বালি ভ্রমন

প্রথমে ইচ্ছা ছিল এ বছর কাশ্মির যাব। সে হিসেবে প্লান করছিলাম। কিন্তু সব প্লান নষ্ট হয়ে গেল ভিসার ঝামেলায়। বিশেষত ইন্ডিয়ার ভিসার মত ঝামেলা মনে হয় আর কোনটা নাই। কেন জানি ইন্ডিয়ার ভিসার নাম শুনলেই আমার জ্বর আসে। করবো করবো করে দেরি হয়ে গেল। পরে শুনলাম ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ভিসা ক্যাম্পেইন হবে। ভাবলাম তাহলে তখনি করবো। কিন্তু ক্যাম্পেইন এর যে অবস্থার কথা শুনলাম তাতে সকল ইচ্ছা চলে গেল ক্যাম্পেইন এ যাবার। শেষমেশ আর করাই হইল না। 😀 তাহলে কি করা যায়। মনস্থির করেছিলাম যে বাহিরে কোথাও যাব ঈদের ছুটিতে… না গেলে তো হবেই না। যাব যখন ঠিক করেছি, যাবই। ২০১৪ তে ভেবেছিলাম বালি যাব। কিন্তু মালদ্বীপ যাব দেখে আর যাওয়া হয় নাই। তাহলে হয়ে যাক এবছর বালি ট্যুর। গিন্নিও রাজি। কিছু খোজ খবর করলাম। করে দেখলাম টিকিটের হাহাকার। ঈদের সময়, খুবি স্বাভাবিক। বরাবরের মত এবারো আমি লেট ডিসিশন নিতে। অবশেসে এক ট্রাভেল এজেন্সীর একটা প্যাকেজ কিনে ফেললাম। যদিও সেটা গ্রুপ ট্যুরের প্যাকেজ, কিন্তু সেইম প্যাকেজ আমাদের ২ জনের জন্য দিবে… শুধু প্লেনের টিকিট ভাড়া একটু বেশি পড়বে আর টিকেট পাওয়া গেছে ঈদের পরের দিন। কি আর করা। নিয়ে ফেললাম। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।

প্রথম রাত

৯ই জুলাই,২০১৬ রাত ১২ঃ৩০ টায় ফ্লাইট। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর। ওখানে ২ঘন্টার মত ট্রানজিট। তারপর কুয়ালালামপুর থেকে ডেনপাসার (Bali) । আমি যেমন প্লেনের টিকেট কাটতে সবসময় লেট করি, তেমনি আমার ফ্লাইট ও সবসময় ডিলে হয়। এটা আমার কপালের লিখন, না যায় খন্ডন। তবে বেশিনা, ১ ঘন্টা লেট ছিল। মালিন্দো এয়ার। কুয়ালালামপুর এ নেমে ইন্টার টার্মিনাল ট্রেনে করে ওদের আরেক টার্মিনালে যেতে হয়েছে। তাই একটু খেয়াল রাখবেন যে আপনাদের প্লেন কোন টার্মিনাল থেকে ছাড়বে।

প্রথম দিন

বালি এয়ারপোর্টটা অনেক সুন্দর। একেবারে সমুদ্রের ধারে। হোটেল পৌছাতে প্রায় ২টা। গোসল করে সোজা চলে গেলাম লাঞ্চ করতে। লাঞ্চ করে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল Uluwatu Temple. সেখানে ট্রেডিশনাল ক্যাচাক ড্যান্স দেখলাম। রাতে জিম্বারান বিচে ডিনার করলাম। তারপর বালির লোকাল মার্কেট গুলোতে একটু ঢু মারলাম লেট নাইটে বার লাইভ মিউজিক তো আছেই।

