সী পার্ল ওয়াটার পার্ক, কক্সবাজারে ভিন্ন স্বাদ

কর্পোরেট লাইফের একঘেয়েমী দূর ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। স্বাভাবিক জীবনের বাইরে নিজের মত করে কিছু সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে। সী পার্ল ওয়াটার পার্ক (Sea pearl water park) পরিবার ও বন্ধু নিয়ে ঘুরে আসার মত সুন্দর একটা স্থান। এটি বাংলাদেশের পর্যটননগরী কক্সবাজারের (Cox’s Bazar) প্রথম ওয়াটার পার্ক। ইনানীর রয়্যাল টিউলিপ রিসোর্ট সংলগ্ন মনোরম পরিবেশে এই ওয়াটার পার্কটি ৯ একর জায়গা নিয়ে তৈরি।

আবহাওয়ার বিরুপ অবস্থানের জন্য সেইন্ট মার্টিন যেতে না পারায় ভিন্নতার খোজে আমাদের এবারের গন্তব্য সী পার্ল ওয়াটার পার্ক।  বন্ধু ইমরুলের পরামর্শে আবদুল আজিজ, ইউছুপ আর ফয়সাল সহ সকালে রওনা দেয় গন্তব্যে। আমরা কক্সবাজার এ সুগন্ধা পয়েন্ট এ থাকায় ১১ টার শাটল বাস এ সকালের নাস্তা সেরে রওনা হই। একপাশে পাহাড় আর অন্য পাশে বিশাল সমুদ্রের সৈকত। শান্ত নিলাভ পানির বিস্তির্ণ সৈকত যেকোন প্রকৃতি প্রেমীর মন মুহুর্তেই ভালো করে দিতে পারে। রাস্তার পাশে স্থানীয়দের ডাব, পেয়ারা সহ বিভিন্ন ফলমুলের ভ্রাম্যমাণ দোকান। সব মিলিয়ে আমাদের শাটল এগিয়ে চলছে।

হিমছড়ি, ইনানি পেরিয়ে প্রায় ১২ টার দিকে আমাদের শাটল বাস পৈছে যায় পার্কের গেট এ। রাস্তার একপাশে বিশাল সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে মনোমুগ্ধকর ওয়াটার পার্ক। বাইরে থেকে দেখেই মন আনন্দে ভরে উঠে। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পরে অনিন্দ্যসুন্দর ওয়াটার পার্কের সৈন্দর্য। ড্রেস চেঞ্জ করে লকারে সব রেখে নেমে পড়ি আনন্দে। এই বিশাল এই পার্কে আছে হরেক রকমের রাইডস, তার আবার নানান রকম নাম এবং একেক রাইডের একেক রকম মজা। আছে উইন্ড স্টর্ম, মাল্টি ল্যান্ড, কামি কাযি বা বডি স্লাইড। সুড়ুত করে জলের মধ্যে ভিজতে ভিজতে গড়িয়ে পড়ার মজা। এখানে হাসাহাসি, চেঁচামেচি আর শিশুসুলভ আনন্দে মেতে উঠি।

আরও আছে অ্যাকুয়া লুপ, ফ্লোট স্লাইড, থান্ডার বোউল নামের রাইডস। ৬-৭-৮ তলা উপর থেকে বিভিন্ন রাইডে নিচে গড়িয়ে পড়া। কিছু ভয় কাজ করলেও সময়গুলো খুবই উপভোগ্য ছিল। বাচ্চাদের বিশেষ পছন্দ ফান পুল এবং রেইন ড্যান্স। রেইন ড্যান্সে পানির ফোয়ারাগুলো এমনভাবে ভেজাবে এবং চারপাশে জলের নৃত্য করবে যে মনে হবে রংধনু দেখছি। উল্লেখ্য রেইন ড্যান্স বিরতি দিয়ে দিয়ে চালু করা হয়। বাকি সব রাইড সবসময় চলে এবং ইচ্ছামত এঞ্জয় করা যায়। অন্যান্য ওয়াটার পার্ক এ রাইড লিমিট বা টিকিট এর প্রয়োজন হলেও এখানে তা নেই। পর্যটক ইচ্ছামত যতবার খুশি রাইড দিতে পারেন।  ফান পুলে পরিবারসহ আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগও থাকছে অবারিত।

ইনানীর রয়্যাল টিউলিপ রিসোর্ট-সংলগ্ন এই ওয়াটার পার্কে আছে হরেক রকমের রাইডস। সব বয়সের মানুষ, বাচ্চা থেকে তরুণ বা যুবক, ছেলে বা মেয়ে, পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করা যাবে এ পার্কে।

সচরাচর অন্যান্য ওয়াটার পার্ক এ রাইড এর জন্য পেমেন্ট প্রয়োজন হলেও এখানে টিকিটের সাথে সব রাইড আনলিমিটেড ফ্রি তে উপভোগ করা যায়। আছে খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা। খাবারের মান ও খুবই ভালো। সবচেয়ে ভালো বিষয় ছিল ভিতরে সবার ব্যাবহার, পূর্ণ নিরাপত্তা ও শান্ত মনোরম পরিবেশ।দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতার সাথে বিনয়ী ব্যাবহার সময়গুলো কে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছিল। আমার দেখা সব ওয়াটার পার্ক এর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। সাগরপাড়ে ভিন্ন স্বাদে আনন্দ দিতে এই পার্কের জুড়ি নেই।

প্রবেশ সময়

সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সী পার্ল ওয়াটার পার্ক খোলা থাকে। এক টিকিটে সারাদিন আনলিমিটেড মজা করা যায়।

কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশের যেকোন জেলা হতে কক্সবাজার আসলে সেখান থেকে ওয়াটার পার্ক এর শাটল বাস আছে। একজন ৩০ টাকা করে। কক্সবাজার এর বিভিন্ন স্পট থেকে নিদৃষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়। শাটল বাস এর শিডিউল জানতে কল করতে পারেন- ০১৮৪৪-০১৬০৭০।

খাওয়া দাওয়া

ওয়াটার পার্ক এর ভিতরে রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে। খাবারের মান খুবই ভালো। এছাড়াও রয়েল টিউলিপ এ  হেটে আসলে কিছু দোকান আছে। ডাব, পেয়ারা ও কলা সহ স্থানীয় ফলমুল খেতে পারেন।

খরচ

  • কক্সবাজার থেকে শাটল বাসে আসা-যাওয়া ৩০+৩০=৬০ টাকা
  • প্রবেশ মুল্যঃ ৫৫০ (সব রাইড আনলিমিটেড)
  • লকার নিতে চাইলে একটি ১৫০ টাকা

সাবধানতা

  • অবশ্যই শালীনতা বজায় রেখে আনন্দ করবেন।
  • যত্রতত্র ময়লা ফেলে সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।
  • পর্যটক বেশি থাকলে লাইন ধরে সময় দিন। আশা করি কেউ নিরাশ হবেন না।
Leave a Comment
Share