সিকিম এর রেস্ট্রিকটেড এরিয়া কোনগুলো এবং অনুমতি পাবার উপায়

সম্প্রতিকালে ভারত সরকার বাংলাদেশীদের জন্যে সিকিম ভ্রমণ করার অনুমতি পাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে, আগে যেটা খুব একটা সহজ ছিলো না। যার কারনে অনেকের মনে সিকিম ভ্রমণ, পারমিট কালেক্ট এবং সিকিমের কোথায় কোথায় ভ্রমণ করা যাবে এসব নিয়ে হাজারো রকমের প্রশ্ন ঘুরছে। আজ এখানে সে সব সম্ভাব্য সকল প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ট্যুরিস্ট পারমিটের উপর ভিত্তি করে সমগ্র সিকিমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো – রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া (Restricted Area) এবং আরেকটি হলো প্রটেক্টেড এরিয়া (Protected Area)।

পুরো গ্যাংটক, রুমটেক, ওয়েস্ট সিকিম এর পেলিং, সাউথ সিকিম এর নামচি, চার ধাম ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো রেস্ট্রিক্টেড এরিয়ার মধ্যে পড়ে। রেস্ট্রিক্টেড এরিয়াতে আপনি অন্য স্টেট এর গাড়ি নিয়েও ঘুরতে পারবেন।

অন্যদিকে ইস্ট সিকিম এর ছাঙ্গু লেক, নাথুলা, নিউ বাবা মন্দির, হাঙ্গু লেক, এলিফ্যান্ট লেক, ওল্ড বাবা মন্দির, নাথাং ভ্যালি, থান্ডি ভিউ পয়েন্ট, জুলুক এসব জায়গাগুলো প্রটেক্টেড এরিয়ার অন্তর্গত।

আর নর্থ সিকিম এর লাচেন, লাচুং, গুরুদংমার লেক, জিরো পয়েন্ট, ইয়মথাং ভ্যালী, চোপতা ভ্যালী, কালা পাত্থার, কাটাও এসব জায়গাগুলো প্রটেক্টেড এরিয়ার অন্তর্গত।

প্রটেক্টেড এরিয়ায় ঘুরতে যাবার জন্যে অনুমতি/পারমিট লাগবে এবং সিকিম স্টেট এর গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবেন। তবে অন্য স্টেট এর সরকারি গাড়ি সরকারি কাজে যেতে পারবে।

বাংলাদেশীরা কি সিকিম ভ্রমণের অনুমতি পাবেন?

হ্যাঁ, বাংলাদেশীদের এখন সিকিম ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশীরা সিকিম ভ্রমণের অনুমতি কিভাবে পেতে পারেন?

বাংলাদেশীদের জন্যে সিকিম ভ্রমণের অনুমতি পাওয়ার বেশ অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এখানে আমরা চার ধরনের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রথম উপায় (বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার থেকে নেয়া)
ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশান সেন্টার, বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সুরক্ষিত/সীমাবদ্ধ স্থানে অনুমতির আবেদনপত্র অথবা ভারতীয় হাই কমিশন, ঢাকা, বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট এর এই লিংক থেকে নামিয়ে সঠিকভাবে পূরন করে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে জমা দেয়ার ৭ দিন পর, ৭/১৫/৩০/৬০ দিনের জন্য সিকিমের পারমিশন পেয়ে যাবেন।
এক্ষেত্রে পারমিশন চার্জ – ৩০০ টাকা
সিকিম, অরুণাচল প্রদেশসহ ভারতের সীমাবদ্ধ বা সংরক্ষিত এলাকাসমূহে পারমিশন কিভাবে নিতে হবে তার নির্দেশাবলী এই লিংকে গিয়ে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।

২য় উপায় (রংপো চেকপোস্ট)
শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার জিপ/রিজার্ভ জিপ/বাসে করে গ্যাংটক যাওয়ার পথে রংপো (RANGPO, EAST SIKKIM) চলে যান। রংপো এর Foreigners Reporting Office থেকে অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই কোন ফি ছাড়া পারমিশন নিতে পারবেন। কদিন থাকবেন পারমিশন নেয়ার সময় বলে দিতে হবে। ২-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি অবশ্যই সাথে রাখবেন।

৩য় উপায় (সিকিম ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার)
শিলিগুড়িতে সিকিম ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট (SNT Bus Terminus) বাস টার্মিনালের কাছে SNT কলোনিতে সিকিম ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার অবস্থিত। পাসপোর্ট, ভিসার কপি আর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি নিয়ে গেলে এখান থেকে ১০ মিনিটেই কোন ফি ছাড়া অনুমতি পাওয়া সম্ভব। অনুমতি মিলবে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্যে। শিলিগুড়িতে সিকিম হাউজের ঠিকানা নীচে দেওয়া হলো –
SIKKIM TOURIST INFORMATION CENTRE, SNT COLONY, HILL CART ROAD, SILIGURI. PHONE: 43646

