জ্যুকো ভ্যালী – দ্য ভ্যালী অব ফ্লাওয়ার্স || নাগাল্যান্ড

ছবির মতো সুন্দর জ্যুকো ভ্যালী (Dzukou Valleyনাগাল্যান্ড এ অবস্থিত এক মনোহরিনী অঞ্চল। অঞ্চল না বলে উপত্যকা বলাই ভালো। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই ভ্যালী বা উপত্যকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৩৮ মিটার বা প্রায় আট হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে দক্ষিণে প্রায় ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এই উপত্যকার এক উল্লেখযোগ্য অংশ পড়েছে মনিপুর রাজ্যে। জ্যুকোর ভৌগোলিক মালিকানা নিয়ে তাই দুই রাজ্যের মধ্যে এক প্রকার বিরোধ আছে। আমাদের মতো ট্যুরিস্টদের তাতে অবশ্য মাথাব্যথার কিছু নেই!

মূল উপত্যকাটা একটু নিচের দিকে অবস্থিত। দুটো শীতল পানির প্রস্রবণ আছে ওখানে। জ্যুকো আর জাপফু নামের এদেরকে নদীই বলা যায়। স্থানীয় ভাষায় জ্যুকো মানে “ঠান্ডা পানি”। অর্থাৎ ঠাণ্ডা পানির এই নদী উপত্যকা ভেদ করে বয়ে যাওয়ায় এর নাম হয়েছে জ্যুকো ভ্যালী বা জ্যুকো উপত্যকা। চিত্তাকর্ষক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ আর প্রাণীকুল যেমন এ জ্যুকোকে বৈশিষ্টমণ্ডিত করেছে তেমনি ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্টের মেঘে ঢাকা গহীন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ট্রেইল আর পদে পদে এডভেঞ্চারের গন্ধে প্রতি বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ট্যুরিস্ট আর ব্যাকপ্যাকার্সরা ছুটে আসে এখানে।

রঙ বেরঙের ফুলেল কার্পেটে ঢেকে থাকা এই উপত্যকার মূল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বর্ষার শুরুতে। জুন-জুলাই মাস সবচেয়ে সেরা সময় জ্যুকো ট্রেক করার। এ সময়টায় বিভিন্ন রকমের পাহাড়ি রডোড্রেন্ডন, ইউফোরবিয়া আর জ্যুকো লিলির দেখা মিলবে ট্রেক র‍্যুট আর উপত্যকা জুড়ে। বিখ্যাত জ্যুকো লিলি 🌷 শুধুমাত্র মূল উপত্যকায়ই চোখে পড়ে। বন্য ফুলের রঙে রাঙ্গানো স্বর্গীয় সৌন্দর্যমন্ডিত এ উপত্যকার দিকে তখন সম্মোহিত হয়ে চেয়ে থাকতে হয়। নর্থ-ইস্টের “ভ্যালী অফ ফ্লাওয়ার (Valley of Flowers)” তকমাটা তাই কোনো ভাবেই অযৌক্তিক নয় শৈলপাহাড়ে ঘেরা এই বিস্ময়কর উপত্যকার জন্য।

বিস্তৃত উপত্যকা ধরে হেঁটে চলা, স্বচ্ছ প্রানবন্ত জলের কুলকুল ধ্বনি, নিবিড় অরন্যে লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা শ্যামল সবুজ বৃক্ষপল্লব আর ঠাসবুনটের মতো পাহাড়ি জংলি ফুল কিংবা থেকে থেকে বিচিত্র পাখির ঘুঘুধ্বনি আর সুরতান, নিস্তব্ধতা, অবাক করা নীরবতা আর একাকীত্ব পুরোপুরি ভাবেই শহুরে হুড়োহুড়ি-ব্যস্ততা আর হৈচৈ-গোলমেলে জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে স্বর্গীয় সুখের সন্ধান দেয়। মেঘে ঢাকা পড়া ভোরের উপত্যকা কিংবা সূর্যাস্তের সময়কার রূপ সব যন্ত্রণাদায়ক ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর করে দেয়।

জ্যুকো এন্ট্রি করা যায় দু’টো ট্রেক পয়েন্ট দিয়ে। একটা ভিসেমা ভিলেজে আরেকটা জাখামা ভিলেজে। রাজধানী কোহিমা থেকে রওনা দিলে জাখামা ভিলেজই আগে পরে। তারপর ভিসেমা। ভিসেমা র‍্যুটটা সহজতর হওয়ায় ওটাই সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকারদের কাছে কিন্তু সময় লেগে যায় অনেক। আর জাখামা সাইডের ট্রেইলটা একদম খাড়া হওয়ায় ট্রেক করা কষ্টকর। তবে খাড়া হওয়ায় সময়ও কম লাগে আর তাই শর্টকাট হিসেবে এ ট্রেইলটা স্থানীয়রাই বেশি ব্যবহার করে।

ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠে হোটেল থেকে চেক আউট করে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে নিলাম ট্রেক পয়েন্ট পর্যন্ত। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পথে এক রোডসাইড ধাবায় ব্রেকফাস্ট সেরে জাখামা ভিলেজ পার হয়ে রাস্তার পাশে আমাদের নামিয়ে দিলো ড্রাইভার। এই মৌসুমে জ্যুকো ট্রেক করাটা অনেক রিস্কি। একদম খাড়া ট্রেক পথ আর প্রচণ্ড পিচ্ছিল। গত বছরে নাকি দু’জন ট্যুরিস্ট দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেছিলো। যেকোনো সময় ফ্ল্যাশফ্লাডের কবলে পড়তে হতে পারে। স্থানীয় লোকজন এমনকি আমাদের ড্রাইভারের মুখেও এসব সতর্কবাণী শুনে মনে মনে একটু আশাহত হলাম। চারজনের টীম তিনজন হয়ে গেলো এসব শুনে। অনিন্দ্য চলে গেলো ড্রাইভারের সাথেই। আমরা হাঁটা শুরু করলাম তিনজন মিলে। পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের কাজ চলছে। গাড়ি চলার মতো রাস্তা করা আছে। আমাদের ড্রাইভার এত আগেই আমাদের নামিয়ে দিছে লক্ষ্য করে মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো। সময় স্বল্পতার কারণে জাখামা সাইড দিয়ে ট্রেক করার প্ল্যান আমাদের। বেশিরভাগ ট্রেকাররাই ট্রেক করে ভিসেমা সাইড দিয়ে। এখানে আশেপাশে তাই কোনো ট্যুরিস্ট বা ট্রেকারের নাম গন্ধও দেখা যাচ্ছে না। গাইড না নেওয়ায় আর একটু পরপরই দু’তিনটে রাস্তার মোড় পড়ায় ধন্দে পড়ে গেলাম যে কোন রাস্তাটা ধরে এগুবো। স্থানীয় দু’জন আন্টিকে পেয়ে গেলাম এ সময়। ওরা এখানে পাথর উত্তলনের কাজ করে থাকে। জ্যুকো যাবো শুনে আমাদের সঙ্গ দিয়ে কয়েকটা শর্টকাট ধরে বেশ অল্প সময়েই ট্রেকপয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিলো ওরা। ধন্যবাদ আর বিদায় জানায়ে আমরা শুরু করলাম উপরের দিকে আমাদের জ্যুকো যাত্রা। এখান থেকেই ওয়ান ওয়ে ট্রেক র‍্যুট চলে গেছে একদম প্রায় ৮০০০ ফুট উপরে থাকা জ্যুকো ভ্যালী পর্যন্ত। মেঘে ঢেকে থাকায় টিপটিপ করে পানি পড়ছে চারপাশে। নীরব নিস্তব্ধ পথ স্যাঁতস্যাঁতে পিছলা হয়ে আছে। মিনিট বিশেক চলার পর রাস্তার কন্ডিশন দেখে টীমের আরো একজন ব্যাক করলো। তাসিক ছেলেটা চলে যাওয়ায় আর স্থানীয়দের সতর্কবার্তায় মনে মনে একটু দুর্বল হয়ে গেলাম।

রেজা আর আমি বসে আছি পাথরের উপর, ঘন পাহাড়ি স্যাঁতস্যাঁতে জঙ্গলের মধ্যে। আশেপাশে কোনো জনমানুষের চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। একটানা পোকার চিঁচিঁ ডাক আর ঝর্ণার পানি গড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। মেঘ ঘিরে রেখেছে চারপাশ। গাছের পাতায় টুপ করে শিশির জমা পানি পড়লেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়দের সতর্কবার্তা আর টীমের দু’জন চলে যাওয়ায় মনোবল কমে গেছে আগেই। দু’জন মিলেই সংকল্প করলাম, “যা হওয়ায় হবে! সামনে কি আছে না দেখে যাচ্ছি না ইনশাআল্লাহ!”

