ভারতের উত্তরখণ্ড এর অলি ট্যুরের বিস্তারিত

স্থান – অলি, ঋষিকেশ, মুসৌরি, উত্তরখণ্ড, ভারত।

একটু আগে থেকে শুরু করা যাক, ২০১৭ সালের জুন মাসে কাশ্মির ঘুরে আসি ১০ জন! কাশ্মিরের অপরিমেয় সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছিল, কিন্তু একটা হতাশা থেকেই গিয়েছিল। সেটা হল বরফ। বরফ খোজার জন্য কি না করেছিলাম! বেতাব ভ্যালি থেকে চন্দনওয়ারি, সোনমার্গ এর থাইওয়াজ গ্লেসিয়ার থেকে জিরো পয়েন্ট, পেয়েছি এক ঝলক বরফের দেখা, স্নোফল তো ছিল ডুমুরের ফুল! ফিরে আসলাম বাংলাদেশ, কিন্তু মনের মধ্যে একটা খুতখুতানি থেকেই গেয়েছিল।

চিন্তা করলাম ভিসা যেহুতু আছেই সিমলা, মানালি ঘুরে আসি।। সময় বের করতে করতে ডিসেম্বর চলে আসলো কিন্তু শুনলাম ডিসেম্বরে নাকি মানালির কিছু জায়গা অতিরিক্ত বরফের কারনে বন্ধ থাকে, তাই সেই প্ল্যান বাদ। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? এক ভাইয়ের মারফতে জানতে পারলাম অলি, মুসৌরির কথা। টিওবি হেল্পলাইনে পোস্ট দিলাম। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ জায়গাটার ব্যাপারে তথ্য দিতে পেরেছিলেন। যাই হোক নেট ঘাটাঘাটি করে, ইউটিউবে ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এখানেই যাবো, যা হবে দেখা যাবে! বাজেট একটু বেশি মানেজ করলাম কারন অলি (Auli) ট্যুর এর সবগুলা হোটেল/রিসোট অনেক ব্যায়বহুল!

এবারে আসি কিভাবে গেলাম

১৬/০১/২০১৮

ঢাকা থেকে রওনা দিলাম ৩ জন গ্রিন লাইন বিআারটিসিতে, কোলকাতা পৌঁছলাম রাত ৮ টায়, রাতে থাকলাম মারকুইস স্ট্রিটে। পরদিন রাত ৮ টায় ট্রেন, দুন একক্সপ্রেস ১৩০০৯, কোলকাতা থেকে আমাদের সাথে যোগ দিলো আরও ৪ জন। মোট ৭ জন। রাত ৮ টায় ট্রেন ছেড়ে দিল। কুয়াশার কারনে ৮ ঘন্টা লেটে আমরা দেহরাদুন পৌছাই ৪০ ঘন্টা পর! ট্রেন থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আগে থেকেই রিজার্ভ করা গাড়িতে রওনা দিলাম মুসৌরির উদ্দেশ্যে, যাওয়ার পথে ভয়ংকর পাহাড়ি রাস্তার সাথে সূর্যাস্ত মনকে ক্ষণিকের জন্য স্বর্গের অনুভুতি এনে দিয়েছিল। মুসৌরিতে কিছু সময় থেকে চলে গেলাম ধনৌলটি। সেখানে পাহাড়ের উপর অসাধারণ একটা রিসোর্টে রাত্রিযাপন করি। তাপমাত্রা ছিল ০ ডিগ্রী এর কাছাকাছি। পরদিন সকালটা ছিল অসাধারণ, চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা, আবছা ভাবে দূরে হিমালয়ের একটা মাথা দেখা যা্চ্ছিল! রিসোর্ট থেকে চেক আউট করলাম, ধনোউল্টিতে ঘুরে দেখার মত রয়েছে একটি ইকো পার্ক যেখান থেকে হিমালয়ের একটা পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যায়, এছাড়াও রয়েছে ক্যাম্প কালিস্টা, সুরকন্দা দেবি মন্দির ( ৩০০ সিড়ি)। ঘোরাঘুরি শেষ করে যশিমঠের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি! প্রায় ৩০০ কিমি পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা, ২ মিনিট পর পর ১২০ ডিগ্রী টার্ন! আড্ডা, গল্প, গানে প্রায় ১০ ঘন্টা পর আমরা যশিমঠ পৌছাই! সেখানে রাতে থেকে পরদিন অলির জন্য রওনা হই। যশিমঠ থেকে অউলি মাত্র ১৪ কিমি।

দুটো উপায় আছে অলি যাওয়ার –

১. গাড়িতে করে
২. রোপওয়ে

রোপওয়েতে না গেলে হয়ত জীবনে অনেক কিছুই মিস করতাম। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় ক্যাবল কার যেটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১১ বছর।। রোপওয়ে থেকে আশেপাশের বিশাল বিশাল পাহাড়গুলো আপনার মন কেড়ে নিবে! প্রত্যেকটা পাহাড়ের একটা করে নাম আছে যেমন – নিলকন্ঠ, বিউটি কুইন, এলিফেন্ট, ত্রিসুল, নান্দা দেবি ইত্যাদি!

