বাংলাদেশ টু ভুটান বাই রোড ভ্রমণ, ৭ দিনের অভিজ্ঞতা (২য় পর্ব)

আগের পর্বঃ বাংলাদেশ টু ভুটান বাই রোড ভ্রমণ, ৭ দিনের অভিজ্ঞতা (১ম পর্ব)

চতুর্থ দিন

আজ ১৯শে সেপ্টেম্বর’২০১৬ সকাল ৯টায় খাবার হোটেল “Hotel Choephel Norkyi” তে নাস্তা সেড়ে ভূটানের সবচেয়ে সুন্দর শহর ও “ঠান্ডার শহর” / Winter City নামে বিখ্যাত পুনাখায় যাবার জন্য রেডি হলাম। (Punakha Dzongkhag has been inextricably linked with momentous occasions in Bhutanese history. It served as the capital of the country from 1637 to 1907 and the first national assembly was hosted here in 1953. It is the second oldest and second largest dzong in Bhutan and one of the most majestic structures in the country.) “পুনাখা” যাবার জন্য ভূটানের ইমিগ্রেশন অফিসে পাসপোর্ট এর প্রথম দুই পাতার আর ভূটানের এন্ট্রি সিলের পাতার ফটোকপি ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিয়ে আলাদা পারমিশন নিয়ে সকাল ১০টায় আল্লাহর রহমতে রওনা দিলাম পুনাখার উদ্দেশ্যে থিম্পু থেকে। আমাদের ড্রাইভার ভাইই আমাদের কাগজপত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে সব কাজ করে এনেছিল। আমাদের সবার আর যাওয়া লাগে নাই। শুধু পারমিশন কাগজের সবার নাম ও বিতান্ত ঠিক আছে নাকি চেক করে নিতে হয়েছে কাগজটা হাতে পাবার পর। সেদিনের রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়াটা ছিল মারাত্মক সুন্দর। নীল আকাশ আর তার সাথে সাদা ফকফকা মেঘ পাশ দিয়ে সূযের আলোর খেলা। মন ও চোখ জুড়ানো এক আবহাওয়া। আল্লাহ নামে থিম্পু থেকে রওনা দিলাম ৮০কিমি পথ পারি দিয়ে পুনাখায় পৌছানোর উদ্দেশ্যে।

যাবার পথটা অনেকটা ভাঙ্গাচূড়া। কয়েক জায়গায় ভালোই ভাংগা কয়েক জায়গা রাস্তা নতুন করেছে। জানতে পারলাম আগে পথ ভালোই ছিল কিন্তু পথের নিচ দিয়ে পাহাড়ের পানি এসে পথের এখন এই অবস্থা। বুঝা গেলো এই জন্যই নরমাল প্যাকেজে এই পুনাখা ভ্রমন রাখাছিল না। আমরা পুনাখা যাবার জন্য আলাদা ভাবে একদিন প্যাকেজে এড করে এসেছিলাম ঢাকা থেকে আসার আগেই। কারন কেউ ভূটান গেল, কিন্তু পুনাখা গেল না, তাহলে তার ভূটান যাওয়াই বলে অপূর্ণ থাকে। অনেকটা ভাঙ্গাচূড়া পথ পার করতে করতে পথিমধ্যে সাড়ি সাড়ি আপেল বাগান চোখে পরলো। সবাই নেমে পরলাম আপেল বাগান দেখার জন্য। আপেল গাছের মাঝে মাঝে আবার সব্জির ক্ষেত তাই বাগান মালিক আমাদের বাগানের মাঝে ঢুকতে বারন করলো। বেড়ার বাইরে থেকেই বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে আবার পথ চলা শুরু করলাম পুনাখা শহরের উদ্দেশ্যে। আমরা যখন পুনাখার মাঝপথে তখন আসলেই মনে হল আমাদের একদিন বাড়িয়ে নেওয়াটা সার্থক, চোখে পরলো “Dochula Pass” যাকিনা সমুদ্রপিষ্ট থেকে ১০,১৭১ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

