সুইজারল্যান্ড এর লসান থেকে ইতালির ভেনিস – ট্রেনে ভ্রমণ

হাতে আর সময় নেই। দেশে ফেরার তাড়া। তার মধ্যেই যতটা ঘোরা যায় আর কি। তাই এ মাসের মাইনে হাতে আসতেই দৌড়লাম স্টেশন। এখানকার রেলওয়ের নিজস্ব ট্যুর উয়িং আছে। রেলট্যুর। তাদের অফারেই বুকিং করলাম। লসান থেকে ডিরেক্ট ট্রেনে ভেনিস। সেখানে একরাত হোটেলে থাকা, ব্রেকফাস্ট সহ। পরদিন বিকেলের ডিরেক্ট ট্রেনে লসান ফিরে আসা। আমাদের দুজনের মিলিয়ে পড়ল ৫১৮ ফ্রান্ক। শুক্রবার সারাদিন লসানে ভীষন বরফ পড়েছে। খুব ঠান্ডা। তার মধ্যেই শনিবার সকালে উঠে রেডি হয়ে লসান স্টেশন পৌঁছলাম। ৮:২০ তে ট্রেন। ইউরো রেল। টিকিটে কোচ নম্বর, সিট নম্বর মিলিয়ে বসলাম। আমার এখানে এখনো অবধি চাপা সবচেয়ে ভালো ট্রেন। আমাদের সিট দুটো মুখোমুখি। জানলার পাশে। সময়ে ট্রেন ছেড়ে গেলো। সকালের আলো ফুটেছে। আমরা লসান ছাড়ছি। বরফ আবার পড়তে শুরু করেছে। চারপাশ সাদা। সাদা বলে সাদা, শ্বেতশুভ্র যাকে বলে! বাড়ির ছাদ সাদা, পাশের জমি সাদা, স্ট্যান্ডের গাড়ি সাদা, রেললাইন সাদা, মরা আঙুরবন সাদা!

কিছুক্ষন ভালো লাগে। তার পরে কেমন একঘেঁয়ে হয়ে যায়। বেশ কয়েকটা স্টেশন পেরুনোর পর ট্রেন থামল ইতালি এর প্রথম ইটালীয়ান স্টেশনে। জায়গার নাম “ডুমাডোসোলা”। বিড়ি খেতে নামলাম। প্রচুর পুলিশ ঘুরছে। বাইরে তাকিয়ে মনটা ভরে গেল। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। পুরো পাথরের তৈরী বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখলাম। ছাদ অবধি পাথরের। পরের স্টপেজ “মিলান”। দেখলাম লোক বাথরুমের সামনে লাগেজ রেখে তার সামনেই দিব্বি বসে চলেছে। স্ট্যান্ডিং প্যাসেন্জারও অনেক। এখান থেকে মিলান অবধি পথ চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। মিলান থেকে “ভেনেসিয়া সান্টা লুসিয়া” অবধি প্রায় ২.৫ ঘন্টা সময় লাগে। তার আগের স্টেশন হল “ভেনেসিয়া মায়েস্ত্রো”। এখান থেকে সান্টা লুসিয়া অবধি রেল লাইনটা সমুদ্রের ওপর দিয়ে পাতা। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। লাইনের দুদিকে সমুদ্র। সামনে ভেনিসের অজস্র রঙিন বাড়ি।

আস্তে আস্তে ট্রেন ভেনিস ঢুকলো। ঘড়িতে সময় ২.২০। কিন্তু আকাশ মেঘলা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। বৌ নেমেই স্টেশনের সুভেনির শপে ঢুকে পড়লো। তাকে কোনো মতে নিরস্ত করে বেরোলাম আমাদের “হোটেল ভিলা রোসা” খুঁজতে। গুগল ম্যাপে লোকেশনটা দেখে নিয়েছিলাম। কিন্তু বেরিয়ে চরম ঘেঁটে গেলাম। আগে দেখা রুট ধরে গিয়ে কোনো গলিই আর চিনতে পারি না। হঠাৎ শুনলাম পাশেই কে যেন বাংলায় কথা বলছে। তাকিয়ে দেখি এক বাংলাদেশী ভাই ফোনে কথা বলছে। হাতে যেনো চাঁদ পেলাম। তার কাছে গিয়েই হোটেলের ঠিকানা বুঝে নিলাম। তার পর চেক-ইন, একটু ফ্রেশ হতে হতেই আমার জুরিখের বন্ধু এসে হাজির। আর কি , চলো ঘুরি ভেনিসের পথে পথে।

