বাজরে দারা ট্রেক

পশ্চিম সিকিমের (West Sikkim) ছোট্ট, কিছুটা হলেও অপরিচিত গ্রাম মেলি (উচ্চতা ৪২৬০ ফিট)। মেলি (Melli) থেকে দুদিন হেঁটে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব বাজরে দারা (Bajrey Dara trek)। শোনা যায়, ১৯৭০ থেকে ৭২ এর মধ্যে কোনও এক সময় মারাত্মক একটি বজ্র পাতের ফলে এই স্থানটিতে প্রায় সমস্ত গাছ এক সাথে মারা যায়। সম্পূর্ণ স্থানটিই একটি শ্মশানে পরিণত হয়, যার চিহ্ন আজও ৫০ বছর পর ছড়িয়ে রয়েছে এখানে। সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এই জায়গা মেঘলা দিনে নিঃসন্দেহে একটা গা ছম ছম করা পরিবেশে পরিণত হয়।

মেলি থেকে পথের শুরু

গত বছর বড়দিনের ছুটিতে আমরা ঘুরে আসি বাজরে দারা। প্রথম দিনের ট্রেক মেলি থেকে ভানজাং (উচ্চতা ৮২০০ ফিট), দূরত্ব ১০ কিমি। পর্যটকদের ভিড় থেকে বহু দূরে মেলি গ্রামের জনসংখ্যাও খুব কম। অল্প কিছু ঘর বাড়ি, একটি স্কুল ও একটি মনাস্ট্রি নিয়ে সিকিম পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে রয়েছে গ্রামটি। ট্রেক শুরু হওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যেই পথের চেহারা দেখে বোঝা যায় এই পথে একেবারেই মানুষের চলাচল নেই। গরু চড়াতে হয়তো কিছু গ্রামবাসী এপথে এসে থাকেন। আরও কিছুটা এগোলে সেই চিহ্নও আর নেই। সম্পূর্ণ পথটিই এগিয়ে চলেছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। খানিকটা এগিয়ে আসার পর পথ বেশ চড়াই, কিন্তু খুব বেশি উচ্চতা না হওয়ার দরুন বিশেষ কষ্ট হয়তো হয়না। একাকিত্ব দূর করতে প্রথম দিনের শুরু থেকেই প্রায় সমস্ত পথটিই সঙ্গ দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সাথে পান্ডিম, কাব্রু গ্রুপ, Mt Narshing, Mt Jopunu, Mt Tenchenkhang. এতো কাছ থেকে এবং দিনের শুরু থেকেই এরকম দৃশ্য সিকিমের অন্যান্য ট্রেকে কিন্তু পাওয়া মুশকিল!

বাজরে দারা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

প্রথম দিনের গন্তব্য ভানজাং পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যায়। জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের কোলে এই স্থানটি। খাওয়ার বা রান্নার জলের জন্য কিছুটা এগিয়ে রয়েছে একটি ঝর্ণা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই রুটের এক মাত্র সমস্যার কথা। খাওয়ার জলের সন্ধান যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না, বরং প্রায় নেই বললেই চলে। যে যে সামান্য কিছু জায়গাতে রয়েছে সেখান থেকেই ভরে নেওয়া ভালো। ভানজাং সেরকম একটা স্থান হওয়ায় এটিকেই বেছে নেওয়া হয় প্রথম দিনের ক্যাম্পসাইটের জন্য।

দ্বিতীয় দিনের পথ প্রথম দিনের থেকে আরও বেশি চড়াই, এবং আরও গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। জঙ্গল এতটাই গভীর যে তা ভেদ করে কিছু কিছু জায়গাতে আলো ঢোকেইনা বলা চলে, এবং সেই কারণে যথেষ্টই স্যাতস্যাতে। এমনও কিছু জায়গা আসে যেখানে রাস্তা বলে কিছু নেই, গাছের ডাল পালা ছেঁটে ছেঁটে এগোতে হয়। ভানজাং থেকে বাজরে দারা দূরত্ব ৯ কিমি। চড়াই ভেঙে ভেঙে বাজরে দারা (উচ্চতা ১১০০০ ফিট) পৌঁছতে দুপুর হয়ে গেল। মেঘে ঢাকা পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ সমস্ত পাহাড়। গোটা বাজরে দারা ঢাকা পড়েছে সাদা বরফের চাদরে। বরফ প্রতিটি গাছকে সাজিয়ে তুলেছে ক্রিস্টমাস ট্রির রূপে।

বাজরে দারার মৃত গাছ গুলি

পরদিন সকালে সূর্যের প্রথম আলোতে আবারও একবার ‘গুড মর্নিং’ উইশ করতে হাজির কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ তার গোটা পরিবার। ডান দিকেই নীচে দেখা যাচ্ছে পেলিংয়ের পবিত্র khecheopalri লেক। ৫০ বছর আগে কোনও একদিন বজ্রের আঘাতে গাছ গুলো মারা গেলেও আজও তারা একই মমতা মাখা দৃষ্টিতে অপেক্ষা করে আছে তাদের নিভৃত রাজ্যে মানুষকে স্বাগত জানাতে, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ আরও একবার মুগ্ধ করবেই।
একদিনেই বাজরে দারা থেকে মেলি নেমে আসা সম্ভব।

বাজরে দারা থেকে khecheopalri লেক
Leave a Comment
Share