মেঘে ঢাকা আর কনকনে ঠান্ডার মাঝে অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। রাস্থার মাঝে ছোট্ট একটি টিলা তার উপর ছোট্ট ছোট্ট বৌদ্ধদের উপাসনা কেন্দ্র সিড়ি দিয়ে খানিকটা উপরে উঠতে হয়। মাঝখানে বড় একটি ঘর। এই জায়গা দিয়ে যেই সকল গাড়িই পার হয় একবার এই Dochula Pass টা পরিক্রম করে তার পর পার হয় এটা ওদের নিয়ম। আমাদের ড্রাইভার সাহেব ও তাই করলেন। প্রথমে বুঝতে পারি নাই। পরে যাবার সময় বুঝে নিলাম বিষয়টা। পথের ওপারে আরেকটি উপাসনা কেন্দ্রও আছে। তারই পাশে ভূটানের রাজার সুন্দর ক্যাফেটেরিয়া বানানো। যেখানে বসে ভালোই জিড়িয়ে নেয়া যায় চা কিনবা কফির সাথে। আমরা পুনাখা থেকে ফিরার পথে তুমুল বৃষ্টির মাঝে চা পানের বিরতি নিয়েছিলাম ওখানে।

“Dochula Pass” High on top of a mountain pass on the road from Thimphu to Punaka, overlooking the Himalayas, is a concentration of 108 chortens (stupas) built in memory of Bhutanese soldiers killed in the 2003 war against insurgents from India.  আকাশ যখন পরিষ্কার থাকে তখন ওখান থেকে হিমালয় দেখা যায় সহজেই কিন্তু অতি মাত্রায় মেঘ থাকায় আমরা দেখতে পাইনি। ওখানে অনেকটা সময় থেকে রওনা দিলাম পুনাখা শহরের উদ্দেশ্যে। থিম্পু থেকে পুনাখা ৮০কিমি পথ, ভাঙ্গাচূড়া পথ পার করে প্রায় ৩ঘন্টায় শেষমেষ পুনাখা এসে পৌছেছিলাম। শহরে পৌছেই আমাদের জন্যা নিধারিত খাবার হোটেল “Hotel Phinsum Degoling” এ দুপুরের খাবারটা সেড়ে ফেল্লাম। ততখনে ঘড়ির কাটায় ১টা বাজে। পুনাখা শহরে পৌছাতেই দূর থেকে চোখে পরলো The Punakha Dzong যাকিনা Pungtang Dechen Photrang Dzong নামেও পরিচিত (meaning very awesome dzong “the palace of great happiness or bliss”)। “On October 13, 2011, the wedding of the King of Bhutan, Jigme Khesar Namgyel Wangchuck, and his fiancé, Jetsun Pema, was held at the Punakha Dzong.” গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের সাথে রৌদজ্জল আবহাওয়ায় Punakha Dzong মাথা নষ্ট করে দিচ্ছিল। আবহাওয়া অন্য শহর থেকে একটু ভিন্ন কিন্তু খুবই উপভোগ্য। Punakha Dzong টা ঘুরে দেখলাম ভালো ভাবে। পাশেই দুইটা পাহাড়ি নদী এসে মিলেছে ওখানে। একটির নাম Pho Chhu (father) rivers আরেকটির নাম  Mo Chhu (mother) river. দুইটা নদী মিলে যেই নদিটি প্রভাহিত হয়েছে তার নাম Puna Tsang chu or Sankosh River. ওনেকটা সময় ওখানে পার করলাম ছবি তুলে ও ঘুরাঘুরি করে। Punakha Dzong থেকে ফিরে আসার সময় পথের ধারে চোখে পরলো Ritsha Village. সাড়িসাড়ি ধান গাছ বোনা পাহাড়ের খাজে খাজে। পাশেই বয়ে চলেছে নদী। সারাদিন পুনাখায় ঘুরে রাতে আবার থিম্পুতে ফিরে এলাম আমাদের নির্ধারিত হোটেল “89” এ পরদিন সকালে থিম্পু ছেড়ে পারোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার জন্য।

