জোঁকের কামড়ের অভিজ্ঞতা সেই ২০০৯ সালে শুরু, দার্জিলিং সফরে লোলেগাঁও এর গহীন জঙ্গলে প্রথমবার একটি জোঁকে ধরেছিল। সেইবার রক্তপাত বন্ধের কোন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার সুযোগ হয়নি। তারপর জুন ২০১৫ তে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় দুটি জোঁকে ধরেছিল, এবারও প্রাথিমক চিকিৎসার প্রস্তুতি না থাকায়, সবুজ দূর্বাঘাস চিবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রক্তপাত থামাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
জুলাই ২০১৫ তে বান্দরবন ভ্রমনে, টানা ছয়দিন বৃষ্টিপাতের দরূন আমরা বৈরিপরিবেশ মোকাবেলায় বাধ্য হই, সেই আর্দ্র পরিবেশ ছিল জোঁকের জন্য অাদর্শ। আমার ১৫ জনের দলে অধিকাংশের ব্যাপক প্রস্তুতি স্বতেও জোঁক প্রতিরোধে কেউ-ই সম্পূর্ণ সফল হতে পারিনি। আমাদের মাঝে দুজন স্থানীয় বাসিন্দাও ক্রমাগত পরাস্ত হয়েছিল। আমি প্রথম তিনদিনেই ১২টি জোঁকের কামড়ে অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে, বাড়ি ফিরেই প্রথম কাজ হবে জোঁক প্রতিরোধের বিষয়ে তথ্য খুজেঁ নিজেকে গড়ে তােলা এবং সকলের মাঝে তা বিলিয়ে দেয়া।
১. প্রথমেই সহজে বহনযোগ্য ছুরি বা আর্মি নাইফ এবং টর্চ লাইট (রাতের ভ্রমন হলে) সংগ্রহ করুন। খেলাধূলার সামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্র থেকে থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজার, ফুটবলারদের লম্বা মোজা (হাটুঁ পর্যন্ত), এন্কলেট এবং নিক্যাপ সংগ্রহ করুন। পরিমানটা নির্ভর করবে কতোদিনের জন্য জোঁক উপদ্রুত অঞ্চলে থাকছেন তার উপর । প্রথমে থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজারটা পরিধান করুন, তারপর লম্বা মোজা পরিধান করে ট্রাউজারের নিম্মাংশ মোজার ভেতরে ভালোভাবে ঘুঁজে দিন। অতঃপর নিক্যাপটি এমনভাবে পরিধান করুন যাতে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে নিক্যাপটি দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়। যদি নিক্যাপের চাপে হাটুতে অস্বস্তি লাগে তবে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলটিকে হাটুর নিচে নামিয়ে তার উপর নিক্যাপ পড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে নিক্যাপটি যেন মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়, নয়তো জোঁক মোজা বেয়ে উঠে মোজা ও ট্রাউজারের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এবার এন্কলেটটি পড়ে ফেলুন। মনে রাখবেন উল্লেখিত ব্যবস্থায়, জোঁকের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ সম্পূর্ন নিশ্চিত করে না। তবে জোঁক মোজা বেয়ে যথেষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে চামড়ায় স্বান্নিধ্যে এসে কামড় বসাতে যে সময় লাগবে, তাতে আপনার সর্তক দৃষ্টি জোকঁ খুজে বের করে নিবৃত্ত করার পর্যাপ্ত সময় পাবে।
আমাদের বান্দরবন সফরে যারা উল্লেখিত ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং যারা নেননি, তাদের দুই শ্রেণীকেই প্রায় সমান সংখ্যক বার জোঁকের অাক্রমনের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে যারা প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি গ্রহন করে সর্তক ছিলেন, তারা প্রায় ৮৫% ভাগ ক্ষেত্রেই জোঁক নিবৃত্ত করতে সক্ষম হন। জোঁক নিবৃত্ত করতে ছুরি দিয়ে ছেঁচে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলুন। মানবদেহের পা থেকে মাথা র্পযন্ত যেকোন স্থানে বিশেষ করে যে সকল অংশ তুলনামূলকভাবে উষ্মতম সেখানেই জোঁকের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।
২. জোঁক সাধারণত নদী, পুকুর বা জলস্রোতের আশেপাশে পাশে অার্দ্র ও ছায়াময় স্থানে থাকতে পছন্দ করে। বর্ষাকালে জোঁকের উপদ্রব অত্যাধিক হয়ে থাকে। জোঁক শুধু মাটি ছাড়াও গাছে, গাছের ডালে বা পাতায় থাকতে পারে। তাই জোঁকের উপদ্রবের খ্যাতি আছে এমন স্থান এড়িয়ে চলুন, তা সম্ভব না হলে স্থানটি অতিদ্রুত সর্তকতার সাথ অতিক্রম করুন এবং নিরাপদ স্থানে ফিরে ভালো করে শরীর এবং কাপড় নিরিক্ষা করে দেখুন জোঁক আছে কিনা। বান্দরবন ভ্রমনে এমনো দেখেছি যে, রাতে বারান্দায় মেলে দেয়া কাপড় থেকে জোঁক নেমে দরজার নিজ দিয়ে এসে আমাদের শোবার স্থানে চলে এসেছে। তাই কাপড় পাল্টাবার সময় সর্তকতার সাথে নিরীক্ষা করে ঘরে প্রবেশ করুন।
৩. জোঁক হাতে ধরে ছুড়ে ফেলার সময় সাবধান, অনেক সময় তা হাতেই লেগে থাকতে পারে। তাই ছুরি দিয়ে ছেঁচে ফেলে এর মৃত্যু নিশ্চিত করুন, নয়তো তা আপনাকে বা আপনার পেছনের সহযাত্রিকে পুনরায় আক্রমন করতে পারে।
৪. কামড়ে ধরা জোঁক থেকে তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তি পেতে ছুরির বিকল্প হিসাবে তামাক পাতার গুড়া, ডেটল বা লবন ব্যবহার করা যেতে পারে। জরুরী পরিস্থিতিতে সিগারেটের লাইটারের আগুন বা সিগারেটের আগুন দিয়ে কামড়ে ধরা জোঁক থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
Leave a Comment