আবার শুরু হলো খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে ওঠা। কতক জায়গায় রীতিমতো চার হাত-পা দিয়ে কসরত করে উঠতে হচ্ছে। পিঠে প্রায় বিশ কেজি ওজনের ব্যাকপ্যাক। জ্যুকোতে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় চারজনের জন্য তিনবেলার খাবার সাথে কিনে নিয়েছিলাম। ব্যাকপ্যাকের ওজন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সেগুলো। যতই উপরে উঠছি জঙ্গল আরো ঘনতর হচ্ছে। মেঘ আরো ঘিরে জাপটে বসছে। অনেক্ষণ ধরে হেঁটে টায়ার্ড হয়ে পড়েছি। হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে। ব্লাড পাঞ্চ করতেও কষ্ট হচ্ছে ব্যাটার। হাঁপাচ্ছি। মেঘের কারণে একহাত দূরেও স্পষ্ট না এমন অবস্থায় হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম জঙ্গলের ভেতর।

হঠাৎই নীচ থেকে পাথর মাড়িয়ে আসার শব্দ শুনতে পেলাম। সেই সাথে ড্যাগার দিয়ে ঝোপঝাড় কাটার শব্দও। নাগাল্যান্ডের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছি। হেড-হান্টিং নামে তাদের সুখ্যাতি। এরকম জনমানুষহীন গহীন বনে হঠাৎই তাদের মোকাবেলা করতে হয় নাকি এ চিন্তায় পড়ে গেলাম। বসবাসের শেষ চিহ্নও তো ফেলে এসেছি বহুত আগে। বেশি চিন্তার সুযোগ না দিয়ে বড় একটা ড্যাগার হাতে নিয়ে আশেপাশের ঝোপঝাড় উজার করতে করতে একজন মধ্যবয়স্ক লোক আর অল্পবয়েসী এক ছেলে উঠে আসলো!

সম্ভাষণ আর বাতচিত সেরে যা বুঝলাম তারাও আমাদের মতোই একই পথের অভিযাত্রী। তবে আমাদের মতো অতো উপরে ওরা যাবে না। তার আগেই মোড় নিয়ে আরেকটা ট্রেইল ধরে অন্য আরেকটা জায়গায় চলে যাবে৷ সেখানে লোকটার বোন থাকে, দেখা করতে যাচ্ছে। সাথের অল্পবয়সী ছেলেটা তার নিজের ছেলে। ক্লাস এইটে পড়ে। নাম ভিকেসোহা। আমরা জ্যুকো যাচ্ছি শুনে আমাদের সাথে যেতে বললো। অল্পক্ষণের পরিচয় আর কথাবার্তায়ই ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। ছেলেটাও অনেক মিশুক ফ্রেন্ডলি। এতক্ষণ ধরে জনমানুষহীন জঙ্গলে হাঁটতে হাঁটতে নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে নিচ্ছিলো। নতুন সঙ্গের অফার পেয়ে তাই আর কালক্ষেপণ করলাম না। একসঙ্গে শুরু হলো আবার জ্যুকো অভিমুখে যাত্রা।

টিটটিট শব্দে সকাল এগারোটার জানান দিয়ে দিলো ঘড়ির কাঁটা। ট্রেক শুরু করেছিলাম সকাল ৮ টার দিকে। ৩ ঘন্টা ধরে সবুজে ঘেরা মেঘে ঢাকা শৈলপ্রান্তর দিয়ে হাঁটতেই আছি। পিঠের ব্যাকপ্যাকটার ওজন মনে হচ্ছে আরও বেড়ে গেছে। আবারও হাঁপড়ের মতো উঠানামা করছে বুক। হৃদপিন্ড যেন বুকের ছাতি ফেটে বেরিয়ে আসবে। প্রয়োজন মতো বাতাস টেনে নিতে না পেরে হাঁসফাঁস করছে ফুসফুস যুগল। আমাদের অবস্থা দেখে সঙ্গী বাপ-বেটা দু’জন হেসে ফেললো। তাদের দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে একটা বোকা হাসি দিয়ে বসে পড়লাম একটা বড় দেখে পাথরের গোড়ায়।

পাশ দিয়ে ঝর্ণা বয়ে গেছে। অনেক উঁচু থেকে গড়িয়ে আসা জলধারা পাথরের খাঁজে খাঁজে ফিল্টার হয়ে নেমে গেছে একদম নিচে। মেঘের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে চারপাশ। খানিকটা রেস্ট নিয়ে বরফের চেয়েও ঠান্ডা পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে, বোতলে খাওয়ার জন্য পানি ভরে নিয়ে আবার শ্লথের গতিতে ছুটলাম উপরের দিকে!

