মিশর ভ্রমণ

পিরামিড এর দেশ মিশর। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল পিরামিড দেখার। সময়, সুযোগ এবং সামর্থ্য এর মাজে মিল মিশ ঘটাতে অনেক সময় লেগেছে। জব করার সুবাদে আমি দক্ষিন সুদান এর জুবা শহরে থাকি। ওই খানের মিশর এমবাসি থকে ভিসা নিয়েছি। ভ্রমন এর জন্য টিকেট কেটে নিয়েছি দক্ষিন সুদান থেকে মিসর, মিশর (Egypt) থেকে দুবাই এবং দুবাই থেকে বাংলাদেশ। থাকার জন্য অনলাইনে আগে থেকে একটা হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম দুই রাতের জন্য। ওরা বলেছিল এয়ারপোর্টে আমার নাম লেখা কার্ড নিয়ে একজন ড্রাইভার আমার জন্য অপেক্ষা করবে।

যথা সময় প্লেনে উটলাম, ইজিপ্ট এয়ারএর সার্ভিস খুবেই ভালো। কায়রো এয়ারপোর্টে নামার পরে একটা চেক পোস্ট পরল ওখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো ইয়েলো ফিভার এর ভেক্সিন নেয়া আছে কিনা আর থাকলে ওইটার সার্টিফিকেট দেখাতে। আমার ভেক্সিন সার্টিফিকেট আমার সাথে ছিল ।

দক্ষিন সুদান থেকে যারা ফ্লাই করে তাদেরকে ইয়েলো ফিভার এর ভেক্সিন সার্টিফিকেট দেখাতে হয়।

ইমিগ্রেশনে আসার পরে পরতে হলো বিপাকে। ইমিগ্রেশন অফিসার সবুজ পাসপোর্ট এর উপর বাংলাদেশের লোগো দেখে তার চোখের সাইজ কিছুটা বড় হয়ে গেল। ভিসার স্ট্যাম্প আর আমার চেহারা বেশ কয়েকবার তাকিয়ে দেখলেন। আমাকে বললেন আপনি অপেক্ষা করেন আপনাকে আমরা কিছুক্ষণ এর মধ্যে ডাকবো, ১ ঘণ্টা হয়ে গেছে কিন্তু এখন ডাকার নাম নাই। আমি আবার গিয়ে জিজ্ঞসা করলাম কোন সমস্যা কিনা, উত্তরে বললেন আপনি ওয়েট করেন জানাচ্ছি। প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে আমাকে ডাকা হলো, অন্য আরেকটা রুমে নিয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, আমি দক্ষিন সুদানে কি করি। যথারিতি আমার কাজের বর্ণনা দিলাম। আমার অফিসের আইডি কার্ড, ওয়ার্ক পারমিট চাইলেন, ওই গুলা দেখার পরে আমার পাসপোর্টে আরাইভাল সিল দিলেন।

ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে আমার লাগেজ খোঁজা শুরু করলাম, সব শেষে লস্ট অ্যান্ড ফউন্ড এ পেলাম। এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে বের হয়ে খোঁজা শুরু করলাম আমার নামের কার্ড নিয়া দারাই থাকা ড্রাইভারকে কিন্তু পেলাম না। আমার কাছে মিশর এর মোবাইল নাম্বার না থাকায় ওদেরকে ফোন করতে পারতেসিলাম না। একজন মিশরিকে বললাম একমিনিট কল করা যাবে কিনা কিন্তু উনি আবার ইংরেজি জানেনা আর আমি আরবি। অনেকক্ষণ পরে একজনকে পেলাম যিনি ইংরেজি কথা বলতে পারেন আর আমাকে কল করতে দিলেন, আমি হোটেলে কল করে জানতে পারলাম আমার জন্য পাঠানো গাড়ি ১ ঘণ্টা ওয়েট করে আবার হোটেলে ব্যাক করছে। কোন উপায় না দেখে ট্যাক্সি নিলাম, ড্রাইভারকে হোটেল এর লোকেশান বললাম আর সাথে সাথে বলে তাহারীর স্কয়ার কাছেই।

কায়রো মোটামুটি অনেক গুছানো এবং ক্লিন। হোটেলে চেকইন করার পরে বুজতে পারলাম অনেক পর্যটকে ভরা হোটেলটা। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার এর জন্য বাইরে চলে গেলাম, সম্পূর্ণ অচেনা একটা জায়গা, রাস্তার পাশে অনেক খাবার হোটেল আছে একটাতে চলে গেলাম। রাতের খাবার শেষ করে হোটেলে ব্যাক করলাম। হোটেলের রিসিপশনে জিজ্ঞসা করলাম ওদের কাছে কোন ট্যুর প্যাকেজ আছে কিনা আর সাথে ইংলিশ বলতে পারে এমন ট্যুর গাইড চাই। ৭০ ডলারে ফিক্স (১০০ চেয়েছিলো, মুলা মুলি করে কমালাম) করলাম সারা দিনের ট্যুর। সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করলাম , ৭ঃ৩০ ড্রাইভার চলে আসল। যাত্রা শুরু করলাম পিরামিড দেখার জন্য।

