এনজিপি কিংবা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে প্রথমেই চলে যান পেডং (Pedong) যা সিলারি গাঁও যাওয়ার ৫ কিলোমিটার আগেই পড়বে। এখানকার বিখ্যাত মনেস্ট্রিটা যখন পথেই পড়বে, তখন দেখে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বৌদ্ধ গুম্ফা (Monastery) টার বারান্দা থেকে একবার চেয়ে দেখুন চারপাশটা – মন ভরে যাবে। নীল আকাশে টুকরো টুকরো সাদা মেঘের তলায় ছোট্ট পাহাড়ী শহর পেডং। শহর মানে কিন্তু গ্যাংটক বা দার্জিলিং এর মতো ঘিঞ্জি নয়। একটা হাই স্কুল (St. George High School), একটা জিপ / ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আর কয়েকটা পাকা বাড়ি। পেডং দেখে আবার গাড়িতে উঠে পড়ুন। রাস্তা বেশ ভালোই। তবে শেষের কিছুটা পথ Dancing Road. পাথর ফেলা রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি লাফাতে লাফাতে পৌঁছে যাবে সিলারি গাঁও (Sillery Gaon)।
ভোর পাঁচটার আগেই ওঠার চেষ্টা করবেন। সানরাইজ তো অনেক দেখেছেন। এখানে দেখবেন সানরাইজ এর সাইড এফেক্ট। বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ান। ভোরের আবছা আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার অবয়বটা বেশ আন্দাজ করতে পারবেন। আর একটু সময় অপেক্ষা করুন। তারপরেই সিঁদুর-পরানোর ভঙ্গীতে সূর্যদেব তার প্রথম কিরন ফেলবেন এর চূড়ায়। তারপর দেখবেন রঙ বদলের খেলা। সারা পাহাড় জুড়ে যেন আগুন লাগলো বলে মনে হবে। একটু বেশি আবেগপ্রবন মানুষ হলে আবার চোখে জলও আসতে পারে।
এছাড়া আছে সিঙ্কনা প্লান্টিং যা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সময়কাল থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরির জন্য। এছাড়া ছোট খাটো ট্রেকিং এর অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করার জন্য যেতে পারেন তিন চুল্লি, রেমিটি। তিন চুল্লি থেকে দেখতে পাবেন সিকিম শহর, জিপলা, নাথুলা, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং তিস্তার চারটি বাঁক। সিলারিগাঁও থেকে ৪ কিমি দূরত্বে ইতিহাসের খোঁজে যেতে পারেন দামসাং দূর্গ।
সিলারিগাঁও থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন পেডোং, রেসিং ও আরিতার দিকে। দেখা পাবেন ৩০০ বছর পুরোনো বৌদ্ধ মনেসট্রি। প্রাচীন মনেস্ট্রির দেওয়ালে দেখা পাওয়া যায় বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের আঁকা ছবি । এপ্রিল-মে মাসে এই খানে ঘুরতে গেলে দেখতে পাবেন বৌদ্ধ লোকায়ত ডান্স চ্যাং। তার পরে চলে যান ঋষি রোডের ও সিলারিগাঁও এর কাছে অবস্থিত ক্রস হিল দেখতে। ১৮৮২ সালে ফাদার অগাস্টিন এটি তৈরি করেছিলেন।
এখান থেকে পর্বতমালার এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া এখান থেকে দেখতে পাবেন সূর্যাস্তের অনুপম দৃশ্য। এখান থেকে ২ কিমির মধ্যে পেডিং বাজারের কাছে রয়েছে কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হওয়া এক ভারতীয় সেনার স্মরণে তৈরি ‘শহীদ পার্ক’। আশে পাশে আছে আরও দর্শনীয় স্থান। যেমন- রিকিসাম, ঋষি ব্রিজ, আরিতা লেক, মাকিম, রংগপো খোলার মত রোমান্টিক মনোরম জায়গাগুলি।
১. যারা বাড়ির বাইরে নির্ভেজাল নিরিবিলিতে নিজের মতো করে খেয়ে-ঘুমিয়ে ছুটি কাটাতে চান।
২. যারা সারাদিন মোবাইল ফোন বন্ধ রাখলেও ফিরে গিয়ে সঙ্গী / সঙ্গিনী বা অফিসের বস কে সামলে নিতে পারবেন।
