কাশ্মীর এ ৭ দিন

If there is Paradise on earth, it is this, it is this, it is this – জাহাঙ্গীর ভাইয়ের এই কথা শুনে আমরা ৬ বন্ধু ২ সপ্তাহ আগে কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছিলাম। আর ঘুরে এসে বুঝলাম যে ভাইয়ের একটা কোথাও মিথ্যা না। কারণ শ্রীনগরে প্লেন ল্যান্ড করার পর থেকেই আপনার নিজেকে বুঝাতে কষ্ট হবে যে আপনি ইন্ডিয়াতে আছেন। আমাদের ৭ দিনের ট্যুরের একটা ছোট খাট বর্ননা দিচ্ছি যাতে নেক্সট টাইম কারো ছোট খাট হেল্প হয় 😀

১ম দিন

ভোর ৪ঃ৫০ এ কোলকাতা থেকে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে IndiGo এর প্লেনেতে উঠি আমরা। চণ্ডীগড়ে আধা ঘণ্টার ট্রান্সিট নিয়ে সকাল ৯ টায় এসে শ্রীনগর বিমানবন্দরে ল্যান্দ করে আমাদের প্লেন। প্লেন এ আরামদায়ক রাইডের সাথে “ভাগ মিলখা ভাগ” সিনেমার বিখ্যাত “মিলখা সিং” ছিল একদম ফ্রি 😀

প্লেন ফেয়ার- ৫৬০০ টাকা। সেদিন আমরা হোটেল তুলিতে উঠলেও পরে হোটেল ডালরিমে শিফট করি। ডালরিম সেই হাইফাই হোটেল। কিন্তু প্রতি রুমের ভাড়া মাত্র ৫০০ রুপি। এক রুমে ৩ জন আরামসে থাকা যায়।

সকালে মুঘল দরবারে কাশ্মীরি পুলাও উইত “রোগান জোশ” (আসলে অত জোস না 🙁 ) অ্যান্ড “রিস্তা” দিয়ে ব্রেকফাস্ট কামস লাঞ্চ সেরে ডাল লেকে এসে শ্রীনগরের বিখ্যাত “শিকারা” রাইডের জন্য নৌকা ভাড়া করি । শিকারা ভাড়া ৫ জন ৮০০ রুপি । ৬ স্পট ঘুরে দেখাবে। ” কেউ ভুলেও কোন ভাসমান মার্কেট থেকে কিছু কিনবেন না, সবকিছুই অর্ধেক দামে ডাঙ্গায় পাওয়া যায়। “

রাতে যাই খায়েম চকে। ওখানে যেয়ে খাই কাশ্মীরি বিরিয়ানি উইত ফিশ অ্যান্ড চিকেন।

ডাল লেক

২য় দিন

শ্রীনগর শহর ঘুরার জন্য এদিন আমরা টাভেরা জীপ ভাড়া নেই। জীপ ভাড়া ১৬০০। স্পট – পরীমহল, চাস্মিশাই, বোটানিক্যাল গার্ডেন, নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, হজরত বাল মসজিদ। গার্ডেন গুলোর এন্ট্রি ফি ২৪ রুপি মাত্র।

৩য় এবং ৪র্থ দিন

নারানাগ- গঙ্গাবল লেক ট্রেক কারার জন্য আমরা আগের দিন রাতেই মুবারক ভাইয়ের থেকে প্যাকেজ কিনি। ডাল লেকের মোড়েই মুবারক ভাইয়ের ক্যামেরার দোকান আছে। তিন দিনের প্যাকেজ। প্রথম ২ দিন গঙ্গাবল লেক ট্রেক আর ৩য় দিন সোনমার্গ ঘুরিয়ে শ্রীনগর ড্রপ। এই ৩ দিনে থাকা খাওয়া সবসহ পারহেড তিনি নিয়ে ছিলেন ৩ হাজার ৫০০ রুপি।

