ডাউকি এবং উমঙ্গত নদীতে একদিন

– কত করে?
– ২০টাকা
– বাংলাদেশী না ভারতীয়?
– আজ্ঞে, আপনার কাছে যা আছে।

বিদেশী ঝালমুড়ি বলে কথা, এ সুযোগ তো আর ছাড়া যায় না…!!! একটা ৩০০ মিলির প্লাস্টিকের কাপে, হলুদ রঙের ঝালমুড়ি পেলাম। সরষের তেলের ঝাঁঝ, কাঁচা লংকার ঝাল, আর পাতি লেবুর টক আর পেঁয়াজের স্বাদ। মন্দ তো নয়ই, বরং বেশ ভালো লাগলো।

– কুলের আচারটা নেবেন না, দাদা?
– কুলের আচার?
– দাদা, এখান থেকে সকলেই নিয়ে যান. একটু খেয়েই দেখুন না।
– না ভাই, আচার তো আমরা ঘুরতে এসে কিনি না ( বৈশাখী, ফোড়ন কেটে দিলো)
– তা ভাই, ১০ টাকার দাও, খেয়ে দেখি।

উফফ, কুল, তেতুলের আচার, আর তার ওপর কাঁচা লংকার ফোড়ন। ও স্বাদ আমি ভুলবো না। আবার আসবো ( কবে জানি না ), আবার খাবো।

নাঃ, আর সাসপেন্স রাখলে, আপনারা আর পড়বেন না জানি। তাই, আর ভনিতা নয়। আমরা আছি ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তের এক নদীতে, মেঘালয়ের মধ্যে পরে এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলের জন্যে বিখ্যাত। জায়গাটার নাম ডাউকি (Dawki) আর নদীর নাম উমঙ্গত (Umngot River)।

গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১৭২ কিমি দূরে এই অকল্পনীয় শান্ত এবং সুন্দর জায়গায় পৌঁছতে প্রায় ৫ ঘন্টা লাগলো। অনেকের মুখে শুনেছি, ইন্টারনেটে ছবিও দেখেছি, কিন্তু নিজের চোখে, স্বচ্ছ এক নদী দেখার যে অনাবিল আনন্দ, সেটা বোধহয় কোনো ক্যামেরায় ধরা সম্ভব নয়।

খান কুড়ি দাঁড়িয়ে থাকা ডিঙির মধ্যে একটায় চড়ে বসলাম। তিনজন, এক মাঝি, নিঃস্তব্ধতা খান খান করে দেওয়া পাখির কিচকিচ, বুকভরা বাতাস আর দাঁড়ের ছপাৎ ছপাৎ। শুরু হলো আমাদের ডিঙিভ্রমণ আর জীবন খাতার আর এক পাতা।

জল যে অত স্বচ্ছ হতে পারে, আমাদের কলকাতার গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে কল্পনা করা সম্ভব নয়, আর চেষ্টা করাটাও বৃথা। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি জলের নিচে পাথর আর ছোট ছোট মাছ. আমাদের বড় অভ্যেস হলো, ভালো কিছু দেখলেই পকেট থেকে ফোন বের করে ছবি তোলা. শহুরে মানুষ আমি, ব্যতিক্রম আমি নই, কিনতু একটু পরেই মনে হলো, ছবি তো ইন্টারনেটে দেখতেই পাই, আজ বরং চক্ষু সার্থক করি।

মাঝি আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে গেলো, যেখান থেকে ঝর্ণাটা নদী হচ্ছে. এখন জল কম, তাই জায়গাটা পাথরে ভর্তি. অবশ্য, আমার মতো যাদের মাঝে মাঝে কল্পনাচক্ষুর উন্মেষ হয়, তাদের পক্ষে বর্ষাকালের চেহারাটা কল্পনা করতে অসুবিধা হবার কথা নয়. চান করতে ভীষণ ইচ্ছে করছিলো, জানেন? উপায় থাকলে দু এক ডুব মেরেও দিতাম। কিনতু গামছার অভাব, এই প্রত্যাশায় এই নদীর জলের মতোই ঠান্ডা জল ঢেলে দিলো। আপনারা গেলে, একটা গামছা বা তোয়ালে নিয়ে যেতেই পারেন!

৩০ মিনিট যে কখন কেটে গেছে বুঝতেও পারতাম না, যদি হাতের ঘড়িটা না থাকতো. নদী উৎপত্তির জায়গার উল্টো দিকেই সেই বাংলাদেশ সীমান্ত বা সেই ‘না ভুলতে’ পারা কুলের আচারের স্থান। ভারী অদ্ভুত লাগে, এক মানুষ, একই ভাষা, অথচ দুটো অন্য দেশ। খাকি পোশাকের সীমান্তরক্ষীরা না থাকলে, কে বুঝতো?

কবিরা বোধহয় এই জন্যেই পাখি হতে চান!!

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ dawkiumngot