নাগাল্যান্ড, জাখামা, ভিসেমা, জ্যুকো এসব নিয়ে গল্প করতে করতে একটা রেস্ট হাউজে এসে পৌঁছলো আমাদের চারজনের ছোট্ট অভিযাত্রী দল। রেস্ট হাউজ মানে একটা ছাপড়া ধরনের ঘর বানানো আছে এখানে। ট্রেকার আর স্থানীয়রা এখানে যাত্রাপথে বসে বিশ্রাম নেয় আরকি। পাশেই বরফশীতল ঝর্ণার প্রস্রবণ আছে। এখানেই আমরা ভাগ হয়ে যাবো। মানে বাপ-বেটা দুজন চলে যাবে তাদের রাস্তায়। আর আমরা আরো উপরে উঠতে থাকবো জ্যুকোর সন্ধানে। রেস্ট হাউজে বসে আছি এমন সময় জঙ্গল ফুঁড়ে কোত্থেকে যেন প্রায় ১৫ জনের একটা দল এসে পৌঁছলো। প্রায় সবার হাতেই ধারালো ড্যাগার, রামদা টাইপের বড় বড় ছুড়ি আর আমরা যেটাকে গুলতি বলি সেরকমই শক্তিশালী আরেক ধরনের অস্ত্র। ওরাও এসে আমাদের সাথে খুব মিশে গেলো। একসাথে বসে আড্ডা আর গল্পবাজি চললো। বাংলাদেশ থেকে আসছি শুনে এরাও খুব অবাক হয়ে গেলো। কথায় কথায় জানলাম ওরা দলবেঁধে এখানে এসেছে জঙ্গল থেকে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করতে। গুলতি রেখেছে যদি দু’একটা পাখি শিকার করা যায় তো ভুড়িভোজটাও হয়ে যাবে।

গাছের শিকড় ধরে ঝুলে উঠতে গিয়ে পা স্লীপ করায় পেশিতে টান খেয়ে বসে আছি। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেছে রেস্টহাউজে ওদের বিদায় দিয়ে আমরা আবার খাড়া পথে চলে এসেছি। গত কয়েক দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই ঝড়-বাদল হয়েছে এদিকটায়। বড় বড় কয়েকটা গাছ ট্রেইলের উপর পড়ে আছে ভেঙ্গে। ওগুলাকে টপকে পার হতে গিয়েই এই দশা। পেশির ম্যাসাজ করে আবার শুরু করলাম যাত্রা। হিসেব মতে আর আধাঘন্টা লাগার কথা উপরের পৌঁছতে। শরীরের শক্তি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। পিচ্ছিল কাদাযুক্ত পথ ট্রেইলটাকে আরো বন্ধুর করে তুলেছে। সৃষ্টকর্তাকে স্মরণ করতে করতে একটু একটু করে উঠছি উপরের দিকে। আধঘন্টা পার হয়ে গেলো কিন্তু ট্রেইল শেষ হয় না। আরও মিনিট পনেরো উঠলাম তাও শেষ হচ্ছে না। এই পথ কি আদৌ শেষ হবে? নাকি এখান থেকেই ফিরে যেতে হবে আমাদের! আর পারছি না! এসব ভাবতে ভাবতেই আর্মির ড্রেস পড়া এক জোয়ান ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হলো আমাদের। একা একা জ্যুকো থেকে জাখামা ফিরছে। আমাদের দেখে হেসে অভিবাদন জানালো। আমরাও প্রত্যুত্তরে প্রানহীন হাসি ব্যাক করলাম। চূড়ায় পৌঁছতে বড়জোড় আর মিনিট দশেক লাগবে বলে কাঁধে রাইফেলটা ঝুলিয়ে নিচের দিকে জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো ছেলেটা।

মিনিট দশেকের কথা শুনে বুকে বল পেলাম এবার। পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চললাম উপরের দিকে। পিচ্ছিল পাথুরে পথে কাঁদা জমে খুব ঝামেলা করছে পথ চলতে। হঠাৎই মেঘ পাতলা হয়ে আসতে শুরু করলো। সূর্যালোক দুপুর বারোটা পার হলেও ঢুকতে পারছিলো না এতক্ষণ ঘন জঙ্গল ভেদ করে। সেই সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ট্রেক শুরু করার পর এই প্রথম সূর্যরশ্মি চোখে পড়লো। একটা লোকাল ফ্যামিলিকে দেখলাম নিচে নেমে আসছে। পরিবার প্রধানের সাথে তার স্ত্রী আর পাঁচজন বাচ্চাও আছে। সবার বড় পিচ্চিটার বয়স বড়জোড় তের কি চৌদ্দ হবে। আমাদের সাথে নিজে থেকেই এসে গল্পজুড়ে দিলো। অন্যরা লাফাতে লাফাতে নিচের দিকে চলে যাওয়ায় বেচারা গল্পের মাঝখানে উঠে চলে গেলো। আমরাও উপরে উঠতে লাগলাম। চূড়ায় চলে এসেছি প্রায়। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই চূড়ায় আরোহন করলাম। সাথে সাথেই সাম্নের দৃশ্য দেখে অবাক বিস্ময়ে সম্মোহিত হওয়ার পালা। প্রকৃতির এমন ভোল পালটানো কারো কল্পনায়ই আসবে না। এতক্ষণের মেঘেঢাকা স্যাঁতস্যাঁতে গহীন অরণ্য হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়ে সবুজ গালিচায় ঢাকা এক অপার্থিক পর্বতসারির সৃষ্টি হয়ে গেছে। মাঝে আটকে পড়েছে অনিন্দ্যসুন্দর এক উপত্যকা!

