সাগর কন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ

সাগরকন্যা কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটনকেন্দ্র। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত।কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।

ঢাকা টু পটুয়াখালী টু কুয়াকাটা ভ্রমণ বিস্তারিত

২০/১০/২০১৮ তারিখে টার্মিনাল টিকেট কেটে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে আমরা ৫ জন কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। লঞ্চ ছেড়েছে ৬.৩০ এ।সারা রাত আমরা ছাদে বসে সময় কাটিয়েছি।পূর্ণিমার চাঁদ,নিরবতা, বাতাস সবকিছু আমাদের মুগ্ধতায় ভরিয়ে রেখেছে।

২১/১০/২০১৮

তারিখ ভোর ৫.০০ টায় আমরা পটুয়াখালী পৌছাই। ওখান থেকে বাস টার্মিনাল যেতে হয় অটোতে করে। সময় লাগে ২০/২৫ মিনিট। ১ম বাস ছাড়ে ৬.৩০ এ।টিকেট কেটে সকালের নাস্তা করে বাসে উঠি। কুয়াকাটা পৌছাই ১০.৩০ এ। তারপর আমরা হোটেল চেক ইন দেই।আমরা থেকেছি হোটেল তাজোয়ার প্যালেস এ। খুব টায়ার্ড থাকার কারণে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। বিকালের কিছু আগে ঘুম ভাঙলে বের হয়ে পড়ি লাঞ্চ করার জন্য। লাঞ্চ করে আমরা দেখতে যাই ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা, কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির, তার পাশেই আছে,’কুয়া’ যার নামে কুয়াকাটা নামকরণ করা হয়েছে। তারপর টুনা মাছের বার-বি-কিউ অর্ডার দিয়ে সী বিচ ঘুরাঘুরি করে রাতের দিকে টুনা মাছের বার-বি-কিউ খেলাম সবাই। টেস্ট ছিলো অসাধারন। ট্যুরের পূর্ণতা দিয়েছিলো এটি। এরপর আবার কিছুক্ষণ সী বিচে ঘুরাঘুরি করে পরের দিনের জন্য বাইক ঠিক করলাম। এরপর চলে আসলাম হোটেলে।

ঢাকা টু পটুয়াখালী লঞ্চ ভ্রমণ

২২/১০/২০১৮

পরেরদিন ভোর ৪ টায় বাইকের ভাইয়ারা এসে কল দিয়েছে। প্রথমে আমরা পূর্ব দিকের ১২ টি স্পট দেখতে যাত্রা শুরু করি। স্পট দেখার চেয়ে বীচের উপর দিয়ে বাইক চড়াই বেশি উপভোগ্য। এক পাশে সমুদ্র, অন্য পাশে বীচ,গাছপালা। প্রথমে আমরা দেখি কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, কাউয়ার চর, তারপর গঙ্গামতীর লেক পার হয়ে দেখি সূর্যোদয়। এরপর ঝাউবন, লাল কাঁকড়ার চড়, রূপালী দ্বীপ দেখে সকালের নাস্তা করে রওনা দেই রাখাইন পল্লীর উদ্দেশ্যে। ওইখানে দেখি বৌদ্ধ বিহার, মিষ্টি পানির কূপ, রাখাইন পল্লী দেখে চলে আসি হোটেলে। হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ১.০০ টার দিকে বীচে যেয়ে গোসল করে দুপুরে লাঞ্চ করে হোটেলে ফিরে আসি। তারপর ফ্রেশ হয়ে বিকাল ৪.৩০ এ আবার বাইকে বের হই পশ্চিমের ৬ টি স্পট দেখতে।শুঁটকি পল্লী, ফিশ ফ্রাই, ঝিনুক বীচ, লেবুর বন, সুন্দরবনের পূর্বাংশ(ফাতরার চর) দেখে তিন নদীর মোহনায় এসে আমরা সূর্যাস্ত দেখি।তারপর বীচে এসে বাইক ভাইয়াদের বিদায় দিয়ে লইট্যা মাছ, কাঁকড়ার ফ্রাই অর্ডার দিয়ে আমরা বীচ মার্কেটে কেনাকাটা শেষ করে মাছের ফ্রাই খাই সবাই মিলে। ওইদিন জোয়ার ছিল। সাগরের উত্তাল ঢেউ আর চাঁদের সাথে হেটে সময় কাটাই ১১ টা পর্যন্ত। এরপর হোটেলে ফিরে আসি।

