পেয়ারা বাজার
লক্ষ্য ছিল ভাসমান পেয়ারা বাজার 😍, গুটিয়া মসজিদ, দুর্গাসাগর দিঘি। আমরা ছিলাম ৫ জন। ইদানিং নৌপথে ভ্রমণটা খুব উপভোগ করছি। এজন্য বাসা থেকে সরাসরি চলে গেলাম সদরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। লঞ্চঘাটে প্রবেশ পথে ৫ টাকা করে টিকেট নিতে হয়। উপস্থিত লঞ্চগুলার মধ্যে কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চই আমাদের পারফেক্ট মনে হল। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বিশাল প্রকৃতির এবং সবসময় ছাঁদে যেতে পারবেন। রাতের খাবার বাসা থেকেও নিতে পারেন অথবা লঞ্চঘাটের বাইরেও খেতে/কিছু কিনে নিতে পারেন। লঞ্চে সাধারণত দাম বেশি।
সবার শেষে রাত ৯.৩০ লঞ্চটি সদরঘাট ছেড়ে যায় এবং ভোর ৪.৩০ দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট পৌঁছে। বলে রাখা ভালো, ডেক ভাড়া ১৫০ করে নিয়েছিল। বরিশাল পৌঁছে খাবার হোটেলে ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। পড়টা, ডিম ভাজি, সবজি। জনপ্রতি ৫৫ টাকা করে পরেছিল। তারপর মাহেন্দ্রা (অনেকটা সিএনজির মতো) তে করে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে চলে গেলাম বানাড়িপাড়া। ওইখান থেকেই ভাসমান পেয়ারা বাজার -> আটঘর-কুরিয়ানা-ভিমরুলি বাজার ও পেয়ারা বাগান দেখার জন্য মোটামুটি বড়সড় ট্রলার নিলাম। সাথের ৪ সঙ্গীরা পানি ভুতে আক্রান্ত বলে, ছোট ট্রলার নেওয়ার সাহস পাইনি। ভাড়া ১২৫০/৫=২৫০ টাকা (৫-৬ ঘণ্টা)। এই ট্রলারে অনায়াসে ১০-১৫ জন যেতে পারবেন। ট্রলার মামার ফোন নাম্বার- ০১৯৯৩১৮৮৯৫৬ (হারুন ভাই)।
“নদী-পুকুর-খাল, তিনে মিলে বরিশাল” এটার প্রমাণ এই ট্রলার ভ্রমনেই পেয়ে যাবেন। নদী পেরিয়ে ট্রলার ঢুকবে খালে। দুইপাশের প্রকৃতি আপনাকে বিমোহিত করবেই। তারপর ঢুকবে আরও সরু খালে। আটঘর-কুরিয়ানা বাজার শেষে গেলাম পেয়ারা পার্কে। পার্কে ঢুকে ২০ টাকায় ইচ্ছা মতো পেয়ারা খেতে পারবেন। তবে, খাবারযোগ্য পেয়ারা খুব কমই হাতের নাগালে পাবেন। আমি মাত্র ২ টা খেতে পারছি, অবশ্য, ওইখানে বসে সময় কাঁটাতে ভালো লাগে।
পেয়ারা পার্ক শেষে আমরা গেলাম বিখ্যাত ভিররুলি পেয়ারা বাজার। দুচোখ ভরে দেখালাম ভাসমান পেয়ারা বাজারের রূপ। চা ও সাদা মিষ্টি টা খেতে ভুলবেন না। আসার পথে কুরিয়ানায় দুপুরের খাবার খেতে পারেন, যদিও তেমন দুপুর না হওয়াতে আমরা খাইনি। আসার সময় আমরা কিছুটা অন্য বাগানের পথ ধরে বানাড়িপাড়া ফিরলাম। তারপর মাহেন্দ্রাতে করে দুর্গাসাগর দিঘি। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। দুর্গাসাগর প্রবেশ টিকেট ২০ টাকা। আড্ডা ও সময় কাটানোর জন্য অনেক ভালো একটা জায়গা। অহরহ বহুত জুটির ভালোবাসা বিনিময়, এখানে দেখতে পাবেন! দিঘিতে গোসল করে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। মাংস-ভাত-ডাল-ভর্তা জনপ্রতি ১৪০ টাকা।
তারপর বিকেলের দিকে চলে গেলাম গুটিয়া মসজিদ। দিঘি টু গুটিয়া মসজিদ ১৫-২০ টাকা নিবে। এক কথায়, এতো সুন্দর মসজিদ আমি নিজ চোখে আর দেখিনি। এলাকার এক মুরুব্বীর সাথে পরিচয় হওয়াতে মসজিদের ভিতর, মাদ্রাসা সব ঘুরিয়ে দেখালেন উনি। আসরের নামাজ মসজিদে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বিশাল এলাকা জুড়ে মসজিদের পুকুর, অনেক উঁচু মিনার, ভিতর-বাহিরের কারুকাজ আমাকে বিমোহিত করেছে। মসজিদ এরিয়ার বাইরে গুটিয়ার সন্দেশ পাওয়া যায়। খেতে ভালো, তবে, আহামরি নয়।
তারপর মাহেন্দ্রা করে চলে আসলাম বরিশাল লঞ্চ ঘাটে। ৪০ টাকা নিয়েছিল। বাইরে হালকা খাবার খেয়ে রাতের জন্য খাবার নিয়ে নিলাম। লঞ্চঘাট প্রবেশ ৫ টাকা। ডেক ভাড়া ১৫০ টাকা। লঞ্চ ছাড়ল ৯.৩০ টায় এবং সদরঘাট পৌঁছলাম সকাল প্রায় ৭ টার দিকে। বেশি দেরি হওয়ার কারণ হল, কিছুক্ষণ চরে আঁটকে থাকা এবং সম্ভবত পানির বিপরীতমুখী টান। লঞ্চঘাট থেকে বাহির হয়ে হালকা সকালের নাস্তা খেয়ে নিলাম, ৪০ টাকা করে। তারপর লঞ্চঘাট টু বাসা ৩০ টাকা।
Leave a Comment