আহ!
এই সেই জ্যুকো!
এই সেই উপত্যকা!

যাকে নিজ চোখে দেখতে এতটা পথ পারি দিয়ে এতটা শ্রম দিয়ে সুদূর বাংলাদেশ থেকে আমাদের ছুটে আসা! মেঘের খেলা চলছে পুরো উপত্যকা জুড়ে। খানিকক্ষণ পরপরই বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘ। উপর থেকে উপত্যকাটা দেখতে অনেক বেশিই সুন্দর লাগে। আমাদের দেশের বাঁশের মতো দেখতে আকারে একেবারেই ছোটো একধরণের গাছ দিয়ে পুরো পাহাড় আর উপত্যকা ছেয়ে আছে। এখানকার মানুষজন এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ঝাড়ু বানাতে এ গাছগুলোর জুড়ি নেই।

কতক্ষণ ঠায় বসে থাকলাম এভাবে। এরমধ্যেই দেখি রেস্টহাউজে পরিচয় হওয়া সেই স্থানীয় কাঠ কাটার গ্রুপ আর আমাদের সঙ্গ দেয়া বাপ-বেটাও চলে আসছে উপরে। তোমরা এখানে কি করতে আসছো জিজ্ঞেস করায় জানালো ওরাও আমাদের মতোই জ্যুকোর সৌন্দর্য দেখতে এসেছে। ভিকেসোহা ছেলেটার বাড়ি জাখামা হলেও এবারই প্রথম এসেছে এখানে৷ আমাদের মতোই তার উচ্ছলতা আর উচ্ছ্বাস চোখে পড়লো।

চূড়া থেকে প্রায় আধঘন্টা ডাউনহিলে ডর্মের অবস্থান৷ নেমে চললাম এবার ডর্মের উদ্দেশ্যে। পুরো রাস্টাটাই এবার খোলামেলা, বিশেষ টাইপের সেই গাছ বা ঘাসের মধ্য দিয়ে যাত্রা। এখানেই ভিসেমা থেকে আসা অল্টারনেট ট্রেইলও চোখে পড়লো। ডর্মে পৌঁছানোর পথে কাছেই একটা ঝর্ণার দেখা মিলে। এ এলাকার যত পানির চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

ব্যাকপ্যাক রেখে এন্ট্রি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সঙ্গে নিয়ে আসা খাবার দিয়ে লাঞ্চ সেরে একটু রেস্ট নিয়ে মূল ভ্যালীর দিকে যাত্রা করলাম। মূল ভ্যালী এখান থেকে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। পুরোটাই ডাউনহিলে। চার পাশে বিভিন্ন ধরনের রঙবেরঙের ফুল ফুটে আছে। রডোডেনড্রন, ইউফোরবিয়া এসব ফুলে ছেয়ে আছে চারপাশ। আরেকটু নিচে নামতেই দেখা মিললো এই উপত্যকার বিখ্যাত ফুল জ্যুকো লিলির। বেগুনি বর্ণ নিয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে। উপত্যকা জুড়ে ফুটে থাকা এই ফুল এখানকার সৌন্দর্য্য যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূল উপত্যকার কাছে একটা সুন্দর গুহা আছে। আঁকাবাঁকা এক ছোট্ট নদী বয়ে চলেছে ভ্যালীর বুক চিড়ে। কাঠের ছোট ছোট সুন্দর ব্রীজ করে দেওয়া আছে ঠান্ডা পানির এই নদী পার হওয়ার জন্যে। মূল ভ্যালীতে অনেকে তাঁবু টানিয়ে আছে। এখানেই রাত কাটানোর প্ল্যান ওদের৷

ট্রেকিং এর জন্য জনপ্রিয় আর আদর্শ এই উপত্যকায় রাতে থাকার ব্যবস্থাও আছে। নাগাল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে এখানে দুটো ডর্মেটরির ব্যবস্থা আছে। এগুলোয় ফ্লোরিং করে মাথা গুজার পাশাপাশি চাইলে দু’বেলা পেটপুজোর বন্দ্যোবস্তও করে দেয় ওরা। মূল উপত্যকায় টেন্ট বা তাঁবু খাটিয়েও থাকা যায়। সবসময় অবশ্য তাঁবু ভাড়া পাওয়া যায় না ওখানে আর গেলেও খরচ অনেক পড়ে যায়। নিজেদের তাঁবু, ক্যাম্পিং গিয়ার আর রান্নাবান্নার রসদ নিজেদের নিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

