ভারতের ক্ষুদ্র অঙ্গরাজ্য গোয়া ভ্রমণ

গোয়া (Goa) সমুদ্র সৈকত, উপাসনালয় এবং বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলির জন্য বিখ্যাত। আপনার শীতের ছুটি কাটানোর সেরা পছন্দের তালিকায় গোয়াকে রাখতে পারেন। গোয়া এমন এক অপরুপ আর নিপুণ সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেখানে আপনি একই সাথে নীল সমুদ্র, লাল পাহাড়ের বুকে সবুজ লতাপাতা আর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য খুঁজে পাবেন।

নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তুলে ধরলাম। আমার ভ্রমণকালঃ ২৮/০৯/১৯ – ০৫/১০/১৯

২৭ শে সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় ঢাকা নবীনগর থেকে গ্রীন-লাইনের বাসে করে যশোর বেনাপোল-পেট্রোপোল বর্ডারের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। বর্ডার সীমান্ত পৌঁছাতে সকাল ৮ টা বাজল। আমি যেহেতু সোনালী ব্যাংক থেকে ট্রাভেল টাক্স কেটে নিয়েছিলাম তাই সহজে বর্ডারের কাজ করে ভারতে পৌঁছে গেলাম সকাল ৯ টায়।

সতর্কতাঃ আপনারা অবশ্যই বাংলা টাকা নিয়ে আসবেন না। ব্যাংক থেকে ট্রাভেল ট্যক্স কাটার সময় টাকা ডলার করে নিয়ে আসবেন। বাংলা টাকা ১০০০০ টাকার বেশি থাকায় আমাকে খেসারত হিসেবে ১০০ টাকা দিতে হয়েছিল ইন্ডিয়ান বর্ডারে।

বর্ডার পার হয়ে আপনার প্রথম কাজ হবে ডলার ভাঙানো। রোডের দুইপাশে অনেক মানি এক্সনজারের ঘর পাবেন দরাদাম করে যাচাইবাচাই করে ডলার ভাঙিয়ে নিবেন সাথে একটা ইন্ডিয়ান সিম কার্ড নিয়ে নিবেন। ৩০০ রুপিতে Airtel 4G সিম পেয়ে যাবেন। তারপর ৩০ রুপি দিয়ে চলে আসবেন বনগাঁ রেলওয়ে ইস্টিশন।

বনগাঁ রেলওয়ে ইস্টিশন থেকে বিরাটি রেলওয়ে ইস্টিশনে ( ১ ঘন্টা) নেমে অটো /লোকাল বাস ধরে চলে আসলাম কোলকাতা নেতাজী সুভাসচন্দ্র বিমানবন্দরের পাশে। ২৯ তারিখ সকাল ৭:৪৫ মিনিটে কোলকাতা বিমান বন্দর থেকে আমার ফ্লাইট থাকায় আমি বিমানবন্দরে পাশে একটা হোটেলে থাকলাম ১০০০ রুপি দিয়ে ( এসি) শেয়ারে। ২৯ তারিখ খুব সকালে বিমান বন্দরে ঢুকে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১ ঘন্টা আগে নির্ধারিত প্লাটফর্মে বসে স্পেস জেট বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

সর্তকতাঃ আপনারা যারা নতুন প্লেনে যাত্রা করতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই ২ ঘন্টা হাতে রেখে এয়ারপোর্টে পৌছে সকল কাজ শুরু করবেন। এয়ারপোর্টে অনেক প্রক্রিয়া নিজে করতে হয় সুতরাং আপনারা বেশ টাইম হাতে রেখে এয়ারপোর্টে পৌছে কাজ শুরু করবেন।

আমার ফ্লাইট যেহেতু মুম্বাইয়ে ৫ ঘন্টা ট্রানজিট করেছিল তাই গোয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছায় বিকাল ৫ টায়। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এসেই Exit গেটে পেয়ে যাবেন Calangute যাওয়ার এসি বাস। ১০০ রুপি পার পার্সন। শ্রদ্ধেয় দিপাক দাদা যে সাম্প্রতি গোয়া ট্যুর দিয়েছেন তার কাছ থেকে একটা হোটেলের সন্ধান পাই। আমি ইন্ডিয়া পৌঁছে দাদার রেফারেন্সে হোটেলের ওনারকে ফোন দিয়ে বুকিং দিয়ে ফেলি (৪০০ টাকা)। হোটেলের নাম নম্বর নিচে দিয়ে দিব। এয়ারপোর্ট থেকে calangute পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লেগেছিল। এখন বলব ৪ দিন কিভাবে গোয়া ঘুরেছিলাম।