৩. যারা খাঁচায় নয়, জঙ্গলে নানা রঙের পাখি দেখতে ভালবাসেন।
৪. যারা ঘরে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে চান।
৫. যারা পাহাড়ে পায়চারি করতে বা একটু সখের হাঁটা হাঁটতে পছন্দ করেন। তিন-চারটে দারুন স্পট রয়েছে হেঁটে ঘোরার জন্য।
রামেটি ভিউ পয়েন্ট – যেখানে দাঁড়ালে আপনি পায়ের তলায় তিস্তা নদীর ১৪টা বাঁক দেখতে পাবেন আর একই সঙ্গে মাথার ওপর পাবেন ঝলমলে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
দাকশাম ফোর্ট – গাইড ছাড়া যাবেন না। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের ওপরে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোন কেল্লার ধ্বংসাবশেষ (এখন জঙ্গলে এমন ছেয়ে গিয়েছে যে বোঝাই যায় না)। জোঁক থেকে সাবধান। সুযোগ পেলেই ওরা আপনার শরীরে Blood Donation Camp বসিয়ে দেবে। নুন এর প্যাকেট রাখুন সঙ্গে।
সাইলেন্ট ভ্যালি – এখানে এসে না দাঁড়ালে এই জায়গার নীরব সৌন্দর্য বোঝানো মুশকিল।
ইচ্ছেগাঁও – মাত্র তিন-চার কিলোমিটার এর মধ্যে আর একটা গ্রাম, আর একটা নতুন উঠে আসা টুরিস্ট স্পট।
১. যাদের মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট ছাড়া যাদের জীবন অর্থহীন মনে হয়।
২. যারা সন্ধ্যে হলেই ফুচকা খাওয়া বা শপিং করার কথা ভাবেন – ভুলেও যাবেন না।
৩. যারা প্যাকেজ ট্যুরে বেরিয়ে Give and Take (কত টাকা দিলাম আর কি সার্ভিস পেলাম) থিওরি তে পুরো ব্যাপারটাকে মেপে বাহাদুরি দেখান – তাদের জন্য সিলারিগাঁও নয়। এখানে ওরা আপনাকে অনেক কিছু দেবে যার কথা ওদের চুক্তিতে লেখা নেই। যেমন ধরুন – অবিরাম চা এর যোগান, ওদের হাতে বানানো মিষ্টি রুটি, ওদের নিজেদের জন্য তৈরি করা চাটনি বা তরকারির ভাগ, আর ওদের অন্তরের হাসি। কিন্তু বাবুমশাই, চা দিতে একটু দেরি হলে বা গরম জল হতে একটু সময় লাগলে যদি আপনি চিৎকার করে হোটেল মাথায় করেন তাহলে আপনি এমন জায়গা বাছুন যেখানে সুইচ টিপলেই এসব কাজ মুহুর্তের মধ্যে আপনার হাতের কাছে হাজির হবে।
বিরু তামাং এর হোম স্টে Silerygaon Retreat। এই বিরু তামাংই এখানকার সর্বেসর্বা। যাওয়ার আগে একটি বার ফোন করুন (9932775445) – ব্যস্ । আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী উনি সমস্ত প্ল্যান ঠিক করে দেবেন, এমনকি গাড়িও। আপনাকে শুধু কষ্ট করে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যেতে হবে। ওনার মেয়ে দুর্গা তামাং। নামেও যেমন দুর্গা, কাজেও সত্যিই দশভূজা। একা হাতে সমস্ত টুরিস্টদের আর এই হোটেলের তদারকি করেন। তাই বিরু-জি’র বদলে উনি ফোন ধরলে আমতা আমতা করবেন না। নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে সব Detail জানিয়ে দিন। ওনাদের এক বাঙালী পার্টনার আছেন। নাম অভিজিত সেন (9830355223)। তাকেও ফোন করতে পারেন।
এছাড়া আছে নির্মালা রিসোর্ট। যোগাযোগ করতে পারেন – দিলিপ তামাং। ফোন – +91-9635005318, 9933922859
এছাড়া আছে The Sillery Sojourn যা সিলারি গাঁও এর সবথেকে উঁচু জায়গায় অবস্থিত। এখান থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারেন আগেই। ফোন- ৯৯০৩২৯৫৯২০/ ৮৯০২৪৯১৩৯৫/৯৪৭৭৬১৪৮৯
হেভেন ভ্যালি, ফোন- ৯৯৩৩৩৯০৯৩৭। বনলতা হোমস্টে- ৯৭৩৩১৯৫৪৬১, ৯৫৬৩১০৫৫৬০, সিলারিগাঁও রিট্রিট- ৯৪৩৪০১২২০০।
Leave a Comment