গোলাপী পাহাড়, নীল পানির হ্রদ আর সোমেশ্বরী – নেত্রকোণা ভ্রমণ

বিরিশিরি ট্যুরটা আনন্দের চেয়ে ভোগান্তির ছিলো বেশি। যারা আগেই গিয়েছেন তারা জানেন যাত্রা পথ কতটা খারাপ! শুধু রাস্তাই নয় পরিবহন ব্যবস্থাও যা তা! তাই যাওয়া-আসায় কষ্ট হয়েছে খুব। বিরিশিরি থেকে ফিরে আমাদের ভ্রমণসঙ্গীর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। তার উপর যখন বিরিশিরি গিয়ে প্রথমে দেখার মত কিছু্ই পেলাম না তখন মেজাজটা পুরাই বিলা হয়ে গিয়েছিলো। শেষমেষ সোমেশ্বরী, নীল পানির হ্রদ (পানি সবুজ কিন্তু কেন সবাই নীল পানির হ্রদ বলে জানা নেই) আর গোলাপী পাহাড় দেখে মনে হলো আসা সার্থক 😀

দূর্গাপূর উপজেলার অন্তর্গত হচ্ছে বিরিশিরি যা মূল দূর্গাপুরে ঢোকার কয়েক কিলোমিটার আগেই পড়ে। বিরিশিরি বা সুসং দুর্গাপুরে গারো উপজাতি অধ্যুষিত জায়গা। ছোট ছোট পাহাড় ঘেরা এ জায়গাটি ভারত সীমান্তের একেবারে গা ঘেঁষে অবস্থিত।

কংস নদী

বিরিশিরি যেতে বাস থেকে নেমে সবার আগে এ নদীটি পার হতে হবে। মাত্র ৫ মিনিট লাগবে। ছবিতে একটি নির্মাণাধীন সেতু দেখতে পাচ্ছেন। সেতুর কাজ শেষ হলে এই ক্ষুদ্র নৌভ্রমণটির আর প্রয়োজন পড়বেনা।

অপরূপ সোমেশ্বরী

বিকেলের রোদহীন কোমল আলোয় সোমেশ্বরীতে নৌভ্রমণ। আহা! 🙂

পুটিমারি মিশন

এটি একটি ক্যাথলিক মিশন। এর ভেতেরে যাওয়ার জন্য অনুমতির প্রয়োজন। আমরা অনেক বলে কয়ে শুধু ভেতরটা একটা চক্কর মেরে আসতে পেরেছিলাম।

রাণীক্ষং মিশন

এটিও একটি ক্যাথলিক মিশন। ভেতরটা খুব সুন্দর।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

বাংলাদেশের একমাত্র উপজাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি এখানে অবস্থিত।

চীনা মাটির পাহাড়

বাংলাদেশ ইনসুলেটর এন্ড স্যানিটারি ওয়ার ফ্যাক্টরি লিমিটেড এ জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় চীনা মাটি সংগ্রহ করে।

গোলাপী মাটির পাহাড়

অদ্ভূত সুন্দর!!

নীল পানির হ্রদ

মন জুড়িয়ে গেছে এ জায়গাটি দেখে। তবে সাঁতার জানিনা বলে খুব আফসোস হয়েছিলো। আমার বন্ধুরা কী সুন্দর মনের হরষে হ্রদে সাঁতরে বেড়ালো আর আমি কেবল ছবি তুলেই ক্ষান্ত হলাম।

যাওয়ার উপায়

মহাখালী থেকে বিরিশিরি যাওয়ার বাস আছে, প্রথম বাস সকাল ৭:৩০ মিনিটে ছাড়ে। এরপর প্রতি ৪৫ মিনিট অন্তর একটা বাস ছেড়ে যায়। সেমিলোকাল বাস, ভাড়া নেবে ১৮০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। তবে আগে ময়মনসিংহ গিয়ে সেখান থেকেবিরিশিরি যাওয়া যাবে। ভালো বাসের মধ্যে আছে এনা (নন এসি)-১৫০ টাকা ভাড়া এবং শামীম (এসি)-১৯০ টাকা ভাড়া। এ দুটো বাসের জন্যিটিকেট কাটার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। সেজন্য একটু আগে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালে সুবিধা হবে। অবাক করা বিসয় কোন নির্দিষ্ট সময়ের বাসের টিকেট পাবেননা। টিকেট দেয়া হয় এই শর্তে যথন গাড়ি আসবে তখনই আপনি যেতে পারবেন সেটা যখনই হোক। আপনাকে শুধু গাড়ির নম্বরটা দিয়ে দেয়া হবে। ময়মনসিংহ গিয়ে ওখান থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে বা লোকাল বাসে বিরিশিরি যাওয়া যাবে।

বিরিশিরিতে ছোট গ্রুপের (২-৪জন) জন্য যেটা সবচেয়ে ভাল থাকার জায়গা হবে সেটা হচ্ছে স্বর্ণা রেস্ট হাউজ। ৬০০ টাকার মত ভাড়া পড়বে ডাবল বেডের একেকটা রুম।
YWCA এর জায়গাটাও ভাল তবে আগে থেকে বুকিং না দিলে রুম নাও পেতে পারেন। ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০।

খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্বর্ণা রেস্ট হাইজের পাশেই লাকী হোটেল আছে। দারুন খাবার।

বিরিশিরি ঘুরে দেখার জন্য মোটর সাইকলে ভাড়া করাই ভালো । একেকটা বাইকে দুইজন। ভাড়া পড়বে ৬০০ টাকার মত। রিকশাতে না যাওয়াই ভালো। রাস্তা খুব বাজে। তবে স্ত্রীকে নিয়ে গেলে রিকশাতেই যাবেন। সেক্ষেত্রে হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। আগের দিন বিরিশিরি গিয়ে পরিদিন খুব সকালে বের হলে বিকাল নাগাদ পুরো জায়গাটাই ঘুরে দেখা সম্ভব।

সময়টা ২০১১ সাল। তাই এখনকার সাথে হয়ত অনেক কিছু নাও মিলতে পারে।
Leave a Comment
Share