নাগাল্যান্ড এর জ্যুকো ভ্যালী ট্রেকিং

“If you truly love nature, 
you will find beauty everywhere”

উত্তরপূর্বে ভারতে নাগাল্যান্ড ও মণিপুর রাজ্যের সীমানায় প্রবাহিত জ্যুকো উপত্যকায় মেঘের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। গ্রীষ্মে উজ্জ্বল সবুজ পাহাড়গুলি নীল পাহাড়ের জন্য পথ তৈরি করে এবং উঁচু ঘাসের মধ্যে বাতাসে উজ্জ্বল ফুলের তরঙ্গ।

জ্যুকো ভ্যালি গ্রীষ্মে যে ফুল ফুটে সে ফুল তার বহিরাঙ্গীভূত কার্পেট জন্য বিখ্যাত, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে Dzukou Lily যা উপত্যকায় শুধুমাত্র পাওয়া যায়। ফুলগুলি মৌসুমি মৌসুমের সাথে খাপ খাইয়ে শুরু করে এবং জুন মাসের শেষ দুই সপ্তাহ সাধারণত ফুলের ঋতু হয়।

পারমিশন কিভাবে নিতে হয়

অনুমতির ব্যাপারটাও ক্লিয়ার ছিলো না। ব্লগে পড়ছিলাম যেকোন থানা থেকে পারমিশন নেয়া যাবে যেটা আসলে ভুল । সব থানায় জানেই না বিষয়টা এখনো। কাজেই যারা যাবেন সময় নষ্ট না করে –

  • ডিমাপুর রেলওয়ে পুলিশ স্টেশন অথবা
  • চেকপোস্ট থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে পারেন।

উল্লেখ্য চেকপোস্ট ডিমাপুর থেকে প্রায় ৩০ /৪০ মিনিট লাগে গাড়িতে যেতে। আমরা চেকপোস্ট থেকে নিয়েছিলাম এবং ডিমাপুর পুলিশ স্টেশনে গিয়ে শুধুই ২ ঘন্টা বসে ছিলাম।

নাগাল্যান্ড থেকে জুকৌ ভ্যালি পর্যন্ত কিভাবে যেতে হয়?

যদিও মণিপুর থেকে উপত্যকায় যেতে পারেন তবে প্রধান রোড টি নাগাল্যান্ডের। মণিপুরের দিকে কোনও সুবিধা নেই, ট্র্যাকিং ট্রেইল অনেক বেশি জোরালো এবং উপত্যকায় সড়ক দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মণিপুরের সর্বাধিক দর্শক নাগাল্যান্ডের কাছে উপত্যকায় প্রবেশ করতে যান।

কোহিমা থেকে জ্যুকো উপত্যকার দিকে যাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজবোধ্য ব্যাপার। কোহিমা থেকে প্রথমে ভিসমা পয়েন্ট আসতে হবে, কোহিমা থেকে প্রায় 25 কিলোমিটার।ভিসমা পয়েন্ট হচ্ছে জ্যুকো ভ্যালী যাওয়ার রাস্তা। আমরাও ভিসমা পয়েন্ট দিয়ে উপত্যকায় প্রবেশ করি।

আমাদের কাছে তেমন ভাল ইনফরমেশন ছিল না জ্যুকো ভ্যালী সম্পর্কে, আমরা জানতাম জাস্ট দুই ঘন্টা ট্রেকিং করলেই পৌঁছে যাব ভ্যালীতে। ভিসমা পয়েন্ট গিয়ে দেখি গাড়ি না কি আরো আট কিলোমিটার উপরে উঠে। এই রাস্তা একেবারে খারা, তাই আমরা গাড়ি নিয়ে আরো আট কিলোমিটার যাওয়ার জন্য।

কিন্তু ৫ কিলো যাওয়ার পর ড্রাইবার নামিয়ে দিলে বলে বাকিটা হেঁটে যেতে হবে।গাড়ি থেকে নেমে আমরা হাঁটা শুরু করি। তিন কিলো হাঁটার পর ট্যাকিং পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছায়।অইখানে গিয়ে কিছু ট্যুরিস্ট কে জিজ্ঞেস করি আর কতক্ষণ সময় বাকি,তারা মুচকি হাঁসি দিয়ে বলে এখনো তো ট্যাকিং শুরু করেন নাই,এইখান থেকে শুরু 😥 আমরা ভাবছিলাম ৮ কিলো উপরের দিকে উঠে গেছি প্রায় ১.৩০ ঘন্টার ট্র‍্যকিং মনে হয় আর ত্রিশ মিনিট লাগবে।

