দুধসাগর জলপ্রপাত

দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar Waterfalls) পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে একটি। এটি কর্ণাটক এবং গোয়া সীমানায় অবস্থিত। উচ্চতায় এটি ভারতবর্ষের পঞ্চম। প্রায় ৩০ মিটার প্রস্থের সমগ্র মান্দভি বা মানদবী নদী ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে বিশাল জলরাশি নিয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এই জলপ্রপাতটি “সি অফ মিল্ক” নামেও পরিচিত।

দুধসাগর জলপ্রপাতটি নিয়ে স্থানীয় একটি কল্পকথা প্রচলিত আছে, প্রাচীনকালে এই জলপ্রপাতের স্থানে একটি রাজার প্রাসাদ ছিল। প্রাসাদ সংলগ্ন সরোবরে রাজকুমারী স্নান করে সোনার পাত্রে দুধ পান করতেন। একদিন স্নানরতা নগ্না রাজকুমারীকে এক রাজকুমার গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখতে থাকলে রাজকুমারী ব্যাপারটি বুঝতে পেরে, সোনার পাত্রে রাখা দুধ নিজের উপর ঢেলে লজ্জা ঢাকলেন। কথিত আছে সেই দুধের স্রোত থেকে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে।

দুধসাগর জলপ্রপাতের বৈশিষ্ট এর জলধারার স্বচ্ছতা। পাহাড়ি নদীর জল পাথরের উপর দিয়ে বসে আসার ফলে এর জল কর্দমাক্ত নয়, কিন্তু বারংবার পাথরে ধাক্কা খাবার ফলে ফেনিল। দেখে মনে হয় সত্যি যেন রাশি রাশি দুধ পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। সেই অর্থে এই নামকরণ যথার্থ।

কখন যাবেন

দুধসাগর জলপ্রপাত দেখার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।

কিভাবে যাবেন

দুধসাগর ঝর্ণা যাওয়ার জন্য অনেক উপায় আছে। পুনে বা বেলগাঁও থেকে প্রতি শনিবার/রবিবার পূর্না এক্সপ্রেস এ যাওয়া যেতে পারে। এই ট্রেনটি রাত্রে পুনে থেকে ছাড়ে, ৭-৩০ এ বেলগাঁও ছাড়ে, সকাল ১১টা নাগাদ দুধসাগর পৌছায়। দুধসাগর এ কোনো স্টেশন না থাকলেও সেখানে ভ্রমনপিপাসুদের জন্য ট্রেনটি থামে। আবার বিকাল ৫টা নাগাদ গোয়া এক্সপ্রেস দুধসাগর এর যাত্রীদের নেবার জন্য এখানে থামে। কাললেম অবধি রিটার্ন কাটতে হয়, যদি রিটার্ন টিকেট কাটা না হয় তাহলে দুধ্সাগর হল্ট এ রেলওয়ে স্টাফ টিকেট করে দেয়।

যারা ট্রেকিং করতে ভালবাসেন তারা কাস্তারেক স্টেশন এ নেমে রেলওয়ে ট্রাক ধরে ট্রেকিং করে দুধসাগরে পৌছাতে পারেন। দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার। পৌছাতে ৫-৬ ঘন্টা লাগে। কুলেম স্টেশন থেকেও ট্রেকিং করে ১১ কিমি যেতে হয়, সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা , কুলেম এ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়া যায়, ট্যাক্সি দুধসাগরের ১ কিলোমিটার দুরে নামিয়ে দেয়, সেখান থেকে হেঁটে যেতে হয়। দুধসাগরে খাবার বা জল পাওয়া যায়না, তাই খাবার বা জল নিজেকে নিয়ে যেতে হয়।

এ ছাড়াও যারা কলকাতা থেকে সরাসরি গোয়া (Goa) যেতে পারবেন ১৮০৪৭ অমরাবতী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি হাওড়া থেকে সোম,বৃহ,শনি রাত ১১.৩০ মিনিটে ছেড়ে ভাস্কো ডা গামা পৌঁছায় বেলা ৩.০৫ মিনিটে। ভাড়া ২এ-২.৮৭৫ টাকা, ৩এ-১.৯৪৫ টাকা এবং স্লিপার- ৭৩৫ টাকা। গোয়া পৌছুতে ৩৫ ঘন্টা কলকাতা থেকে।

পাঞ্জিম থেকে দুধসাগর ফলস যাওয়ার উপায়

পান্জিম হতে বাসে পন্ডা ২৫ রুপি। পন্ডা হতে মল্লাম বাসে ২৫ রুপি। মল্লাম হতে কল্লাম বাসে ১০ রুপি। কল্লাম এখানে আসার পর আপনাকে দুধ সাগর জলপ্রপাতে যাওয়ার জন্য “দুধ সাগর ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন” এর নির্ধারিত জীপ গাড়ীতে উঠতে হবে। আসা যাওয়া বাবদ ৪০০ রুপি। এখানেই কাউন্টারে গোয়া বন বিভাগের গেটপাস বাবদ দিতে হবে ৫০ রুপি, আর যদি গোসল করতে চান তাহলে লাইফ জ্যাকেট বাবদ দিতে হবে ৩০ রুপি।

আপনি চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি বা ভাড়া করা গাড়িতে সরাসরি পান্জিম/পাঞ্জি/পানাজি হতে কল্লাম যেতে পারবেন। কিন্তু কল্লাম হতে দুধ সাগর জলপ্রপাত পর্যন্ত ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। আপনি চাইলে এখানে কাউন্টার থেকে জীপ পুরোটা ২৮০০রুপিতে রিজার্ভ নিয়ে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জীপে ৭ জনের বেশি বসতে দিবে না। আর ঝর্নার পানিতে গোসল করতে হলে লাইফ জ্যাকেট পরেই নামতে হবে, নইলে আপনাকে ঝর্ণাতে নামতে দিবেনা।

কল্লাম হতে জীপ গাড়ী করে দুধসাগর জলপ্রপাত পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট এবং ফিরে আসার সময় ৪৫ মিনিট। আপনাকে ঝর্ণা উপভোগ করতে ও গোসল করতে সময় দিবে সব মিলিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এরপর দেরি করলে আপনাকে জরিমানা বা ওয়েটিং ফি দিতে হবে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ dudhsagarfallsgoaindiawaterfall