকার। তারপরেও বেশ কিছুক্ষন রইলাম, জাহাজের এদিক ওদিকে দাঁড়িয়ে ফটো সেশন ও হলো। আরে, বাড়ি গিয়ে ছেলেকে দেখাতে হবে তো…!!!

স্কুবার পরে কিন্তু বেশ খিদে পায়। নৌকোয় উঠে প্যাটিস, কলা খেয়ে বসলাম, সদ্য হওয়া স্কুবা ডাইভিং (Scuba Diving) এর অভিজ্ঞতাটা আর একবার ঝালিয়ে নিতে।

এবার কিছু দরকারী তথ্য –

  • স্কুবা করতে মোটামুটি ৫৫০০ টাকা লাগে। বেশি লোক গেলে বেশি ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
  • এটা একটা প্রায় গোটা দিনের ব্যাপার, তাই সেই দিন আর অন্য কোনো প্রোগ্রাম রাখবেন না।
  • স্কুবার পরে ২৪ ঘন্টা ফ্লাইটে ট্রাভেল করা যায় না, তাই প্ল্যানটাও সেই হিসাবে করবেন।
  • স্কুবা করার জন্যে সাঁতার জানার দরকার নেই।
  • যাদের পার্টি করার ইচ্ছে, টিটোস এ যেতে পারেন। সঙ্গিনী থাকলে এন্ট্রি ফী টা বেশ কমে যায়।
  • মোটামুটি ৪ দিনে গোয়া (Goa) ঘুরে নেওয়া যায়। দুধসাগর এ যেতে গেলে, আরো এক দিন এক্সট্রা!
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ goaindiascuba diving