৪র্থ উপায় (মেল্লি চেক পোস্ট)
এছাড়া কেউ যদি দার্জিলিং থেকে সাউথ সিক্কিম হয়ে ঢুকতে চান, তাহলে মেল্লি চেক পোস্ট থেকে পারমিট নিয়ে ঢুকতে পারবেন।

সিকিম একবার ভ্রমণ শেষে আবার ভ্রমণ করতে চাইলে কত দিন পরে পারমিট দেয়?

একবার সিকিম ভ্রমণ শেষ করার পর ৩ মাস (৯০ দিন) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আবার পারমিট নিতে চাইলে।

সিকিমের কোথায় কোথায় পারমিট ছাড়া বাংলাদেশীরা ঘুরতে পারবেন?

বাংলাদেশীরা সিকিম ভ্রমণের পারমিট পেলে রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া গুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন। তাই এগুলো তাঁরা ঘুরে দেখতে পারবেন।

ওয়েস্ট সিকিম এর কোথায় কোথায় বাংলাদেশীরা ঘুরতে যেতে পারবেন?

ওয়েস্ট সিকিম এর পুরোটাই বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।

সাউথ সিকিম এর কোথায় কোথায় বাংলাদেশীরা ঘুরতে যেতে পারবেন?

সাউথ সিকিম এর পুরোটাই বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।

ইস্ট সিকিম এর কোথায় কোথায় বাংলাদেশীরা ঘুরতে যেতে পারবেন?

ইস্ট সিকিম এর সাঙ্গু লেক পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।

নর্থ সিকিমের কোথায় কোথায় বাংলাদেশীরা যেতে পারবেন?

নর্থ সিকিম এর লাচেন এর থাঙ্গু/চোপতা ভ্যালী পর্যন্ত এবং লাচুং এর ইয়মথাং ভ্যালী পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ অন্য অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা ঘুরতে যেতে পারবেন।

প্রটেক্টেড এরিয়ার পারমিট কোথা থেকে পাওয়া যাবে?

সব ধরনের পারমিট পেতে পারবেন – ট্যুরিজম এন্ড সিভিল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্টের পারমিট সেল থেকে। গ্যাংটকের এমজি মার্গ এর টাইটানিক পার্কের নীচে এদের অফিস।

সাঙ্গু লেক এবং নর্থ সিকিমের পারমিট কি নিজেরাই করা যাবে?

প্রটেক্টেড এরিয়ার পারমিট পেতে হলে সিকিম গভর্মেন্ট এর রেজিস্ট্রার্ডকৃত ট্যুরিস্ট এজন্সি দ্বারা অ্যাপ্লাই করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে অ্যাপ্লাই করলে পারমিট দেয়া হয় না।
সিকিম গভর্মেন্ট এর রেজিস্ট্রার্ডকৃত ট্যুরিস্ট এজন্সিগুলো এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।

গাড়িতে এবং বাইকে ভ্রমণ করতে চাইলে পারমিট পেতে কত টাকা লাগে?

ইস্ট সিকিম এর পারমিট পেতে প্রতিজন ৫০ রুপী এবং নর্থ সিকিম এর জন্যেও প্রতিজন ৫০ টাকা জমা দিতে হয় যা এনভারয়মেন্ট ফি হিসেবে State Bank of Sikkim এর Revenue Head – 1452 / Tourism 800 একাউন্টে জমা দিতে হবে। গাড়িতে এবং বাইকে উভয় ক্ষেত্রেই ৫০ রুপী করে ফি জমা দিতে হবে যা ক্যাশ দিলে হবে না। ভারতীয়দের জন্যে কোন টাকা লাগে না।

বিদেশীরা যদি বাইকে নর্থ সিকিম ঘুরতে যান তাহলে পারমিট করতে কি লাগে?