পঞ্চম দিন

থিম্পু এবং পুনাখা দেখা শেষে এবার আমাদের যাত্রা ভূটানের একমাত্র এয়ারপোর্ট এর শহর পারোর উদ্দেশ্যে। এখন আসি আসল কথায়, পারো হচ্ছে ওদের সবথেকে সুন্দর শহর, এই শহরেই ওদের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট আছে। থিম্পু থেকে আসার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর যায়গা আছে যা না দেখলেই নয়। এদের মধ্যে অন্যতম হল Case Bridge/ Tachogang Lhakhang Bridge. এটা যেমন মজার তেমনই ভয়ঙ্কর। ঝুলন্ত ব্রীজ দুইটি পাশাপাশি। একটি পুরান ওটা ব্যাবহার করতে দেয় না এখন আর পাশেরটি নতুন। রংবেরঙ্গের কাপড় দিয়ে পুরা ব্রীজ দুইটিই সাজানো যাতে ওদের ভাষায় মন্ত্র লিখা। কিছুক্ষন ওখানকার পরিবেশ উপভোগ করলাম।

তারপর কিছুদূর যেতেই এয়ারপোর্টের বার্ড আই ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে পারো শহর ও পুরা এয়ারপোর্টটা দেখা যায় ভালো ভাবে। এয়ারপোর্টটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,৩৩৩ ফুট উচু এবং এখানে শুধুমাত্র দিনের আলোতেই ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়, রাতে নয়। রানওয়েটি মাত্র ১২০০মি লম্বা কিন্তু চারিদিকে প্রায় ১৮০০০ ফুট পর্যন্ত উচু পাহাড় শৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। ‘পারো এয়ারপোর্ট’ বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যতম ঝুকিপুর্ণ এয়ারপোর্ট। শুধুমাত্র ৮ জন পাইলটকেই এখানে বিমান নামানো এবং উড্ডয়নের জন্য সার্টিফাই করা হয়েছে, আর কেউ নয়।

হলফ করে বলতে পারি, আল্লাহ বাচাইসে বাই রোডে ভূটান যাবার প্ল্যান করেছিলাম বলে। নাহলে বিমান উঠা আর নামার সময় ভয়েই আধমরা হয়ে যেতাম আমি। ওখান থেকে রওনা দিয়ে কিছুক্ষন পর পৌছেগেলাম পারো, থিম্পু থেকে পারোর দূরত্ব ৫০কিমি। ১ ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগে পৌছাতে। পারোতে আমরা ছিলাম Hotel KK তে, হোটেলটা অতোটা ভালো লাগে নাই। একটু বেশি পুরান হয়ে গেছে। প্যাকেজে আগের থেকেই ঠিক করে দিয়েছিল আর এক রাত্রের ব্যাপার দেখে থেকে গেলাম কোনভাবে। কিন্তু খাবার হোটেলটা ছিল চমৎকার সুন্দর। কিছুটা দূরে তাই আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিল প্রতিবেলায়। ওখানকার খাবার গুলাও অনেক মজাদার ছিল। যেমনঃ সাদা ভাত, পোরা পোরা আলু ভাজি, শুকনা মরিচ দিয়া ঝাল আলু ভর্তা, বেগুনী, মাটার পনীর, গরুর মাংস একবেলা, আরেকবেলা ঝাল মুরগি, সবজি ও মিক্স সালাদ এক কথায় পুরা ১৬ আনা বাঙালি খাওয়া। বাঙালি খাবার পেয়ে এই সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করিনি।