সর্তকতাঃ আসলে আমার আগে থেকে সুষ্টু পরিকল্পনা না থাকায় তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। যদিও নর্থ গোয়া ও সাউথ গোয়া সব কয়টা জায়গায় আমি ঘুরেছিলাম। তাই আপনি যদি নিচের স্টেপ গুলো ফলো করেন, আশা করি উপকৃত হবেন।

রাতে হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে, হোটেল থেকে হালকা নাস্তা করে নিবেন। কিছুক্ষন রেস্ট করে হোটেল থেকে গুগল ম্যাপ করে রাতে চলে যাবেন calangute beach হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১০ মিনিট। Calangute আার Baga beach একদম পাশাপাশি। রাতের বাঘা বিচটা অনেক সুন্দর। সারাদিনের ক্লান্তি দুর করার জন্য বাঘা বিচে বসে কিছু সময় কাটানোর চেয়ে আর কিছু হতে পারে না। বাঘা বিচের পাশে কালাঙ্গুটে অনেক ডেন্স বার আছে, প্রচুর জমজমাট হয়, কিন্তু মেয়েদের এন্ট্রি ফ্রী হলেও ছেলেদের ১০০০ করে পে করতে হয় 😪😪

হোটেল থেকে calangute বিচে যাওয়ার পথে (২ মিনিট) হাটলে পাবেন calangute tower এ’র ডানে একটা টুরিস্ট বাস টিকিট বুকিং কাউন্টার আছে। নিচে নাম ও নম্বর দিয়ে দিব। ওই এজেন্টের থেকে পরপর ৩ দিনের গোয়া ট্যুরের শিডিউল তৈরী করে নিতে পারেন। আপনার নর্থ গোয়া, সাউথ গোয়া বা ওল্ড গোয়া এবং ওয়াটার রিসোর্টে কম্ব প্যাক ভ্রমণের জন্য টিকিট কেটে নিতে পারেন।

  • ১ম দিন নর্থ গোয়া = ৩০০ রুপি।
  • ২য় দিন সাউথ গোয়া = ৩০০ রুপি।
  • ৩য় দিন কম্ব প্যাক = ২০০০ রুপি ( সুবা ডাইভিং, প্যারাসুটিং, স্পিড বোডিং, বোটিং)

১ম দিন

সকালে ওরা আপনাকে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যাবে ৯ টায়। সকাল ৮ টার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবেন। আপনার হোটেল আসবার ৩০ মিনিট আগে থেকে ফোন দিবে ওরা। এসি বাসে করে ওরা আপনাকে নর্থ গোয়ার সকল বিচ গুলো ও টুরিস্ট স্পষ্ট গুলো সুন্দরভাবে ঘুরে দেখাবে।

বি:দ্র: সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে থাকবেন এবং লান্স টাইমে ওরা সুন্দর একটা বিচে লান্স করাবে কিন্তু বিল পে করতে হবে আপনাকে নিজে। নর্থ গোয়া ঘুরিয়ে আপনাকে বাসে করে হোটেলে ছেড়ে দিবে সন্ধ্যায়।

এখন বলি প্রথম দিনে যখন নর্থ গোয়া ঘুরবেন কিছু কিছু বিচ আছে যেমন

  • Vagator beach
  • Baga beach
  • Seaquarium beach
  • Candolim beach

এই চারটা বিচে স্পেশাল সময় কাটাবেন। নর্থ গোয়ার সকল বিচের মধ্যে এই চারটা বিচ সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি নন্দিত।

২য় দিন

প্রথম দিনের মতো সকালে ওরা আপনাকে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে যাবে সকাল ৯ টার মধ্যে। সাউথ গোয়া মুলত চার্চ ও মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। ২য় দিন যখন সউথ গোয়া ঘুরবেন তখন ১ টা প্লেসে খুব স্পেশাল সময় কাটাবেন। সেটি হচ্ছে ডলফিন আইল্যান্ডে। এই ডলফিন আইল্যান্ডে যেতে আপনাকে একস্ট্রা ৩০০ রুপি পে করতে হবে।

