১ দিনে ময়মনসিংহ ভ্রমন

ময়মনসিংহে (Mymensingh) আসলে দর্শনীয় জায়গার অভাব নেই। কিন্তু আমাদের প্ল্যান একদিনের তাই বেছে বেছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা সুন্দর জায়গা গুলোকে টার্গেট করেই বেরিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি নিয়ে রওনা দেই আমাদের ফার্ম হাউজের উদ্দেশ্যে। ভালুকা। উত্তরা থেকেই জ্যাম শুরু হয়। ৩ ঘণ্টায় টঙ্গি পৌছাই। এরপর রুট চেঞ্জ করে, স্টেশন রোড দিয়ে ভিতর দিয়ে একেবারে গাজীপুর দিয়ে বের হই। ভালুকা পৌছাতে পৌছাতে ভোর ৬ টা। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরি।

১১ টার দিকে রওনা হই ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে, ১ ঘণ্টার মধ্যেই পৌছাই হাসান মঞ্জিলে। শোনা যায়, হাসান মঞ্জিল ময়মনসিংহের সর্বপ্রথম মুসলিমদের ভবন। আবার এটা ধনবাড়ির জমিদারদের সুদৃশ্য ভবন বলেও জানা যায়। হাসান মঞ্জিল এখন খুবই পুরনো জরাজীর্ণ একটি ভবন। অযত্নে অবহেলায় আগের রূপ হারিয়েছে। খুব খারাপ লাগল যে ঐতিহাসিক একটি স্থাপনার এই বেহাল দশা। এটি বর্তমানে ময়মনসিংহ ডায়বেটিস সমিতির অফিস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। কয়েকবার ঢুকতে চেয়েও পারলাম না। তাই যতটুক পেরেছি ভিডিও করেছি। ভ্লগে হয়ত দেখতে পাবেন। কি অবস্থা এখানের।

হাসান মঞ্জিল

হাসান মঞ্জিল থেকে আসলাম শশী লজে। এটার অবস্থা কিছুটা ভালো। রক্ষানাবেক্ষন করা হচ্ছে। প্রায় ৯ একরের উপর তৈরি করা এই ভবনটা। ভিতরে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিতরে আছে মুক্তাগাছা জমিদার দের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস, আসবাব এবং হাতিয়ার। ভিডিওতে জমিদার বাড়ির বাহিরের অংশ দেখালেও ভিতরে ক্যামেরা ব্যবহার নিষেধ। বাহিরের পরিবেশটা বেশ ভালো। আমরা বৃষ্টির মধ্যে এসেছি তাই ভিডিও করতে একটু কষ্ট হলেও খারাপ লাগছিলো না।

শশী লজ

এবার আমরা এসেছি আলেকজান্ডার ক্যাসেলে। ঐতিহাসিক ভাবে এর গুরুত্ব অনেক। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে, দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন, লর্ড মিন্টো বিভিন্ন গুণী মানুষ এখানে অবস্থান করেছেন। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ময়মনসিংহ শহরের জুবলী উৎসব পালনের জন্য তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ড-পত্নী সম্রাঞ্জী আলেকজান্দ্রার নামে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন। অন্য মতে, ময়মনসিংহের তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর আলেকজান্ডার আই, সি, এস, -এর নামে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এটি মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাগানবাড়ি হিসেবে খ্যাত। বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (পুরুষ)-এর লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

আলেকজান্ডার ক্যাসেল থেকে আমরা যাই, মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে। এখানে এসে আমরা সত্যিই হতাশ। প্রায় ১০০ একর জমি নিয়ে তৈরি এই জমিদার বাড়িটি কিন্তু কোন রক্ষানাবেক্ষন নেই। জমিদার বাড়ি না বলে ধ্বংসাবশেষ বলাই চলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুরাতন ক্যাসল বা রাজ বাড়িগুলো কে কত সুন্দর রিজার্ভ করে রাখে। কোন কোন দেশ সে গুলোকে হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করে, যাতে করে দর্শনার্থীরাও এসে সে সময়ের রাজা, মহারাজাদের সম্পর্কে তাদের লাইফ স্টাইল সম্পর্কে জানতে পারেন। আমাদের দেশে এই অমূল্য সম্পদ গুলোকে অযত্নে, অবহেলায় নষ্ট হয়ে যেতে দেখি আমরা। দেয়ালে দেয়ালে প্রেমিক, প্রেমিকার ভালোবাসার নিশান। ছি। লজ্জাজনক। এই ধংসাবসেশে বড় ক্যামেরা ব্যবহার এলাউড না। তাই গোপ্রো দিয়েই ভিডিও করেছি। হয়ত দেখলে বুঝতে পারবেন, কেমন অবস্থা এখানকার।

এরপর আমরা গেলাম ময়মনসিংহের ক্যান্টেনমেন্ট এর পাশে বিজিবি হেড কোয়ার্টের পাশেই নদীর পারে একটা সুন্দর জায়গা করা হয়েছে। বিকেলে এখানে খুবই ভালো লাগছিলো। এখানে খাবারের দোকান আছে। সময় খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায় এখানে। নদীর পারের বাতাস, সুন্দর প্রকৃতি আর বৃষ্টি ভেজা বিকেল কেটে গেল আমাদের। আর আমাদের ভ্রমন ও শেষ হল। এরপর আমরা ভালুকা রওনা হলাম।

ময়মনসিংহের এই জায়গা গুলোতে ঘুরে প্রচুর চিপসের প্যাকেট, কফির কাপ ও বিরিয়ানির বক্স পেলাম। সবার কাছে অনুরোধ, ভ্রমন করতে গিয়ে পরিবেশ নোংরা করবেন না। কোন ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন, না হলে সাথে করে নিয়ে আসেন। ধন্যবাদ। ছোট একটা ভিডিও বানিয়েছি । নন কমার্শিয়াল। ( শখের বসে) আশা করি দেখলে বুঝতে পারবেন, রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে অমূল্য সম্পদ গুলো কিভাবে নষ্ট হচ্ছে।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ mymensingh