বান্দরবান

থানকোয়াইন ঝর্ণা

থানকোয়াইন ঝর্ণা (Thaan Kowain Waterfall) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার সুন্দরের আধার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত একটি নয়নাভিরাম ঝর্ণা। থানকোয়াইন ঝিরি থেকে এই ঝর্ণার উৎপত্তি। এই ঝর্নায় যাওয়ার ট্রেকিং পথের চারিদিকে সুউচ্চ সবুজ পাহাড় এবং এই পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলা টোয়াইন খালের পাশ ঘেঁষে পথ চলতে হবে অধিকাংশ সময়। আলীকদমের পানবাজার থেকে বাজার করে চলে যেতে হবে আমতলী ঘাট। এখান থেকে নৌকা নিয়ে দুছড়ী বাজার (Duchori Bazar) যেতে হবে, সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। দুছড়ী বাজারটি ”দুছড়ী” এবং ”টোয়াইন” খালের মিলনস্থলে অবস্থিত খুবই ছোট একটি বাজার। দুছড়ী খাল টোয়াইন খালে এখানে পতিত হয়েছে বলে এই বাজারের নাম হয়েছে দুছড়ী বাজার। দুছড়ী বাজার হচ্ছে আশে পাশের আদিবাসী চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা পাড়াগুলোর প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সবাই জুমের উৎপাদিত ফসল এখানে বিক্রি করতে আসে এবং কিনে নিয়ে যায় তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী।

পর্যটকদের জন্যও দুছড়ী বাজারটি অনেক গুরুত্বপূর্ন কারন এখান থেকেই দুছড়ী খাল ধরে কির্সতং, রুংরাং ট্রেকিং শুরু করতে হয় এবং টোয়াইন খাল হয়ে থানকোয়াইন, পালংখিয়াং ঝর্ণার ট্রেকিং শুরু করতে হয়। দুছড়ী বাজার থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে থানকোয়াইন ঝর্ণার উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টার ট্রেকিং পথ, হাঁটার গতির তারতম্যের উপর নির্ভর করে কতক্ষন লাগবে। প্রথমে পাহাড়ে উঠা আর তাঁর কিছু পরেই নিচে নামা, এরপরেই দেখা মিলবে অনিন্দ্য সুন্দর থানকোয়াইন ঝর্ণার আর ঝর্ণাটি টোয়াইন খালে পতিত হয়েছে।

অধিকাংশ ভ্রমণকারীগন থানকোয়াইন ঝর্ণা ভ্রমণের সাথে পালংখিয়াং, জামরুম ল্যাদমেরাগ এবং ক্র্যাতং ঝর্ণা রেখে থাকেন তাদের ট্যুর প্ল্যানে, কারন এই ঝর্ণা গুলো সবগুলোই এই একই স্থান থেকে দেখতে যেতে হয়। তাও আপনি যদি সেভাবে প্ল্যাণ করে থাকেন তাহলে থানকোয়াইন ঝর্ণা দেখা শেষে চলে যেতে পারেন হাজিরাং পাড়া। পাড়াটি ছোট একটি পাড়া এই পাড়াতে মোট ০৮ টি পরিবার বসবাস করে। এই পাড়ার অধিবাসীরা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। হাজিরাং পাড়ার পরের পাড়ার নাম রেম্বক পাড়া। এখানে থাকলে পরের দিনে ৩ টা ঝর্না পালংখিয়ং, জামরুম, লাদমেরাগ ঝর্ণা একসাথে দেখা সুবিধার হয়।

থানকোয়াইন ঝর্ণা যাওয়ার উপায়

প্রথম রুট

প্রথমে বাসে করে আলীকদম নেমে পানবাজার যেতে হবে। এখানে বাজার সদাই করে সকালের নাস্তা সেরে চলে যেতে হবে আমতলী ঘাট। এই ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে টোয়াইন/তৈনখাল ধরে এগিয়ে নামতে হবে দোছরি বাজার। এরপর টোয়াইন এর কুল ধরে হেঁটে থানকোয়াইন ঝর্ণা।