ডর্মে ফ্লোরিং করে থাকার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। কিছু রুপির বিনিময়ে ওখানে ফোম ম্যাট্রেস, বালিশ, কম্বল মিলবে কিন্তু রাতের বেলা মেঘে ঢাকা এই উপত্যকার ভয়ানক ঠাণ্ডাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য শীতের পোষাক সাথে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি। ভি আই পি ক্যাটাগরির ডর্মও আছে। সেগুলোতে চৌকি ধরনের চারপেয়ে খাট পাতা আছে। একরুমে দশ জনের মতো থাকা যায়।

রাতে আমরা ডর্মেই ফোমের ম্যাট্রেস, বালিশ, কম্বল ভাড়া নিয়ে ফ্লোরিং করে থাকলাম। আশেপাশের অনেক ব্যাকপ্যাকারদের সাথে পরিচয়, আড্ডা আর বাতচিত হলো। আইজল, ইম্ফাল, গৌহাটি, শিলচর, ডিমাপুর, কোহিমা, শিলিগুড়ি আর কোলকাতার দাদা-দিদিই বেশি আসছে। কানাডিয়ান ক’জন ব্রো-সিসের সাথেও পরিচয় হলো। বাংলাদেশ থেকে আসছি শুনে সবাই অবাক হলো। নাগাল্যান্ডে আসার পর থেকেই এ ব্যাপারটা খেয়াল করছি, বাংলাদেশ শুনলেই মানুষজন অবাক হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, নাগাল্যান্ড সম্পর্কে কিভাবে জানলাম। বাংলাদেশ থেকে তো তেমন কেউ আসে না এদিকে। ওদের জানিয়ে দেই, আগে তোমাদের এদিকটা আমাদের জন্য রেস্ট্রিক্টেড ছিলো। এখন কিছু কিছু ট্রাভেলাররা আসতেছে এদিক। সামনে হয়তো আরও অনেকে আসবে। নাগাল্যান্ডের মানুষজনের কাছে বাংলাদেশী হওয়ায় যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা পেয়েছি তা অটুট থাকুক যুগ যুগ ধরে।

সন্ধ্যার সূর্যাস্তটা ছিলো দেখার মতো। পাহাড়ের চূড়ায় সূর্য্যিমামা যখন মুখ গুজলো তখন চারপাশের আকাশ আর উপত্যকায় যে মোহিনী দৃশ্যের অবতারণা হয় তা যেকোনো মানুষেরই মন জয় করে নিবে। রাতের বেলা মেঘ এসে ঢেকে দিলো চারপাশ। ডর্মের খোলা জানালা দিয়ে মেঘ রুমে ঢুকে পড়ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডাকে পুলওভার আর ব্ল্যাঙ্কেট দিয়েও আটকে রাখা যাচ্ছে না। পূর্ণিমা রাতে এই উপত্যকার সৌন্দর্য কেমন হবে তা চিন্তা করতে করতে তলিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

নাঙ্গা তরবারী হাতে পিছে তাড়া করে ফিরছে এক তাগড়া যুবক। দেখে টেখে আফ্রিকান বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। পড়নে লজ্জাস্থান ঢাকার মতো কিছু কাপড় আছে শুধু। আমি প্রাণপনে ঝোপঝাড় ভেদ করে ছুটছি। ধরা পড়া যাবে না কোনোভাবেই। যুবকও নাছোড়বান্দা। পিছু ছাড়ছেই না, তাড়া করেই যাচ্ছে। দম আটকে আসছে, হাঁপিয়ে গেছি, পাও অবশ অবশ লাগছে। তরবারী হাতে যুবকও এদিকে প্রায় ধরে ফেলেছে! আর রক্ষা নাই এ যাত্রায়! শেষ পর্যন্ত এই জঙ্গলে এসেই এভাবে নিজের ধর থেকে মুন্ডু হারাতে হবে কখনো ভাবিইনি। নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়লাম, আমার পক্ষে আর একচুলও আগানো সম্ভব না! তরবারী হাতের যুবকটা কাছে এসে ব্রেক কষলো। চোখ বন্ধ করে ফেললাম! শেষ, সব শেষ! কিছুক্ষণ ওভাবেই থাকলাম। কিন্তু কিছুই ঘটলো না দেখে চোখ খুলেই দেখতে পেলাম যুবকটা আমার হাত ঘরে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে, “ভাই, কয়টা বাজে খেয়াল আছে!?”
“কয়টা বাজে সেটা আমার সাথে তোর আলোচনা করা লাগবে কেনরে হতচ্ছাড়া, তোর ‘কয়টা’ বাজাচ্ছি দাঁড়া!” বলে ঝাড়ি দিতে যাবো তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো! দেখি রেজা হাত ধরে ঝাকাচ্ছে আর বলতেছে, “উঠ শালা, কয়টা বাজে খেয়াল আছে!?”