খেয়েই চলে গেলাম পারোর সব থেকে বড় আকর্ষণ Tiger Nest দেখতে। যেটা ওদের ধর্মীয় এবং পর্যটনের দিক থেকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম থাকায় তিন হাজার ফুট হেটে উঠতে হবে আবার নেমে আসতে হবে দেখে পাহাড়ের কাছে না গিয়ে দূর থেকে দেখেছি Tiger Nest। পায়ে হেটে উঠা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নাই। এরপর চলে গেলাম National Museum ও Paro Rinpung Dzong দেখতে। কাছাকাছিই দুইটা জায়গা। পাহাড়ের কিছুটা উপরে। সন্ধ্যা হয়ে গেলো ওখান থেকে বের হতে হতে। রাতের পারোর শহরটা পাহাড় বেয়ে নেমে আসতে আসতে ভালোই উপভোগ করলাম আর ভাবতে লাগলাম ভূটান ট্যুর শেষ হবার পথে।

ষষ্ঠ দিন

আজ ২১শে সেপ্টেম্বর, এবার বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করার পালা। পারো থেকে সকালের নাস্তা আর কিছুটা কিনাকিটি সেড়ে ১২টার দিকে রওনা দিলাম ফুয়েন্টশলিং এর উদ্দেশ্যে। ১৬০ কিমি পথ পারো থেকে ফুয়েন্টশলিং। আমাদের ফিরে আসতে আসতে বিকাল। মাঝে আবার দুই চেকপোস্ট থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে কম্পিউটারে সবার এক্সিট করায় নিয়ে রওনা দিয়ে বিকলা ৪:৩০টায় ফুয়েন্টশলিং এসে পৌছালাম।

ভূটান ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে ভূটান এক্সিট সিল মেরে নিয়ে আসলাম পাসপোর্ট এ। যেহেতু আমরা পরের দিন দুপুরের দিকে ভূটান ছাড়বো ভূটান এক্সিট সিল পরের দিন লাগালেও হতো। কিচতু আমাদের গাড়ীর চালক ভাই আমাদের ভুটানের সকল কাজ সম্পন্ন করায় তারপর বিদায় নিল আমাদের কাছে।

মানুষটা ভিন দেশি হলে কি হবে এই কয়েক দিনে অনেকটা আপন হয়ে গিয়েছিল। আমরা হিন্দিতে কথায় চালায় নিতাম। আমার ভাংগাচূড়া হিন্দি শুনে উনিও হাসতেন বাকি সবাইরা একটু বেশিই হাসতো। আমার কাজ চালানো গেলেই হলো। ও সামাজতাহে মেভি সামাজতাহু। সন্ধ্যার বাকিটা সময় নিজেদের মত করে কাটালাম। মাঝে পায়ে হেটে ভারতও ঘুরে এসেছিলাম সবাই মিলে।

*** কিছু করনীয়ঃ ***

১. ডলার চেংরাবান্দাতেই ভাংগাবেন কারণ পুরা ভুটানে আমার চোখে কোন মানি এক্সচেঞ্জার পরে নাই। ভুটানে কোন সমস্যা ছাড়াই ইন্ডিয়ান রুপি চলে, সুতরাং ইন্ডিয়ান ৫০০ আর ১০০ করে টাকা নিয়া যান।

২. অবশ্যই ১০০ ডলারের নোট নিয়ে যাবেন কারণ ৫০ বা খুচরা নোটে কম রেট দেয়। আর সর্বদাই চেষ্টা করবেন নতুন ১০০ ডলারের নোটটা নিতে। (আমি চেংরাবান্দাতে ৬৬ রুপি করে পেয়েছিলাম)।

৩. ভূটান এ হোটেলে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন এতে ২০০/৩০০ টাকা প্রতিদিন শুধু হোটেলেই সেভ হবে।
কিছু প্রয়োজনীয় কনটাক নাম্বার ও ঠিকানা (যদি কারো প্রয়োজন পরে)

Hotel Choephal Norkye (Thimphu) Tel: +975 17628400 এদের ডাবল বেড ১২০০ এবং ত্রিপল বেড ১৫০০, খুবই স্ট্যান্ডার্ড।

Hotel 89, Thimpu, Bhutan, Tel: +97577100016 এদের ডাবল বেড 1800 এবং ত্রিপল বেড 2000 করে। moderate service।

