সীতাকুন্ড ভ্রমণ

গত কয়েক মাস সীতাকুন্ড ট্যুরের রিভিউ দেখে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে সীতাকুন্ড ট্যুর দিতেই হবে সেটা একা হলেও। তার আগে টিওবি হেল্প লাইনে একটা পোস্ট দিলাম যে অমুক তারিখে সীতাকুন্ড যাচ্ছি, কেউ কি যাচ্ছেন? এক ভাই যোগাযোগ করলো। তারা হচ্ছেন তিন জন। প্লান করে ফেললাম। ৩/৫/১৮ তারিখ রাতে রওনা দিয়ে ৫/৫/১৮ তারিখ রাতে আবার ব্যাক করলাম। প্রথম দিন বাঁশবাড়ীয়া, গুলিয়াখালি সীবিচ আর দ্বিতীয় দিন চন্দ্রনাথ পাহাড়,মহামায়া লেক ঘুরলাম। যারা বাসে যাওয়ার চিন্তা করছেন তারা একটু ভেবেচিন্তে যাবেন কারন ফেনীতে প্রচন্ড জ্যাম হচ্ছে। দুইজনের অফিস থাকায় আমরা বাসে করে গিয়েছিলাম। সায়দাবাদে নরমাল বাসে দামাদামি করে ২৫০ টাকা করে দিয়েছিলাম। ভালো বাস গুলার ভাড়া ৪৮০-৫২০ টাকা করে। মেইল ট্রেনে যেতে পারেন ভাড়া অনেক কম পড়বে। আন্তঃনগর ট্রেন সীতাকুন্ড থামে না। আপনাকে কষ্ট করে আবার চিটাগাং হতে সীতাকুন্ড আসতে হবে। তবে আমি বলবো ৭/৮ টার দিকেই বাসে করে চলে যান। ভালো ভাবে ঘুমাতে ঘুমাতে যেতে পারবেন। যাক, এবার স্থান গুলার ব্যাপারে আসি।

চন্দ্রনাথ পাহাড়

কয়েকদিন আগে এক ভাই এর পোস্ট দেখেছিলাম যে উনি চন্দ্রনাথ এ মেঘ পেয়েছেন। তখন হতেই আমি খুব করে চাচ্ছিলাম, আমিও যদি মেঘ পেতাম। এন্ড গেস হোয়াট আমি ঝড়, বর্ষা, মেঘ, রৌদ্র সবই পেয়েছি। ২য় দিন সকাল ৮টার সময় যখন পাহাড় এর নিচে আসলাম তখনই আকাশের অবস্থা থমথমে। দুই পাহাড়ের মাথায় বেশ মেঘ। ওই মেঘ দেখেই মনে হচ্ছিল দৌড় দিয়ে উঠে যাই। বাম পাশের রাস্তা দিয়ে উঠা শুরু করলাম। একটু উঠার পরেই শুরু হল বৃষ্টি সাথে বাতাস। মেঘের লোভে আমি এক ঘন্টার ভিতরে বীরুপাক্ষের উপরে পৌছিয়ে গেলাম। আর তখন শুরু হল তুমুল ঝড়। সে এক দেখার মতন দৃশ্য। বাতাস মনে হচ্ছিল উড়িয়ে নিয়ে যাবে। চারপাশে মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস! সে এক দৃশ্য! বৃষ্টি কমার পরে গেলাম চন্দ্রনাথ এ। সেখানেও মেঘ পেলাম কিছুক্ষণ। একটু পরেই পরিষ্কার হয়ে গেলো আকাশ। তখন দেখলাম চারপাশের ভিউ। অসাধারন দৃশ্য! কিছুক্ষন থেকে নেমে আসলাম। অবশ্যই বাম পাশ দিয়ে উঠবেন আর সিঁড়ি দিয়ে নামবেন আর লাঠি নিবেন। পানি কিন্তু নিবেনই। পার হেড এক লিটার করে পানি নিবেন। আর হালকা খাবার নিতে পারেন। আর অবশ্যই যত সকালে পারেন পাহাড়ে উঠা শুরু করবেন। কারন যত বেলা করবেন কষ্ট তত বেশী হবে। ভালো গ্রিপের, কমফোর্টেবল জুতা অথবা খালি পায়ে উঠবেন।

