চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ

চর কুকরি মুকরি (Char Kukrimukri) নামটার মাঝে আসোলেই কেমন একটা আকর্ষন আছে। এই আকর্ষনেই ঘুরে আসলাম ভোলা জেলার চর ফ্যাশনের চর কুকরি মুকরি থেকে। প্ল্যানটা করি এক মাস আগে। আমাদের মাঝে কেউ চাকরিজীবী আবার কেউ ব্যবসায়ী।। সময় পায় না তেমন। দিন, তারিখ,বার, ছুটি সব মিলিয়ে প্ল্যান করি। প্ল্যান শুনে আর চর কুকরি মুকরির কিছু ছবি দেখে রাজি হয় ২১ জন। কেউ আসবে ময়মনসিংহ থেকে আবার কেউ আসবে চট্রগ্রাম থেকে আবার কেউ কক্সবাজার থেকে।

যাওয়ার ঠিক ২০ দিন আগের থেকেই সবাই একটা গ্রুপ বানিয়ে কথা বলি। যাওয়ার আগে আমাদের সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। অবশেষে আসে সেই বহুল প্রতিক্ষিত দিন। ভোলা যাওয়ার জন্য আমরা “এম ভি ক্রিস্টাল ক্রুজ ” লঞ্চটি ঠিক করি। যদিও এটা দিয়ে গেলে আপনাকে ভোলা সদর নামতে হবে আর সেখান থেকে চর ফ্যাশন যেতে হবে। যা খুবই কস্টকর জার্নি।

কিভাবে যাওয়া লাগবে আর কি কি করা লাগবে সে বিষয়ে বিস্তারিত পরে বলছি। আমি যানতাম লঞ্চ রাত ৮ টায় আর সবাইকে বলে দেই ৭ টায় লঞ্চ টার্মিনালে থাকার জন্য। কিন্তু টার্মিনালে সন্ধ্যা ৬ টায় গিয়ে শুনি যে লঞ্চ ৭ টায় ছেড়ে দিবে। সবাই কে কল দিয়ে বলে দেই এই কথা। সবাই মোটামুটি টার্মিনালের সামনেই আছে কিন্তু এক বন্ধু তখন হাতিরঝিলে জ্যামে বসে আছে। আমরা শিওর যে ওই ভদ্রলোকের লঞ্চ মিস হবে। তাই ওর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে “কর্ণফুলি ১২” তে কেবিনের ব্যবস্থা করে দেই। কর্ণফুলি ১২ ছাড়বে রাত ৮ টায়। লঞ্চ ছাড়ার ৫ মিনিট আগে খবর আসে আরেক বন্ধু ইব্রাহিম আসতে আরো কিছু সময় লাগবে। লঞ্চ মাস্টার আমাদের সকলের প্রিয় আক্তার ভাইকে বললাম আরো ৫ মিনিট অপেক্ষা করার জন্য।

সময় শেষ, লঞ্চের সিড়ি উপরে তুলতে তুলতেই ইব্রাহিম লাফ দিয়ে উঠে পরে। কিন্তু নতুন নাটক। দেখি আলির চিৎকারে আকাশ-বাতাস একাকার। আরে আলি! ও তো আগেই মানা করে দিয়েছে, ও আমাদের সাথে যেতে পারবে না। আসলে ও আমাদের সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছে। ততক্ষনে লঞ্চ ঘাট থেকে পিছনে যাচ্ছে। কিন্তু আলি বাংলার মাকড়শা ম্যান হয়ে পাশের লঞ্চ থেকে আমাদের লঞ্চে লাফ দিয়ে উঠে পরে। সাথে সাথে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, ফেরিওয়ালা এমনকি আনসারদের করতালি। মনে হচ্ছিল কোনো নাটক দেখছি।

আমরা ভোলা সদর টার্মিনালে পৌঁছাই ভোর ৪.৩০ মিনিটে। টার্মিনাল থেকে বের হই ভোর ছয়টায়। ঢাকায় ছেড়ে আসা বন্ধু ভোলায় পা রাখে আমাদের পা রাখার ১৫/২০ মিনিট পর। সকালের নাস্তা শেষ করে অটোরিকশা নিয়ে চলে যাই বাস টার্মিনালে। এখান থেকে চর ফ্যাশনের বাস পাবেন। আমরা ১০ মিনিটের জন্য ডিরেক্ট বাস মিস করে ১৬ জন নিয়ে উঠে পরি লোকাল বাসে। তারপর চর ফ্যাশন নেমে আরেক বাসে চর কচ্ছপিয়া। ওখান থেকে অটোরিকশা দিয়ে দক্ষিন আইচা ঘাট। ঘাট থেকে ট্রলারে চর কুকরি মুকরি।