Yoesel Hotel 2, Thimphu, Bhutan, Tel: +975 77399406, +975 17852311, +975 17606447 এদের ডাবল বেড 700 এবং ত্রিপল বেড 900 করে। moderate service।

Hotel Dragon (Paro), Tel: +975 8272174, +975 17762628, +975 17320473 এদের ডাবল বেড 1000 এবং ত্রিপল বেড 1300 করে। (This is the best, Bengali foods are available too)

সপ্তম দিন / ভূটান বাই রোড ট্যুর পরিসমাপ্তির দিন

২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৬, গত কয়েক দিনের ক্লান্তি পুষিয়ে নেবার জন্য এবার একটা সেই ঘুম দেয়ার পালা কারন বাসতো সেই ৬:০০ টায়। আর আমাদের গাড়ী ভুটান ইন্ডিয়া বর্ডার থেকে ছাড়বে বেলা ২ঃ০০টায়।

যে কথা, সেই কাজ। ১০ টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে নিলাম এবং সকালে নাস্তা করলাম। হাল্কা ঘুরাঘুরি ও টুকটাক শপিং করে ভুটান ইন্ডিয়া বর্ডার থেকে গাড়ীতে উঠে বসলাম। গন্তব্য এবার বাংলাদেশ বর্ডার।

ফুয়েন্টশলিং থেকে ইন্ডিয়ার জয়গাওতে ভারতের ইন্ট্রি সিল আবার লাগিয়ে বেলা ৩টায় রওনা দিলাম ওখান থেকে। দাদাদের দেশ পার হবো বলে। দাদাদের দেশে ঢুকতেই যেই গরমে পরলুমরে বাবা!!!
৬টা দিন যা আরামে ঠাণ্ডা বৃষ্টিতে ছিলাম দাদারা পুরো তা সুদে আসলে উশুল করে নিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ বর্ডার বুরিমারি এসে পৌছালাম বিকাল ৫:৩০টায়।
ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের বর্ডারের ফর্মালিটিস শেষ করে সন্ধ্যা ৭টায় দৌড়াতে দৌড়াতে বাসে চেপে বসলাম। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের পথে প্রান প্রিয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। মাঝ রাতে বগুড়ার এলেঙ্গায় একটু থেমে ছিল রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে।

অবশেষে সারা রাত বাসে আধো ঘুম আধো জাগা হয়ে সকাল ৮টায় নামলাম ঢাকার টেকনিক্যাল মোড়ে।

ঢাকা টু ভূটান বাই রোড ট্যুর পরিসমাপ্তি ঘটলো এখানেই।

“ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার বিস্তারিত” কিছু সতর্কতা

1.যারা ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ভিসা করে ভূটান অথবা নেপাল যেতে চান তারা অবশ্যই পিতা মাতার “previous nationality” ঘরটা পূরণ করবেন। যদিও এটা “mandatory option” না কিন্তু এটা অবশ্যই পূরণ করতে হবে নাহলে অকারনে ঝামেলা পোহাতে হবে।
2. ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে অবশ্যই একদিন পূর্বে অনলাইন ফরম (http://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/) পূরণ করবেন। সকালে পূরণ করে নিয়া গেলে সার্ভারে ঝামেলা করে, ডাটা আপডেট থাকে না। আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখবে। **এই অনলাইন ফর্মের সময়কাল পূরণের দিন থেকে ৫ দিন।**
3. যাদের একাধিক পাসপোর্ট তারা অবশ্যই দুটো পাসপোর্টের সকল তথ্য চেক করে নিবেন যেমন; বাবার নামের বানান, মায়ের নামের বানান, নিজের জন্ম তারিখ এবং স্থান। ভুল থাকলে আগে পাসপোর্ট অফিস থেকে সংশোধন করিয়ে পরে ভিসার জন্য জমা দিবেন। ভুল থাকলে কোন অবস্থাতেই পাসপোর্ট জমা নেয় না।
4. “Expected date of arrival” হবে বাংলাদেশ থেকে যাত্রার তারিখের পরের দিন। মানে যেইদিন আপনি ইন্ডিয়া পৌঁছাবেন। For Example; আপনি বাসের টিকিট কেটেছেন ১৫ তারিখ রাতে, তাহলে আপনার “Expected date of arrival” হবে ১৬ তারিখ।
5.যদি তারা আপনাকে ফিরিয়ে দেয় এবং পরের দিন আসতে হয় তাহলে আবার নতুন করে ৬০০/- টাকা ভিসা প্রসেস্যিং ফি দেয়া লাগবে।
6. ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দিবে না সুতরাং ব্যাগ নিবেন না। ফাইলে করে নিয়া যান দরকারি জিনিস পত্র।
7. Port of Entry & Exit দুটোই হবে Chengrabanda/Jaygaon ভুটানের জন্য আর নেপালের জন্য Chengrabanda/Ranigonj ।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা যা প্রয়োজনীয় কাগজ লাগে ট্রানজিট ভিসা করাতে

