চট্টগ্রাম

চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড় (Chandranath Hill) চট্টগ্রাম এর সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড় যা দর্শনার্থীদের কাছে ট্রেকিং এর জন্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটা রুট। চন্দ্রনাথ পাহাড় এর উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্যে ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁ‌ড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ, কিছু ভাঙ্গা সিঁ‌ড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁ‌ড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রায় ১ ঘণ্টা – ১.৫ ঘণ্টা ট্রেকের পর দেখা মিলবে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির এর। প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন।

বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির (Chandranath Temple) যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে যেখানে নিজেকে সামলে রাখা অনেকটাই কষ্টকর। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে যাবে চোখ।

চন্দ্রনাথ পাহাড় কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে এসি, ননএসি বাস ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। চট্টগ্রাম থেকে বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে ( স্থানী ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে।

এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল” সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।

সীতাকুন্ড বাজার থেকে CNG (জনপ্রতি ২০/-) নামিয়ে দিবে পাহাড় এর প্রবেশ ফটকে। এখান থেকেই ট্রেকিং এর শুরু। সাধারণত ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে পাহাড়ের চূড়ায় পৌছাতে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে আপনি নিজ উদ্যোগে পারিবারিক ভাবে সিএনজি অটো রিক্সাতে করে ঘুরে আসতে পারবেন ভাড়া নিবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আপনি যদি পাবলিক বাসে যেতে চান তবে আপনাকে নগরির অলংকার কিংবা এ কে খান মোড় থেকে বাসে উঠতে হবে ভাড়া নিবে ২০ টাকা প্রতি জন।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড কাঁচা বাজার এলাকায় এবং সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্পকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে যাদের মধ্যে হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সৌদিয়া, সায়মন উল্লেখযোগ্য। হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মান ভালো। এদের রুম ভাড়া এসি ডাবল বেড – ১০০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। থাকা-খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেলের সুব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতে থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা রয়েছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।

  • হোটেল প‌্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে। আমাদের মতে বাজেটে সেরা হোটেল এটি। সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকেনা)। রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নান এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
  • হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন্ হোটেল। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
  • হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টড়্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এসি ১৩০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০৩১-০৬১৪০০৪
  • হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল। তবে যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
  • হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো হোটেল। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা। বুকিং এর জন্য: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭

কিছু দরকারি জিনিস যা মনে রাখতে হবে

  • পাহাড়ে উঠার সময় বাঁশের কঞ্চি নিয়ে উঠবেন। ২০ টাকা করে বিক্রি করে, ফেরত দিলে ১০/- ফেরত পাবেন।
  • ভারী কোনো ব্যাগ বা জিনিসপত্র নিয়ে পাহাড়ে উঠবেন না। (যেখান থেকে বাশ কিনবেন তার পাশেই টাকার বিনিময়ে ব্যাগ রাখার দোকান আছে)
  • উপরে খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে তাই নিচে থেকে টেনে নিয়ে উপরে ওঠার কোন মানে হয় না। (খাবার পানি, কোক, শশা, গাজর, মালটা, কলা সহ আরো খাবার ব্যবস্থা হয়েছে এখন) দাম নরমাল দাম থেকে ৫/- বেশি মাত্র।
  • অনেকটা পথ উপরে উঠার পর পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করবে। তাই ধীরে ধীরে উঠুন। তাড়াহুড়া করবেন না। যথেষ্ট মাথা ঠান্ডা রাখুন।
  • বর্ষায় কিংবা বৃষ্টির পর এই পাহাড়ে না উঠাই ভালো।
Leave a Comment
Share