খরচ

সীতাকুন্ড – চন্দ্রনাথ পাহাড় – ১৫/- (অটো/সিএনজি)
লাঠি ভাড়া – ২০টাকা (ফেরত দিলে ১০টাকা ব্যাক করবে)

বাঁশবাড়িয়া বীচ

অনেকেই ভাটার সময় বাঁশবাড়িয়া বীচ যেয়ে থাকেন যখন পানি থাকে না লোহার জেটিতে (কি আর বলবো, তাই জেটি বললাম) আমরাও যেয়ে পানি পাই নাই। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করলাম। ৪০মিনিট পর রেলিং এ উঠলাম। উঠার মিনিট ২০পরেই জোয়ার শুরু হল। মোটামুটি সাইজের ঢেউ গুলা যখন রেলিং এর উপরে আপনার পায়ের উপরে এসে আছড়ে পড়বে আপনার ভালো লাগবেই। এই ভাবে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম জেটির শেষ মাথায়। তবে পানি খুব দ্রুত বাড়ে তাই মাঝের দিকে চলে আসলাম। ওই খানেও বেশ মজা পাবেন। পা ঝুলিয়ে বসেও থাকতে পারেন। তবে অবশ্যই স্যান্ডেল পরে ওই লোহার জেটিতে উঠবেন। নাহলে নিশ্চিত ভাবে পা কাটবেন, আর স্যান্ডেল ছাড়া হাঁটতে খুবই কষ্ট হবে। আর পুরা জেটি যখন পানির নিচে থাকে তখন এক দম মাঝ বরাবর হাঁটবেন। তাল হারিয়ে পাশে পড়ে গেলে সাঁতার না জানা থাকলে ভালো বিপদেই পড়তে পারেন। আর পানি বেড়ে গেলে বেশিদূরে না যাওয়াই ভালো। এটা শেষ করে কুমিরা ঘাট ঘুরে আসতে পারেন (আমি যাইনি)।

খরচ

সীতাকুন্ড – বাঁশবাড়ীয়া বাজার – লোকাল বাসে ১০/-, লেগুনা/পিচ্চি বাসে – ১৫/-
বাঁশবাড়ীয়া বাজার – বীচ – ২০/-
জেটি তে উঠার টিকিট – ২০/-

গুলিয়াখালী বিচ

গুলিয়াখালী বিচ সুন্দর যায়গা। এই খানে যাবেন দুপুরের পরে, যেন বিকাল টা আপনি এই খানে থাকতে পারেন। বসে থাকবেন, বিচে পা ভেজাবেন, গোসল করবেন, কার্পেটের মতন ঘাসে বসে ছবি তুলবেন(ঘাসগুলা কিন্তু বেশ ধারালো। বসলে পিছন দিকে ভালোই ফুটে খালি পায়ে হাঁটলেও বেশ পায়ে ফুটে)। আর যদি একটু সাহসী হন তবে নৌকায় করে ঘুরবেন। ৩০-৫০ টাকা করে নিবে, ১৫মিনিট মতন ঘুরাবে সাগরে আর পাশের ম্যানগ্রোভ বনে। ভাই মজা পাবেন, কথা দিচ্ছি। একটা ঢেউ এসে যখন নৌকায় ধাক্কা দেয় নৌকার মাথা টা বেশ উঁচু হয়ে শূন্য হতে সাগরে পড়ার সময় বুকের মাঝে ছলাত করে উঠে। যারা হালকা সাঁতার পারেন বা মোটেও পারেন না তারা এটা ভুলেও ট্রাই করতে যাবেন না। কারন এরা কোন লাইফ জ্যাকেট দিবে না। তাই রিস্ক নিতে যাবেন না। তারচেয়ে ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখবেন। সেটাও ভালো লাগবে।

