খোপড়া- খায়ের তাল ট্রেক

ট্যুর সময়কালঃ ০৯/১০/২২ থেকে ১৬/১০/২২

কিছুটা বিলাসিতাই বটে বইকি, নরম বিছানায় শোয়া তাও আবার ট্রেকে। কারণ আমরা যারা ভারতে ট্রেক করি, তাদের কাছে টেন্ট, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি এই সব ছাড়া ট্রেক ভাবাই যায় না। টি-হাউসের ডাইনিং থেকে ইচ্ছে মতন খাবার অর্ডার আর সাথে ৭,০০০- ৮,০০০+ মিটার পর্বতমালা যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় তাও প্রথম দিন থেকেই তা অন্য কোনো ট্রেকে আছে কিনা মনে পড়ছে না।

অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প পথেই যাএা শুরু করে দ্বিতীয় দিন থেকে খোপড়ার পথ ধরা। ABC এর মত এত ভীড় নেই এই পথে, প্রথম দুই দিন অন্নপূর্ণা সাউথ এবং মাছাপুচ্ছেরে (Fishtail) সাথে পথ চলা। তৃতীয় দিন অসাধারণ এক জঙ্গল ট্রেল ধরে ডোবাটো পৌঁছালাম। তখনও মেঘ মহারাজ আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলছে, পরের দিন মুলদে পিকে সূর্যদয় দেখার কথা। রাতেই আবহাওয়া পুরো পরিষ্কার।সূর্যদয়ের সাথে ধৌলাগিরি আর অন্নপূর্ণা পর্বতশ্রেণী একেবারে হাতের নাগালে।

খোপড়া ডান্ডা থেকে এত ভালো ভিউ নেই বললে ভুলও হবে না আবার তুলনা করাটাও ভুল।

ডোবাটো থেকে আবার জঙ্গলপথ খোপড়ার পথে। এবার আরও গাড় জঙ্গলপথ সাথে জোক আমাদের নতুন সঙ্গী। খোপড়া পৌঁছে পরের দিন খায়ের তাল যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে নিলাম। বিকালে এক মায়াবি সূর্যোস্ত দেখতে পাবো আসাও করিনি কারণ আবহাওয়া আবার খারাপ হয়ে শিলাবৃষ্টি আমাদের আহ্ববান জানালো রামধনু দিয়ে, তখন বুঝিনি এটা আমাদের পাওনা আসলে। বিকেল হতেই গোধূলী আমাদের দুহাত ভরে রঙ উপহার দিল আর সাথে মেঘের খেলা, ঠায় চেয়ে রইলাম শেষ অবধি আর দুহাত, মন ভরে সম্ভোগ করলাম॥

গোধূলী আমাদের দুহাত ভরে রঙ উপহার দিল ॥ খোপড়া থেকে

পরের দিন খায়ের তালের (Khayar Tal Trek) পথে, খোপড়া ডান্ডা হয়ে। ডান্ডা মানে হল ইংরেজীতে “Ridge” বাংলা মানে কেউ জানলে অবশ্যই বলবেন। এত পরিষ্কার সকাল দেখে পথ চলবো কি কয়েকশো ছবি তুলতেই ১ ঘন্টা আমাদের দেরী হয়ে গেলো। Ridge এর প্রতিটি বাঁকে বাঁকেই আরো এক নতুন যেন চিত্রনাট্য। এই ভাবেই ৫-৬ কিমি হাঁটার পরে খেয়ার খোলা পার করে এক ধাবাতে কিছু অবাক জলপান করে অন্তিম সিড়িঁ ভাঙা পথ তাও চড়চড়িয়ে খাড়া আরোহণ। প্রতিটি ধাপ ১-১.৫ ফুট তো হবেই তাও ১৪,০০০ ফুটের উপরে।

খোপড়া থেকে সূর্যদয়

শেষ ৭০ মিনিট শাহরুখ খানের “ CHAAK DE INDIA” র সংলাপ মনে করে –

“এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে
চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো।
সেই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবো॥”

খোপড়া ডান্ডা-র বাঁক

এই ভেবেই চলতে চলতে ১৫৫০০ ফুটে বরফ পথ পেতেই শত কষ্ট যেন কোথায় হাওয়া। ২০০ -৩০০ ফুট দূরে তখনও খায়ের তাল। অন্নপূর্ণা দক্ষিণের পাদদেশে এই হ্রদ। খায়ের হ্রদের তীরে খয়ের বড়হাইয়ের একটি ছোট মন্দির রয়েছে। মাগর সম্প্রদায় এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সেখানে তীর্থযাত্রার কাজে যায়।

খায়ের তাল এবং মন্দির

৮-৯ কিমি পথ এবার নামার পালা। আবহাওয়া ঠিকঠাক ছিল তখন অবধি। মেঘ মহারাজের শেষ উপহার তখনও বাকী ছিল। কিছুটা নামার সাথে সাথেই তুষারকণা আমাদের আহ্ববান জানালো। তার কিছুক্ষন পরেই তুষারগোলকের দেখা ২-৩ মিনিটের জন্য আর তারপরেই তুষারপাত। তার মধ্যেই পথ চলে খায়ের খোলা ধাবাতে পৌঁছে মধ্যাহ্নভোজ সারলাম সাথে তুষারপাত এবং সূর্য মামা হাসি দিয়ে যেন ডাকছিল আমাদে… কিছুক্ষণ পর আবার পথ চলা শুরু, যত জলদি ফেরা যায় আরকি। ১৩,৫০০ ফুটে এবার শিলাবৃষ্টির দেখা আর তার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিপাত ১০-১৫ মিনিট চললো আমাদের সাথে। শেষ পাতে মিষ্টি রূপে সূর্যোস্ত – ঠিক আগের দিনের মত॥

রাত ৭টা নাগাদ খোপড়া টি-হাউসে ফেরত আসা। দেরি হওয়ার কারণও আছে, সেটাও কম নয় কিছুতে॥

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ nepalTrekking