এ যাবৎকালে পৃথিবীর কোন কিছু দেখে বিস্মিত হয়েছি কিনা, মনে পড়ছে না। কেননা বিস্ময় ব্যাপারটা আমার মাঝে কেন যেন খুব একটা কাজ করেনা। কিন্তু তারপরেও আমার মতো বিস্ময়হীন একজন মানুষও বিস্মিত হয়েছে এবং মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েও থেকেছে এই নায়াগ্রা বা নায়াগারা জলপ্রপাতের দিকে। পাঠক হয়তো ভাবছেন, একটু বাড়িয়েই বলছি আমি। মোটেও তা নয়। ব্যাপারটা তাহলে বিস্তারিতই বলতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছি যাবো যাবো। কিন্তু সময়াভাবে যাওয়া আর হচ্ছিল না। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু এই আমাকে তো ধরে বেঁধে রাখা যাবেনা। তাই অনেকটা জোর করেই সময়টা ম্যানেজ করে ফেললাম এবং গেল ২০ তারিখ রোজ মঙ্গলবার শুভদিনের খুব সকাল বেলায় রওনা হয়ে গেলাম নায়াগ্রা ফলসের উদ্দেশ্যে।
গাড়ির জি.পি.এস-এ নায়াগ্রা অন দ্যা লেক কথাটা লিখে যখন রওনা দিলাম, বুঝতেও পারিনি যে ভুল করে প্রথমে চলে যাবো নায়াগ্রা ফলস্ নয়, বরং নায়াগ্রা অন দ্যা লেক নামক ছোট্ট ছিমছাম শহরটিতে। দোষটা কিন্তু আমার ছিলনা একেবারেই। বন্ধু সুজানার বুদ্ধিতেই জি.পি.এস-এ ভুল ঠিকানা টাইপ করতে হয়েছিল। অবশ্য ওর কল্যাণেই কানাডার নয়নাভিরাম গ্রাম আর ওয়াইনের ক্ষেত দেখতে দেখতে যাওয়া হলো।
ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় যখন ১১.৩০, আমরা পৌঁছে গেলাম নায়াগ্রা ফলস্-এর পার্কিং লট-এ। গ্রেটার টরন্টোর মিসিসাগা শহর থেকে মাত্র সোয়া-একঘন্টার পথ। পনের ডলার পার্কিং দিতে দিতে সুজানা বললো, ছুটির দিনে এখানে আসলে প্রথমত: পার্কিং-এর জায়গা পাওয়া যায়না আর ওইদিন ২০ ডলার পার্কিং ফি।
গাড়ি থেকে নামতেই নায়াগ্রা ফলস্-এর পানির ঝাপটা আমাদের স্বাগতম জানালো। ফলসের পানি বাতাসের তীব্রতায় উড়ে এসে প্রায় ভিজিয়ে দিলো আমাদের। ক্যামেরাটা কোনমতে বাঁচিয়ে ঢুকে পড়লাম ওয়েলকাম সেন্টারের ভেতরে।
ক্ষুধার জ্বালায় পেট চোঁ চোঁ করছে। চারিদিকে খাবারের দোকান। কিন্তু আগুন দাম। অবশেষে টিম-হরটনস-এর কফি-বার্গার-বেগল আর মাফিন-ই ভরসা। পেট ভরে খাবার পর তাকিয়ে দেখি বাতাসের তীব্রতা কিছুটা কমেছে, রোদ-ও বেড়ে গিয়েছে। অতএব ছবি তোলার এখনই উপযুক্ত সময়। ওয়েলকাম সেন্টারের গেট থেকে বের হয়েই দেখি সামনে দাঁড়িয়ে গর্জে উঠছে পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত নায়াগ্রা ফলস, যার বিশালতায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমরা।
শুরুর দিকে পানির ঝাপটায় মূল ফলসের কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছিলোনা। তাই দূর থেকেই ক্যামেরা তাক করেছিলাম। আসার সময় ভুল করে ছাতা বা রেইন কোট না নিয়ে আসার কারণে ফলসের পানির ঝাপটায় ছবি তোলাটাই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। পরে অবশ্য ২ ডলার দিয়ে রেইনকোট কিনতেই হলো।
নায়াগ্রা ফলসের ভদ্রলোক ‘সীগাল পাখি’। মজার ব্যাপার হলো, এরা মানুষকে ভয় পায়না। বরং ক্যামেরা তাক করার সাথেসাথেই বেশ একটা আয়েশি পোজ দিয়ে দিলো ব্যাটা!
নায়াগারা ফলসের অন্যতম আকর্ষণ হলো জাহাজে করে ফলসের কাছাকাছি ঘুরতে যাওয়া। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন।
পড়ন্ত বিকেলে নায়াগারা’র মায়া কাটিয়ে ফিরে চললাম ব্যস্ত শহরের উদ্দেশ্যে।
Leave a Comment