দ্বিতীয় রুট

রাতের বাসে আলীকদম পৌছে প্রথমেই চলে যেতে হবে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিলো। সেখান থেকে পায়ে ট্রেক করে দোছরি বাজার। এরপর টোয়াইন এর কুল ধরে হেঁটে থানকোয়াইন ঝর্ণা।

সম্ভাব্য ট্যুর প্ল্যান

Time needed: 4 days

এই ট্যুর প্ল্যানে থানকোয়াইন, পালংখিয়াং, জামরুম, ল্যাদমেরাগ এবং ক্র্যাতং ঝর্ণার কথা মাথায় রেখে করা। তাই আপনারা আপনাদের সুবিধে মতো বাদ কিং যুক্ত করে সময় এডজাস্ট করে নিবেন। সাথে খরচও বাড়বে কিংবা কমবে।

  1. ঢাকা থেকে আলীকদম

    রাতে্র বাসে ঢাকা থেকে আলীকদমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।

  2. আলীকদম থেকে থানকোয়াইন ঝর্ণা অভিযান

    আলীকদম পৌছে সকালের নাস্তা সেরে আমতলী ঘাটে চলে যেতে হবে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যেতে হবে দুছড়ী বাজার। দুছড়ী বাজার থেকে ট্রেকিং করে থানকোয়াইন ঝর্না যেতে হবে। থানকোয়াইন ঝর্ণা দেখা শেষে চলে যেতে হবে হাজিরাং পাড়া। হাজিরাং পাড়ার পরের পাড়ার নাম রেম্বক পাড়া। অনেকে এই পাড়ায় থেকে থাকে।

  3. রেম্বক পাড়া থেকে ঝর্ণা অভিযান

    সকালে নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে পরুন বাকি ঝর্না গুলোর অভিমুখে। সারাদিন ট্রেকিং করে ঝর্না দেখতে হবে এবং সে সাথে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা তো করতে হবেই। পালংখিয়াং, জামরুম এবং লাদমেরাগ ঝর্ণা উপভোগ শেষে রাত কাটান কোন এক পাড়ায়। এ ব্যাপারে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।

  4. অভিযান ক্র্যাতং এর উদ্দেশ্যে

    সকালে নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে ক্র্যাতং ঝর্নার উদ্দেশ্যে সকাল সকাল বের হয়ে পড়ুন। সারাদিন ট্রেকিং করে ক্র্যাতং ঝর্ণা দেখা শেষে বিকেলের মধ্যে আলীকদম বাজারে চলে আসুন। রাতের খাবার শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাস গুলোতে আরাম করে চেপে বসুন।

আনুমানিক খরচ

কিছু খরচ গ্রুপের সাইজের উপর নির্ভর করে।

  • ঢাকা থেকে আলীকদম বাস ভাড়া –  ৮৫০ টাকা
  • আলীকদম পানবাজার থেকে আমতলী ঘাট – ৪০ টাকা
  • গাইড পার ডে –  ৮০০ – ১০০০ টাকা।
  • ট্রলার ভাড়া – ২৫০০-৩০০০ টাকা। এসব ইঞ্জিন চালিত নৌকায় একসাথে ৭ থেকে ৮ জন যাওয়া যায়।

খাওয়া-দাওয়া

যেহেতু এটা একটি ট্রেকিং ট্রিপ তাই আপনার সাথে যথেষ্ট পরিমান শুকনা খাবার রাখতে হবে। যেমন – খেজুর, বিস্কিট, স্যালাইন এবং নুডুলস। এছাড়া পাড়াতে থাকলে খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১৫০-২০০ টাকা। খাবারের খরচ এবং থাকার ব্যবস্থা সব সময় গাইডই ম্যানেজ করে থাকেন। তাই গাইড বুক দেয়ার সময়েই এসব বিষয়ে ভালো ভাবে কথা বলে নিতে হবে।

Leave a Comment
Share