শীতের ছুটিতে এবারের গন্তব্য কমলালেবুর গ্রাম সিটং

পদাতিক এক্সপ্রেস সাড়ে চার ঘণ্টা লেট, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, এর থেকে তাড়াতাড়ি বোধহয় আমি স্কুটার চালাতে পারি। সোয়া নয়টার ট্রেন পৌঁছলো দুপুর দেড়টায়। পেটে ছুঁচো নয়, হাতি দৌড়োচ্ছে। বেচারা বিধান আমাদের জন্য গাড়ি নিয়ে সেই সকাল আটটা থেকে দাঁড়িয়ে। চটপট রওনা হয়ে পড়লাম গন্তব্যের দিকে। মাঝে মহানন্দা পেরিয়ে হালকা করে মোমো খেয়ে এগিয়ে চললাম পাকদন্ডী বেয়ে সিটং (Sittong) এর দিকে।

কমলা লেবুর বাগান, সিটং

হালকা করে চোখ লেগে গেছিলো, ঝিমুনি ভাঙার পর দেখি চারিদিকে কমলালেবুর বাগান। যেমন রূপ, তেমন গন্ধ। শিলিগুড়ির পাথুরে গরম কমে গিয়ে বেশ ঠান্ডা। এরপর বেশ অনেকটা এগিয়ে পৌঁছে গেলাম রিশান কটেজ। কার্শিয়াং ব্লকের সিটং পরিচিত কমলালেবুর গ্রাম নামে, সবচেয়ে উপরে সিটঙ ওয়ান। সেই সিটঙ ওয়ানের ছবির মতো কটেজ রিশান। সাড়ে চারটের সময় পৌঁছে আর চান নয়, সোজা দৌড়লাম লাঞ্চ করতে। গরম গরম ডিমের ঝোল আর ভাত। মন আর পেট, দুটোই শান্ত হলো।

সিটং এ রিশান কটেজ
সিটং এ রিশান কটেজের রুম

ঠান্ডা আরো জাঁকিয়ে বসেছে এবার। মোটা টি শার্টের উপর থার্মাল, তার উপর সোয়েটার। কিন্তু কিছুই মানছে না। আর টয়লেট চাপা মানে তো শাস্তি। সন্ধেবেলা তেমন কিছু করার নেই, শুধু উল্টোদিকের পাহাড়ে জোনাকীর মতো জ্বলতে থাকা আলো ছাড়া। একটু তাড়াতাড়িই দিশি মুরগির ঝোল দিয়ে ডিনার সেরে ডবল কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুম।

সিটং থেকে কাঞ্চনজংঘা

ভোরবেলা পাঁচটার সময় বউয়ের ডাকে ধড়পড় করে উঠে বসলাম, ভাবলাম বোধহয় ডাকাত পড়েছে। ধাতস্থ হতে বুঝলাম, ওটা জানলা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের উত্তেজনা। প্রথম আলোতে সোনালী কাঞ্চনজঙ্ঘাকে যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যায় এখান থেকে। ভোর থেকে সকাল হতে হতে সে রূপও চেঞ্জ করে ক্ষণে ক্ষণে।

ব্রেকফাস্ট খেয়ে ঘুরতে বেরোলাম এদিক ওদিক। অহলদাড়া থেকে তিনশো ষাট ডিগ্রী ভিউ, লুপ্তপ্রায় সালামেন্ডরদের বাসস্থান ছবির মতো নামথিং লেক, দুশো বছরের পুরনো বৌদ্ধ গুমফা, চা বাগানে ঘেরা পাঁচ পোখড়ি, আপন মনে বয়ে চলা উচ্ছল রিয়াং নদী, কমলালেবুর বাগান তো আছেই। সাথে পাশে পাশে পথচলা কাঞ্চনজঙ্ঘা। সব ছবি থেকে যাবে স্মৃতির মণিকোঠায়।

Leave a Comment
Share