বৈশরন
ভূস্বর্গ অর্থাৎ কাশ্মীর সত্যি স্বর্গ। কাশ্মীরকে ঈশ্বর তুলি দিয়ে অতি সুন্দর করে এঁকেছেন। আজ থেকে এক্কেবারে এক বছর আগে আমরা ৮ বন্ধু ঠিক করি কাশ্মীর যাব। কিন্তু জায়গাটা যেহেতু কাশ্মীর তাই অনেক ইতিবাচক নেতিবাচক বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে গেছি। যাই হোক ফাইনালি ১৭ ই অক্টোবর ভোরে অনেকটা উওেজনা নিয়ে আমরা ৮ জন বেরিয়ে পড়লাম ভূস্বর্গের উদ্দেশ্যে। শ্রীনগরে যখন পৌছলাম তখ্ন এই উওেজনা আর ভালো লাগা আরও খানিকটা বেড়ে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে আমাদের সাথে দেখা হল আমাদের ড্রাইভার দাদার। ভীষন ভাল মানুষ তিনি। আমরা গাড়িতে চেপে বসলাম আর রওনা দিলাম আমাদের প্রথম গন্তব্য আরু ভ্যালির দিকে।
আরু ভ্যালি পেহেলগাম (Pahalgam) এ অবস্হিত একটি ছোট গ্রাম। ছবির মত সুন্দর। পহেলগাও থেকে ১২কিমি ওপরে অবস্হিত এই ছোট গ্রাম। শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম যাওয়ার পথটা এককথায় অসাধারন। লিডার নদী প্যাহেলগাম এর সৌ্ন্দর্য্যকে এক অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে। আমরা যখন আরু ভ্যালি পৌছলাম তখন বিকেল আর ঠাণ্ডাটাও পড়েছে জমিয়ে। আমরা আরু ভ্যালিতে ছিলাম Milky Way বলে একটি হোটেলে। হোটেলের বাইরের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা হোটেলে পৌছানোর সাথে সাথে আমাদেরকে কাওয়া দেওয়া হল। এটি একটি কাশ্মীরি চা। এই চা এর বৈশিষ্ট্য এটি শরীরকে খুব গরম করে। অত্যন্ত ঠাণ্ডায় আমরা সবাই যখন জবুথবু তখন ঠিক করা হল আগুন জ্বালিয়ে বসা হৰে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। আগুন জ্বালিয়ে বসা হল তার সাথে আলু আর পেয়াজের পকোড়া। প্রথম দিনটা বেশ কাটল।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই বারান্দায় বেরিয়ে আমি বাইরের দিকে নজর দিলাম। দেখলাম আমাদের হোটেলটাকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু পর্বত। পর্বতগুলোর মাথায় সাদা টুপি পড়ানো। মন্ত্রমুগ্ধের মত এই দৃশ্য দেখলাম। কিন্তু এই দৃশ্য বেশীক্ষন উপভোগ করতে পারলাম না। কারন তাড়াতাড়ি আমাদের তৈরী হয়ে বেরোতে হবে। প্রথমে আমাদের গন্তব্য বৈশরন। এখানে পনি অর্থাত্ ছোট ঘোড়া করে উঠতে হয়। সে এক আলাদা অভিজ্ঞতা। অসাধারন এই রাস্তা।যেমন দুর্গম তেমন সুন্দর। যখন বৈশরন পৌছলাম তখন মনে হল চোখ দুটো সার্থক হল। সবুজ বিস্তারিত মাঠ আর মাঠকে ঘিরে রয়েছে বরফের চাদরে ঢাকা পর্বতমালা। মন ভরে বৈশরন উপভোগ করে ফিরে এলাম।
এরপরে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম বেতাব ভ্যালি আর চন্দনওয়াড়ির উদ্দেশ্যে। ড্রাইভার দাদা আমাদের বললেন স্হানীয় গাড়ি নিতে হবে। দাদাই আমাদের স্হানীয় গাড়ি ঠিক করে দিলেন। কিন্তু আমরা যখনই ওপরে উঠতে শুরু করলাম তখন শুরু হল বৃষ্টি।বৃষ্টি শুরু হওয়াতে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টির জন্য বেতাব ভ্যালিতে নামতে পারলাম না। এগিয়ে চললাম চন্দনওয়াড়ির দিকে। যত ওপরের দিকে উঠতে থাকলাম লক্ষ্য করলাম বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বরফের গুড়োতে পরিনত হয়েছে। তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
যখন চন্দনওয়াড়িতে পৌছলাম,গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম তুলোর মত বরফ আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে। এই বরফপাত আমাদের কাছে এতই আকস্মিক ছিল আমাদের কাছে স্বপ্ন ৰলে মনে হচ্ছিল। এতটাই আনন্দে আত্মহারা ছিলাম বেতাব ভ্যালি না দেখতে পাওয়ার দুঃখটা ভুলেই গেলাম। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও বরফপাতের আনন্দ উপভোগ করলাম মন ভরে। একরাশ আনন্দ নিয়ে ফিরে চললাম আরু ভ্যালি আমাদের হোটেলের দিকে। সেখানে যখন পৌছলাম আরও চমক অপেক্ষা করছিল। হোটেলের সবুজ ঘাসে ঈশ্বর যেন পেতে রেখেছে সাদা বরফের চাদর। আমরা সবাই লাফাতে লাফাতে পৌছলাম হোটেলের বারান্দায়। তারপরেই শুরু হল স্বল্প তুষারপাত। আমাদের সেদিন bonfire করার কথা ছিল সেটাও করতে পারলাম না। কিন্তু দুঃখ রইল না। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে দিনটা শেষ হলো।
Leave a Comment