চট্টগ্রাম

চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান

চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান (Chandpur Belgaon Tea Garden) চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার ১নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকায় প্রায় ৩৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বেলগাঁও চা বাগান এর উৎপাদিত চায়ের যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ, তেমনি এ বাগানের উৎপাদিত চায়ের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। এখানে প্রায় ৭০০ একর জায়গায় চা পাতা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কাজ চলে। বর্তমানে ৭০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক চা পাতা সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের কাজে জড়িত। মানের দিক থেকে মধুপুর চা বাগান, খৈয়াছড়া চা বাগান, ক্লিফটন চা বাগান ও কর্ণফুলী চা বাগানের পরেই এর অবস্থান।

বেলগাঁও চা বাগানটির প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায়নি, লোকমুখে জানা যায় যে ১৯১২ সালে ইংরেজরা বাগানটি শুরু করেন তখন বাগানের ম্যানেজার ছিলেন হিগিন। তবে রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার লট হল ও লট চানপুর মৌজায় অবস্থিত চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানটি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে মালিকানার অনুপস্থিতিতে অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হয়। ক্রমান্বয়ে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয় অধিবাসীদের অবৈধ দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রায় বাহাদুর জমিদারের মালিকানায় ছিল।বর্তমানে চা বাগানটি সিটি গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

ক্লোন চা উৎপাদনে বাগানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যা মূলত বিদেশে রপ্তানী হয়। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় প্রতিদিনই নতুন নতুন কচি পাতা গজিয়ে উঠছে। শীত মৌসুম আসতে না আসতেই এই চা-বাগানে পর্যটকরা ভিড় জমান বাগানের নতুন কচি পাতা গজিয়ে উঠার দৃশ্য দেখার জন্য। যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। পাহাড়-লেক-টিলা এসবকিছু মিলে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী বেলগাঁও চা বাগান। তাই সারা বছরই অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু এ চা বাগানটি পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

বেলগাঁও চা বাগান যাওয়ার উপায়

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী থানার পুকুরিয়া ইউনিয়নে এই চা বাগানটি অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট অথবা নতুন ব্রিজ থেকে বাঁশখালীগামী স্পেশাল সার্ভিস, ক্লোজডোর সুপার সার্ভিস যোগে বাঁশখালীর প্রবেশপথ চাঁদপুর বাজারে নামতে হবে। নতুন ব্রীজ থেকে লোকাল বাসে চাঁনপুর বাজার পর্যন্ত জন প্রতি ৪৫ টাকা। বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে ২ কিলোমিটার পথ সিএনজি, অটোরিকশা, প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বেলগাঁও চা-বাগানে যাওয়া যায়। চাঁনপুর বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা।

খাওয়া-দাওয়া

বেলগাঁও চা বাগান ভ্রমণে গেলে অবশ্যই খাবার পানি আর খাবার নিয়ে যাবেন। কারণ বাগানের আশেপাশে কোন দোকান নেই। তবে বাগানের ভিতরে মসজিদের পাশে একটি খাবার পানির টিউবওয়েল রয়েছে।

আপনি চাইলে সারাদিন চা বাগানে ঘুরে বিকেলে বাঁশখালী সৈকত সমুদ্র দেখে আসতে পারেন। বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ আপনার সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই ভুলিয়ে দিবে।

বেলগাঁও চা বাগান থেকে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায়

বেলগাঁও চা বাগান ঘোরা শেষে চা বাগান থেকে চাঁনপুর বাজার চলে আসুন। চাঁনপুর বাজার থেকে সিএনজি কিংবা বাস যোগে চলে যেতে হবে গুনগারি বাজার। সিএনজিতে গেলে ৩০ টাকা এবং বাসে গেলে ১৫ টাকা ভাড়া পড়বে। বাজারে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন। গুনগারি বাজার থেকে লোকাল সিএনজি যায় একবারে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত। শেয়ারে গেলে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০ টাকা আর রিজার্ভ গেলে পড়বে ২৫০ টাকা। তবে অনেক দামাদামি করতে হবে। সমুদ্র সৈকত থেকে ফিরবার সময় ভাড়া অনেক বেশি চায়। তাই ফিরবার সময় রিজার্ভ করে নেয়াটাই উত্তম। এই ট্যুরে ৫-১০ জন এর গ্রুফ হলে ভালো হয়। এতে করে খরচ কমে যাবে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ banshkhaliChittagongTea garden