দুধপাথরি ভ্রমণ

চিরকাল বড়দিনের কেকের প্যাকেটে, সিনেমা , কার্টুন, ছবিতে দেখে এসেছি দিগন্ত বিস্তৃত বরফের মাঠ, আর সেই মাঠের প্রান্তর ঘেঁষে লম্বা লম্বা সবুজ গাছের মাথায় সাদা সাদা বরফ। ঐটাই নাকি স্যান্টার শহর। স্যান্টা তো ভগবান তার মানে ওই শহরটাই স্বর্গ। স্যান্টা হরিণের টানা গাড়িতে ভর্তি করে উপহার আনে ওই স্বর্গ থেকেই। সেরকমই কিছু চাক্ষুষ করে এলাম, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এর কাশ্মীরে।

কিলোমিটার ব্যাপী শুধু সাদা

কয়েকজনের কাছে নাম শুনেছিলাম দুধপাথরির (Doodhpathri), দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ পেরিয়ে একটু নিচের দিকে নামলেই কুলকুল করে বয়ে যাওয়া সাদা দুধের মত নদী, আর তাকে ঘিরে এক সুন্দর সবুজ ভ্যালি, সেই ভ্যালি তে দাঁড়িয়ে বহু বহু বছরের পুরনো চিরহরিৎ এর জঙ্গল।

এবার কাশ্মীর ট্যুরের প্রধান আকর্ষণ আমার কাছে দুধ পাথরি মোটেও ছিল না, কারণ সেই তো নদী আর ভ্যালি কি আছে এতে নতুন। তবু ইন্দ্রানী রয় দার বারবার জোর দেওয়ার জন্য আমরা ট্যুর শেষের একদিন আগে ওখানে যাই। শ্রীনগর থেকে মেরে কেটে দুই ঘণ্টার দুরত্ব, কিন্তু যেনো এক অন্য জগৎ এ প্রবেশ।

ক্রিসমাস ভ্যালি

শ্রীনগর শেষ হতেই দেখলাম চারিদিকে অল্পসল্প বরফ জমে আছে, তখনও বুঝিনি কোন মায়াবী জগৎ এ প্রবেশ করতে চলেছি। এরপর পাহাড় বেয়ে যত উঠি সবুজ কমে সাদা বাড়তে থাকে, একটা সময় পর কিলোমিটার এর পর কিলোমিটার শুধুই সাদা, যেহেতু ডিসেম্বর, এটা আমাদের উপরি পাওনা।

তেপান্তরের মাঠ বরফে সাদা হয়ে আছে, রাস্তা, গাছ, নালা, জলা, পুকুর সবই সাদা। এ জীবনে আমার এরম দৃশ্য প্রথম বার। নার্নিয়া তে যেমন সাদা সাদা বরফ আবৃত পাইনের ফাঁক দিয়ে বরফের রাস্তা ছিল, যা পৌঁছে দিত অন্য এক মায়াবী সাম্রাজ্যে। এখানেও ঘোড়ায় করে ঠিক তেমন সব রাস্তা পেরোতে লাগলাম।

তারপর আমাদের সামনে এলো দুধপাথরি স্বয়ং। উফফ, জীবন স্বার্থক। এক প্রায় জমে আসা সাদা নদী সাদা পাথরের ফাঁক দিয়ে ছন্দ তুলে আপনমনে বয়ে যাচ্ছে, আর তাকে ঘিরে চিরহরিৎ জঙ্গল, বরফে ঢেক গেছে।দেখে মনে হয় কেউ যেনো ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছে। বাক্যহারা হয়ে পড়েছিলাম, ছবি বা ভিডিও কিছুই তোলার মত তখন আর ইচ্ছে ছিল না।

এটা ঠিক, দুধপাথরির এই রূপ চাক্ষুষ না করলে শুধু এই যাত্রা টাই নয় জীবন টাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। শুধু মনে হয়েছিল প্রকৃতির এই রূপ দুচোখ ভরে দেখতে আর যতটা সম্ভব মনের মধ্যে ঠেসে, চেপে গুঁজে রাখতে। ভাবছি এর থেকে সুন্দর আর কি হতে পারে, এমন সময় শুরু হলো স্নোফল। জীবনে এতটাও আশা করিনি।

জীবন ধন্য, চক্ষু ধন্য। আমার কাছে এইটাই স্বর্গ, আর এই জীবনটাই ভগবানের দেওয়া উপহার।

Leave a Comment
Share