সেন্ট মার্ক স্কোয়ার (Piazza San Marco)

প্রথমেই গেলাম স্টেশনের উল্টোদিকে “হ্যালো ভেনেসিয়া”র কাউন্টারে। ২৪ ঘন্টার পাস, ২০ ইউরো। পাস কেনা হলে চেপে পড়লাম “২” নম্বর বোটে। “গ্রান্ড ক্যানাল” বেয়ে চললাম “সেন্ট মার্ক স্কোয়ারের” দিকে। সন্ধ্যের ভেনিস তখন সেজে উঠছে অপূর্ব আলোয়। জলের রাস্তা, দু ধারে পুরনো বাড়ির ভিড়, জলের মাঝে মাঝে মোটা মোটা কাঠের গুঁড়ি পোতা, তার ওপরে আলোক স্তম্ভ। হালকা হলুদ আলো পড়ছে সবজে জলের ওপরে, আমাদের বোট চলছে জলের ওপর দিয়ে, পাশের ইমারত, এক ঐতিহাসিক শহর কে চিড়ে চলেছে আমাদের বোট। পারত। শহরটাকে আলো মুড়ে দিতে পারত এরা। করেনি। করতে চায়নি। আর সেজন্যই একটা আলো আধাঁরি, রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সারা শহর জুড়ে। কোলাহল নেই। প্রচুর লোক আছে। ছায়ামাখা গলিগুলো চলে গেছে এদিক ওদিক। হুঠ করে কোনো গলি থেকে বেড়িয়ে সামনে চলে আসে চার্চ। মুগ্ধঝয় দু চোখ। সেন্ট মার্ক স্কোয়ার সবাই টিভিতে বা সিনেমায় দেখে ফেলেছেন আশা করি। গ্রান্ড ক্যানালের ধারে বিশাল পাথরে মোড়া চত্তর। অনবদ্য স্থাপত্যের নিদর্শন চারদিকে। সুউচ্চ টাওয়ার, চার্চ, ফ্রেসকো, দুর অবধি ছুটে চলা বারান্দা। স্কোয়ারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড়ো ক্ষুদ্র লাগে। তবে অস্বস্তি লেগেছে স্কোয়ারে লাগানো বিশাল “ভারসাচে”র পারফিউমের আ্যড দেখে। আমাদের তাজমহলে কেউ এসব ভাবতে পারবে ?

বেশ কিচ্ছুক্ষন এখানে কাটালাম। এবার যাব “রিয়াল্টো”। জেটিতে বসে একথা সেকথা হচ্ছে। হঠাৎ মৌ আমার বন্ধুটিকে প্রশ্ন করে “বাথরুমে কোমোডের পাশেই আরেকটা যে কোমোডের মতো জিনিস আছে দেখেছো?”
সেও মাথা নাড়িয়ে বলে “পা ধোওয়ার জায়গাটা তো?”
আমাদের তো হাসতে হাসতে দম বেড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা। শুভাগত যুক্তি দিতেই ব্যস্ত –
– “আরে যাতে মাটিতে জল না পড়ে সেজন্যই এমন ব্যবস্থা”
– “আরে শাওয়ারের ওখানে তো ট্যাপ নেই”
আমরা ততই হাসি আর ওকে বোঝাই ট্যাপটা ঘোরানো যায় কেনো ? ওখানে পা ধুতে গেলে জল তো গোড়ালীতে পড়বে পায়ের পাতায় নয়।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। শেষে আমি বললাম, “তোর ছেলে এলে তো ঐটা ওর হাইটের হবে, ও সেখানে কুলকুচি করে এসে তোকে বলত – বাবা দেখেছ এরা কি চালাক, আমার মতো পুচকিদের যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য ছোট্ট বেসিন বানিয়ে রেখেছে”।