২৩/১০/২০১৮

সকালে একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠে বীচে ঘোরাঘুরি করে খেয়ে দুপুর ১২.০০ টায় হোটেল চেক আউট করে ১২.৪০ এর গাড়িতে রওনা দেই পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে। পটুয়াখালীর লঞ্চ টার্মিনাল পৌছাই ৪ টায়।তারপর লঞ্চের কেবিন নেই। লঞ্চ ছাড়ে ৫.২০ এ। সারারাত পূর্ণিমার আলোতে সারেং মামাদের সাথে গল্প করে অফুরন্ত স্মৃতি নিয়ে ঢাকা পৌছাই ভোর ৬ টায়।

সূর্যোদয়, কুয়াকাটা

যাতায়াত খরচ

  • টার্মিনাল ভাড়া- ৫ টাকা (প্রতিজন)
  • ঢাকা টু পটুয়াখালী লঞ্চ
  • ডেকে-৩০০ টাকা
  • স্টাফ কেবিন- ৫০০ টাকা (প্রতি কেবিন) দরদাম করতে হবে অনেক।
  • ভি আই পি ডাবল কেবিন-৪০০০ টাকা ( টিকেট সহ)
  • সুন্দরবন-১ নাঈম ভাই(০১৭৮২২০১০০৫)
  • কুয়াকাটা-১ আলম কাকা(০১৮১৮০৬৮৪৩০)
  • লঞ্চ ঘাট থেকে বাস টার্মিনাল অটো ভাড়া-২০ টাকা (প্রতিজন)
  • পটুয়াখালী টু কুয়াকাটা বাসের টিকেট-যাওয়ার সময় কাউন্টার থেকে কাটতে হয় তাই ১৪০ টাকা
  • আর আসার সময় দামাদামি করে ১২০ টাকা।

হোটেল খরচ

হোটেল তাজোয়ার প্যালেস, খাসপুকুর সংলগ্ন,কুয়াকাটা । ম্যানেজার-০১৭৫৭৬৮৩০৩৭

বীচ থেকে একটু দূরে হলেও বীচে আসা যাওয়ার জন্যে ভ্যান দেয়। নতুন হয়েছে, পরিবেশ ভালো এবং নিরিবিলি। বড় রুম (২ জনের বেড)- প্রতিরুম ৬০০ টাকা ( ভ্যান ভাড়া সহ)

খাবার খরচ

বার-বি-কিউ, যেকোনো ধরণের মাছ ফ্রাই খাবার জন্য বীচের পাশেই দোকান আছে। আমরা যে দোকানে খেয়েছিলাম উনার এসিস্ট্যান্ট এর নাম আব্দুল মালেক। উনাদের অমায়িক ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবে নিসন্দেহে।

টুনা মাছের বার-বি-কিউ ৩ কেজি-৭৫০ টাকা
লইট্যা মাছ- পার পিছ ৩৫ টাকা কাঁকড়া – ( পার পিছ বড়-১৫০ ছোট -৫০)

দুপুর এবং রাতের খাবারের জন্য বীচের পশ্চিম পাশে আছে জোয়ার ভাটা হোটেল। অনেক ধরণের সামুদ্রিক মাছ,ভর্তা পাবেন এখানে। প্যাকেজ- ১৩০-১৫০ টাকা (প্রতিজন)

রাখাইন পল্লীতে গিয়ে জিতুয়াইন পিঠা ঘরের ‘ছ্যাটামু’ (বিন্নি ধানের পিঠা) এবং ওইখানের আদিবাসীদের পুলি পিঠা খেতে ভুলবেন না। পিঠা পার পিছ- ১০ টাকা।

সূর্যাস্ত, কুয়াকাটা

বাইক ভাড়া

প্রতি বাইক-৭০০ টাকা (দামাদামি করে ৫০০ এর মধ্যে নিবেন)। আলম ভাই – ০১৭২১৭৯১৪২৩ শাহজালাল ভাই – ০১৭৮২৮২৭৭৩৭