খরচ

সীতাকুন্ড – গুলিয়াখালী – ৩০/- সিএনজি

গুলিয়াখালি সি বিচ

মহামায়া লেক

মহামায়াতে গিয়ে মায়ায় পড়ে গেলাম। লেকের মাঝে অনেক টিলা, লেকে ঝর্নার ঠান্ডা পানি, মাছ ধরা (টিকিট কেটে আপনিও মারতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক জিনিসপাতি থাকতে হবে), কায়াকিং আর শেষে গোসল করা। কায়াকিং এর সিরিয়াল দিয়ে যদি সাথে সাথে কায়াক না পান তখন লেক এর আশেপাশে ঘুরে বেড়াবেন।

বাম পাশে টিলার উপরে ওদের যে ঘর টা করা কোন রকমে ওটার ছাদে উঠবেন। কিছু বলবে না। আমরা শুনেই উঠেছিলাম। পুরা লেকের দারুন একটা ভিউ পাবেন ওই ছাদ হতে। আর সম্ভব হলে দুই ঘন্টা কায়াকিং করবেন। কষ্ট হবে তবুও চেষ্টা করবেন। মাঝে মাঝে কায়াকিং থামিয়ে লেকের মাঝে কায়াকের উপরে বসে থাকবেন। দেখবেন কেমন লাগে। লেকের ছোট ছোট ঢেউ গুলা কায়াকের গায়ে বাড়ি দেয় আর সাথে বাতাস…….মনের ভিতরে একটা প্রশান্তি এনে দিবে। যদি গোসল করেন যথারীতি বেশি দূরে যাবেন না। লেকটা বেশ গভীর।

খরচ

সীতাকুন্ড – ছোট দারোগা – ৩০/৩৫ – বাস/লেগুনা ছোট দারোগা – মহামায়া লেক – ১৫ – সিএনজি মহামায়া তে ঢোকার টিকিট – ২০ কায়াকিং প্রতি ঘন্টা – ৩০০ (দুই জনে প্রতি জনের ভাগে ১৫০ করে পড়বে। আর স্টুডেন্ট আইডি দেখালে ২০০ টাকা। দুই জনে প্রতি জনের ভাগে আসবে ১০০ টাকা)। মহামায়াতে যাওয়ার সময় চেষ্টা করবেন জোড় সংখ্যা তে যাওয়ার। কারন কায়াকিং এ জোড়া হলে আপনার সুবিধা হবে।

ময়ামায়া লেক

আর মহামায়াই যদি আপনার ট্যুরের শেষ স্টপেজ হয় তাহলে মহামায়া হতে ৩০ টাকা করে বাসে ফেনি চলে যাবেন। ফেনি হতে ঢাকার অনেক বাস পাবেন।

সীতাকুন্ডে ৩/৪ টি হোটেল আছে। রুমভেদে ৪০০-৮০০ টাকা পড়বে।

উপরে সব খরচ গুলা এক জন হিসাবে দেয়া।

এই স্থান গুলা আমাদের। পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের। তাই কেউ কোন প্রকারের ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। আর একটা ব্যাপার আমরা যখন চন্দ্রনাথ এ উঠেছিলাম তখন কিছুক্ষন পরে একজন ফরেনার আসলো। উনি বসে আছেন। এই সময়ে আমার দেশী এক ভাই মোবাইলে সর্ব্বোচ্চ সাউন্ড দিয়ে ডেসপাসিত ছেড়ে দিল! গান শুনেন হেডফোনে শুনেন। অন্যদের শোনানোর কোন দরকার নাই। সবাই সচেতন থাকি এইসব ব্যাপারে।

হ্যাপী ট্রাভেলিং!

Leave a Comment
Share