কোথায় কিভাবে যাওয়া লাগবে আর সময় কেমন লাগবে তা শেষের দিকে দিয়ে দিবো। কুকরি মুকরি পৌছে উঠে পরি আগের থেকে বুক করে রাখা কুকরি মুকরি রেস্ট হাউজে। চর কুকরি মুকরি নিয়ে যখন প্ল্যান করা শুরু করি তখন মাথায় ঘুরতে থাকে কেমন হবে এই দ্বীপটা? মনে হয় চরে তেমন মানুষ নেই, চুপচাপ, সন্ধ্যায় শিয়ালের ডাক, কিন্তু ধারনা ভূল। ট্রলার থেকে নেমে ১০ মিনিট হাটতে হবে রেস্ট হাউজে যেতে হলে। হাটার সময় চোখে পড়বে ঘরবাড়ি, আবার একটা বড় বাজারও আছে। মোটামুটি সবই পাবেন বাজারে।

দুপুরের খাবার আগের থেকেই কল দিয়ে অর্ডার করে দেই। কোরাল মাছ, চিংড়ি ভর্তা, শিম ভর্তা, লালশাক, ডাল। আপনি চাইলে কুকরি মুকরি বাজার থেকে আপনার পছন্দ মত বাজার করে রেস্ট হাউজের কাউকে বললে ওরাই রান্না করে দিবে। যারা রান্না করবে তাকে কিছু টাকা দিয়ে দিলে হবে। দুপুরের খাবার খেয়ে কেউ কেউ ক্লান্ত শরীর নিয়ে রেস্ট নিতে চলে যায় আবার কেউ কেউ চলে যাই চর ভ্রমনে। রাতের খাবারের জন্য আমাদের কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই, আমাদের রাজিব ভাই রাতে আমাদের ট্রিট দিবে। সন্ধ্যার দিকে ভালোই ঠান্ডা পরতে শুরু করে। সবাই গরম কাপড় নিয়ে যাই। বাজারে গিয়ে হোটেল হানিফে সবাই গরম জিলাপী, চা খেয়ে পরের দিন সকালের নাস্তার জন্য দুইটা হাস রান্না করার অর্ডার দিয়ে দেই। আমরা সকাল ৭ টায় সকালের নাস্তা করবো বলে বের হয়ে পরি। রাতের খাবার শেষ করে চলে যাই রুমে। যদিও একাধিক রুম বুক ছিলো, কিন্তু এক রুমকেই কেন্দ্র করে আমাদের আড্ডা। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আড্ডা দিয়ে রাত চারটায় ঘুমাতে যাই। সবাইকে বলে দেই সকাল ৬.৩০ এই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে যেতে।

যেহেতু আমরা কুকরি মুকরি আসার জন্য দীর্ঘ রাস্তা বেছে নিয়ে সময় নস্ট করেছি তাই প্রথম দিন তেমন ঘুরতে পারি নাই। পরের দিন ভোর ৬.৩০ এই আমাদের বাধ্যগত এবং অনুগত বন্ধুরা ঘুম থেকে উঠে রেডি। তাড়াতাড়ি বের হওয়া লাগবে। নাস্তা খেয়ে রেস্ট হাউস থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়ি ঘাটের উদ্দেশ্যে। ঘাট থেকে একটা ট্রলার ঠিক করি যা আমাদের চর মন্তাজ ঘুরিয়ে চর কচ্ছপিয়া নিয়ে যাবে। যাত্রা শুরু। যেতে লাগবে আনুমানিক ৩ ঘন্টার মত। যাত্রা শুরুর ঘন্টা খানিক পর মোবাইল বের করি দেখি নেটওয়ার্ক আছে। জিপিএস অন করে ম্যাপে দেখি আমরা মোটামুটি সমুদ্রের পাশেই আছি। কিন্তু শিওর না। খালি বোতলে একটু পানি নেই। হ্যা, পানি লবনাক্ত। আশেপাশে কিছু নেই। ৩ ঘন্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাই। চরে কিছু বুন্য মহিষ ছিলো। আমাদের মাঝি বললো,এই চরের ভিতরের বনে নাকি বুনো শুকর এমনকি হরিনও আছে। হরিনের বিষয়টা শিওর না। চরটার পরিবেশ আসোলেই একটু ভিন্ন ধরনের। আমাদের ঢাকার কোলাহলে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেসে, তাই সমুদ্র গেসা কোলাহল মুক্ত পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতেও সময় লাগবে। এই পরিবেশে যে কেউ একাকী ৩/৪ ঘন্টা বসে থাকলেও মন ভরবে না। যাই হোক, চরে কিছুক্ষন ঘুরে নেমে পড়ি ফুটবল খেলতে। চিন্তা করলাম যাওয়ার সময় এমন আরো চর দেখতে পাবো। সময় নস্ট না করে বের হয়ে পড়ি। যাওয়ার পথে যে চর পছন্দ হবে, সেই চরে নেমে যাবো। যদি নিরাপদ মনে হয়।