কায়রো (Cairo) থেকে একটু দূরে গিজা নামে একটা জায়গাতে যেতে হবে আমাদের, রাস্তা যানজট আছে কিন্তু ঢাকার মত না। খোশ গল্প শুরু করলাম ড্রাইভার এর সাথে। অনেক্ষন পরে আমারা গিজাতে পৌঁছে গেলাম। ওই খানে আবার আলাদা করে ট্যুর প্যাকেজ কিনতে হয়। পিরামিডের ওই এলাকাটা চারপাশে ওয়াল দিয়ে ঘেরা। ৫০ ডলারে প্যাকেজ নিলাম, বাহন হিসেবে ঘোড়া এবং উট আছে, আমি উট নিলাম। উটে চড়ে সম্পূর্ণ এলাকাটা দেখা এবং ওই খানের সব এন্ট্রি টিকেট ছিল প্যাকেজের মধ্যে। যথারীতি পিরামিড দেখে উট থেকে নেমে পরলাম, ট্যুর গাইড কে বললাম ছবি তুলার জন্য। পিরামিডের একটু দুরেই আছে Great Sphinx। ওই খানে ছোট ছোট কিছু দোকান আছে যেখানে হরেক রকমের জিনিশ পাওয়া যায়। আমার ট্যুর গাইড আগেই বলে দিয়েছে ওখান থেকে কিছু না কেনার জন্য, ওরা নাকি অনেক দাম নেয়।

পিরামিড দেখা শেষ করে আবার কায়রোর দিকে ব্যাক করছি। পথে সুলতান সালাদিন এর চিটাডেল দেখে গেলাম। চিটাডেল শেষ করে Khan el-Khalili বাজার এ গেলাম, বাজারটা দেখতে অনেকটা ঢাকা নিউ মার্কেটের মত। কিছু কেনাকাটা করে তাহারীর স্কয়ারে চলে আসলাম। তাহারীর স্কয়ারে ইজিপ্সিয়ান যাদুঘরে গেলাম। যাদুঘরের ভিতরে সব অতভুত রকমের শিল্প। রয়াল মনি ঘর নামে ওখানে আরেকটা ঘর আছে ওইটার জন্য আলাদা টিকেট কাটতে হয়। ওই খানে ফারাও বংশের কিছু ডেড বডিকে মমি করে রাখা আছে।

যাদুঘর দেখা শেষ করে তাহারীর স্কয়ারে ফিরে আসলাম। ড্রাইভারকে জিজ্ঞসা করলাম ভালো খাবার হোটেলে নিয়ে যেতে, জিজ্ঞাসা করলাম মিশরের মানুষ দুপুরে কি খেতে ভালবাসে। আমার যেমন নান্না বা ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি খেতে ভালবাসি। ড্রাইভার আমাকে একটা লোকাল রেস্টুরেন্ট নিয়া গেলে, ওই খানে অনেক ভীড়, সবাই লাঞ্চ করতে আসছে এবং সবাই মিশরি, ওইখানের বিখ্যাত একটা খাবার হচ্ছে কুশারি। দুপুরে কুশারি খেয়ে হোটেলে ব্যাক করলাম। ফ্রেশ হয়ে হালকা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে আবার বের হলাম। টাইম অনুসারে ড্রাইভার হোটেল এর নীচে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। হোটেল থেকে এইবার গেলাম নাইলক্রজ জাহাজে ওই খানের টিকেট প্যাকেজ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনেক জাপানি পর্যটক দেখা যাচ্ছে এখানে। জাহাজটা ২ ঘণ্টার জন্য নিল নদের উপর থাকবে। জাহাজের ভিতরটা অনেক সুন্দর, প্রথমে খাবার নিয়ে আসার জন্য সবাইকে ডাকা হচ্ছিল। লাইনে অপেক্ষা করে খাবার সংগ্রহ করলাম। অনেক রকমের খাবার ছিল বুফে। খাবার নিয়ে আসন গ্রহন করলাম তার পর শুরু হলো নাচ আর গান। সময়টা অনেক ভালো কাটছিল ওখানে। ২ ঘণ্টা পরে ড্রাইভারকে কিছু বকসিস দিয়ে হোটেলের সামনে নেমে পরলাম। তার পর কিছু শপিং করে হোটেলে ব্যাক করলাম।

পরদিন সকাল ১০ টায় ফ্লাইট। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করলাম, হোটেলের বিল প্রদান করে এয়ারপোর্ট চলে আসলাম।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ cairoegypttravel story