আমরা নামলাম ৮ নং টাওয়ারে এবং নান্দা দেবি রিসোর্টে উটলাম, আপনারা যারা দিনে দিনেই ফিরে আস্তে চান তারা ১০ নং টাওয়ারে গিয়ে আবার ব্যাক করতে পারেন! আমাদের রিসোর্ট ছিল আর্টিফিশিয়াল লেকের একদম পাশে। সারাদিন আশেপাশে ঘুরলাম এবং পরদিনের ট্রেকের জন্য একটু প্রস্তুতি নিলাম। এখানে বলে রাখা ভাল, আপানারা যারা অনেক ট্রেক করতে পারেন বা ইচ্ছুক তারা এখানে গাইড ভাড়া করে অনেক প্লেস ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিদিনের গাইড ভাড়া ১২০০ রুপি। ৭, ১০, ১৫, ২০ কিমি পর্যন্তও ট্রেক করা যায়! সময় লাগতে পারে ২, ৩, ১০ দিন! টেন্ট/স্নোবুট/স্টিক ওদের কাছেই পাবেন তবে অবশ্যই ভাড়া নিতে হবে।

২৩ জানুয়ারি সকালে Gorson Bugyal ট্রেক এর জন্য সবাই বের হয়, আকাশটা অনেক মেঘলা ছিল, ওয়েদার ফোরকাস্টেও স্নোফল এর আশংকা ছিল। বিকেল ৪ টায় কটেজে ফিরে আসলাম,কিন্তু স্নোফল পেলাম না! বিরক্ত হয়ে সবায় ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ বাইরে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস ছিল। রাত ৭ টায় ঘুম ভাঙল রকি ভাই এর ডাকে।

“নাহিদ ভাই তাড়াতাড়ি আসেন, বরফ পড়ছে”

বাইরে বের হয়ে যা দেখলাম সেটা ছিল জীবনের অন্যতম একটা ফিলিংস! তাপমাত্রা ছিল -১১*। কোনকিছু না ভেবে সু, জ্যাকেট পরে বের হয়ে গেলাম। পা ঠান্ডায় পা জমে যাচ্ছিল। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ১ ফুট বরফ জমেছিল।

পরদিন সকালটা ছিল একটু অন্যরকম, চারিদিক বরফে ঢাকা, লেকের পানি জমে বরফ হয়ে গেসে। অনেক দাপাদাপি করলাম, স্নোবুট পরার পরও একটু বরফ ভিতরে ঢুকলেই অসহ্য যন্ত্রণা করছিল। একটা দিনই তো। অনেক সময় কাটানোর পর আমরা রিশিকেশের উদ্দেশ্যে বের হলাম! আসার সময় রোপওয়ে থেকে মনে হচ্ছিল স্বর্গের উপর দিয়ে যাচ্ছি! বিশ্বাস করেন দুনিয়াটা এত সুন্দর নিজের চোখে এটা না দেখলে বুঝতে পারবেন না!

হরিদ্বার, রিশিকেশ মুলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্থান। রিশিকেশে দেখার মত অনেক কিছুই আছে – রামঝুলা, লাক্সমানঝুলা ( ব্রিজ), রাজাজি নাশন্যাল পার্ক সহ অসংখ্য মন্দির, এছাড়াও আছে রিভার রাফটিং (৫০০/-), বাঞ্জি জাম্পিং (৩০০০/-, ৮৩ মিটার), ক্লিফ জাম্পিং ( রাফটিং এর সাথে ফ্রি), বাইক রাইডিং ( ৮০০ /-) ইত্যাদি।

এরপর আমরা ২৫ জানুয়ারি হরিদ্বার থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেই!

যেভাবে যাবেন

রুট ১: কলকাতা – দেহরাদুন (১৫০০ কিমি বাই দুন / উপাশনা এক্সপ্রেস – ৫৯০/-) – মুসৌরি- ধনোউলটি – যশিমোথ (৩৫০ কিলো ভায়া কার / জিপ) – অলি ( ১৪ কিমি ভায়া ক্যাবল কার ৭৫০/-) – ঋষিকেশ- হরিদ্বার (২৫০ কিমি বাই কার/জিপ)- কলকাতা

রুট ২: কলকাতা – হরিদ্বার (দুন / উপাশনা এক্সপ্রেস) – ঋষিকেশ – যশিমোথ – অলি – ঋষিকেশ – হরিদ্বার – কলকাতা

খরচ

আমাদের ১১ দিনে মোট খরচ হয়েছে প্রতিজন ৩২০০০ টাকার মত, এর থেকে কমেও ঘুরে আসতে পারেন একটু কষ্ট করলে।

হোটেল / রিসোর্ট / কটেজ

1. Glamwood resort ( Dhonolti)
2. Hotel Dronagiri( Joshimath)
3. Blue poppy resort( Auli)
4. Nanda Debi Resort( Auli Top)

Leave a Comment
Share