চর কচ্ছপিয়া ঘাটে নামি বেলা ৩.৩০ টায়। চর কচ্ছপিয়া থেকে বেতুয়া ঘাট যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। ঢাকা যাওয়াত শেষ লঞ্চ বিকাল ৫ টায়। আমাদের হাতে সময় আছে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। বাস না পেয়ে তড়িঘড়ি একটা নসিমন ঠিক করে ফেলি। নড়বড়ে নসিমনে ১০/১২ জন বসতেই কস্ট হয়ে যায়, কিন্তু আমরা ১৬ জন গাদাগাদি করে উঠে পড়ি। এই ১৬ জনের মাঝে কেও এক্স এল আবার কেউ ডাবল এক্স এল সাইজের। বুঝতেই পারছেন সবার অবস্থা কেমন। অবশেষে বেতুয়া ঘাটে পোছাই লঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার ৫ মিনিট পর। সচক্ষে দেখছিলাম যে লঞ্চটা চলে যাচ্ছে। কিছুই করার নাই। দিনের আলোও প্রায় শেষ। চোখে সরষে ফুল দেখছি। বেতুয়া ঘাটের কিছু স্থানীয় মানুষ থেকে জানতে পারলাম এই লঞ্চটা সামনে আরো তিনটা ঘাটে থামবে। ওকে। স্থানীয় এক মরুব্বি আমাদের বলল, হাকিমগঞ্চ থেকে নাকি এই লঞ্চ ধরা যাবে, যদি আমরা সময় নস্ট না করে এখনি রওনা করি। ভদ্রলোক বলল, চর ফ্যাশন থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করলে আমরা লঞ্চ ধরতে পারবো। সময় নস্ট না করে এক বন্ধুকে মটরসাইকেলে পাঠিয়ে দেই চর ফ্যাশন মাইক্রোস্ট্যান্ডে আর আমরা সবাই অটো করে রওনা করি। একটা হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করি ২৫০০ টাকা দিয়ে আর উঠে পরি আমরা ১৬ জন। বুঝতেই পারছেন মিডিয়াম, লারজ, ডাবল এক্স এল সাইজের ১৬ জন এক গাড়িতে। ভয়ংকর অবস্থা। কিন্তু এই কস্টের মাঝেও একটা তৃপ্তি আছে। কারো কোনো অভিযোগ নেই। আসলে এরই নাম ভালোবাসা। এক তো আমরা সবাই ক্লান্ত, তার উপর আমাদের চোখে মুখে চিন্তার একটা ছাপ। যেভাবেই হোক লঞ্চটা ধরা লাগবে। না হলে আমাদের মাঝে থাকা চাকরিজীবিরা সমস্যায় পরে যাবে।