বাংলাদেশ সহ অন্য সব দেশের ট্যুরিস্টরা যদি বাইকে নর্থ সিকিম ভ্রমণ করতে চান তাহলে পারমিটের জন্যে তাদের জমা দিতে হবে – পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্যালিড ইনার লাইন পারমিট, বাইকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ইন্সিওরেন্স সার্টিফিকেট, পলিউশন সার্টিফিকেট আর বাইক ভাড়ার হলে অথোরাইজেশন লেটার অন জুডিশিয়াল পেপার, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফোন নাম্বার এবং আপনার কোন এক আত্মীয়ের ফোন নাম্বার যা বাধ্যতামূলক। উপরে উল্লেখিত সকল কাগজের ২ কপি করে ফটোকপি জমা দিতে হবে এবং সাথে লাগবে ৩ কপি কালার ছবি।

মনে রাখবেন, বিদেশীদের বাইকের পারমিটও কিন্তু সিকিম সরকার দ্বারা স্বীকৃত লোকাল ট্যুর এজন্ট দ্বারা করাতে হবে। নিজে নিজে করা যাবে না। ভারতীয়রা নিজের বাইকের পারমিট নিজেরাই করতে পারবেন।

বিদেশীদের বাইকে ভ্রমণ করার সময় একজন লোকাল গাইড সাথে রাখা বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশীরা কি সলো ট্রাভেল করতে পারবে?

না। বাংলাদেশসহ অন্য দেশের ট্যুরিস্টরা সিকিম ভ্রমণ করতে চাইলে অন্তত ২ জন বা তার বেশী গ্রুপে হতে হবে।

গুরুডংমার লেক কি বাংলাদেশীরা যেতে পারবে?

না। ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট লাচেন এ অবস্থিত গুরুডংমার লেক যেতে পারবে না।

জিরো পয়েন্ট কি বাংলাদেশীরা যেতে পারবে?

না। ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট লাচুং এর জিরো পয়েন্ট যেতে পারবে না।

নাথুলা পাস বা ওল্ড সিল্ক রুট কি বাংলাদেশীরা যেতে পারবে?

না।  ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের ট্যুরিস্ট নাথুলা পাস (Nathu La Pass) বা ওল্ড সিল্ক রুট (Old Silk Route) যেতে পারবে না।

৫ বছরের কম বয়সী বাচ্ছাদের কি নাথুলা বা জিরো পয়েন্ট বা গুরুদংমার লেক এ যাবার পারমিট দেওয়া হয়? (ভারতীয়দের জন্যে প্রযোজ্য)

নাথুলা বা জিরো পয়েন্ট বা গুরুদংমার লেক এ যাবার পারমিট কোন বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই। আপনার শরীর ফিট থাকলে এবং বাচ্চা/বয়স্কদের উচ্চতা জনিত সমস্যা না থাকলে তাদের নিয়ে যেতে পারবেন।

নাথুলা পাস এর পারমিট কোথা থেকে করানো যাবে?

গ্যাংটক ও রংলি, সিল্ক রুটের দুপ্রান্ত থেকেই এই অনুমতি পাওয়া যায়।

নাথুলা বেড়ানোর জন্য কতদিন আগে পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হয়?

নাথুলা পাস যাবার প্ল্যান করলে অবশ্যই একদিন আগে পারমিট করিয়ে নিবেন। দিনে দিনেই পারমিট পাওয়া যায়। তাই যাবার আগের দিন পারমিট করিয়ে রখলে পরের দিন সকালেই যাত্রা শুরু করতে পারবেন। আর সে জন্যে আগেরদিন দুপুর ১ টা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। নাথুলা পাস গেলে অবশ্যই সেই দিন ফেরত আসতে হবে কেননা পারমিট এক দিনের জন্যে দিবে।

নাথুলা পাস বেড়ানোর জন্যে পারমিট করতে কত টাকা লাগে?

নাথুলা পাস এর পারমিট করাতে ২০০ রুপী লাগে যা এনভারয়ভেন্ট ডেভ্লপমেন্ট এর কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ৪ বছরের নীচের বাচ্চাদের কোন পারমিট লাগে না।

নাথুলা বেড়ানোর জন্যে  কি কি ডকুমেন্ট লাগে এবং অরিজিনাল ডকুমেন্ট কি সাথে নিয়ে যেতে হয়?

গাড়িতে যেতে চাইলে লাগবে ভোটার কার্ড/পাসপোর্ট/আধার কার্ড যে কোন একটির জেরক্স/ফটোকপি আর ২ কপি কালারড ছবি। নাথুলার পারমিট করার জন্যে অরিজিনাল ডকুমেন্ট জমা দেয়া লাগে না কিন্তু যে ডকুমেন্ট দিয়ে আপনি পারমিট করাবেন সেই ডকুমেন্টের আসল কপি সাথে রাখা ভালো, যদি লাগে 🙂

নাথুলা পাস সপ্তাহের কোন কোন দিন বন্ধ থাকে?

সোমবার এবং মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৫ দিন ভারতীয়রা নাথুলা পাস ভ্রমণ করতে পারবেন।

Leave a Comment
Share