নাগাল্যান্ড

আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল-কে ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়। তন্মধ্যে নাগাল্যান্ড অন্যতম। এর প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সবুজের গালিচা। দূর থেকে হাতছানি দেয় বিস্ময়, অ্যাডভেঞ্চার আর উপজাতীয় সংস্কৃতি। দুর্গম পাহাড়ি পথ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনাবিল। শান্তি ও নির্মলতার প্রতীক নাগাল্যান্ড। হিমালয়ের পাদদেশে উপজাতীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে লালিত ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য। পৃথিবীজুড়ে নাগল্যান্ড যেন বিস্ময়। প্রতি বছর আগস্ট-অক্টোবরে নাগাল্যান্ডের জাটিঙ্গা গ্রামে বৈরি আবহাওয়ায় পাখিদের স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটে। যদিও পাখিদের এই আত্মাহুতির বিষয়টিকে নাগারা ঈশ্বরের দান বলে মনে করে!

নাগাল্যান্ডের ১৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতির মেলবন্ধনে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় ‘হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল’। ২০০০ সালে উৎসবটি শুরু হয়েছিল। ‘হর্নবিল পাখি’, সমগ্র নাগাল্যান্ডে খুব জনপ্রিয় উৎসব। আদিবাসী লোকগাথা জুড়ে রয়েছে এই পাখি উৎসবের। নাচ-গান ছাড়াও এই উৎসবের বাড়তি পাওয়া আদিবাসীদের হস্তশিল্প এবং নানান বিচিত্র খাবারের আয়োজন।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

নাগাল্যান্ড (Nagaland) এর আকর্ষণ তার প্রাকৃতিক অসাধারণ সৌন্দর্য। বেশিরভাগ পর্যটক এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসেন। খোনোমা গেট ব্রিটিশদের ইতিহাসের সাক্ষী। খোনোমা আদিবাসীরা ব্রিটিশদের আক্রমণ থেকে গ্রাম সুরক্ষিত রাখতে এ দরজা নির্মাণ করেছিল।

জুকৌ উপত্যকাটি (Dzukou Valley) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৩৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত যা নাগাল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী কোহিমা থেকে দক্ষিণে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। একে অনেকেই ভালবেসে ফুলের উপত্যকা বলে অভিহিত করেছেন। বর্ষাকালে এটি দেখতে অসাধারন লাগে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস নিঃসন্দেহে জুকৌ উপত্যকা পরিদর্শনের সেরা সময়।

এখানকার ট্রেকিং বিশ্বজুড়ে সেরা, প্রাকৃতিক গুহা, পাহাড়, নদনদী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও জাপফু চূড়ার উঁচু পাহাড়ি ঢাল ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ।

চারুকলা, ইতিহাস, শিল্প, জাতিবিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমাহার নাগাল্যান্ড মিউজিয়াম। রয়েছে তাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বহু নিদর্শন।

নাগাল্যান্ডের ‘তুলি শহর’ তার অনন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের প্রতীক। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মোককচং জেলার তুলি শহরের নির্মল পারিপার্শ্বিক তার শান্তি ও সতেজতা দর্শনার্থীদের মন প্রফুল্ল করে তোলে।

নাগানিমোরা এই অঞ্চলে উপজাতীয় রোমাঞ্চকর খেলা আর ঐতিহ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে সহজেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদপ্রাপ্ত নাগানিমোরা সত্যিই প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন।

চাংতংগ্যা, মেলুরি, চুচুয়িমলাং এবং পঙ্গো গ্রাম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। স্থানটি পাখিদের অভয়ারণ্য। তা ছাড়া ফকিম এবং ইন্টাকি অভয়ারণ্য রাজ্যের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।

অদ্ভুত মায়াময় রাজ্য আর বিচিত্র সংস্কৃতিতে গাঁথা নাগা জনগোষ্ঠীর দেশ নাগাল্যান্ড।

কখন যাবেন

সারা বছরই নাগাল্যান্ড ভ্রমণ করা যায়। তবে, অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত ভালো সময়। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি বেশ ঠাণ্ডা পড়ে এখানে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কলকাতা কিংবা শিলং হয়ে গৌহাটি। গুয়াহটি (Guwahati) থেকে নাগাল্যান্ড চার ঘণ্টার দূরত্ব। অথবা বিমানে কিংবা ট্রেনে ডিমাপুর। বাইরোডে গুয়াহটিতে ডিমাপুর এবং কোহিমার বহু বাস সার্ভিস রয়েছে।

কোথায় থাকবেন

নাগাল্যান্ডে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নিঃসঙ্গ এ শৈলশহরে পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেল আশা করা বোকামি।

নাগাল্যান্ডে কেনাকাটা কোথায় করবেন

নাগাল্যান্ডকে হস্তশিল্প আর কারুশিল্পের ঐতিহ্য বলা চলে। এখানকার কাষ্ঠ, বেত, বাঁশ ইত্যাদি তৈজসপত্র পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। বাঁশ ও বেতের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, ব্যাগ ও আসবাবপত্র এবং তুলা দিয়ে বোনা শাল ও জ্যাকেট পর্যটকদের নজর কাড়ে। রং, নকশা এবং অঙ্কনে রয়েছে নাগাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক রঞ্জক, পুঁতি এবং শামুকের খোলস। এখানকার তাঁতশিল্প, কাষ্ঠখোদাই, মৃিশল্প, ধাতব শিল্প প্রভৃতিও বেশ জনপ্রিয়।

২০১০ সাল থেকে নাগাল্যান্ড বাংলাদেশীদের জন্যে খুলে দেয়া হয়েছে। তাই Inner Line Permit (ILP) নিয়ে বাংলাদেশীরা নাগাল্যান্ড যেতে পারে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ indianagaland