এই ট্রিপে সবচেয়ে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জ ছিল আমার জন্য কারণ আমি কোন ট্র‍্যকিং জুতা নেই নাই। কোহিমা থেকে জুতা কিনার কথা কিন্তু কহিমা শহর সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন রবিবার সারা শহর বন্ধ।তাই আমি বান্দরবান থেকে কেনা সেন্ডেল জুতা পরে ট্র‍্যকিং শুরু করি 😥

প্রায় এক কিলোমিটার সোজা রাস্তা হাঁটার পর চ্যালেঞ্জিং রাস্তা শুরু। একদম উচু খারা পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। পাথর দিয়া সিড়ি বানানো একদম খারা পাহাড় পাড়ি দিতে আমাদের সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। দুই ঘন্টা পাহাড় পাড়ি দিয়ে উপরে যাই। এখানে একটা বেইজ ক্যাম্প আছে। এখানে দেখি কিছু ভাই বোন বসে আছে, তাদের সাথে পরিচিত হই। তারা সবাই আসাম থেকে এসেছে এবং দুই জন পনের দিন যাবত জ্যুকোতে আছে।

তাদের জিজ্ঞেস করি ভাই আর কতক্ষন লাগবে? তারা বলে আর বেশী নাই, ঘন্টা দেড়েক হাঁটতে হবে। মূলত এইখান থেকে আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং রাস্তা শুরু কারণ বৃস্টি হচ্ছিল এবং পুরো রাস্তা কাঁদা সাথে আমার স্যান্ডেল 😖 যাক ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করলাম। মূলত এই রুটটা সবচেয়ে সুন্দর। ভ্যালীর মূল পয়েন্টে যেতে এই ট্রেইলটার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। চারপাশে সবুজ পাহাড় সমান তালে শুয়ে আছে পাহাড়ের বুকে জ্যুকো গাছ গুলি। এক কথায় অসাধারণ। এই সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আমরা চার জনের টিম ছিলাম, তার মধ্যে একজনের বয়স ৪৫ এবং আরেক ৪০ বছর এবং ওয়েট ও অনেক বেশী। তাই তাদের নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকি আমাদের গন্তব্যের দিকে।

আরো প্রায় দুই ঘন্টা ত্রিশ মিনিট হাঁটার পর আমরা পৌছায় আমাদের কাংখিত ভ্যালীতে।যার চারপাশ দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়।আসলে যারা সবুজ ভালবাসেন তারা অবশ্যই একবার এইখানে যেতে পারেন। আমি নিশ্চত আপনার ভালো লাগবেই। ভ্যালীতে প্রচন্ড ঠান্ডা, আমরা তেমন শীতের কাপর নেই নাই, তাই লেয়ার হিসেবে চারটা গেঞ্জী একসাথে পরে নেই। পাশাপাশি তিনটা লেয়ারের প্যান্ট।

হাত মুখ ধুয়ে দুপুরের খাবার হিসেবে সবাই নুডলস খেয়ে নেই। রাতের খাবার মিলবে সন্ধ্যা সাতটায়। নুডলস খেয়ে বাহিরে চারপাশে কিছু সময় হেঁটে আমারা ডরমেটরিতে চলে আসি। বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা এসে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে শুয়ে থাকি।

সন্ধ্যা সাতটা ত্রিশে রাতের খাবার খেয়ে সবাই নয়টার মধ্যে শুয়ে পরি। কারণ ডরমেটরির বাহিরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার চারপাশে হেঁটে কিছু স্মৃতি ক্যামেরা বন্ধি করে নেই। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করে আবার সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে নিচে নামার মিশনে ঝাপিয়ে পরি।

যাওয়ার রুট

রোডঃ ঢাকা-সিলেট তামাবিল-ডাওকি-গোয়াহাটি-ডিমাপুর-কোহিমা-জ্যুকো ভ্যালি।

হ্যাপি ট্রাভেলিং 😍😍

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ dzukou valleynagaland