যাই হোক, এভাবে হাসতে হাসতেই আমরা পৌঁছলাম “রিয়াল্টো” ব্রীজ, গন্ডোলা, টুরিস্ট, দোকানীদের ভিড়ে এক জমজমাট জায়গা, যার মাঝে এপাড় থেকে ওপাড় অবধি দাঁড়িয়ে আছে দুধসাদা সেতু।

রিয়াল্টোর ওপরের বেশ কয়েকটা সুভেনির শপ আছে। সেখানে বেশ কিছু জিনিস কেনাকাটা হলো। এবার খাবার কিনে হোটেলে ফিরতে হবে। তখনি আমাদের মাথায় এলো এক সাহসী প্ল্যান। এখান থেকে আমরা হেঁটে হোটেল ফিরবো। বেশ রাত হয়ে গেছে। শীতের রাত। ৮:৩০ বাজে। কিন্তু মাথায় পোকা নড়লে কি আর করা যায় !

রিয়াল্টো ব্রীজ

শুরু হলো হাঁটা। একে তাকে জিজ্ঞেস করতে করতে চলেছি। রিয়াল্টো থেকে ফেরোভিয়া। এ গলি দিয়ে ঢুকে ও গলি দিয়ে বেরোচ্ছি। লোকজনের (বা আমাদের) ভাষার সমস্যা। কিন্তু সবাই খুব সাহায্য করতে আগ্রহী এটুকু বোঝা যাচ্ছে। আলো আধাঁরি গলিপথ। ছোটোবেলা থেকে যেরকম ছবিতে দেখেছি সে রকম টুকরো, চৌকো পাথরে বাধাঁনো গলি। ওপর থেকে কোথাও কোথাও ঝুলছে হলদে আলো। লোকজন নেই বললেই চলে। গা ছমছম করছে। সিগারেটের সাথে সাথে মনের জোরও কমে আসছে যেনো। কোনো গলি পেরোলে হঠাৎ ছোট্ট ব্রীজ। দেয়ালে ওপরে লটকানো বোর্ড বলছে ব্রীজ পেরিয়ে সোজা হাঁটলে ফেরোভিয়া। দে হাঁটা। এমন সময় কানে এল বেশ জোরে বাজতে থাকা গানের আওয়াজ। বোর্ডের তীরকে গুলি মেরে আমরা চললাম গানের উৎস সন্ধানে। এক গলি থেকে বেরিয়ে দেখি শান বাধাঁনো একটা চৌকো জায়গা। তার মাঝখানে রেলিং করে বরফ জমানো হয়েছে। ডিজে গান বাজাচ্ছে। আর অনেক লোক, বাচ্চা, বুড়ো, যুবক – যুবতি পায়ে স্কেট জুতো পরে বরফের ওপর হুমড়ি খেতে খেতে ফুর্তি করছে। রিন্কের পাশে কয়েকটা ছোটো দোকানও বসে গেছে খাবারের। বেশ জমজমাট ব্যাপার। কিন্তু এদিকে রাত কালো বাদুড়ের মতন আরো গাঢ় হয়ে নেমে আসছে ভেনিসের আকাশে, গলিতে, জলে। পা গুলোও মাফ চাইছে এবারে। আমাদের ফেরোভিয়া কতদুর কে জানে। আবার শুরু হলো বোর্ড খোঁজা। পেয়েও গেলাম। আবার হন্টন। বেশ কিছুদুর গিয়ে জানলাম সামনেই আমাদের আরাধ্য স্থান। শান্তি পেলাম। রাতের খাবার প্যাক করে নেওয়ার জন্য ঢুকে পড়লাম এক চাইনিজ হোটেলে। খাবার নিয়ে কিছু দুর গিয়েই দেখি আমাদের হোটেলের সামনের ব্রীজ দেখা যায়। ঘড়িবাবু বলছেন ১০ টা বেজে গেছে। আর আমাদের তিন জোড়া পায়ের ছাপ রয়ে গেল ভেনিসের অলি গলিতে, নাম না জানা চার্চের চত্তরে, কতগুলো পুচকি ব্রীজের ওপরে।

