শ্রীমঙ্গল ভ্রমন

সেপ্টেম্বর মাস, ২০১৪ সাল। গত ২ মাস ধরে সিলেট-শ্রীমঙ্গল নিয়ে ব্যাপক গবেষনা করেছি। ৬-৭ জন মিলে যাব, এই করব সেই করব অনেক প্ল্যান ছিল। একে-ওকে জিজ্ঞেস করেছি কিভাবে কি করবো? শেষ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল ঘুরে এলাম। বিভিন্ন কারনে সিলেট যাওয়া হওয়া নাই, মেম্বারও কমে ৩ জনে দাড়িয়েছিল। কিন্তু ২ দিনের এই ট্যুরটা অনেক ভালো গিয়েছে। চেষ্টা করছি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে। হয়ত আমার মত নতুন কারো কাজে আসবে।

আমরা যাত্রা করি ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে। কমলাপুর স্টেশন থেকে পারাবাত ট্রেন ছাড়ে সকাল ৬.৪০ এ। শোভন চেয়ারের টিকেট ২৭৫ টাকা করে নিয়েছে। আর অনলাইনে কেটেছি বলে আরো ২০টাকা অতিরিক্ত। ট্রেন জার্নিটা চোখের জন্য খুবই আরামদায়ক। বিশেষ করে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া পার হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুধু সবুজ আর সবুজ। অনেক ভালো লাগার মত একটা জার্নি।

১১.৪৫ এর দিকে পৌঁছে গেলাম শ্রীমঙ্গল। ওখান থেকে দিনের বাকি অর্ধেক সময়ের জন্য সি এন জি রিজার্ভ নিয়ে নিলাম ৬০০ টাকায়। তবে নেগসিয়েশনে দক্ষ হলে ৪০০-৫০০ টাকায়ও রিজার্ভ করে ফেলা সম্ভব।

আমরা উঠেছিলাম নিসর্গ কটেজে। অসাধারন একটা জায়গা। প্রকৃতিকে সম্পূর্ন অটুট রেখে করা এই কটেজে থাকলে ছোটবেলার গ্রামের কথাই মনে হবে।কয়েক ধরনের কটেজ আছে। আমরা উঠেছিলাম ময়না কটেজে। ২৫০০ টাকা ১দিনের জন্য।

ময়না কটেজ, নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকোকটেজ।

যাক, এরপরে আমরা লাঞ্চ করি কুটুম বাড়ি। লাঞ্চের পরে যাই সতীশ বাবুর বন্য প্রাণী সেবা-শ্রমে। ১০টাকা করে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়। চিড়িয়াখানাটা ছোট হলেও ভাল লেগেছে। এর একটা কারণ আমার ওয়াইফের দেখা দেখি এখন আমিও পশু-পাখি অনেক পছন্দ করি। আর আরেকটা কারন হল প্রাণী গুলা অনেক বেশি রেসপন্সিভ। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে ওদের অনেক যত্ন করা হয় এবং বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

এরপর আমরা রাবার বাগান দেখে যাই মনিপুরি দোকানে। বিছানার চাদর, শাল, মাফলার, শাড়ি, কামিজ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ডিজাইন গুলা ভালই। দেখলে কিনতে ইচ্ছে করে। এরপরে যাই নীলকন্ঠের চায়ের দোকানে। অনেক অনেক শুনেছি ৭ লেয়ারের চায়ের কথা। অভিজ্ঞতা নিলাম শেষ পর্যন্ত। একেক জনের কাছে একেক রকম লাগে। আমাদের কাছে খুবই ভাল লেগেছে। আমরা পরদিন আবার খেয়েছি। চায়ের দোকানেই আমরা একটা বোর্ড দেখি – বার্ড পার্ক এন্ড ব্রিডিং সেন্টার। ঐ জায়গার কথা সি এন জি ওয়ালাও জানত না। ওখানে গেলাম। লন্ডন প্রবাসি এক লোক নিজ উদ্যোগে এই পার্ক স্থাপন করেছে। অনেক প্রজাতির পাখি ওখানে যা বড় চিড়িয়াখানাতেও থাকে না এবং যত্নের ছাপ স্পষ্ট।

শ্রীমঙ্গল বার্ড পার্ক, জালালিয়া রোড।

সবশেষে বিজিবি ক্যাম্পের ভেতরে একটা বধ্যভুমিতে ঘুরাঘুরি করে কটেজে ফিরে আসি ৬.৩০টায়। চারপাশে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাতে খাই শ্বশুরবাড়ি রেস্টুরেন্টে। ঠাট্টা না, এটার নাম আসলেই শ্বশুরবাড়ি। কুটুমবাড়ি নিয়ে অনেক ভাল ভাল রিভিউ থাকলেও শ্বশুরবাড়ির খাবারই আমাদের কাছে ভালো লেগেছে বেশি। ৩ জনের খাবার ৪০০-৫০০ এর মধ্যে হয়ে যায়। এখানকার একটা স্পেশাল আইটেম হল সাতকড়া দিয়ে মুরগি, মাটন আর বিফ। খুব মজা। যদিও বড় রেস্টুরেন্টে বিফ আইটেম করে না কোথাও। আরেকটা মজার আইটেম হল তাড়কা ডাল।

প্রথম দিন আমরা যেই জায়গাগুলোয় ঘুরি ঐগুলা বেশ কাছে কাছে। তাই ৩ ঘন্টার মধ্যেই আরাম করে দেখে ফেলেছি জায়গাগুলো। রাত্রে ঝিঝি পোকার ডাক শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি ১১টার মধ্যেই কারণ অপেক্ষা করছিল লম্বা একটা দিন।

প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাই এত বড় হয়ে গেল যে এখানেই থেমে গেলা। ২য় দিনের কথা পরে লেখব। চা-বাগানের কথা এই পোস্টে কোথাও লেখি নি কারন ডানে-বামে সবখানেই চা-বাগান, সবুজ আর সবুজ। আলাদা করে কি লেখবো আর?

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ sreemangaltravel story