শিমুল বাগান যাওয়ার পথে...
টাঙ্গুয়ার হাওর (রাত্রি যাপন) – টেকেরঘাট – শিমুল বাগান – বারিক্কা টিলা – যাদুকাটা নদী – রাজাইছড়া – লাকমাছড়া – নীলাদ্রি লেক – হাছনরাজা মিউজিয়াম!
সর্বমোট ট্যুরের খরচ: ৳২৫৭৫ প্রতিজন
২১ জুন ২০১৮, রাত ১১:৩০ টায় আমরা পাঁচজন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে হানিফের বাসে করে সুনামগঞ্জ যাত্রা শুরু করি। ২২ তারিখ সকাল ৬:৩০ টার মধ্যে আমরা সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে যাই। এরপর সেখান থেকে লেগুনা করে পৌঁছে যাই তাহিরপুর বাজারে। ঘাট অর্থাৎ যেখান থেকে নৌকা ছাড়ে তা বাজারের একদম সাথেই। আমরা পাঁচজন একদিন এবং একরাতের জন্য একটি নৌকা ভাড়া করলাম। সেইসাথে মাঝি মামার সাথে দুপুর ও রাতের খাবার রান্নার জন্য চুলা ও তৈজসপত্র যোগাড়ের ডিল করে নিলাম। রান্না করবে মামারাই। এরপর আমাদের ব্যাগগুলা নৌকায় রেখে আমরা বাজারের একটি হোটেলে সকালের খাওয়া দাওয়া করলাম। খুব অল্প খরচে জাস্ট ৫০ টাকা খরচ করে কয়েকরকম ভর্তা, ডাল আর ডিমভাজি দিয়ে আমরা উদরপূর্তি করে ফেললাম।
এরপর দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার করে নৌকায় চলে এলাম। ৯:৩০ টার দিকে নৌকা হাওড়ের দিকে রওয়ানা হলো। ওয়াচ টাওয়ার ও হাওড়ের অন্যান্য জায়গা ঘুরে আমরা দুপুর ১:০০ টার দিকে ট্যাকেরঘাট পৌঁছালাম। এরপর নৌকা থেকে নেমে আমরা বাইক নিয়ে শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, যাদুকাটা নদী, রাজাইছড়া দেখার জন্য বেড়িয়ে পড়লাম। প্রায় আড়াইঘন্টার মধ্যে এগুলা দেখা কাভার হয়ে যাওয়ায় আমরা ৩:৩০ টার মধ্যে নৌকায় ফেরত এসে পড়লাম। এসে দেখি মাঝিমামাদের রান্নাবান্না করা শেষ। ঘুরেফিরে প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে ফিরে এসে মাঝি মামাদের সাথে নিয়ে দুপুরের খাবারটা সেরে ফেললাম।
এরপর অল্পখানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম নীলাদ্রি লেক ও লাকমাছড়া দেখার জন্য। দুটো স্পটই নৌকা থেকে পায়ে হাঁটা পথ।নীলাদ্রিতে যেতে নৌকা থেকে লাগে ৫ মিনিট আর লাকমাছড়ায় ২০ মিনিটের মত। মাঝি মামা বা লোকাল মানুষদের জিজ্ঞেস করলেই তারা সুন্দরকরে দেখিয়ে দিবে। এরপর আমরা সন্ধ্যা ৬:০০ টার মধ্যে লাকমাছড়া শেষ করে লাকমা বাজারে চলে আসি ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকার মধ্যকার খেলাটি উপভোগ করার জন্য। বাজারে সোলার পাওয়ারে চলা টিভিতে ১০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে এলাকার মানুষদের সাথে খেলা দেখার জন্য ঢুকে পড়লাম একটা ক্লাব ঘরে 😁 এরপর ব্রাজিলের জয় দেখে খুশি মনে ঘাটের দিকে আগালাম।
নৌকায় যাওয়ার আগে রাতের অন্ধকারে নীলাদ্রি লেকের পাড়ে বসে সবাই কিছুক্ষণ সুন্দর সময় কাটালাম। এরপর ৯:৩০ টার দিকে নৌকায় ফিরে এলাম। এসে ১০:৩০ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। রাতে থাকার জন্য নৌকা নোঙর করা হয়েছিল ঘাট থেকে অদূরে হাওড়ের মাঝখানে। রাতটা মনে রাখার মত অবশ্যই। নৌকার একদিকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে লাগানো নিয়ন আলো ও হাওড়ের পানিতে তার রিফ্লেকশন আর অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত হাওড়ের জলরাশি। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক অনুভূতি।
এরপর হাওড়ে রাত কাটিয়ে আমরা পরের দিন অর্থাৎ ২৩ তারিখ সকাল ৯:৩০ টার দিকে তাহিরপুর ঘাটে ফিরে আসি ও নৌকা ত্যাগ করি। তারপর আবারো আগেরদিনের মত আগের হোটেলেই সকালের খাওয়াদাওয়া সেরে নিই। এরপর তাহিরপুর থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে চলে আসি সুনামগঞ্জ হাছন রাজার বাড়িতে, যা এখন হাছনরাজা মিউজিয়াম। এরপর সেখান থেকে আমরা অটোতে করে চলে আসি সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে। এরপর বাসে করে সিলেট আসি। সিলেট এসে দুপুরের খাওয়া দাওয়া পার্সেল নিয়ে বিকাল ৩:০০ টার ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ধরে ঢাকা ফেরত আসি।
সবখরচের ক্ষেত্রে এখানে একজনের খরচটা দিয়ে দিলাম…
Leave a Comment