আসাম ভ্রমণ – পর্ব ২ (কামাক্ষ্যা মন্দির দর্শন)

২৮ আগস্ট, ২০১১, রবিবার।

সকাল ৯ টায় রুবুল দাস তার টাটা ইন্ডিকা গাড়ি নিয়ে হাজির। প্রায় একবছর পর দেখা হলো রুবুলের সাথে। ঠিক আগের মতোই আছে। অবশ্য খুশীর খবর হলো, এর মধ্যে সে এক ছেলের বাবা হয়েছে। আজকের মূল প্ল্যান হলো, বিখ্যাত কামাক্ষ্যা মন্দির দেখতে যাবো। তারপর ওখান থেকে বাকী প্ল্যান করা যাবে। জি.এস রোডের সোহাম শপিং মলের সামনে থেকে কামাক্ষ্যা মন্দির পর্যন্ত রুবুলের গাড়িতে প্রায় ৪০ মিনিট লেগে গেল। প্রচণ্ড গরমে সবাই অস্থির আমরা। এদিকে আবার রুবুলের গাড়ির এসি ঠিক মতো কাজ করছেনা। বেশ খানিকটা ধকল সয়ে পাহাড়ের উপরে কামাক্ষ্যা বা কামাখ্যা মন্দিরে বেলা সাড়ে দশটার দিকে পৌঁছে গেলাম।

কামাক্ষ্যা মন্দিরে ঢোকার শুরুতে

রবিবার ছুটির দিন বলেই মনে হয় আজ ভিড়টা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। পায়ে পড়ে থাকা স্যাণ্ডেল একটা দোকানে রেখে তিনজন খালি পায়ে কামাক্ষা মন্দিরের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। অসম্ভব গরমে মন্দিরের ফোরে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছেনা। তাই ছায়া খুঁজে নিয়ে ছবি তুলতে থাকলাম।

খালিপায়ে মূল মন্দিরের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা
এই সেই বিখ্যাত কামাক্ষ্যা মন্দির

কামরূপ জেলার কামাক্ষ্যা মন্দিরের ইতিহাস জানতে হলে ক্লিক করুন। মন্দির সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে পাবেন।

মন্দিরের গায়ের শৈল্পিক সৌন্দর্য

অসম্ভব ভিড়ের কারণে মূল মন্দিরের ভেতরে ঢোকার সাহস আর করলামনা। রুবুলের পরামর্শে পাহাড়ের একটু নিচে নেমে গেলাম প্রায় শতবর্ষী বিশালাকায় কাছোয়া (কাছিম) দেখার জন্যে।

গাড়ি পার্কিং ফি ২০ রূপী পরিশোধ করে দুপুর একটায় মন্দির থেকে বের হয়ে ওখান থেকে সোজা ব্রক্ষপুত্র নদের পাড়ের শংকরদেব উদ্যানে ঢুকে পড়লাম। কিন্তু মারুফকে প্রশ্ন করলাম, “এখানে ঢোকাটা কি ঠিক হলো?” চারিদিকে কপোত-কপোতীরা প্রেম লীলায় ব্যাস্ত। এর মধ্যে আমরা ’’কাবাব মে হাড্ডি’’ হয়ে গেলেতো সমস্যার কথা। রুবুল আবার আমাকে পরামর্শ দিল ক্যামেরা ব্যাগ থেকে না বের করার জন্যে। কারণ এতে করে প্রেমিক যুগলেরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে পারে। কি দরকার খামাকা ওদেরকে ভয় দেখিয়ে? মাঝে মাঝে নাকি সাংবাদিক লোকজন ক্যামেরা নিয়ে এখানে এসে প্রেমিক যুগলদের বিভিন্ন অপ্রস্তুত ছবি তুলে নিয়ে পত্রপত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়। যাইহোক, রুবুলের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলাম। প্রেমিক-প্রেমিকাদের থেকে অনেক দূরে গিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম শংকরদেব উদ্যান আর ব্রক্ষপুত্র নদের।

শংকরদেব উদ্যান-এর ভিতরে

শংকরদেব উদ্যান থেকে আমরা গেলাম ‘এসেল ওয়ার্ল্ড’ ঘুরতে। এখানে সিস্টেম হলো, ২৭৫ রুপী দিয়ে টিকেট কেটে ঢুকলে সব রাইড ফ্রি। কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় আমরা সবাই তখন অস্থির। তাই এসেল ওয়ার্ল্ডে দেরী না করে রওনা দিলাম খাবার সন্ধানে। যাবার পথে শেভরোলে, ফক্সওয়াগন আর হোণ্ডা গাড়ির প্রধান শো-রুম দেখার পাশাপাশি দূর থেকে বালাজী মন্দিরও দেখে নিলাম।

এসেল ওয়ার্ল্ড
বালাজী মন্দির

দুপুরে গৌহাটির জি.এস রোডের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট ’’খরিকা’’তে খাঁটি অহমিয়া (অসমীয়া) খাবার সাদা ভাত, ইয়েলো ডাল, ব্ল্যাক ডাল, খার, সব্জি, ভেজ আনজা, পিটিকা, বরই মাছের চাটনী আর ক্ষীর খেলাম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখছি, ’’খরিকা’’ শব্দটি অহমীয়া। এর অর্থ বাঁশের বীজ, যা বাঁশ গাছের একদম নিচে পাওয়া যায়।

বিখ্যাত ‘পণ্ডিতের পান দোকানে’ পান খাচ্ছি আমরা

রুবুলের থেকে বিদায় নিয়ে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় খানাপাড়া থেকে বাসে করে আমি আর মারুফ রওনা দিলাম ন’গাঁও এর উদ্দেশ্যে। মারুফের বাড়ি ’হোজাই’-তে হলেও কর্মসূত্রে সে ন’গাঁওতে থাকে। রাত ন’টা নাগাদ ন’গাঁও পৌঁছালাম আমি আর মারুফ। রাতের খাবার শেষ করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম, কারণ কাল খুব ভোরে রওনা হবো ‘কাজিরাঙ্গা সাফারি পার্ক’ দেখার উদ্দেশ্যে।

আগের পর্বঃ আসাম ভ্রমণ – পর্ব ১ (গৌহাটি)

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ assamguwahatikamakhyatemple