বুরানো আইল্যান্ড

হোটেলে গিয়ে কোনো মতে খেয়ে আবার জিনিস প্যাকিং। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করেই চেক আউট করব। এক ঘুমে রাত কাবার। উত্তেজনায় সকাল ৬ টায় বিছানা ছেড়েছি। ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম সিগারেট হাতে। আ্যকুওয়েদারের ভবিষ্যৎবানী অক্ষরে অক্ষরে ফলিয়ে ঝকমকে রোদ উঠতে দেখলাম ভেনিসের নীলচে আকাশের পূব দিক থেকে। ততক্ষনে সবাই রেডি হয়ে গেছে। ব্রেকফাস্ট করে কাধেঁ ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ফেরীঘাটের দিকে। গন্তব্য “বুরানো আইল্যান্ড”। এখান থেকে “ব্যাটোবাসে” করে “মুরানো”। সেখান থেকে “বুরানো”। বোট ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ভেনিসের খাঁড়ি ছাড়িয়ে সমুদ্রে। অসম্ভব সুন্দর চারপাশের দৃশ্য। জলের মধ্যে কাঠের খুঁটি পোতা। তার ওপরে আলো লাগানো, কোথাও কোথাও সিগনালের ব্যবস্থা। জলেও স্পীড লিমিট হয় সেটা এখান থেকেই জানলাম। মুরানো পৌছতে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লাগলো। ব্যাপক একটা “লাইট হাউস” মুরানো নামতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে। তার চারপাশে নেচে নেচে বেশ কিছু ছবি তুললাম। মুরানো দ্বীপ ও তার অধিবাসীরা কাঁচের কাজের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। লাইট হাউসের পাশেই একটা স্ট্যান্ডের ওপর বসানো অনেক কাঁচের হাস, কিছুদুর এগিয়ে একটা বাগান যেখানে কাঁচের প্রজাপতি পাওয়া যায় কাঁচের সূর্যমুখীর ওপরে, কাঁচের প্যাঁচা পরে থাকে লাল রঙের চশমা। পাথরে মোড়া রাস্তা দিয়ে, রংচটা চার্চটা পেরোলে ক্যানালের এপাশেই চোখে পড়ে কাঁচের অগ্নিশিখা। অপুর্ব এই সৃষ্টি, অসাধারন শিল্পীদের কল্পনাশক্তি। তারিফ না করে পারা যায় না। ৯:১৯ এ বুরানোর ফেরী আসে। লাফিয়ে উঠি আমরা বোটে। সমুদ্রের জলে পড়া ঝকমকে সূর্যের আলোকে হেলায় চিরে যায় স্পীডবোট। আমাদের চোখে ভাসে এক আশ্চর্য দ্বীপের ছবি। যার এক একটা বাড়ি একেক রঙের। খালের জলে যাদের ছায়া দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এগিয়ে চলে আমাদের বোট সেই স্বপ্নের দেশে, যার নাম “বুরানো”।।

ভেনিসের বিখ্যাত গলি

ফেরী থামতেই লাফিয়ে নামলাম জেটিতে। সামনে এক মহিলা মূর্তি। তার সাদা মাথা দেখে বোঝা গেল সবদেশেই কাক – পক্ষীদের এই মূর্তিগুলো বিশেষ পছন্দের। কংক্রীটে বাঁধানো সরু গলি দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। দেখি একটা নীল আর একটা সাদা বাড়ি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। বাড়িগুলোর নীচে দোকান। অতিসূক্ষ সুতোর কাজের জিনিস সব বিক্রী হচ্ছে। রুমাল, ছাতা, ফ্রক আরো কত কি। আমার স্ত্রীর তখন কেনা-কাটা রোগ ধরেছে। দোকান দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ছে। কোনোমতে তাকে টেনে বগলদাবা করে সামনে পাড়ি দিলাম। গলি শেষ হতেই দেখি একটা খাঁড়ি ঢুকে এসেছে। তার দুদিকে সরু রাস্তা। জলে প্রচুর কাঠের লগি গাঁথা। তাতে ছোটো ছোটো নৌকা বাঁধা। প্রতিটি বাড়ির সামনে একটি করে নৌকা। ব্যক্তিগত। পাশাপাশি দুটো বাড়ির রং কখনই এক নয়।

