গোয়া ভ্রমণ ডাইরি

আমার দিদির শশুরবাড়ি মহারাষ্ট্রের থানে শহরে। সেই সুত্রে সপরিবারে গোয়া (Goa) ভ্রমনের পরিকল্পনা ছিল বহুদিন ধরেই। আত্মিয় স্বজনের ঘনঘটা বরাবরই একটু বেশি আমাদের পরিবারে, তাই সপরিবার মানে শুধু মা বাবা নয়, মামা-মামি, মাসি-মেসো, ভাইবোন, বাচ্চা-বুড়ো মিলে সে এক বিশাল টীম স্থির হল। কিন্তু নানা মুনি হলে যা হয়, তাই প্লান করতে করতেই ১ বছর কেটে গেল। তারপর এর ছুটি তার পরীক্ষা এসব বিবেচনা করে যখন দিন ঠিক হল তখন মে মাস মানে অফ সিজন আর প্রবল গরম। কিন্তু অসময়ে গোয়া ভ্রমণের লাভজনক দিক হল সস্তা ভ্রমণ। বিশাল টীম হলে বুঝতেই পারছেন বাজেট একটু টান টান থাকে, তাই মে মাস আমাদের জন্য পারফেক্ট ছিল।

আমাদের ডিরেক্ট ফ্লাইট ছিল গোয়ার। তাই দুই ঘন্টাতেই পৌছে গেলাম ঝা্ঁ চকচকে এরপোর্ট ডাবলিম। গোয়া যাওয়ার এটাই ভাল উপায়, না হলে অমরাবতী এক্সপ্রেসে সরাসরি গোয়া যেতে পারেন আর সেক্ষেত্রেবিখ্যাত দুধসাগর ফলস ও উপভোগ করতে পারবেন ট্রেন থেকেই কিন্ত দুই দিনের সফর খুব একটা আরামদায়ক হবে না।

গোয়াতে থাকার জন্য ভালো আর জনপ্রীয় জায়গা হল কালান্গুটে বীচ বা বাগা বীচ। কালান্গুটেতে এসে মনে হবে আমাদের পুরী এসে গেলাম, কোথায়ে অফ্ সীজ্ন, চারিদিকে বাংলা কথার ছরাছরি। এত ভীড় আর গরম এড়াতে বিদেশী অতিথিদের এখানে একটু কম দেখা যায়, তাদের পছন্দ একটু নিরিবিলি বীচ। কিন্তু শুনেছি শীতকালে তাদের ভীড় সর্বত্র। আমরা ছিলাম ক্যান্ডোলিম বীচের কাছে, ফ্লাওয়ার হলিডে হোম। সব রুম-ই ছোট্ট কীচেন, রান্না খাওয়ার যাবতীয় সরঞ্জাম, ফ্রীজ্, টিভি, ব্যালকনি সহযোগে বেশ কম্প্যাক্ট। বেশ বড় জায়গা, তিনদিকে তিনটে দোতলা বাড়ির সবগুলোই ভাড়া দেওয়া হয়। মাঝের বাড়িটাতে ঢুকেই ম্যানেজার ভ্যালেন্তিনোর অফিস আর তার বাসস্থান। হোটেল কমপাউন্ড এর সবচেয়ে বড় পাওনা হল মাঝখানে ছোট্ট একটি সুইমিং পুল আর পরিচছ্ন্ন লন। এত কিছু একসাথে কালান্গুটে বীচের ধারে ১৪০০-১৫০০ টাকায় রুম পাওয়া একটু মুশকিল, তাই আমাদের ক্যান্ডোলিমে এই হোটেলটি বেশ লেগেছিল। এখান থেকে ক্যান্ডোলিম বীচ ৫ মিনিট হাঁটা পথ আর ৫০০ মিটার কালান্গুটে, রাস্তায় বেরলেই ট্যাক্সি পাওয়া যায় ১৫০ টাকায় পৌছে দেবে। ক্যান্ডোলিম বীচে খাওয়া দাওয়ার সুন্দর জায়গা হল মামা সিসিলিয়া, প্রন তন্দুর আর পছন্দের ড্রিংক নিয়েও সমুদ্রের নির্জনতা উপভোগ করা যায় দীর্ঘক্ষণ। এছাড়া সস্তায় গোয়ানিজ্ ফিশ থালি খেতে হলে যেতে হবে বড় রাস্তার দিকে।

গোয়া ঘুরতে তিন চার দিনই যথেষ্ট, এক দিন উত্তর গোয়া, একদিন দক্ষিন গোয়া আর একদিন ওল্ড গোয়ার চার্চ, মিউজিয়াম আর মন্দির। হাতে যদি আর একদিন থাকে তাহলে ঘুরে আসা যায় দুধসাগর ফল্স, তবে দীর্ঘ পথ জার্নি আর রাস্তা খারাপ হওয়াতে আমারা বয়স্ক আর বাচ্ছা নিয়ে যেতে সাহস পাইনি। সাইট সীনের জন্য গাড়ি হোটেলের ম্যনেজারই ঠিক করে দেয়, এছাড়া রাস্তার উল্ট দিকেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, চাইলে নিজের মত দরদাম করেও নেওয়া যায়। আমাদের ১৫ সীটার গাড়ি ছিল, লোকবল বেশি থাকায় অনেক দরদাম হল তারপর ২২০০ টাকা করে দুদিন সাইট সীনের জন্য রফা হল। দুদিনই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরতাম আর সারাদিন ঘুরে লাঞ্চ হত রাস্তায় আর ফেরা হত সন্ধ্যায়।

প্রথম দিন গেলাম ডলফিন্ পয়েন্ট, ফোর্ট আগুয়াড়া, আগুয়াড়া বীচ, ভাগাতর বীচ, আন্জুনা বীচ, বাগা বীচ আর শেষে জমজমাট কালান্গুটে।

আর দ্বিতীয় দিন ডোনা পওলা, বম জিসাস্ ব্যাসিলিকা, সে ক্যাথে্ড্রাল, মিউজিয়াম, মঙ্গেশি টেম্পল, চার্চ অফ আওয়ার লেডি অফ দ্যা ইম্যাকুলেট, পানাজি আর শেষে আবার জমজমাট কালান্গুটে।

সন্ধ্যার পর রোজই আসতাম কালান্গুটে। খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটার আদর্শ জায়গা, বীচের উপর মোমবাতি জ্বালানো টেবল পাতা রেস্তোরা, ট্যটু পারলার, সবমিলিয়ে পর্তুগীজ আর পশ্চিমি সমন্বয়েরর অসাধারন স্বপ্নরাজ্য।

দেখতে দেখতে ৩ দিন কেটে গেল, শেষ দিন আমরা কোথাও যাই নি, সারাদিন ক্যান্ডোলিম বীচই উপভোগ করেছি, আর বিকালে টুকটাক কেনাকাটা। পরের দিন বিকালে মড়্গাও থেকে ট্রেন, যেতে হবে দিদির বাড়ি থানে। ঐ দিন দুপুরে কিংফিশ ফ্রাই সহযোগে গোয়ানিজ থালি খেয়ে আমরা রওনা হলাম স্টেশনের দিকে। নীল সমুদ্র, পরিছ্ছন্ন রাস্তাঘাট, গোয়ানিজ্ কালচার চোখে ভাসবে অনেক দিন। দক্ষিন গোয়ার বেশকিছু বীচ বাকি রইল। তাই আবার আসার ইচ্ছা নিয়ে এবারের মত বিদায় নিলাম এখানেই।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ diarygoaindiatravel story