সাউথ গোয়াতে একটা জায়গা আছে সেটা হলো আইল্যান্ড রোড। এই জায়গাটা সত্যি স্বপ্নপুরীর মত সুন্দর কিন্তু এই জায়গায় ট্রাভেল বাসে করে আপনাকে নিয়ে যাবে না। আপনাকে অন্য একদিন আসতে হবে এই আইল্যান্ড রোডে যাওয়ার জন্য এবং ৫০০-৬০০ রুপি বরাদ্দ রাখতে হবে। তাই আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে আপনারা একদিন বরাদ্দ রাখবেন এই জায়গাটার জন্য।

৩য় দিন

নর্থ গোয়া ও সাউথ গোয়া ঘোরার পর ৩য় দিনে ওয়াটার গ্রাউন্ডে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সময় কাটাবেন কম্ব প্যাকে। কম্ব প্যাক শেষ করে বাসে করে হোটেলে ছেড়ে দিবে সন্ধ্যায় আপনাকে।

৪র্থ দিন

ট্যুরের ৪র্থ দিনে আপনি যেটি করতে পারেন সেটি হলো সাউথ গোয়ার আইল্যান্ড রোড আর নর্থ গোয়ার যে বিচগুলো অতিব সুন্দর লেগেছে সেই বিচগুলোতে বেশ একটা মুহূর্ত কাটাতে পারেন। আপনারা ২০০ থেকে ৩০০ রুপির খরচ করে ইজিলি ভাবে মোটর বাইক / ইস্কুটি পেয়ে যাবেন যদি আপনাদের ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে। কিন্তু অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া বাইক নিবেন না পাওয়া গেলেও। পুলিশ ধরলে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা সহ কঠোর শাস্তি পেতে পারেন।

এবার আসি খরচের ব্যাপারে। আপনি কোলকাতা থেকে দুই ভাবে গোয়া যেতে পারবেন। প্রথমত, By Air। দ্বিতীয়ত, Train করে। আমি যাওয়ার সময় বাই এয়ারে গিয়েছিলাম কিন্তু আসবার সময় ট্রেনে এসেছিলাম। আপনি যেভাবে যান না কেন আপনি অবশ্যই রিটার্ন টিকিট করে নিয়ে যাবেন। আমি রির্টান টিকিট করে নিয়ে যাই না সেজন্য আমাকে অনেক ঝামেলার সমুখে পড়তে হয়েছিল এবং বেশ কিছু টাকাও বেশি লেগেছিল ট্রেনের তৎকাল টিকিট মেনেজ করতে।

আপনি যদি প্লেনে দুইমাস আগে থেকে টিকিট করে রাখেন ৬০০০-৬৫০০ মধ্যে কোলকাতা থেকে গোয়ার এয়ার টিকেট পেয়ে যাবেন। আর একইভাবে আপনি যদি ট্রেনের টিকিট করেন তাহলে –

  • 3A slipper AC – ১৯০০ রুপি
  • 2A slipper AC – ২৭০০ রুপি

ট্রেনে সময় লাগবে ৩৪-৩৬ ঘন্টা। আমি সাজেস্ট করব যাওয়ার সময় এয়ারে গেলে ভালো হবে কারণ অনেকেই আছে যারা ৩৪-৩৬ ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে 😢 সুতারাং, যাওয়ার সময় বাই এয়ারে গেলে একটু রিলাক্স করতে পারবেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে গোয়াতে আপনি এডভেঞ্চার করতে নয়, সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটাবার জন্য যাচ্ছেন।

আর অবশ্যই ট্রেনে গেলে সকল প্রকার ঔষদ পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখবেন: গ্যাসের বড়ি, সর্দি, পেইন কিলার। ট্রেনের খাবারের মান ততটাও ভালো নয়, আপনার ভালো নাও লাগতে পারে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার রাখবেন। আমি যদিও রেজারভেশনে এসেছিলাম তাই হয়তো মানসম্মত খাবার পাই নাই।

ওভারঅল বলব গোয়া ইজ সুপারভ 💙

SJB travel agency
calangute Goa
Mobile No : +919404455729
+919890953896

Hotel
Aerostel
Diksha Khanolkar
calangute, opp KFC
Goa – 403516
Mobile no : +919833345744

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ beachgoaindianorth goasouth goa