একদিনে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং খৈয়াছড়া ঝর্ণা

বর্তমানে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আলোচিত জায়গার একটি চন্দ্রনাথ পাহাড়। তার থেকে ৩০-৪০ মিনিটের দূরত্বে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। একদিনের ট্যুরের জন্যে কিংবা ডে ট্রিপের জন্যে সীতাকুন্ড হতে পারে সেরা চয়েজ। ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা ফেনী থেকে খুব সহজেই বাসে কিংবা ট্রেনে একদিনের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সেরা কিছু জায়গা থেকে। এর মধ্যে আছে – চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালী সী বিচ, বাশবাড়িয়া সী বিচ, খৈয়াছড়া ঝর্ণাসহ বেশ কিছু ট্রেইল।

চন্দ্রনাথ যাত্রা

আমরা গিয়েছিলাম ৭ জন। যাত্রাশুরু হয় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। রাত ১০.৩০ এর মেইল ট্রেনে ১২০ টাকা জন প্রতি টিকেক কেটে নিই ঢাকা থেকে সীতাকুন্ডের। সিট পাওয়ার জন্য বেশ বেগ পেতে হয়, সিট পেতে অবশ্যই কমলাপুর থেকে উঠে আগে ভাগে ট্রেনে উঠে সিট বেছে নিন। সকাল ৬.৪০ এ পৌছে যাই সীতাকুন্ড স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে আমরা সীতাকুন্ড বাজারে যাই। সেখান থেকে নাস্তা করে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকি মন্দিরে ঘেরা রাস্তা দিয়ে। সিএনজি থেকে নেমে ১০ টাকা ভাড়ায় বাঁশ নিয়ে যাত্রা শুরু করি ১২০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। পাহাড়ে ওঠার আগে অবশ্যই ১ লিটার পানি, স্যালাইন, আর শুকনো খাবার প্রত্যেকের ব্যাগে রাখবেন, উপরে খাবারের দাম ডাবল।

চন্দ্রনাথ পাহাড়

লক্ষ্য রাখবেন

কিছুক্ষণ ওপরে ওঠার পর দেখতে পাবেন ছোট্ট একটি ঝর্ণা। ঝর্ণার পর দুই দিকে দুটো রাস্তা! হাতের ডান পাশে দেখতে পাবেন সিঁড়ি আর বাম পাশে মাটির রাস্তা। বন্ধুবান্ধব নিয়ে ট্রেকিং এ গেলে অবশ্যই হাতের বাম পাশের রাস্তা দিয়ে উঠুন, এতে প্রচুর দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। আর নামার সময় বাম পাশের সিঁড়ি দিয়ে নামুন। উপরে ওঠার সময় বুঝতে পারবেন বাঁশের গুরুত্ব। পাহাড়ে উঠতে আমাদের সময় লাগে ১ ঘন্টা ২৪ মিনিট। দিনটা ছিল হালকা বৃষ্টির। মেঘলা দিন পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার ছিল বলেই আশা করি। উপড়ে উঠে যে দৃশ্য দেখতে পাই তা ক্যামেরায় দেখানো সম্ভব না। বার বার বাতাসের মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো আমাদের। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে অপর প্রান্ত দিয়ে নামা শুরু করি। ২০০০ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসি। সেখান থেকে সিএনজিতে করে ২০ টাকা ভাড়ায় আবার চলে আসি সীতাকুন্ড বাজারে। চন্দ্রনাথ বিজয়ের পর এবারের যাত্রা খৈয়াছড়া ঝড়ণা। দুপুরের খাবার টা সীতাকুন্ডে খাবেন না!

খৈয়াছড়া যাত্রা

চন্দ্রনাথ ঘুরে অনেকেই ইকো পার্ক বা গুলিয়াখালী সি বিচে যায়। তবে আমার মতে খৈয়াছড়া টা বেস্ট। ট্রেকিং লাভার হলে তো অবশ্যই! সীতাকুন্ড বাজার থেকে মিরসরাই গামী বাসে উঠে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় নেমে পড়ুন মিরসরাই। হেল্পারকে বলে রাখবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণার দিকে যাবো, তাহলে সে জায়গা মত নামিয়ে দিবে। নতুবা মিরসরাই বাজারে নিয়ে গেলে আবার উলটো পথে আসা লাগবে। রাস্তা পার হয়ে চিকন রাস্তার মাথায় দেখতে পাবেন ঝর্ণার রাস্তার নির্দেশনা সাইনবোর্ডে। সেখান থেকে সিএনজি তে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন খৈয়াছড়ার পয়েন্টে। সিএনজি থেকে নেমে হাতের ডান পাশের প্রথম ভাতের হোটেল টাতে সেড়ে নেই দুপুরের খাবার।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