ঘুম থেকে উঠে ব্যাকপ্যাক রেডি করে নাস্তা করে নিলাম। শেষবারের মতো সকালের স্নিগ্ধ উপত্যকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করে নিলাম কিছুক্ষণ। ফিরতি পথ ধরতে হবে শিগগির। আজকেই কোহিমা হয়ে ডিমাপুর ব্যাক করতে হবে। দুই টীমমেট অপেক্ষায় আছে কোহিমাতে। বিল মিটিয়ে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো ফিরতি জার্নি। ফার্স্টে ভিসেমা দিয়ে ব্যাক করবো চিন্তা করলেও সময় বাঁচাতে শেষতক আবার জাখামার ট্রেইলটাই বেঁছে নিলাম। ৩ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসলাম মেইন রোডের কাছে। পথে একটা ঝর্ণায় নেমে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি দু’জন। বেশ চাঙ্গা লাগছে এখন।

মনেই ছিলো না যে আজকে রোববার। রোববার দিন নাগাল্যান্ডের সব কিছু বন্ধ থাকে। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ করে ওরা ছুটি কাটায় এই একদিন। এদিকে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। কোহিমা ব্যাক করবো কিভাবে এই চিন্তায় দাঁড়িয়ে আছি এইসময় মাথার মধ্যে উদয় হলো হিচহাইকিং এর কথা। ইউরোপে খুব জনপ্রিয় এই হিচহাইকিং মানে হচ্ছে মানুষের গাড়িতে লিফট নিয়ে নিয়ে গন্তব্যস্থলে চলে যাওয়া। অনেকটা “ট্রাভেল উইথ নো মানি” টাইপের। উপায়ান্তর না দেখে হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি খাড়া করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সাঁই সাঁই করে একের পর এক গাড়ি ছুটে চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। কারোরই থামার ইচ্ছে নেই। হয়তো এ ব্যাপারটা তারা জানেই না বা আমাদের দেখে হয়তো সুবিধার মনে হচ্ছে না। কোহিমা ফেরার আশা ছেড়ে দিবো এমন সময় এক ভদ্রলোক তার পিকাপ নিয়ে থামলেন। কোহিমার কথা বলায় আমাদের পিছে দেখিয়ে দিলেন। লাফিয়ে উঠে পড়লাম পিকাপের পেছনে। এ যাত্রা এই মহান নাগাবাসীর লিফটে ঠিকঠাকমতোই কোহিমা ফিরে আসলাম। ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় জানিয়ে আগেরদিন ফিরে আসা দুই টীমমেটের খোঁজে ছুটলাম হোটেল গ্যালাক্সির দিকে।

খরচাপাতি ফর নাগাল্যান্ড

রাতের বাসে ঢাকা থেকে সিলেট ৪৭০ টাকা। সিলেট নেমে জাফলংগামী বাসে তামাবিল ৬০ টাকা। বর্ডার ক্রস করে সোজা চেপে বসুন ডাউকি টু গৌহাটির ট্যাক্সিতে অথবা রিজার্ভ করে নিন। চারজনের অল্টো ভাড়া ৩০০০/৩৫০০ রুপি নিবে। শিলং হয়ে ভেঙ্গেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাউকি টু শিলং যাবেন ফার্স্টে। রিজার্ভ ফোরসীটার ১৫০০/১৮০০ রুপি নিবে। লোকাল ১৫০ রুপি করে পারহেড। শিলং থেকে কোহিমার বাস আছে ৭০০ রুপি করে, ১২০০ রুপি করে পারহেড আছে সুমো টাইপের গাড়ি বা টয়োটা ইনোভা। আর অল্টারনেট র‍্যুট হলো শিলং থেকে গৌহাটি যাবেন। ফোরসীটার রিজার্ভ ১৩০০/১৫০০ রুপি নিবে। লোকাল সুমো ২৫০ রুপি। বাস ১৫০ রুপি। গৌহাটি রেলস্টেশন থেকে ডিমাপুরের টিকেট কেটে নিবেন নির্দিষ্ট ফর্ম ফিলাপ করে। নাগাল্যান্ড এক্সপ্রেসে ননএসি থ্রি টায়ার স্লীপার ক্লাস ১৬৫ রুপি আর জেনারেল ৯০ রুপি করে। স্লীপার রেকমেন্ডেড। চাইলে এসি টু টায়ার/থ্রি টায়ারও কাটতে পারেন। ডিমাপুর পৌঁছে ভোরে স্টেশনের বাইরে ট্যাক্সি পাবেন। রিজার্ভ ১১০০/১২০০ রুপি নিবে ফোরসীটার অল্টো। সুমো মিলবে লোকাল ২৫০ রুপি করে আর বাস ১০০ রুপি। ডিমাপুর টু কোহিমার রাস্তা খুব বাজে। ৭৫ কিলোর মতো রাস্তা প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যায়।