বুরানো এই ঝলমলে, রঙিন, পুচকি বাড়িগুলোর জন্যই ভুবনবিখ্যাত। চিত্রশিল্পিদের কাছে স্বপ্নের সাবজেক্ট। কেউ যদি এখানে বাড়ি রঙ করাতে চায়, তাকে সরকারের কাছে চিঠি পাঠাতে হয়। সরকার তাকে রঙ সাজেস্ট করে দেয়। শুধু রঙ নয়। বেশীরভাগ বাড়ির কলিংবেল বা দরজার কড়াগুলিও নজরকাড়া। পেতল, স্টীল বা অন্যান্য ধাতুর তৈরী। কোথাও সিংহের মুখে, কোথাও বা হাতির শুঁড়ের সাথে ঝুলছে কড়া। বাড়িগুলো সব একই ধাঁচের। বাইরে থেকে দেখে ধনী – দরিদ্র বোঝার উপায় নেই। তবে এখানকার বেশীরভাগ বাসিন্দাই মৎস্যজীবি। খাঁড়ির ওপর ছোটো ছোটো কাঠের পুল। নীচে টলটলে জল। আগের রাতে বরফ পড়েছে। মিছরির দানার মতো বরফের টুকরো ব্রীজের কাঠের ওপরে ছড়িয়ে আছে।

আমরা ছবি তুলছি। তুলছি তো তুলছিই। সেই এক-একটা জায়গা থাকে না যেখানে ভিউফাইন্ডারে চোখ না রেখে হাতে ক্যামেরা নিয়ে যেদিকে খুশী লেন্স করে ক্লিক করে গেলেই অসাধারন সব ফ্রেম ধরা পড়ে যায়। এটাও সেরকমই এক জায়গা। এ গলি – সে গলি ঘুরছি। সূর্যের আলোর সাথে খেলছি লুকোচুরি। কোথাও পায়ের ফাঁক দিয়ে গলে যাচ্ছে লোমে ঢাকা গোল্লা কুকুর। নীল বাড়ির গায়ে রঙমিলান্তি খেলছি গায়ে চাপানো নীল টি-শার্টের সৌজন্যে।

সময় পেরোয়। ফেরার মন ফিরতে চায় না। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা থামাবার ক্ষমতা কারোর নেই। ফিরতি ফেরীতে চাপি। মুরানো হয়ে ভেনিস। যাওয়ার আগে আরেকবার রিয়াল্টো, জলে ভেসে বেড়ানো অগুনতি গন্ডোলা, মাঝির উদাত্ত গলায় গান, আরেকবার মার্কাস স্কোয়ার, পায়রা সরিয়ে এ কোনা থেকে ও কোনা চক্কর, রহস্য আর ইতিহাস পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা রাস্তা আর খালগুলো – সব দেখতে হবে যে।

বিকেল ৪:৩০। সেই সমুদ্র দমানো ব্রীজের ওপর দিয়ে চলছে আমাদের ইউরো রেল। ফিরছি তুষার ঢাকা, সাদা ওড়না পরা সুইজারল্যান্ডে। পিছনে আস্তে আস্তে মিলিয়ে আসে সুন্দরী, বিদূষী ভেনিস। মনে মনে শপথ নিই। মৌ আমার হাত ধরে ওপাশের সিট থেকেই। আমার মনের কথাটা ভাষা পায় ওর মুখে – “মরার আগে আরেকবার আসতে হবেই এখানে, একটু বেশি সময় নিয়ে”!

সেই দিনটা অবধি বিদায় ভেনিস, সেই দিনটা অবধি তুমি থাকবে আমাদের বুকের মাঝে, আমাদের “সেনিওরিটা” হয়ে ….

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ italylausannestorytravelvenice