তাকদা

তাকদা দার্জিলিং এর মূল শহর থেকে কমবেশি ৩০ কিমি দূরে। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না, কিন্তু দেখা যায় দিগন্ত বিস্তৃত ঘন সবুজের সমারোহ আর বিখ্যাত সমস্ত কোম্পানীর চা বাগান। উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ পর্যটনের সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। অপূর্ব নৈসর্গিক শোভা তাকদার অন্যতম আকর্ষন। এইখানে পর্যটকদের থাকার জায়গাগুলো পাহাড়ের উপর দিকে আর যারা চা বাগানে কাজ করে তাদের থাকার জায়গাগুলো নীচের চা বাগানের কাছেই। রাত্রিবেলায় যখন ওদের ঘরে আলো জ্বলে মনে হয় আকাশের তারারা নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে। অপূর্ব সুন্দর সে অনুভূতি। এখান থেকে ৩ কিমি দূরে তিনচুলে। দুচোখ ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা আর উপভোগ করার অন্যতম সেরা জাযগা। তাকদা থেকে সকাল সকাল বেড়িয়ে একটা বেলা তিনচুলেতে কাটানো জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়ে যেতে পারে, ফিরে এসে বাকি দিনটা তাকদা অর্কিড সেন্টারে রং বেরংয়ের অর্কিড দেখে কাটানো যেতেই পারে।

সবুজ পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই গ্রাম যদিও এখনও সুপ্ত ডেস্টিনেশন হিসেবেই রয়ে গেছে টুরিস্টদের কাছে। তবে বর্তমানে জনবহুল টুরিস্ট স্পট গুলির বাইরে এমন নির্জন লোকেশনে ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তাকদাই হয়ে উঠবে এক পরিচিত টুরিস্ট ডেস্টিনেশন। ‘তাকদা’ বা স্থানীয় ভাষায় ‘তুকদা’ কথার অর্থ হলো ‘মেঘে ঢাকা’। বস্তুত পক্ষেই পাহাড়ী ঢালে মেঘে ঢাকা সবুজে মোড়া এই হ্যমলেট। দার্জিলিং জেলার সুদৃশ্যতম চা বাগান গুলির সন্ধান মিলবে এই তাকদাতেই। পাহাড়ী পথে, সবুজ ঘেরা চা বাগানের মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। বর্ষায় যেন এই সৌন্দর্য দিগুন হয়ে যায়। তাই সারাবছরই কম বেশি ট্রাভেলার আসেন এখানে। দার্জিলিং এর সবচেয়ে সুন্দর, পাহাড়ী ঢালে সুবিন্যস্ত চা বাগান রংলি-রংলিয়ট চা বাগান এখানেই। এই চা বাগানের শোভা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। মনেহয় যেন শিল্পী খুব যত্ন করে তার তুলির টানে এঁকে দিয়েছেন এই সুন্দরী পাহাড়ী রাজকন্যাকে।

তাকদা থেকে কাছেপিঠে দর্শনীয় স্থান প্রচুর। রংলি রংলিয়ট চা বাগান থেকে আরেকটু নিচের দিকে ২ কিমি নামলেই গিলে ভনজং বাজার ক্রশিং ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে দাঁড়িয়ে আপনি কালিম্পং, দুরপীন, টাইগার হিল, রাম্বি খোলা প্রভৃতি জায়গা গুলির দেখা পাবেন। এ দৃশ্য এক কথায় অনবদ্য। এছাড়া তাকদা বাজার থেকে ৬ মাইল যেতে রয়েছে তাকদা অর্কিড সেন্টার। রং বেরংয়ের অর্কিডে আপনি মুগ্ধ হবেনই। তাকদা থেকে তিন কিমি দূরেই রয়েছে আরেক পাহাড়ী হ্যমলেট তিনচুলে। এই তিনচুলে এখন বেশ পরিচিত টুরিস্ট ডেস্টিনেশন। তিনচুলে থেকে তিস্তা ও রংগিত নদীর সংগম স্থল এক দূর্দান্ত দৃশ্য। এছাড়া তাকদা থেকে লামাহাট্টা, দুর্পিন, পেশক, মংপু , ছোট মাংগাওয়া সবই ১২-১৪ কিমির মধ্যে। তাই দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়। ছোট একটি মনাস্ট্রিও আছে তাকদা তে। দেখতে ভুলবেন না। এই মনাস্ট্রির শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ মনে আনে প্রশান্তি।

এছাড়াও তাকদা (Takdah) থেকে খুব সহজেই ঘুরে নেওয়া যেতে পারে রিশপ, লাভা, পেডং, সিলারিগাঁও, কালিম্পং এইসব জায়গাগুলো। যারা ব্যাস্ত এবং শহুরে জীবন থেকে দুটো দিন একটু নিরিবিলিতে কাটাতে চান তাদের জন্য অন্যতম সেরা ঠিকানা হতে পারে তাকদা। এখান থেকে দার্জিলিং গাড়িতে মাত্র এক ঘন্টার পথ, তাই তাকদা থেকে খুব সহজেই এখানে এসে নষ্টালজিক টয় ট্রেন আর কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা উপভোগ করা জীবনের অন্যতম সেরা ভ্রমন তালিকায় স্থান পেতেই পারে।

কিভাবে যাবেন

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তাকদা (Tukdah) এর দূরত্ব ৯০ কিমি। কালিম্পং থেকে ৩৩ কিমি আর দার্জিলিং থেকে ৩০ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে সহজেই যাওয়া যায় এখানে।

কোথায় থাকবেন

তাকদায় রাত্রিবাস করতে পারেন তাকদা হেরিটেজ বাংলোয় ইংরেজ আমলের তৈরী করা বাংলো এখন আরও নতুন রূপে, বাংলোর সামনে সবুজ ঘাসের লনে বসে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার প্রচুর সুযোগ।

Leave a Comment
Share