কোহিমা নেমে ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ডের পাশেই হোটেল গ্যালাক্সীতে থাকতে পারেন। ৪ জন ১০০০ রুপি পার নাইট। বাঙ্গালী ছেলে রিসেপশনিস্ট। খুব ভালো আর মিশুক হেল্পফুল। রিকমেন্ডেড এটা। খাওয়া দাওয়া করতে পারেন ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ড থেকে ওয়্যার সিমেট্রি যেতে হাতের বামে দোতলায় আর. কে. হোটেলে। বাঙ্গালী হোটেল। খাবার ভালো এবং সস্তা। শহরের মধ্যেই ওয়্যার সিমেট্রি দেখেন এইদিনটা। পরদিন জ্যুকো যাওয়ার জন্য ট্রেক পয়েন্ট পর্যন্ত গাড়ি রিজার্ভ করেন। ৭০০/১০০০ রুপি নিবে ফোর সীটার। লোকালও আছে। শহরের বিওসি স্ট্যান্ড থেকে লোকাল সুমো মিলবে জাখামা ৪০ রুপি আর ভিসেমা ৫০/৬০ রুপি। সেখান থেকে ট্রেক করে জ্যুকো যাবেন। গাইডের দরকার পরবেনা। ওয়ান ওয়ে ট্রেইল। জ্যুকো পৌঁছে এন্ট্রি ফি ১০০ রুপি। ডর্ম ফি ৫০ রুপি। ভি আই পি ডর্মে থাকলে ১৫০ রুপি। বালিশ, ম্যাট্রেস, কম্বল প্রতি পিস ৫০ রুপি। ডিনার/লাঞ্চ ২০০ রুপিতে ভেজ খাবার। নুডুলস ৬০ রুপি। ডিম সেদ্ধ ৩০ রুপি। চা ২০ রুপি, কফি ৫০ রুপি। চাইলে আমাদের মতো খাবারদাবার সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন, সেভ হবে অনেক খরচ। ব্যাক করার দিন ট্রেক পয়েন্ট থেকে কোহিমা ব্যাক করার ট্যাক্সি পাওয়া যায় সাধারণত। তবে কোনো একটা ট্যাক্সির নাম্বার আগে থেকেই টুকে রাখা উচিত। নইলে আমাদের মতো হিচহাইকিং করা ছাড়া উপায় থাকবেনা কোনো!

টোটাল ইটিনারেরি ফর নাগাল্যান্ড ট্রিপ

দিন ০: রাতের বাসা ঢাকা টু সিলেট।
দিন ১: ভোরে কদমতলি নেমে তামাবিল যাত্রা, বর্ডার ক্রস করে গৌহাটি রাতের মধ্যে। ডিমাপুরের ট্রেনে আরোহন।
দিন ২: ভোরে ডিমাপুর নেমে কোহিমার উদ্দেশ্যে যাত্রা। কোহিমা পৌঁছে আশেপাশে ভ্রমণ।
দিন ৩: ভোরে জ্যুকোর উদ্দেশ্যে যাত্রা। ট্রেক করে জ্যুকো ভ্যালীতে রাত্রীযাপন।
দিন ৪: সকালে উঠে ফিরতি পথ। দুপুরে কোহিমা হয়ে রাতের মধ্যেই ডিমাপুর। গৌহাটির ট্রেনে আরোহন।
দিন ৫: ভোরে নেমে গৌহাটি শহর চক্কর। সাথে বিখ্যাত কামরূপ কামাখ্যা দর্শন। ১১ টার মধ্যে রিজার্ভ অল্টোতে যাত্রা করলেও বিকালে বর্ডার ক্রস করা সম্ভব। রাতের বাসে ঢাকা।
দিন ৬: ভোরে ঢাকা থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

চাইলে কোহিমাতে আরেকদিন বাড়িয়ে কিসামা হেরিটেজ ভিলেজ, খোনোমা গেট, মিউজিয়াম এসব দেখতে পারেন। প্রতি বছর ডিসেম্বর ১-১০ তারিখ বিখ্যাত হর্নবিল উৎসব হয়। তখন গেলে অনেক কিছু দেখা যায় কিন্তু সব কিছুর দাম বেড়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। আর হোটেল ট্যাক্সি সব দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠে। তাই ওই সময় প্ল্যান করলে অবশ্যই ৩/৪ মাস আগেই হোটেল ট্যাক্সি এসব বুকড করে রাখবেন।

জ্যুকো ভ্যালী ভ্রমণের সেরা সময় জুন-জুলাই। এসময় এর “ফুলের উপত্যকা” নামকরণের সার্থকতা বুঝতে পারা যায়।

হ্যাপী ট্রাভেলীং ❤

নাগাল্যান্ড নিয়ে আমার আরেকটি লেখা – নাগাল্যান্ড কথন || গৌহাটি টু কোহিমা যাত্রা

Leave a Comment
Share