দ্বিতীয় দিন

আজ গন্তব্য অনেক। ৮টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম প্রাইভেট ট্যাক্সিতে করে। প্রথমে শিডিউলে ছিল বারং ট্র্যাডিশনাল ড্যান্স। আমরা এটা স্কিপ করি। তাই সোজা চলে গেলাম উবুদ গ্রামে। এখানে বাটিক এর কাজ কিভাবে করে সেটা দেখলাম। পাশে ছিল সিলভার কারখানা। কিভাবে সিলভার দিয়ে গয়না বানায়। তারপর গেলাম আমাদের প্রধান আকর্ষন ক্লিন্তামানি ভল্কানো (Kintamani Volcano)। সকালে কড়া রোদে বের হইসি কিন্তু যেতে যেতে বৃষ্টি হল। ক্লিন্তামানি রেস্টুরেন্ট এ লাঞ্চ করে নিলা, রেস্টুরেন্ট থেকেই ভল্কানো দেখা যায়। কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকায় পুরোটা উপভোগ করতে পারিনি।

বারং ট্র্যাডিশনাল ড্যান্স

দুপুরে খেয়ে চলে গেলাম এলিফ্যান্ট কেভ টেম্পল (Elephant Cave Temple), তারপর কফি কিভাবে বানায় সেটা দেখলাম, কফির গাছ দেখলাম। ওরা ৮রকমের চা খাওয়াল ফ্রি (টেস্ট করলাম আর কি), কিভাবে ওরা প্রসেস করে দেখাল, সেখান থেকে কফি কিনলাম। সেখান থেকে গেলাম আরেকটা আকর্ষনীয় স্থান Tegenungan Waterfall. কিন্তু এতগুলো যায়গা দেখে ওখানে যেতে যেতে বিকাল হয়ে গেছে। Tejalalang Rice terrace এ যাবার কথা ছিল কিন্তু দেরি হয়ে যাবে দেখে আর যাইনি।

Tegenungan Waterfall

বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝর্নার ওখানে কাটালাম। তারপর ডিনার সেরে চলে গেলাম লোকাল মার্কেটে। তারপর চলে গেলাম Hard Rock Cafe তে। লাইভ মিউজিক দেখালাম, খাইলাম তারপর মাঝ্রাতে হোটেলে ফিরলাম।

তৃতীয় দিন

প্রথমেই গেলাম Tanah Lot Temple. কারন এখন রোদ আছে। কখন বৃষ্টি নামে ঠিক নাই। তাই আজ ঠিক করেছি আগে মেইন স্পটগুলো আগে কাভার করব তারপর সময় থাকলে অন্যগুলো। আগের দিনের মত বাটিক এর কাজ, সিলভার এর কাজ বা কফি প্রসেসিং দেখে সময় নষ্ট করতে চাইনি।

Tanah Lot Temple

তানাহ লট থেকে গেলাম Bedugul-ulun danu floating temple. সেখানে অনেক্ষন সময় কাটালাম তারপর লাঞ্চ সেরে নিলাম। Taman Ayun Temple, monkey temple, fruit market এগুলো স্কিপ করেছি। নাহলে আজ শপিং করা হবেনা। কিন্তু আজই শেষ দিন। প্রতিদিন মার্কেটে যেতে যেতেই বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ দিনে শপিং করলাম, রেস্টুরেন্ট এ খেলাম, বিচে গেলাম… এই তো…

Pura Ulun Danu Bratan Temple

চতুর্থ দিন

সকাল সকাল উথে আগে গেলাম বিচে। কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। তারপর সবকিছু গুছিয়ে বের‍িয়ে পড়লাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে। ১২টায় ফ্লাইট। ফেরার সময় কুয়ালালাম্পুরে ৯ঘন্টার বিরক্তিকর ট্রানজিট। মুভি জোনে, রেস্টুরেন্টে বসে, ঘুরে ফিরে সময় কাটালাম আর কি। ঢাকায় ফিরলাম রাত ১টায়। বাসায় ঢুকলাম রাত ৩টা।

