নেপাল ভ্রমনের উপাখ্যান

নেপাল ভ্রমনের দিনগুলো শেষ হয়েছে অনেক আগে কিন্তু ভ্রমণ স্মৃতিগুলো এখনো অমলিন। নেপালে বাই এয়ার অথবা বাই রোডেও যাওয়া যায়। সময় সল্পতা আর বাস জার্নিতে যাদের আপত্তি নেই তারা বাসে যেতে পারেন। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে নেপাল ঘুরতে যাওয়ার পেছনের গল্প অনেক থাকে। যেটাকে আমি বলি “যার যার বুঝ, তরমুজ”। আমাদের যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল কিছু উল্লেখ্যযোগ্য স্থানে যাওয়া এবং সাধ্যের মধ্যে এক্টিভিটিগুলা (রাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং, বাঞ্জি) উপভোগ করা। তাই যাদের এইসবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই তাদের এই লেখাটি না পড়তে উৎসাহী করা হলো।

হিমালয়ের রেঞ্জগুলো

আমাদের রুট প্ল্যানটা আগে শেয়ার করে নেই – ঢাকা > কাঠমুন্ডু > থামেল > পোখারা > থামেল > লাস্ট রিসোর্ট > নাগারকোট > থামেল, কাঠমুন্ডু > ঢাকা।

তবে শুরু করা যাক ভ্রমনের দিনগুলোর গল্প। যেহেতু বিমানে গিয়েছি তাই বিমানবন্দর থেকেই শুরু করা যাক।

কাঠমুন্ডু বিমানবন্দর ছোট কিন্তু সবকিছু বেশ গোছানো। সার্ক ভুক্ত দেশের জন্য ভিসা এক বছরে একবার ফ্রি। ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৫ দিন(ফ্রিতে) বছরে একাধিক বার গেলে ভিসা ফি দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পনের দিনের কম মেয়াদে পঁচিশ ডলার আর এর বেশি হলে চল্লিশ ডলার পে করতে হবে। ভিসা কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় একঘন্টার মতো লাগে। তবে অনলাইনে সব পূরণ করে গেলে তাড়াতাড়ি হয়। বিমানবন্দরে কিছু ডলার এক্সচেঞ্জ করে নেওয়া ভালো। বিমানবন্দরের বাহিরের গেইটের কাছেই সিম কিনতে পারবেন।
সিম কিনে টেক্সি নিয়ে চলে যান থামেলে। ভাড়া ৩০০-৪০০রূপি।

সূর্যোদয়ের অপার্থিব মুহূর্তটা

হোটেল আগে থেকে বুক না করে গেলেও চলে। থামেলে প্রচুর হোটেল আছে। ৮০০-১৫০০ রূপিতে মাঝারি মানের হোটেল পাওয়া যায়। থামেলে হালাল খাওয়ার দোকান খুব কম এবং খাওয়ার দামও অনেক বেশি। থামেলে ” আল মদিনা ” নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে।এটা হালাল ফুডের জন্য বিখ্যাত, এছাড়াও আছে থার্ড আই নামের একটি রেস্টুরেন্ট।  থামেল পর্যটকদের জন্য সম্পুর্ণ উন্মুক্ত (যে যেভাবে এই কথার মর্ম বুঝেন)। যাইহোক প্রথমরাত থামেলে এ থেকে পরদিন সকালে পোখারা এর উদ্দেশ্যে রওনা। প্রায় ৭-৯ ঘন্টার জার্নি। বাস/টেক্সিতে করে পোখারা যাওয়া যায়। আমার মতে বাসে যাওয়াই উত্তম। এতে অনেক কম খরচ হয় (বাস-৮০০-১০০০ রুপি, টেক্সি ৮০০০-১৫০০০)।

ফেওয়া লেক, পোখরা

আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন তাদের উৎসবের জন্য বাস বন্ধ ছিলো। ছোট্ট একটি টেক্সি দিয়ে গিয়েছিলাম। পোখারায় হোটেল ভাড়া একটু বেশি এবং সব কিছুর সাথে ১০% কর। তারপরও ১২০০-১৫০০ রূপিতে ভালো হোটেল পাওয়া যায়।

পোখারায় পৌছে রাফটিং (২৭০০-৫০০০রুপি) এবং প্যরাগ্লাইডিং (৫০০০-৮০০০রুপি) এর বুকিং করে ফেলবেন। আর সকালে সূর্য উদয় দেখতে চাইলে রাতেই সারানকোট যাওয়ার জন্য টেক্সি ভাড়া (১২০০-১৫০০) করে রাখা আবশ্যক। একদিন রাফটিং, একদিন প্যরাগ্লাইডিং এর জন্য বরাদ্দ রাখবেন আর একদিন পোখারায় সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন।

বাঞ্জি জাম্প, লাস্ট রিসোর্ট

পোখারা থেকে কাঠমুন্ডু রাতের বাসে রওনা হলেই ভালো। সকালে পৌছে যাবেন থামেল। যে কোনও হোটেলে উঠে একটু বিশ্রাম নিয়ে বাঞ্জির বুকিং এর জন্য The Last Resort এর বুকিং অফিসে চলে যান। বুকিংটা আগেও করে নিতে পারেন (প্রথম রাতে)। শুধু বাঞ্জি ৯০০০ রুপি, বাঞ্জি+ ক্যানেইন সুইং ১১২০০ রুপি এর পরেও কেউ ৩য় বার বাঞ্জি/সুইং দিতে চাইলে ৩৫০০ রুপি এবং একটি ফ্রি বাঞ্জি/সুইং 👏 । সাথে থাকছে বাফেট লাঞ্চ। আর বাঞ্জিতে ভিডিও খরচ আলাদা দিতে হয়। কেউ চাইলে একরাত লাস্ট রিসোর্টে থেকে যেতে পারেন। ফিরতি পথে নাগোরকোট এর নিকটস্থ স্থানে নেমে যান যদি কেউ এভারেস্ট এর অল্প-সল্প ভিউ দেখতে চান। নাগোরকোট জায়গাটি পারসোনালি আমাদের কাছে অনেক সুন্দর লেগেছে।

যাই হোক ভ্রমন হোক আনন্দঘন এবং স্মরনীয়।

Leave a Comment
Share