প্রথম দিনে আমরা পাহাড় বেয়ে উঠে ১০ হাজার ফিট উপরে জিপ্সিদের পাথুরে ঘরে থাকি। এই পাথুরে ঘরে দরজা জানালার কোন কপাট নেই। রাতে তেরপল দিয়ে কোন মতে ঢেকে রাখা ছিল। পরদিন গঙ্গাবল লেকে (Gangbal Lake) যাওয়ার প্ল্যান কিন্তু সকালে ঘুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি চারদিকে বরফ আর বরফ 😀 খুব সৌভাগ্যবান না হলে এই টাইমে এই বরফ পাওার চান্স ছিল না !! বরফে গড়াগড়ি করে বেশ কয়েকশো ফটো তুলে আমরা আবার নারানাগ (Naranag) গ্রামে নামতে শুরু করি | কারণ বরফের কারণ গঙ্গাবল লেকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল 🙁

সেই রাতে নারানাগ এ গুজ্জার জিপ্সিদের বাড়িতেই থাকা খাওয়া করি। সে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

৫ম দিন

নারানাগ গ্রাম থেকে মুবারক ভাইয়ের লোক আমাদের সকালে পিক করে সোনমার্গে নিয়ে আসে। সোনমার্গে যাওয়ার রাস্তায় ফটো তুলে ফোনের মেমরি শেষ করে ফেলবেন না আবার 😛 কারণ আসল সৌন্দর্য এখনও বাকি 😀

সোনমার্গ থেকে ২ টা স্পটে যাওয়া যায়। এক – জজিলা পাস, দুই – থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার। জজিলা পাস যাওয়ার গাড়ি ভাড়া ৫হাজার রুপি। আমরা গিয়েছিলাম থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়া ভাড়া ৭০০ রুপি।

থাজিওয়াস গ্লেসিয়ারের সেকেন্ড পয়েন্টে যেয়ে মনে হবে আপনি অন্য দুনিয়াতে এসে পড়েছেন। সামেন বড় বড় বোল্ডার আর চারদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়চূড়া। কোনদিকে ফটো তুলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওখানে স্নোফল শুরু হওায় বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয়নি। রাতে শ্রীনগর ব্যাক করে আবার খায়েম চকে খাই আমরা। এবার ট্রাই করি ডিফারেন্ট কাবাব আর মাছের ডিশ।

৬ষ্ঠ দিন

এদিন আমরা গাড়ি ভাড়া করি পেহেলগাম এর উদ্দেশ্যে। গাড়ি ভাড়া ২০০০ রুপি।  ৬ জন। প্যাহেলগাম যাওয়ার পথে আপেলের বাগানে দাড়িয়ে লাইভ আপেলের জুস খাই মাত্র ৪০ রুপিতে। এত ভাল জুস পুরো ইন্ডিয়াতে খুজে পাওয়া টাফ হবে! পেহেল্গামে যেয়ে বাইসারানের পথে ঘোড়া ভাড়া করি। মাঝে আরও ৩ টা স্পট দেখাবে। ঘোড়া ভাড়া- ৫৫০ রুপি। বাইসারান এন্ট্রি ফি – ৩০ রুপি। বাইসারানই হল কাশ্মীরের মিনি সুইজারল্যান্ড 😀 সবুজে ঢাকা বিশাল একটা মাঠ আর চারদিকে পাইন গাছের জঙ্গল। মেঘের কারণে বাইসারানের পিছনের বড় বড় বরফে ঢাকা পাহারগুলো সেদিন দেখা যাচ্ছিল না 🙁

বাইসারান থেকে নামতে না নামতেই শুরু হয় বৃষ্টি। থেমে থেমে বৃষ্টি চলতেই থাকে আর তাপমাত্রাও কম কমে ১ ডিগ্রিতে যেয়ে পৌছায়। এর মাঝেই এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে বাঙালি থালি আর ট্রাউট মাছে দিয়ে লাঞ্চ করি আমরা। শীতে কাঁপতে কাঁপতে কোন মতে আমাদের হোটেলে এসে পৌঁছাই আমরা। আমাদের এখানের হোটেলের নাম ” স্বর্গ প্যালেস “। পাহাড়ের উপর ছোট্ট এক বাড়ি, নিচে পুরো পেহেলগাম শহর দেখা যায়। প্রতি রুম ভাড়া ৬০০ রুপি,  ৩ জন।