আমরা উনাদের বাইকে উঠেছিলাম। ব্যবহার অনেক ভালো ছিলো।

ভ্রমণ স্থান

  • কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির
  • ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা
  • কুয়াকাটার কুয়া
  • কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান
  • কাউয়ার চর
  • গঙ্গামতীর চর
  • ঝাউ বন
  • লাল কাঁকড়ার চর
  • রূপালী দ্বীপ
  • বৌদ্ধ বিহার
  • মিষ্টি পানির কূপ
  • রাখাইন পল্লী
  • বার্মিজ মার্কেট
  • শুঁটকি পল্লী
  • ঝিনুক বীচ
  • লেবুর চর
  • তিন নদীর মোহনা
  • সুন্দরবনের পূর্বাংশ(ফাতরার বন)
  • স্বপ্ন রাজ্য
  • পাখি মারা পানি যাদু ঘর
সামুদ্রিক মাছ, কুয়াকাটা

সতর্কতা

  • ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর লাস্ট লঞ্চ ছাড়ে ৬-৭ টায়। তাই টাইম ঠিক রাখতে হবে।আর ডেকে গেলে ২ ঘন্টা আগে যেতে হবে। ভালো জায়গা পাবার জন্য। আর কেবিনে গেলে আগে বুকিং দিতে হবে নাহলে পাওয়া কষ্টকর।
  • লঞ্চ ডেকে গেলে বিছানার চাদর ও ভেজানো যায় এমন জুতা নিয়ে নিবেন।
  • বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা এসব জায়গা ঘুরার জন্য লঞ্চ বেস্ট। কারণ এইটা বাংলাদেশের নদীপথের সবচেয়ে বড় জার্নি। পূর্ণিমার একটা রাত লঞ্চে কাটালে স্মৃতিটা থাকবে সারাজীবন। বাস জার্নি করা পুরাই বোকামি।
  • লঞ্চে প্রতি খাবারের দাম ৫ টাকা বেশি। তাই লঞ্চে উঠার আগে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন।
  • হোটেল, বাইক, মাছের জায়গা ও অন্যান্য সকল বিষয়েগুলোতে অনেক দরদাম করতে হবে। বাইকে দুইজন করে নেয়। তাই জোড়ায় যাওয়া ভালো। আমাদের ৭০০ করে পড়ছে। কিন্তু স্পট গুলো সব কাছে কাছে। বীচের পাশের স্পটগুলো সব এক যাস্ট নাম দিয়ে রেখেছে তাই ৫০০ টাকায় যথেষ্ট।
  • বাইক অনেকেই ভাড়া দিতে চায় নিজে ড্রাইভ করার জন্য কখনোই রাজি হবেন নাহ কারণ অনেক রাস্তাই বিপজ্জনক।
  • কুয়াকাটার বৌদ্ধ মন্দির, ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা আর কুয়াটির কুয়া বীচের একদম পাশেই হেটে গেলে ১০ মিনিট। তাই এই তিনটি স্পট বাদ দিয়ে স্বপ্ন রাজ্য, পাখি মারা পানি যাদু ঘর এড করে নিবেন বাইক ভাইয়াদের কাছে। মোট কথা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাইক ভাড়া করবেন।
  • ১ম দিন রাতেই বাইক ঠিক করে রাখতে হবে। ভ্যান ঠিক না করাই ভালো অনেক স্পটে ভ্যানে যাওয়া যায় না আর ভ্যানে চার্জ এতোক্ষন থাকবে না। পরদিন ভোরে বাইক ভাইয়ারাই হোটেলের সামনে গিয়ে কল দিবে। সূর্যোদয় দেখতে হলে অনেক আগে রওনা দেয়াই ভালো কারণ গঙ্গামতীর লেক পার হতে অনেক ভীড় হয়।
  • সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত পুরোপুরি দেখতে হলে শরৎকালে যাওয়া ভালো। শীতকালে কুয়াশার কারণে দেখা যায় না।
  • কুয়াকাটা যাওয়ার আগে অবশ্যই ওইখানকার আবহাওয়া এবং মাছের অবরোধের সময় জেনে যাবেন। অবরোধের সময় মাছ এবং শুঁটকির দাম বেশী থাকে।
  • ডিএসএলআর, বাইক এবং হোটেলের লোকজনদের বারবার প্রশ্ন এড়াতে কৌশলী হবেন।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ informationskuakatatips