আসাম ভ্রমণ – পর্ব ৪ (কারবি অংলং জেলার ডিফু হেডকোয়ার্টার)

৩০ আগস্ট, ২০১১, মঙ্গলবার

ন’গাঁও থেকে সকাল এগারোটার বাসে ডিফু’র উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। ডিফু হলো কারবি অংলং জেলার হেড কোয়ার্টার, নাগাল্যাণ্ড রাজ্যের ডিমাপুর শহরের খুব কাছেই ছোট একটি শহর। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে বাস এগিয়ে চলেছে। পথের দু’ধারে গহীন বন। ন’গাঁও থেকে মারুফ আগেই মনসুন সিং -কে ফোনে জানিয়ে রেখেছে যে, আমি ডিফু যাচ্ছি। সুতরাং নো-চিন্তা।

ডিফু
ডিফুর রাস্তায় কার্বি উপজাতি

বেলা তিনটায় বাস যখন ডিফু পৌঁছালো, ‘’কারেং’ বাস স্ট্যাণ্ডে’ দেখি মনসুন দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। মালপত্র নিয়ে দু’’জন চলে এলাম ‘হোটেল ’সিংহাসনে’’। ওখানে আগে থেকেই মনসুন রুম বুক করে রেখেছিল। সারাদিনের জার্নির ধকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

৩১ আগস্ট, ২০১১, বুধবার

সকালে স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে আমি, মনসুন এবং মনসুনের আরও দু’’জন বন্ধু -এই চারজন মনসুনের গাড়িতে রওনা দিলাম ‘’সিলোনী’’ এর উদ্দেশ্যে। ডিফু থেকে সিলোনী ২৪ কিলোমিটার রাস্তা। কিন্তু পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা বলে গাড়িতে যেতে সময় লাগলো প্রায় ১ ঘন্টা।

কারবি উপজাতিদের বাড়িঘরের মডেল
ডিফুর চত্ত্বরের বিখ্যাত মূর্তি

সিলোনী মূলত একটি পিকনিক স্পট। পাহাড়, বন আর ঝর্ণার মুগ্ধতায় বেশ খানিকটা সময় কেটে গেলো। প্রাণ ভরে ছবি তুলে নিলাম। তারপর ফেরার পথে একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিলাম আমরা। বিকাল ৪.৫০ এ আমার ট্রেন ছাড়বে ডিফু থেকে গৌহাটীর উদ্দেশ্যে।

এবার সিলোনীর কিছু মনোমুগ্ধকর ছবি দেখুনঃ

ন’গাঁও থেকে মারুফ আগেই টিকিট কেটে রেখেছিল। মনসুন একটা প্রিন্ট আউট দিলো আমাকে সেটার। সময় অনুযায়ী মনসুনরা আমাকে রেল স্টেশনে নামিয়ে দিল। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ডিফু টু গৌহাটী ‘শতাব্দী এক্সপ্রেসে’র এ.সি বগিতে উঠে পড়লাম।

ডিফু রেল স্টেশন

গৌহাটীতে এবার থাকতে হবে হোটেলে। কাজেই ডিফু থেকে মনসুন বার বার চেষ্টা করছিল আমার জন্যে গৌহাটীতে একটা হোটেল রুম বুক করতে। কারণ রাত ৯ টার পর কোন বিদেশী নাগরিককে সাধারণত কোন হোটেলে জায়গা দেয়না গৌহাটীতে।

রাত ন’’টায় গৌহাটী রেল স্টেশনে নেমে ব্রিজ পার হয়ে ’’পল্টন বাজার’’ এলাকায় এলাম। এখানে সারি সারি আবাসিক হোটেল। একটার পর একটা হোটেলে খোঁজ নিতে থাকলাম। কিন্তু বাংলাদেশী পাসপোর্ট আছে শুনলেই মুখের ওপর ‘’না’’ বলে দিচ্ছে সব হোটেল। ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। সাহস করে ’’নন্দন’’ নামের একটা হোটেলে ঢুকলাম। সেখানে ম্যানেজার বললো, থাকতে সমস্যা নেই, কিন্তু এক রাতের জন্যে ২৩০০ রূপী রুম ভাড়া। মনে মনে বললাম, ’”নাহ, এক রাতের জন্যে এ্যাত টাকা খরচ করার কোন মানেই হয়না।’” অগত্যা আবার হোটেল খোঁজা শুরু করলাম। ভাগ্য এবার সুপ্রসন্ন হলো। পল্টন বাজারেই ’মহালক্ষ্মী’ নামের এক হোটেলে ৯৮৭ রূপীতে একটা রুম পেয়ে গেলাম।

পরদিন সকাল সাড়ে ছ’’টায় গৌহাটি থেকে রওনা দিলাম শিলং শহরের উদ্দেশ্যে।

আগের পর্বঃ

Leave a Comment
Share