আমাদের ড্রাইভার সাহেবের কাছে কর্ণফুলী ১৩ লঞ্চের মাস্টারের ফোন নাম্বার ছিলো। আমাদের থেকে তিনি বেশি চিন্তিত। কিছুক্ষন পর পর লঞ্চ মাস্টারকে কল দিচ্ছে আর লঞ্চের অবস্থান আমাদের জানাচ্ছে। উনি বাতাসের বেগে গাড়ি চালাচ্ছে। হাকিমগঞ্জ বাজারে পৌছানোর পর লঞ্চ মাস্টার ড্রাইভার ভদ্রলোককে কল দিয়ে বলল যে লঞ্চ টার্মিনালে এসে পরেছে আর বেশিক্ষন লঞ্চ টার্মিনালে রাখা যাবে না। সবার মনে আবার লঞ্চ মিস করার ভয় ঢুকে পরলো। যাই হোক, টার্মিনালের সামনে জ্যাম, আমি সহ আরো ২ জন গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেই। বাকিরা আসছে। গিয়ে দেখি এম ভি তাসরিফ টার্মিনাল ছাড়ার অপেক্ষায় আর কর্ণফুলি ১৩ তাসরিফের পিছনে। হাকিমগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ছোট। একটা লঞ্চ টার্মিনালে থাকলে অন্য লঞ্চ পিছনে অপেক্ষা করে। আমরা এই জিনিসটা খেয়াল না করে সবাই এম ভি তাসরিফের ভিতর দিয়ে কর্ণফুলি লঞ্চে উঠে পরি। ও আল্লাহ। আমরা ১৫ জন। আরেক ভদ্রলোক কোথায়। দেখলাম অরিন দুই হাতে ব্যাগ নিয়ে টার্মিনালে দাঁড়িয়েছিল আর ততক্ষনে যে লঞ্চ এর মধ্য দিয়ে আমরা কর্ণফুলীতে উঠেছি সেই লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পিছনে চলে এসেছে। আমরা চিৎকার করে অরিনকে ডাকছি। এমন সময় এক যাত্রী এসে বলল যে এভ ভি তাসরিফ টার্মিনাল ছাড়লে আমাদের এই কর্ণফুলী ১৩ টার্মিনালে ঢুকবে। অযথাই চিৎকার করেছি। হাফ ছেড়ে বাচলাম।

আসলে এই ট্রিপে নাটকের পর নাটক দেখতে দেখতে সবাই সব ঘটনাকেই নাটক বানিয়ে ফেলেছি। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া সবাই সুন্দর ভাবেই ঢাকা পোছাই। আর ঢাকা থেকে সবাই যার যার গন্তব্যে চলে যায়। সবার চলে যাওয়ার দৃশ্যটা সত্যি অনেক কস্টকর। দুইটা দিন কি হাসিখুশিই না ছিলাম। কারো কোনো চিন্তা নেই। ২৬/২৭ বছরের ভদ্রলোকও এই ট্রিপে ১৮ বছরের কিশোরে রুপান্তরিত হয়েছে। দিন কিভাবে চলে যায়। আসলেই “সময় আর সমদ্রের ঢেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে না”। আল্লাহই ভালো জানে আবার কবে সবাই এভাবে ঘুরতে বের হবো এই সুন্দর দেশের কোনো সুন্দর জায়গায়। আশা করি লেখাটা সবার ভালো লাগবে। কোথাও ভূল হয়ে থাকলে ক্ষমাস্বরুপ চোখে দেখবেন। সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা চাইলে আমাদের এই ভ্লগ দেখতে পারেন। এই ভ্লগে আমরা চেস্টা করেছি পুরো ট্রিপটাই ফুটিয়ে তোলার জন্য। আমার ধারনা, আপনি চর কুকরি মুকরি যেতে চাইলে এখান থেকে সব ধারনা পেয়ে যাবেন। আর কোনো কিছুর দরকার হলে আমি আছি। আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। যখনই সময় পাবো আপনাদের সাহায্য করার চেস্টা করবো।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ভোলার বেতুয়া গামী লঞ্চে উঠে পরুন। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮ টা পর্যন্ত ভালো মানের কয়েকটা লঞ্চ ছাড়ে। ডেকের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা, সিংগেল কেবিন ১০০০, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা। রাতে লঞ্চেই খেতে পারেন। খাবার মোটামুটি ভালোই আছে। খাবার অর্ডার করার সময় দাম জিজ্ঞেস করে নিয়েন।

বেতুয়া পৌছাবেন আনুমানিক ভোর ৫ টায়। সম্ভব হলে লঞ্চ থেকে ৬ টায়, মানে আলো ফুটার পর বের হন। বেতুয়া ঘাট থেকে অটো নিয়ে চলে যান চর ফ্যাশন বাস টার্মিনালে, অটো ভাড়া জনপ্রতি ৩০/৪০ টাকা, সময় লাগবে ২০/২৫ মিনিট। চর ফ্যাশন থেকে আপনি চর কচ্ছপিয়া যাওয়ার জন্য বাসে উঠে পরুন। সময় লাগবে ১ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত আর ভাড়া গুনতে হবে ৫০ টাকার মত।