গ্রুপ ট্যুর প্যাকেজ ছিল ৬২০০০ টাকা পার পারসন, যেহেতু আমি লেট, তাই প্লেন কস্ট বেশি পড়সে। তাই আমাদের প্যাকেজ পড়সে ৭০০০০ টাকা পার পারসন এবং এটা আমাদের গ্রুপ ট্যুর ছিলনা, কাপল ট্যুর বলতে পারেন।

প্যাকেজ ইনক্লুডেড

1. Hotel : 3 Night stay at 3 star Palm Beach Resort at Kuta Beach area (5 mins walking distance from beach) and 20 mins walking distance from main kuta area where all the bars, restaurant located
2. Airport Pick and Drop
3. ৩দিনের জন্য প্রাইভেট কার+ ড্রাইভার কাম গাইড
4. সব লোকেশনে ঘুরানো
5. সকল প্রকার পার্কিং ফি, এন্ট্রান্স ফি, টোল ফি
6. ৩দিনের বেকফাস্ট+ বুফে লাঞ্চ+ ডিনার

মানে পার্সনাল কোন খরচ ছাড়া আর কোন খরচ নাই।

কিছু টিপস (Tips), কাজে লাগলেও লাগতে পারে

  • বালির সব স্পটই অনেক দূরে দূরে। সকাল ৮টায় বের হলে ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা বাজে। এবং অনেক ক্লান্তি চলে আসে। তাই সব স্পট দেখার প্রয়োজন দেখিনা। কোনটা কোনটা দেখবেন আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন, সুবিধা হবে।
  • বালির খাবার মোটেও সুস্বাদু না। তাই ওদের লাঞ্চ আর ডিনার এ খেতে কষ্ট হইসে। কিন্তু কিছু করার নাই… প্যাকেজ এ ফিক্সড। আর ডিনার করে ফেলতে হয় ৮টার মধ্যে। কারন ড্রাইভার ডিনার শেষে আপনাকে হোটেলে রেখে চলে যাবে। আমরা লেট নাইটে রেস্টুরেন্ট এ যেয়ে মজা করে খেতাম।
  • বালিতে মিটারে ক্যাব পাবেন না। তাই দামাদামি করে উঠতে হবে।
  • রাতের বেলা বিচ এরিয়া মোটেও নিরাপদ নয়। তাই না যাওয়াই ভাল। সন্ধ্যার পরি বিচ এরিয়া ফাকা হয়ে যায়।
  • শুনেছিলাম বালি থাইল্যান্ডের মত রকিং সিটি। আসলে মোটেও তা না। তাই একটু আশাহত হয়েছিলাম। ১১টার পরই বেশিরভাগ রেস্টূরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। কিছু লাইভ মিউজিক চলতে থাকে, কিছু বার ওপেন থাকে রাত ১টা -২টা পর্যন্ত।
  • ডলার ভাঙ্গানোর আগে দেখে নিন কোথায় কত রেট। সব যায়গায় ভাঙ্গাবেন না। মাইন রোডের ঢারে যে কোন বুথ থকে ভাঙ্গানো নিরাপদ।
  • প্যাকেজে না গেলে নিজেরা যদি যান, আগে থেকে টিকেট করলে ৩৫০০০ এ পেয়ে যাবেন অফ সিজনে প্লেনের টিকেট। হোটেল ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ এ ভাল হোটেল পাবেন। আর প্রতিদিন ৫০ ডলারে ৮ঘন্টার জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া করতে পারেন।
  • শপিং এর জন্য বেস্ট KRISHNA সুপার শপ। সব কিছুই অনেক সস্তায় কিনতে পারবেন। স্যুভনির এর জন্য বেস্ট।
  • ইন্দনেশিয়া মুসলিম দেশ হলেও বালি প্রধানত হিন্দু এরিয়া। তাই তাদের কালচারকে রেস্পেক্ট করুন।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ baliindonesiatourtravel story