হোটেলের পাশেই বসে ছিল সেলিম নামের স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড। ২৫০ টাকায় তাকে ভাড়া করলাম। খাবার হোটেলেই ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি রাখি। হোটেল থেকেই ১০ টাকা জোড়া ফুটবল খেলার এঙ্গলেট ভাড়া করে নেই। আর ১০ টাকায় বাঁশ ও কিনে নেই। কোমড়ে গামছা বেঁধে বাকি বস্তুগুলো রেখে গিয়ে যাত্রা শুরু করি। বৃষ্টির দিন হওয়ায় বেশ কাদা পাড়াতে হয়। কিছুক্ষণ পর পরই পাথড়ে ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার স্রোতধারা বা ঝিরি পথ অনুসরণ করা লাগে, পার হতে হয় বেশ কয়েকবার। আমাদের সাতজনের কাউকেই জোক ধরেনি। জোকের ভয় তেমন নেই বললেই চলে। বাঁশের প্রয়োজন আরো একবার অনুভব করতে পারবেন। ট্রেকিং এর সময় বিভিন্ন গভীর খাত গুলো খেতে সতর্ক থাকবেন। সামান্য ভুলেই প্রাণনাশের আশংকা থাকে। আধঘন্টা সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে যাই চোখ জুড়ানো খৈয়াছড়া ঝর্ণায়।

১১ টি ধাপের এই ঝর্ণায় খুব বেশি সাহস না থাকলে এই ঝর্ণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকুন। আর ট্রেকিং নেশা থাকলে ঝর্ণার বাম পাশের প্রায় ৯০ ডিগ্রি পথটি অনুসরণ করে উপরে উঠতে থাকুন। বাঁশের ব্যবহার এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর ট্যুর গাইডের নির্দেশনাও। একটু পা পিছলে গেলে অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোমাঞ্চকর উত্তেজনা নিয়ে উপরে উঠে মন টা আনন্দে ভরে যাচ্ছিলো বার বার। ৯ নাম্বার ধাপে বিশ মিনিটের মত লাফালাফি করে সময় যায় এখানে, আনন্দের সাথে সাথে বুক কাপতে থাকে, কারণ নামতেও হবে এই পথ দিয়েই। নামার পর আবার ফিরে আসি প্রথম ঝর্নায়। দেখতে দেখতে কিভাবে কেটে গেল দেড় ঘন্টা। তারপর আবার পাথর, স্রোত আর কাদার মধ্য দিয়ে ফিরে আসি ভাতের হোটেলে। জিনিস পত্র গুছিয়ে বিকেল ৫ টার আগেই ফিরে আসি মিরসরাই। হালকা নাস্তা সেড়ে নিই। এবার ফেরার পালা।

যদি চন্দ্রনাথ আর খৈয়াছড়ার পর আপনার আরো এনার্জি অবশিষ্ট থাকে তাহলে ঘুরে আসুন ইকো পার্ক অথবা গুলিয়াখালী সি বিচ।

আমরা ফিরি বাসে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসে ফেরাটাই ভালো। মিরসরাই বাজার থেকে জনপ্রতি ৩৫০ টাকায় শ্যামলী পরিবহনের টিকেট কেটে নেই। রাত ১০.৩০ এর মধ্যে পৌঁছে যাই কমলাপুর। এত কম টাকায় এমন ট্যুর কল্পনার বাইরে ছিল। 🙂

ট্রেনে ফিরতে চাইলে

মিরসরাই থেকে চট্টগ্রামের চেয়ে ফেনী কাছে। ট্রেনে ফিরতে হলে ফেনী চলে যান। তূর্ণা এক্সপ্রেস রাত ১২ টা নাগাদ ফেনীতে থাকে। আর মহানগর গোধুলী ফেনীতে থাকে বিকেল ৪ টা নাগাদ।

Leave a Comment
Share