১. MRP পাসপোর্ট।
২. পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে অবশ্যই সংযোজন করে নিয়ে জাবেন অন্যথায় জমাই নিবে না।
৩. ২ কপি “2by2” ছবি।
৪. অনলাইনে পূরণ করা ফরমের প্রিন্ট করা কপি।
৫. পাসপোর্টের ৩ কপি ফটোকপি (শুধু MRP)।
৬. জন্ম সনদ অথবা ন্যশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি। (Both if possible) অথবা যেটা দিয়ে পাসপোর্ট করা হয়েছে।
৭. ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা এন্ডোরসমেন্টের অরিজিনাল কপি এবং ফটোকপি।
৮. টিকিটের অরিজিনাল কপি এবং ফটোকপি। (রিটার্ন সহ অবশ্যই)।
৯. স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ডের ফটোকপি। চাকুরীজীবী হলে NOC (No Objection Certificate) এবং ভিসিটিং কার্ডের মূলকপি । ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি ও মূলকপি এবং ভিসিটিং কার্ডের মূলকপি ।
১০. স্টুডেন্ট হলে বাবার ভিসিটিং কার্ডের কপি। (if possible)
১১. ইউটিলিটি বিলের মূলকপি বং ফটোকপি। (অবশ্যই ৩ মাসের পুরাতন নয়)।
১২. CTG থেকে আবেদন করলে হোটেল বুকিং এর কনফার্মেশন। (DHK তে এটা লাগে না)।

নোট

• ট্রানজিট ভিসার জন্য appointment Date / e-token প্রয়োজন নেই। তবে বাসের টিকিট প্রয়োজন।
• বলে রাখা ভালো আপনাকে ভিসা সহ বা ভিসা ছাড়া পাসপোর্ট ট্রাভেল ডেটের দিন কিংবা আগের দিন হাতে দিবে। যদি ভাগ্য বেশি ভালো হয় তাহলে ১/২ দিন আগে পেতে পারেন। যেমন ট্রাভেল ডেট যদি ১৫তারিখ হয় তাহলে পাসপোর্ট ইন্ডিয়ান হাই কমিশন থেকে একদিন আগে ডেলিভারিতে ১৪ তারিখ পাঠাবে। তাই দুই চার দিন ঘুরাঘুরি না করে ট্রাভেল ডেটের ১/২ দিন আগে গিয়ে খোজ নিবেন যে পাসপোর্ট আসছে নাকি। সবাই ভিসা পেতেও পারেন আবার কোন কারনে নাও পেতে পারেন।

যদি কারো কাজে আসে তাহলে খুশি হবো, সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই অনেক সমস্যায় পরেন। তাই হালকা একটু সতর্ক হলে এই ধরনের সমস্যা খুব সহজেই এড়ানো সম্ভব ধন্যবাদ।

সকল ছবি দেখতে চাইলেঃ ফ্লিকার লিংক

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ bhutanbyroadstorytravel