চর কচ্ছপিয়া থেকে দক্ষিন আইচা ঘাট যাওয়ার জন্য আবার অটো নেওয়া লাগবে। ভাড়া লাগবে সনপ্রতি ১৫/২০ টাকা। চর কচ্ছপিয়া থেকে কুকরি মুকরি যাওয়ার ট্রলার পাবেন৷। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ টাকা আর সময় লাগবে আনুমানি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। ** চর কুকরি মুকরি ট্রলার ঘাট থেকে চর মুন্তাজ, আর চর মুন্তাজ থেকে চর কচ্ছপিয়া ঘাট রিসার্ভ ট্রলার (১৫/১৬ জনের) ৩৫০০ টাকার মত। দামাদামী করা লাগবে।

কোথায় থাকবেন

চর কুকরি মুকরি রেস্ট হাউজে থাকতে পারেন। এর জন্য আগে থেকেই বুক করা লাগবে। চিন্তা করছেন বুক করবেন কিভাবে? নো প্রব্লেম আমি সব বলে দিচ্ছি। রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার জনাব হানিফ ভাইকে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে জানিয়ে রাখেন। রুম বুক করলে হাজার খানিক টাকা হানিফ ভাইকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। হানিফ সাহেবের মোবাইল নাম্বার ০১৭ ৩৯৯০ ৮০১৩। এই রেস্ট হাউজে একটা টেনিস কোর্ট আছে, সুইমিংপুল আছে (যদিও পানি ময়লা), সব রুমেই এসি আছে, রুম গুলা বড়, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বলতে সোলার প্যানেল এবং জেনেরেটোর। মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক নিতে ভূলবেন না। রেস্ট হাউজের কর্তৃপক্ষের মতে এক রুমে ২ জন থাকা যায়। কিন্তু এক রুমে ৪ জন অনায়াসে থাকতে পারবেন।

দুপুরের আর রাতের খাবারের জন্য আপনি চাইলে কুকরি মুকরি বাজার থেকে আপনাদের মন মত বাজার করে রেস্ট হাউজের কাউকে বললে রান্না করে দিবে। অথবা বাজারের আর রান্না করার দ্বায়িত্বও ওদের দিয়ে দিতে পারেন। খাবার জন্য রেস্ট হাউজে বিশাল এক ডাইনিং রুমও আছে।

আপনারা চাইলে কুকরি মুকরি বাজারে গিয়ে হোটেল হানিফেও থাকতে পারেন। টিনের দুইতলা। নিচে খাবার হোটেল। এই হোটেলের খাবারও মজা। চাইলে এই হোটেলেও খেতে পারেন। শীতের সময় এই হোটেলের কাউকে বললে হাসও রান্না করে দিবে। সন্ধ্যার খাবার হিসেবে এই হোটেলের গরম জিলাপীও খেতে পারেন। এই বাজারে আপনি নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসই পাবেন। পেস্ট ব্রাশ থেকে বিকাশ সবই।

চাইলে তাবু করে থাকতেও পারেন। যেখানে সেখানে তাবু না করে স্থানীয়দের থেকে মতামত নিয়ে সুবিধাজনক এবং নিরাপদ জায়গায় তাবু করতে পারেন। চর কুকরি মুকরি যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় শীতকাল। সকালে চারদিক কুয়াশা। ঠান্ডা পরিবেশ। এমন পরিবেশে চরের বাজারে নাস্তা করার অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে রাখার মত।

সতর্কতা

চর কুকরি মুকরি শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। বাইরের মানুষের তেমন আনাগোনা নেই। চর কুকরি মুকরি, চর মন্তাজ অথবা আশে পাশের কিছু চরে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ময়লা আবর্জনা বলতে কিছুই নেই। নেই কোনো পানির বোতল, চিপ্সের প্যাকেট অথবা পলথিন।খালি বোতল, পলিথিন বিহীন পরিবেশ চরের সৌন্দর্য্য আরো কয়েক গুনে বাড়িয়ে দেয়। আমরাই পারবো এই সৌন্দর্য্য স্থায়ী করতে। আমরা নিজেরাও এইসব সুন্দর জায়গা গুলাতে ময়লা আবর্জনা ফেলবো না এবং সবাইকে এই ব্যাপারে সচেতন করে তুলবো। ঘুরার সময় আপনাদের সাথে থাকা খালি বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট, চিপ্সের প্যাকেট সহ অন্যান্য আবর্জনা একটা নির্দিস্ট ব্যাগে রাখতে পারেন এবং কোনো বাজারের সামনে ডাস্টবিন অথবা ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলে দিতে পারেন। আমাদের এই সামান্য সচেতনতাই পারে এই সুন্দর জায়গা গুলোকে আরো সুন্দর করে তুলতে। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Comment
Share