সোনমার্গ

পরদিন আমাদের আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি চন্দনওয়ারি যাওয়ার কথা থাকেলও ওয়েদার খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমরা ঠিক করি জাম্মু ফিরে যাবো। তাই হোটেল আসার আগেই গাড়ি ঠিক করে রাখি। জাম্মু যাওয়ার গাড়ি ভাড়া – ৬২০০ রুপি ( ৬ জন )

৭ম দিন

ভোর ৫ টায় আমাদের হোটেল থেকে পিক করে আমাদের ড্রাইভার। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে জাম্মুর উদ্দেশ্যে রউনা দেই আমরা। ভয়ঙ্কর বিরক্তির এক জার্নি শেষে দুপুর ৩ টায় এসে জাম্মু পৌঁছাই। জ্যাম থাকলে নাকি এই রাস্তা পাড়ি দিতে মাঝে মাঝে ২ দিন ও লাগে। তাই আমার মতে কাশ্মীর যাওয়ার জন্য ফ্লাইটই সবচেয়ে আরামদায়ক।

এরপর জাম্মু থেকে আমরা চলে যাই রাজস্থান। রাজস্থানের পর দিল্লী আর দিল্লির পর কোলকাতায় পূজা দেখে গতকাল আমাদের ১৭ দিনের লম্বা সফর শেষ হলো।

কাশ্মীরি পোলাও, রোগান যোশ, রিস্তা, ওয়াজওয়ান, মাটন কাবাব, চিকেন বারবিকিউ, Blue Currant আইস্ক্রিম, আপেলের জুস, মহিষের মাঠা, আলু পরটা, বাটার টোস্ট, কাশ্মীরি চা, সন্দেশ,ফিশ কাবাব অ্যান্ড আরও অনেক কাশ্মীরি ফুড আইটেমই ট্রাই করেছিলাম লাস্ট ট্যুরে। তার মাঝ থেকে কিছু আইটেমের কোলাজ এই ভিডিও 😀

প্রয়োজনীয় নম্বর

মুবারক ভাইঃ +৯১৯৭৯৭৪৪৪৫৫০, +৯১৯৭৯৭৯৬৪১৬৩ ( মুবারক ভাই হোটেল, গাড়ি সবকিছুই বেশ সস্তায় ম্যানেজ করে দিবেন )

হোটেল ডালরিমঃ +৯১৯৪১৯০১৩৩৩৯, +৯১৯৯০৬৪৩২৪২৪

শপিং এর জন্য চলে জাবেন M.A. Link Road. এখানে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত শাল পাওয়া যায়। আর অন্যান্য আইটেম তো আছেই 😀

আর দয়া করে কাশ্মীরের রাস্তা ডাস্টবিন হিসাবে ইউস করবেন না।

এস্টিমেটেড খরচ

১) কোলকাতা – শ্রীনগর + দিল্লী – কোলকাতা প্লেন ফেয়ার- ১০১০০ টাকা।
২) হোটেল ভাড়া ডাবল বেড পার ডে – ৫০০-৮০০ রুপি
৩) খাওয়া পার ডে – ৪০০-৫০০ রুপি
৪) সোনমার্গ, পেহেল্গাম, গুলমার্গ ডে ট্রিপ গাড়ি ভাড়া- ২০০০-২২০০ (৬ জন)
৫) বিভিন্ন স্পটে এন্ট্রি ফি খুবই সামান্য

৩০,০০০ টাকাতেই বাই এয়ার কাশ্মীর বেশ ভাল মত ঘুরা যাবে (শপিং ছাড়া)।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ gangabal lakeKashmirnaranag