শিলংয়ের চিঠি

‘গর্মি যখন টুটলো না আর পাখার হাওয়া সরবতে
ঠান্ডা হতে দৌড়ে এলুম শিলং নামক পর্বতে।’

– শিলংয়ের চিঠি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কারনটা আজও মোটামুটি একই আছে। ২০১৮ এর জানুয়ারি মাস থেকে এদিক ওদিক ঘেঁটে ঠিক করলাম মে মাসের গরমের ছুটিতে শিলং যাবো। দেখলাম শিলং গেলে সোহরা (ইংরেজদের বদান্যতায় যার নাম চেরাপুঞ্জি বলে খ‍্যাত) না গেলে অনেক কিছু মিস করবো। মানে বেশি টাই মিস করবো।

এবার থাকার জায়গা খোঁজার পালা। নেট ঘেঁটে তিন-চারটি রিসর্ট শর্টলিস্ট করলাম। সিনিক বিউটি, পকেট আর পরিষেবা তুল‍্যমূল‍্য বিচার করে সোহরাতে ‘কুটমাদান রিসোর্ট’ আর শিলংয়ে নবনির্মিত ‘রী কানন’ নির্বাচন করলাম। দুটোই সোহরা আর শিলংয়ের মধ‍্যভাগ থেকে বেশ দুরেই। থাকার জায়গা অবশ্য যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

আমরা গৌহাটি থেকে শিলং হয়ে আগেই সোহরা চলে গেলাম, পথে অনবদ্য দৃশ্য দেখতে দেখতে। কুটমাদান রিসর্টে এসে চোখ জুড়িয়ে গেল। তেমনি ওখানকার ম‍্যানেজার ফেডরিক আর তার সহকর্মীদের ব‍্যবহারে মন ভরে গেল। অত‍্যন্ত আন্তরিক। ওখানে একটা সুবিধে, প্রায় সবাই ইংরেজি জানে।

কুটমাদান রিসোর্ট, চেরাপুঞ্জি

আমাদের সাইট-সিইং করাল হেপ্। সেও আঞ্চলিক খাসি সম্প্রদায়ের এবং অত্যন্ত দায়িত্বশীল। আমরা প্রথমদিন আঞ্চলিক গুহাগুলো আর ঝর্ণা গুলো দেখলাম। আর ওয়াহ কেভ, মাওসমাই কেভ, নোয়াকালিখাই ফলস, সেভেন সিস্টার ফলস ইত‍্যাদি। দেখবার মত। আর দেখবার মত চারপাশের দৃশ্য।

কুটমাদান রিসোর্ট, চেরাপুঞ্জি

পরেরদিন গেলাম ডবল ডেকার রূট ব্রিজ যা এখন সারা ভারত কেন বিদেশ থেকেও লোকে দেখতে আসছে। তিন কিমি ট্রেক, নামতে ৩৫০০ সিঁড়ি, উঠতেও তাই। কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা সে অভিজ্ঞতা। যারা একদিনে পারবেন না, তারা রূট ব্রিজের কাছে কিছু হোমস্টেতে রাত কাটাতে পারেন। রূট ব্রিজে পৌঁছে সব ক্লান্তি কেটে গেল, ওখানেও একটা ছোট্ট ঝর্ণা আছে, জলাশয় আছে, চান করা যায়। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা!

তার পরেরদিন শিলং যাওয়ার পথে ডউকি নদী দেখে আরেকটি অপূর্ব ঝর্ণা দেখতে গেলাম। ডউকির জল অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কাঁচের মত স্বচ্ছ থাকে, বৃষ্টিতে ঘোলা হয়ে যায়, আরেকবার আসতে হবে। ঝর্ণা টির নাম ক্রাংসূরী, অমন নীল জল আর কোথায় দেখা যায় জানিনা 💙

ক্রাংসূরী, মেঘালয়

শিলংয়েও ধরাবাঁধা সাইট-সিইং করিনি। মেঘ ছিল বলে লাইটলুম ক‍্যানিওন গেলাম না, পরে যাব। পরিবর্তে গেলাম মাওফলং-এ খাসিদের স‍্যাকরেড গ্রোভ, একরকমের জঙ্গল সাফারি। মাওফলং এর দৃশ্য দেখলে বোঝা যায়, কেন Scotland of the East বলে! স‍্যাকরেড গ্রোভে প্রচুর অর্কিড আর মাশরুম দেখলাম। দেখলাম রূদ্রাক্ষের গাছ।

তার পরেরদিন কাছাকাছি হালকা ঘুরলাম, উমিয়াম লেক, লেডি হায়দারী পার্ক, গল্ফ কোর্স ইত‍্যাদি। শিলং শহর খুব সুন্দর কিন্তু ভীষন ভিড়। পারলে ভিড় এড়িয়ে ঘুরবেন এবং থাকবেন! নাহলে ঘোরার আনন্দ পাওয়া যাবে না।

উমিয়াম লেক
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ cherrapunjiMeghalayashillong