বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। স্বচ্ছ নীল জল, সারি সারি নারিকেল গাছ, আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যেন এখানে এসে মিশেছে। যারা কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন কাটাতে চান, তাদের জন্য সেন্ট মার্টিন হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। এই ভ্রমণ গাইডটিতে আপনার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণকে আরও সুন্দর ও সহজ করার জন্য বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল:
সেন্ট মার্টিন যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার অথবা টেকনাফ যেতে হবে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার
- বাস: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের সরাসরি বাসের টিকেট পাওয়া যায়। গ্রীন লাইন, শ্যামলী, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার বাস চলাচল করে।
- বিমান: ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের ফ্লাইট পাওয়া যায়।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে বাসে অথবা সিএনজি-তে যেতে পারেন। বাসে সময় লাগবে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য জাহাজ/লঞ্চ পাওয়া যায়। যেমন – গ্রীন লাইন, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি পারিজাত ইত্যাদি। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে জাহাজগুলো ছাড়ে। তাই আগে থেকে টিকেট কেটে রাখা ভালো।
কোথায় থাকবেন
সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। আগে থেকে বুকিং করে গেলে ভালো, বিশেষ করে পিক সিজনে। কিছু জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্ট:
- ব্লু মেরিন রিসোর্ট
- প্রাসাদ প্যারাডাইস
- হোটেল সী ফাইন্ড
- কোরাল ভিউ রিসোর্ট
- অবকাশ রিসোর্ট
এছাড়াও সেন্ট মার্টিনে থাকার বেশ কিছু রিসোর্টের খোঁজ আমাদের এই পোস্টে পেয়ে যাবেন।
খরচ
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে খরচ নির্ভর করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা, থাকা-খাওয়া এবং কেনাকাটার ওপর। মোটামুটি ধারণা দেওয়ার জন্য একটি সম্ভাব্য বাজেট নিচে দেওয়া হল:
- ঢাকা থেকে কক্সবাজার/টেকনাফ যাওয়া-আসা: ২০০০-৫০০০ টাকা (পরিবহন ও শ্রেণী অনুযায়ী)
- টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়া-আসা: ১০০০-২০০০ টাকা (জাহাজ/লঞ্চের শ্রেণী অনুযায়ী)
- হোটেল/রিসোর্টে থাকা (প্রতি রাত): ১৫০০-৫০০০ টাকা (মান অনুযায়ী)
- খাবার খরচ (প্রতিদিন): ৫০০-১৫০০ টাকা
- অন্যান্য খরচ: ২০০-৫০০ টাকা
সেন্ট মার্টিনে ৩ দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা
প্রথম দিন:
- জাহাজ থেকে নেমে বোটে চড়ে হোটেলে চেকইন করুন।
- দুপুরের খাবার: সামুদ্রিক মাছের কারি, মিক্সড ভেজিটেবল, ডাল, ভাত, সালাদ ও ভর্তা।
- বিকেলে পশ্চিম সমুদ্রপাড়ে বসে চা-নাশতা খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখুন। সূর্যাস্তের সোনালী আলোয় প্রিয়জনের সাথে ছবি তুলতে পারেন।
- রাতে রিসোর্টের গাছের তলায় বসে নারিকেল পাতার ঝিরঝির শব্দ শুনুন, গল্প করুন অথবা গান করুন।
- রাতের খাবার: মাছ অথবা মুরগির কারি ও ভাত।
দ্বিতীয় দিন:
- খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রিসোর্টের পূর্ব দিকে যান এবং অসম্ভব সুন্দর সূর্যোদয় দেখুন।
- সূর্যোদয় দেখে হেঁটে ছেঁড়াদ্বীপের দিকে যান, যা রিসোর্ট থেকে ১০-১৫ মিনিটের পথ।
- ছেঁড়াদ্বীপ ঘুরে দেখুন এবং ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ডাবের জল পান করুন।
- দুপুরের আগে রিসোর্টে ফিরে আসুন।
- সকালের নাস্তা: মিক্সড খিচুড়ি, ডিম ভাজি ও সালাদ।
- দিনের বেলায় হ্যাং rocking chair এ শুয়ে বই পড়ুন অথবা বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলুন।
- দুপুরে জোয়ার এলে স্যান্ডি বিচে গা ভেজান।
- দুপুরের খাবার সেরে বর্শী দিয়ে মাছ ধরতে পারেন অথবা অল্প খরচে ছোট নৌকায় ভ্রমণ করতে পারেন।
- বিকেলের চিকচিকে রোদে কোরাল দেখুন।
- রাতের বেলা বারবিকিউ করুন (বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, চিকেন, কাঁকড়া, লবস্টার)।
তৃতীয় দিন:
- সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে ছেঁড়াদ্বীপের কাছাকাছি নৌকা ভ্রমণ করুন।
- সকালের নাস্তা শেষে হোটেলের বিল পরিশোধ করে বাজারের দিকে যান।
- জাহাজে ওঠার আগে বাজারের আশপাশ ঘুরে দেখুন।
- দুপুরের খাবার কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে খান। ভাঁজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
- দুপুর ২:৩০ এর মধ্যে জাহাজে ওঠার জন্য জেটিতে উপস্থিত থাকুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- সেন্ট মার্টিন একটি পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা, তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
- ভ্রমণের আগে হোটেল বুকিং করে নিন।
- ভাটার সময় ছেঁড়াদ্বীপ হেঁটে পার হওয়া যায়, তবে জোয়ারের সময় নৌকা ব্যবহার করুন।
- খাবার জলের বোতল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে রাখুন।
- স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- দামাদামি করে জিনিস কিনুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- লাইফ জ্যাকেট ছাড়া সমুদ্রে নামবেন না।
- জরুরি অবস্থার জন্য কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে নিন।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ আপনার জন্য একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা হোক!
Leave a Comment